|
|
|
|
সিঙ্গুর-শুনানি |
আগাম ক্ষতিপূরণ না দিয়েও অধিগ্রহণের সওয়াল রাজ্যের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
আগাম ক্ষতিপূরণ না দিয়েও, সাংবিধানিক অধিকারে যে কোনও সরকার জনস্বার্থে জমি অধিগ্রহণ করতে পারে। তবে সেই কাজে কোনও জমির মালিক যাতে বঞ্চিত না হন, অধিগ্রহণ আইনে তা বিশেষ ভাবে নজরে রাখার কথা বলা আছে বলে বুধবার রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কলকাতা হাইকোর্টে দাবি করেছেন অ্যাডভোকেট জেনারেল অনিন্দ্য মিত্র।
রাজ্যের ‘সিঙ্গুর জমি আইন’-কে অসাংবিধানিক বলে টাটা মোটরস কলকাতা হাইকোর্টে যে মামলা করেছে, তাতে সংস্থার পক্ষ থেকে প্রধান তিনটি অভিযোগ করা হয়েছে। এক, কেন্দ্রীয় জমি অধিগ্রহণের আইনের সঙ্গে সিঙ্গুর আইনের অনেক অসঙ্গতি রয়েছে। তাই সংবিধান অনুযায়ী ওই আইন বৈধ নয়। দুই, সিঙ্গুর আইনে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি স্থির না করেই রাজ্য সরকার সেই আইনের ক্ষমতাবলে রাতারাতি সিঙ্গুরের জমি দখল করে নিয়েছে। যা কোনও সরকারই করতে পারে না। এবং তিন, জমি অধিগ্রহণ আইনে ‘ইচ্ছুক-অনিচ্ছুক’ কৃষক বলে কোনও কথা বলা নেই। অথচ রাজ্য সরকার অনিচ্ছুক কৃষকদের জমি ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সিঙ্গুরের জমির দখল নিয়েছে।
বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়ের এজলাসে সওয়াল শুরুর প্রথম থেকেই এই তিনটি অভিযোগ তুলে আদালতের নজর টানার চেষ্টা করেছেন টাটা মোটরস-এর আইনজীবী সমরাদিত্য পাল। আর রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে গত কয়েক দিন ধরে ওই অভিযোগ তিনটিকেই অযৌক্তিক বলে এজলাসে জোর আক্রমণ করে চলেছেন অ্যাডভোকেট জেনারেল অনিন্দ্যবাবু।
ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রসঙ্গটি টেনে এনে অনিন্দ্যবাবু এ দিন জমি অধিগ্রহণ আইনের বিভিন্ন ধারা-উপধারাকে উল্লেখ করে বিচারপতির সামনে তাঁর যুক্তির জাল বোনার চেষ্টা করেছেন। তিনি বিচারপতিকে জানান, জনস্বার্থে যে কোনও জমি রাজ্য সরকার আগাম কোনও ক্ষতিপূরণ না দিয়েই অধিগ্রহণ করতে পারে। কারণ, আইন মোতাবেক অধিগ্রহণ পদ্ধতিটি দীর্ঘমেয়াদি। এই কাজে কম পক্ষে দুই থেকে তিন বছর সময় লেগেই যায়। সে ক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণ আইনে স্পষ্ট বলা আছে, ক্ষতিপূরণ নিশ্চয়ই নির্ধারণ করে দিতে হবে। প্রয়োজনে জমির মালিককে বার্ষিক ৯ শতাংশ সুদ দেওয়ার কথাও বলা আছে। কিন্তু কোথাও এমন বাধ্যবাধকতা নেই যে, আগাম সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণ বুঝিয়ে দিয়েই শুধু জমি অধিগ্রহণ করা যাবে। তাই টাটা মোটরস-এর ওই আবেদনের কোনও যৌক্তিকতাই নেই।
কেন্দ্রীয় আইনের সঙ্গে সিঙ্গুর আইনের অসঙ্গতি রয়েছে বলে যে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, সেই সূত্র ধরে অনিন্দ্যবাবু এ দিন আদালতকে জানান, ১৮৯৪ সালের জমি অধিগ্রহণ আইনের সঙ্গে সিঙ্গুর আইনের কোনও সরাসরি সম্পর্ক নেই। তাই বিরোধের কোনও প্রশ্নই আসছে না। তাঁর পাল্টা যুক্তি, কেন্দ্রীয় আইন মেনে জনস্বার্থে (টাটা মোটরস-এর ন্যানো প্রকল্পের জন্য) সিঙ্গুরের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু তা কাজে না লাগায় সিঙ্গুর আইন প্রণয়ন করে ফের জনস্বার্থেই (অনিচ্ছুক কৃষকদের জমি ফেরত এবং অন্য কারখানা) ওই জমি ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সাংবিধানিক ভাবেই ওই আইন প্রণয়নের ক্ষমতা রাজ্যগুলিকে দেওয়া আছে বলে তিনি বিচারপতিকে জানান।
সিঙ্গুর আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের অন্যতম প্রধান যুক্তি হচ্ছে, টাটা মোটরস-কে ন্যানো কারখানা গড়তে সিঙ্গুরের যে জমি দেওয়া হয়েছিল, সেখানে তারা প্রকল্প গড়েনি। উল্টে প্রকল্প গুটিয়ে অন্য রাজ্যে চলে গিয়েছে। ছেড়ে চলে গিয়েছে বলেই অব্যবহৃত সেই জমি জনস্বার্থে ফেরত নেওয়া হয়েছে।
অনিন্দ্যবাবু এ দিন বিচারপতিকে জানান, ৩ অক্টোবর ২০০৮ সালে টাটা মোটরস-এর চেয়ারম্যান রতন টাটা প্রকল্প গুটিয়ে নেওয়ার ক থা ঘোষণা করেন। তার পর থেকেই ওই জমি কোনও কাজে লাগেনি। ২০১১ সালে এসে রাজ্য সরকার বাধ্য হয়েই পশ্চিমবঙ্গের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রয়োজনে সিঙ্গুরের জমি ফেরত নিয়েছে। এতে রাজ্য সরকার অসাংবিধানিক পদক্ষেপ কিছু নেয়নি বলেই তাঁর দাবি। |
|
|
|
|
|