সম্পাদকীয় ২...
ভরাডুবির কারণ
রাজনীতি ব্যতীত অন্য সব ক্ষেত্রেই অবসরের একটি নির্দিষ্ট বয়স আছে। চাকুরির ক্ষেত্রে যেমন ষাট বৎসর। সেই বয়সে পৌঁছাইলে পেশা ছাড়িয়া সরিয়া যাওয়াই নিয়ম। যে খেলায় শারীরিক দক্ষতার প্রয়োজন হয়, সেই খেলাগুলিতে অবসরের প্রকৃষ্ট বয়স ক্রমশই কমিয়া আসিতেছে, কারণ প্রতিযোগিতার তীব্রতা এবং শরীরের উপর দাবি ক্রমশই বাড়িতেছে। ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিকাংশ সদস্যই বহু পূর্বে অবসরের বয়স পার করিয়াছেন। রাহুল দ্রাবিড়, সচিন তেন্ডুলকর বা ভি ভি এস লক্ষ্মণ ইতিমধ্যেই দীর্ঘ ‘এক্সটেনশন’ পাইয়াছেন। বীরেন্দ্র সহবাগ, জাহির খান বা হরভজন সিংহও অবসরের বয়স অতিক্রম করিয়াছেন। এমনকী, যে মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে তরুণ প্রজন্মের প্রতিভূ গণ্য করা হইয়া থাকে, তিনিও ত্রিশোর্ধ্ব। ভারতীয় দলটি এখন কার্যত বৃদ্ধাশ্রম। বৃদ্ধাশ্রমে রোগব্যাধি থাকিবে, তাহাতে আশ্চর্য কী? ভারতীয় দলেও আছে। একাধিক খেলোয়াড় চোটের জন্য ইংল্যান্ড সিরিজের মাঝপথেই বিদায় লইয়াছেন। সহবাগ নাকি চোট সারাইয়া দলে যোগ দিয়াছিলেন। তাঁহাকে দেখিয়া অবশ্য আরোগ্যলাভের প্রমাণ পাওয়া যায় নাই। একটি অসুস্থ, বৃদ্ধ দল যতখানি খেলিতে পারে, ভারত তাহা খেলিয়াছে। তাহার ফল কী হইয়াছে, ক্রিকেটের রেকর্ড বইয়ে তাহা লেখা থাকিবে। রাহুল দ্রাবিড় বা সচিন তেন্ডুলকর নিঃসন্দেহে বিরাট মাপের খেলোয়াড়। কিন্তু, ডন ব্র্যাডম্যানকেও এক দিন অবসর লইতে হইয়াছিল। স্বাভাবিক ভাবেই তাঁহাদেরও জায়গা ছাড়িতে হইবে। যদি তাঁহারা স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ না করেন, নির্বাচকদেরই কাজটি করিতে হইবে। তরুণ প্রজন্মের জন্য জায়গা না করিয়া দিলে ভারতীয় দলের উন্নতির আশা নাই। কেহ বলিতেই পারেন, ইংল্যান্ড সফরে যিনি সফলতম, তিনি বিশ্বের বয়স্কতম ক্রিকেটার। কিন্তু, তাহা ব্যতিক্রমমাত্র। সেই ব্যতিক্রমের মুখাপেক্ষী হইয়া নিয়মকে অস্বীকার করিলে ভবিষ্যৎ অন্ধকার। বস্তুত, এই ব্যতিক্রমের উপর অতিনির্ভরশীলতা দলের ব্যাধিকে আরও প্রকট করিয়াছে।
তবে, ইংল্যান্ডে ভরাডুবির আরও কারণ আছে। যে দলটি বিগত এক বৎসর টেস্ট ক্রিকেটে বিশ্বে এক নম্বর, বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন, সেই দল যখন চার টেস্টের সিরিজ ০-৪ হারে, তখন বোঝা সম্ভব পুরাতন রোগটি সারে নাই। ইংল্যান্ডের সিমিং উইকেটে সুইং সামলাইতে আগেকার ভারতীয় দলগুলি যে ভাবে ব্যর্থ হইত, মহেন্দ্র সিংহ ধোনির বাহিনীও সেই ভাবেই ব্যর্থ হইয়াছে। পূর্বের দলগুলির যে রোগ ছিল, বর্তমান দলটিরও সেই একই রোগ উপমহাদেশের বাহিরে অন্য কোনও দেশের পিচে খেলিতে না পারা। তাহার দায় সুরেশ রায়না অথবা গৌতম গম্ভীরের যতখানি, তাহা অপেক্ষা বোর্ড কর্তাদের বেশি। যুগের পর যুগ দেশের প্রতিটি টেস্ট কেন্দ্রের ইউকেটকে ঘাসহীন রাখিয়া, স্পিনারদের স্বর্গ তৈরি করিয়া তাঁহারা ভারতীয় ক্রিকেটকে প্রতিবন্ধী করিয়া তুলিয়াছেন। ফলে ডারবান বা পার্থ-এর বাউন্সই হোক অথবা লর্ডস-ওভালের সুইং, ভারতীয় ক্রিকেটাররা অসহায় হইয়া পড়েন। অপরিচয়ের অসহায়ত্ব। টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে পয়লা নম্বর হইতে তৃতীয় স্থানে নামিয়া আসা তাই অবধারিতই ছিল। কেহ বলিতেই পারেন, যে দল বিশ্বের সকল প্রান্তে সমান মানের খেলা উপহার দিতে পারে না, তাহার এক নম্বর হইবার যৌক্তিকতা নাই। বোর্ড কর্তারা এই কথাটি অস্বীকার করিতে পারিবেন কি?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.