দু’দফায় দলমা থেকে বাঁকুড়ায় ঢুকে পড়া ৭৫টি হাতির হামলায় জেরবার বিষ্ণুপুর ও বেলিয়াতোড়ের জঙ্গল লাগোয়া গ্রামের বাসিন্দারা। হাতির হামলায় গ্রামের জমির ফলস নষ্ট হচ্ছে। বাসিন্দারা বারবার বন দফতর ও প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। তবে তাতে কোনও লাভ কার্যত হয়নি। মাথায় হাত পড়েছে চাষিদের। শশা, কুমড়ো, ঝিঙে, করলা-সহ সব্জীর দফারফা হয়েছে। |
অন্য দিকে, এরই মধ্যে মঙ্গলবার রাতে রেসিডেন্ট দাঁতালের হামলায় বেলিয়াতোড় রেঞ্জের বৃন্দাবনপুর গ্রামে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে একটি মুদিখানা ও দেশি মদের দোকান। দু’টি টালির বাড়ি ভেঙে হাতিটি বস্তাভর্তি গম বের করে খেয়েছে। একই ভাবে অন্য একটি দাঁতাল বড়জোড়া রেঞ্জের সরাগাডা গ্রামে একটি মুরগির খামারে তাণ্ডব চালায়। মারা যায় কিছু মুরগি। পরে বুধবার ভোরে ওই এলাকার কুসমা গ্রামে এক ফলবিক্রেতা রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়ে দাঁতালের আক্রমণে জখম হন। গ্রামবাসীরা তাঁকে উদ্ধার করে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান।
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জখম ও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে কোনও ঘটনার পরে বনকর্মীদের দেখা পাওয়া যায় না বলে বুধবার বৃন্দাবনপুরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। ওই গ্রামের মুদি দোকানের মালিক রামপ্রসাদ বলেন, “দোকানের লোহার পাল্লা ভেঙে সর্বস্ব লোপাট করে দিয়েছে হাতিটি। নতুন করে ব্যবসা চালাবো কি করে তা বুঝতে পারছি না। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪০ হাজার টাকা।” পরেশ মণ্ডলের লাইসেন্স প্রাপ্ত দেশি মদের দোকানের বেশিরভাগ বোতল ভেঙে চুরমার। তাঁরও বক্তব্য, “আগে কখনও এমন ঘটনা হয়নি। মাটির চালার দোকানটি ভেঙে সবই তছনছ করে দিল হাতিটি। সরকারি সাহায্য না পেলে নতুন করে ব্যবসা চালু করা মুশকিল।”
মাটির বাড়ির টালির ছাউনি সরিয়ে চাল ও গমের বস্তা ওই হাতিটি বের করে ছড়িয়ে দিয়েছে। ঘরের খাবারের জন্য রাখা চাল-গম নষ্ট হওয়ায় ও হাতির পেটে যাওয়ায় বন দফতরকে দায়ি করছেন শ্রীকান্ত মাঝি ও শিশির আইচ। শুধু তাঁরাই নয়, দলমার হাতির হামলায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে বাঁকাদহ রেঞ্জের ধানশোল, কলাবাগান-সহ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে। ধানশোল গ্রামে বাসিন্দা মুকুল দে বলেন, “শুধুমাত্র আমাদের গ্রামেই এক রাতে ২০ বিঘা জমির ধান লোপাট। এ বার সংসার চালাবো কী করে?” বৃন্দাবনপুর গ্রামের অধীর মাঝি, অজিত তুং, পানল মাঝিরা। অধীরবাবু বলেন, “৩৫টি হাতির দল আমার ধান জমিতে নেমে ২ বিঘা ধান চেটেপুটে সাফ করে দিয়েছে।”
হাতি নিয়ে ক্ষোভ সর্বত্র। বাঁকাদহ রেঞ্জের অফিসার বলাই ঘোষ বলেন, “দু’দফায় ৭৫টি হাতি ঢুকেছে। রাত পোহালেই আরও ২৫টি হাতি ঢুকবে। কী ভাবে সামাল দেব আমরাই ভেবে উঠতে পারছি না। হাতি তাড়াতে গ্রামবাসীদের কেরোসিন তেল মশাল জ্বালাবার জন্য দেওয়া হচ্ছে। সরকারি নিয়ম মেনে ক্ষতিপূরণ পাবেন বাসিন্দারা।”
যদিও গ্রামবাসীদের ক্ষোভ, “জুতোর শুকতলা ক্ষয়ে গেলেও সামান্য ক্ষতিপূরণ পেতে বছর খানেক লেগে যায়। আমরা ওই ক্ষতিপূরণ চাই না। বন দফতর হাতির পালকে জঙ্গলেই ঘিরে রাখুক। গ্রামে ও লোকালয়ে ঢোকা বন্ধ করুক।” বন দফতরের কর্তারা অবশ্য এর সদুত্তর দিতে পারেননি। |