|
|
|
|
অস্বস্তি বরুণকে নিয়েও |
দলীয় নীতি নিয়েই প্রশ্ন, ইস্তফা দিতে চান যশবন্ত |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
দলের নেতৃত্বের কাছে ইস্তফা দিতে চেয়ে বিজেপির ‘নেতা’ ও ‘নীতি’র সঙ্কটকেই প্রকাশ্যে নিয়ে এলেন যশবন্ত সিন্হা। বিড়ম্বনার এখানেই শেষ নয়। বিজেপি যখন অণ্ণার জনলোকপাল বিলকে হুবহু সমর্থন করছে না, সেই সময় দলের তরুণ নেতা বরুণ গাঁধী আজ অণ্ণার অনশন স্থলে গিয়ে সেই বিলেরই পক্ষে সওয়াল করলেন।
মনমোহন সিংহ সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়ে কংগ্রেস-বিরোধিতার রাশ নিজেদের হাতেই রাখতে চেয়েছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। কিন্তু বিজেপির বদলে এখন অণ্ণা হজারেই দুর্নীতি-বিরোধিতার ‘মুখ’ হয়ে উঠলেন। আজ সকালে বিজেপির সংসদীয় দলের বৈঠকে যশবন্ত সিন্হা দলেরই শীর্ষ নেতৃত্বের নীতির সমালোচনা করলেন। তিনি বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করেই তিনি বিজেপিতে এসেছেন। বিজেপিই দেশজুড়ে দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলন শুরু করেছিল। কিন্তু এখন তাঁর সংসদীয় কেন্দ্রের ভোটাররাই বিজেপিকে দুষছে। তাঁদের বক্তব্য, বিজেপি দুর্নীতির বিরুদ্ধে তেমন আক্রমণাত্মক নয়। লোকপাল নিয়ে যতটা কড়া মনোভাব নেওয়া উচিত ছিল, তার বদলে বরং অনেক নরম অবস্থান নেওয়া হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে দল চাইলে তিনি ইস্তফা দিতে রাজি। শত্রুঘ্ন সিন্হা, উদয় সিংহের মতো বিজেপির অন্য সাংসদরাও যশবন্তকে সমর্থন করেন। কিন্তু শীর্ষ নেতারা তাঁকে ইস্তফা দিতে বারণ করেন।
বৈঠকের পরে যশবন্ত অবশ্য বলেন, “যা বলার দলের মধ্যেই বলেছি। এই নিয়ে বাইরে কোনও মন্তব্য করব না।” বিজেপির অনেকেই অবশ্য মনে করছেন, একের পর এক দুর্নীতিতে কংগ্রেস এবং মনমোহন সরকার জেরবার হলেও বিজেপি তার রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে পারছে না। তার মূল কারণ, দলের কাছে এমন কোনও নেতা নেই, যিনি গোটা আন্দোলনে যোগ্য হাতে নেতৃত্ব দিতে পারেন। আর যোগ্য নেতৃত্বের অনুপস্থিতিতে দলের নীতিও তথৈবচ।
বিজেপির এক প্রবীণ সাংসদ মন্তব্য করেন, “যশবন্ত যা বলেছেন, তা দলের অনেকেরই মনের কথা। সংসদের অধিবেশন শুরুর আগে অবস্থান নেওয়া হল, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম ও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের ইস্তফা সুনিশ্চিত করা হবে। অথচ অধিবেশন শুরু হওয়ার পর এই নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্যই হল না দলের পক্ষ থেকে। বরং কংগ্রেসের সঙ্গে এমন ভাব-ভালবাসা হল যে বাকি বিরোধী দলগুলি বলতে শুরু করল গোপন আঁতাঁত হয়েছে।” এত দিন পরে আজ সংসদের উভয় সভায় দুর্নীতি নিয়ে আলোচনা হলেও তাঁর মতে, অরুণ জেটলি-মুরলী মনোহর জোশীর মতো নেতাদের বক্তব্য ‘নখদন্তহীন’।
যশবন্তের এই ‘বিদ্রোহে’র মধ্যেই আজ সকালে অণ্ণার অনশন স্থলে পৌঁছে যান দলের তরুণ নেতা বরুণ গাঁধী। অণ্ণা প্রসঙ্গে বরুণ অনেক দিন ধরেই সক্রিয়। কখনও অণ্ণাকে চিঠি লিখে তাঁর বাড়িতে অনশনের প্রস্তাব দেন তিনি, কখনও লোকসভায় জনলোকপাল বিল পেশ করার তোড়জোড় করেন। আজ অনশন স্থলে জনগণের ভিড়ে বরুণ থাকায় বিজেপির আপত্তি না থাকলেও সেখানে গিয়ে তিনি যে ভাবে জনলোকপাল বিলের পক্ষে সওয়াল করেছেন, তাতে দলে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। বিজেপি নেতৃত্ব জনলোকপালের অনেক ধারারই বিরোধী।
একের পর এক বিড়ম্বনার কারণে বিজেপি আজ নির্ধারিত সাংবাদিক বৈঠকও বাতিল করে দেয়। তাঁরা যে অণ্ণার পাশে আছেন, সেই বার্তা দিতে আজ প্রধানমন্ত্রীর ইফতারে অংশ যাননি যশবন্ত, বরুণ ও মুখতার আব্বাস নকভি।
তবে যশবন্তের আপত্তির প্রেক্ষিতে প্রকাশ্যে এসে রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলি বলেন, “দল কখনওই দুর্নীতি-বিরোধিতার প্রসঙ্গে নরম মনোভাব নেয়নি। প্রথম থেকেই লোকপাল বিলের বিরোধিতা করা হয়েছে। জনলোকপাল বিলের সব কিছুও যে গ্রহণযোগ্য নয়, তা-ও জানানো হয়েছে। সরকারি বিল প্রত্যাহার করে নেওয়ার দাবিও জানানো হয়েছে সর্বদলীয় বৈঠকে।” তবে যশবন্ত দলের মধ্যে অসন্তোষ প্রকাশ করলেও যে ভাবে সেটি বাইরে ফাঁস হল, সেই ঘটনাটি ভাল চোখে দেখছেন না বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ী। তাঁর ঘনিষ্ঠ এক নেতার মতে, “বিজেপি গণতান্ত্রিক দল। অন্য দলের মতো একনায়কতন্ত্র এখানে চলে না। তবু গডকড়ী সভাপতি হওয়ার পরে এ ধরনের ঘটনা একেবারে বন্ধ করে দেওয়া গিয়েছিল। মনে হচ্ছে, ফের শক্ত হাতে রাশ টানা দরকার।” |
|
|
|
|
|