দাঁতালকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ, ‘মারধর’ যুবককে
হাতিকে উত্ত্যক্ত করছিল বহিরাগত কিছু লোক। আদ্রা রেলশহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরের রগুড়ি গ্রামের বাসিন্দারা তার প্রতিবাদ করেছিলেন। তারই জেরে পাশের চাকলতা গ্রামের কিছু বাসিন্দার হাতে মার খেলেন রগুড়ির এক যুবক।
সোমবার রাতে বাঁকুড়া থেকে সাঁতুড়ি হয়ে রগুড়ি গ্রামের পিছনের জঙ্গলে এসে পৌঁছয় একটি দাঁতাল। মঙ্গলবার সকাল থেকে তাকে দেখতে ভিড় জমায় রগুড়ির আশপাশের গ্রামের প্রচুর লোকজন। তাদেরই মধ্যে কিছু অতু্যুৎসাহী লোক হাতিটিকে ক্রমাগত ঢিল-পাটকেল ছুড়ে উত্ত্যক্ত করছিল। এর মাসুল মঙ্গলবার নিজের প্রাণ দিয়ে দিতে হয়েছে বনকর্মী পশুপতি দাসকে। বিরক্ত দাঁতাল তাঁকে সামনে পেয়ে পিষে মেরেছে। রগুড়ি গ্রামের বহু বাসিন্দাই ভিড় নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছিলেন। অনুরোধ করেছিলেন, হাতিটিকে উত্ত্যক্ত না করতে। জনতা শোনেনি।
হুড়ায় প্রদীপ মাহাতোর তোলা ছবি।
বস্তুত, এই ঘটনার পরেই বনকর্মীদের নির্দেশমতো হাতিটিকে যাতে কেউ বিরক্ত না করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে তৎপর হয়েছিলেন রগুড়ি গ্রামের মানুষজন। রীতিমতো লাঠি হাতে হাতির কাছ থেকে ভিড় সরিয়েছিলেন তাঁরা। বিবাদের সূচনা সেখান থেকেই। হাতি দেখতে কেন বাধা দেওয়া হয়েছে, সেই রাগেই রগুড়ির যুবক ভূতনাথ চৌধুরীকে বুধবার সকালে চাকলতা গ্রামের ২০-২৫ জন লোক বেধড়ক পেটায় বলে অভিযোগ। জখম যুবকটিকে প্রথমে কাশীপুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও পরে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। এ দিন দুপুরে চাকলতা গ্রামের ওই বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন ভূতনাথের দাদা ভৈরব চৌধুরী। রঘুনাথপুরের এসডিপিও দ্যুতিমান ভট্টাচার্য জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। দুই গ্রামের মধ্যে যাতে এই ঘটনাকে ঘিরে বিবাদ না বাড়ে, সে দিকে পুলিশ নজর রেখেছে।
কাশীপুরের ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ অফিসার সোমনাথ চৌধুরীর কথায়, “রগুড়ির বাসিন্দাদের জন্যই হাতিটিকে উত্ত্যক্ত করতে পারেনি জনতা। হাতিটিকে দিনভর আটকে রাখা সম্ভব হয়েছিল জঙ্গলের মধ্যেই। অথচ বন দফতরের কাজে সাহায্য করার জন্যই মার খেয়েছে এক যুবক। ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক।” প্রাথমিক তদন্তে পুলিশও জানিয়েছে, হাতি দেখতে বাধা দেওয়ার ‘আক্রোশেই’ চাকলতা গ্রামের কিছু লোক এ দিন চড়াও হন ভূতনাথের বাড়িতে। ভৈরববাবুর অভিযোগ, “ওরা বাড়িতে এসে বেদম মারে ভাইকে। আমরা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু এত জনের সঙ্গে এঁটে উঠতে পারিনি।” রগুড়ির বাসিন্দা, তৃণমূল নেতা সাধন চৌধুরী বলেন, “হাতিটাকে খুবই উত্ত্যক্ত করছিল বাইরের লোকজন। খেপে গিয়ে সে গ্রামে তাণ্ডব চালাতে পারে, সেই আশঙ্কাতেই এবং বনকর্মীদের কথামতো আমরা ভিড় সরিয়েছিলাম। এটা না বুঝে বিনা কারণে ভূতনাথকে মারধর করল কিছু লোক।”
অভিযুক্ত চাকলতা গ্রামের ওই বাসিন্দাদের অবশ্য দাবি, তাঁরা মঙ্গলবার হাতিটিকে দেখতে গেলেও উত্ত্যক্ত করেননি। বরং রগুড়ি গ্রামের লোকেরাই তাঁদের গালিগালাজ করেছিলেন। ভূতনাথকে পেটানোর অভিযোগও তাঁরা মানতে চাননি।
অন্য দিকে, মঙ্গলবার সন্ধ্যার পরে রগুড়ি গ্রামের জঙ্গল থেকে হাতিটিকে তাড়ানোর কাজ শুরু করেছিল বন দফতর। সঙ্গে ছিল হুলাপার্টি। কাশীপুর হয়ে দাঁতালটি রাতেই পৌঁছে যায় হুড়া ব্লক এলাকায়। বনকর্মীদের সেঙ্গে এ ভাবেই লুকোচুরি খেলা খেলে বুধবার ভোরে সে আশ্রয় নেয় কেশরগড় বিটের রাকাব জঙ্গলে, কংসাবতী নদীর ধারে। বন দফতর সূত্রের খবর, হুলাপার্টির সাহায্যে দাঁতালটিকে বান্দোয়ান ব্লক এলাকার দলমা পাহাড়ের রেঞ্জের জঙ্গলে পাঠানোর চেষ্টা করা হবে। তবে হুলাপার্টির এক সদস্য নুর আলম মণ্ডল বলেন, “খেদানো শুরু করতেই হাতিটা কংসাবতীতে নেমে পড়ে। নদী পার পরে সে কেন্দার দিতে চলে যায়।” নদীতে জল থাকায় বনকর্মীরা আর নামার ঝুঁকি নিতে পারেননি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.