দিনভর বৈঠকেও রফাসূত্র অধরা, রাতে তিক্ততা হজারের স্বাস্থ্যের দায় নিয়ে
অণ্ণা-শিবিরের অভিযোগ ওড়ালেন প্রণব
ণ্ণার স্বাস্থ্য নিয়ে মাঝরাতে চাপানউতোর।
প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনা সেরে রামলীলা ময়দানে এসে অরবিন্দ কেজরিওয়াল অভিযোগ করলেন, সরকার বলছে, অণ্ণার শারীরিক অবস্থা নিয়ে তাদের কোনও মাথাব্যথা নেই। এর কয়েক মিনিটের মধ্যেই সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে খোদ প্রণববাবু সংবাদমাধ্যমকে জানালেন, অণ্ণার স্বাস্থ্য নিয়ে সরকার ঘোরতর উদ্বিগ্ন।
অণ্ণার অনশন আজ ৯ দিনে পড়ল। তাঁর দাবি না মানা পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন তিনি। ফলে বুধবার রাতে সরকার এবং টিম-অণ্ণার আলোচনা থমকে যাওয়ায় অণ্ণার স্বাস্থ্য নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই উদ্বেগ তৈরি হয়। অণ্ণা নিজে অবশ্য এ দিন রাতে মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলেছেন, তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ, তাঁর রক্তচাপও স্বাভাবিক রয়েছে। এখনও চাইলে দু’কিলোমিটার দৌড়তে পারেন। আরও অন্তত ৯ দিন অনশন করাটা কোনও সমস্যাই নয়।
কিন্তু দিনভর দফায় দফায় তাঁকে পরীক্ষা করা চিকিৎসকরা এতটা নিশ্চিন্ত নন। তাঁদের বক্তব্য, এ ক’দিনের অনশনে অণ্ণার ওজন ছ’কেজি কমেছে। সুগারের মাত্রা বেড়েছে, কমেছে রক্তচাপ। চিকিৎসকরা বলছেন, চুয়াত্তর বছরের অণ্ণা এর পরেও স্যালাইন না নিলে বিপদ হতে পারে। কিন্তু সেই পরামর্শ অণ্ণা মানতে চাননি। ঘটনা হল, মুখে যা-ই বলুন, অণ্ণার শরীরে আজ কিন্তু ধকলের ছাপ ফুটে উঠেছে।
অণ্ণাকে পরীক্ষা চিকিৎসকদের। ছবি: পি টি আই।
অরবিন্দ কেজরিওয়ালদের অভিযোগ, এই অবস্থায় রাতে সরকারের সঙ্গে আলোচনা কার্যত ‘ভেস্তে যাওয়ার’ পরে যখন তাঁরা বলেন, তা হলে তো অণ্ণা অনশন তুলবেন না। তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হবে। তখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, সেটা তাদের ‘মাথাব্যথা’ নয়। ‘টিম অণ্ণা’র চিন্তার বিষয়।
এই অভিযোগ ওঠার কয়েক মিনিটের মধ্যেই তা পুরোপুরি অসত্য বলে উড়িয়ে দেন প্রণববাবু। তিনি বলেন, “এই ধরনের কথা কী ভাবে বলা হচ্ছে জানি না! অণ্ণার স্বাস্থ্য নিয়ে সরকার অত্যন্ত চিন্তিত। আমরা বারবার তাঁকে অনশন প্রত্যাহার করতে অনুরোধ করেছি। গত কাল প্রধানমন্ত্রী নিজে চিঠি দিয়েছেন। আজ টিম অণ্ণার সঙ্গে বৈঠকের পরে সেই অনুরোধে সাড়া দেওয়ার জন্য আমি নিজে তাঁদের বলেছি।” আলোচনা ভেস্তে গিয়েছে, এই কথাও মানতে রাজি হননি প্রণববাবু। তাঁর কথায়, “আমি যতটা বুঝেছি তাতে আগামিকাল বা পরশু ফের আলোচনার কথাই হয়েছে।” সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে, প্রণববাবু ও সলমন খুরশিদরা ‘টিম অণ্ণা’কে বোঝানোর চেষ্টা করছেন, অণ্ণার অনশন ও সরকারের সঙ্গে আলোচনা, এই দু’টি আলাদা করে দেখা হোক। হাসপাতালে অণ্ণার চিকিৎসা শুরু হোক। পাশাপাশি সরকারের সঙ্গে অণ্ণার প্রতিনিধিদের আলোচনা চলতে থাকুক। কিন্তু সেই কথা মানার কোনও লক্ষণ এখনও অণ্ণা-শিবিরের তরফে নেই।
এই অবস্থায় সরকার তথা কংগ্রেসের অনেকেই মনে করছেন, অণ্ণাকে রামলীলা ময়দান থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে দেওয়া ছাড়া পথ নেই। কারণ সত্যিই অণ্ণার ‘কিছু হয়ে গেলে’ তার মারাত্মক প্রতিক্রিয়া হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফেও অণ্ণাকে হাসপাতালে তুলে নিয়ে যাওয়ার একটি পরিকল্পনা তৈরি হয়েছে। সেই অনুযায়ী রামলীলা ময়দান ঘিরে আজ প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এই পরিকল্পনার বিপক্ষে যুক্তি হল, পুলিশ দিয়ে জোর করে অণ্ণাকে অনশন-মঞ্চ থেকে তোলা হলে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যেতে পারে। যদিও রাতে কেজরিওয়াল সরকারের তুলে নিয়ে যাওয়ার ‘ষড়যন্ত্রের’ কথা জানানোর পর অণ্ণা রামলীলা ময়দানে উপস্থিত জনতাকে বলেন, সে ক্ষেত্রে যেন কোনও রকম বাধা দেওয়া না হয়। বরং কাল থেকে তাঁরা যেন সাংসদদের বাড়ি ঘেরাও করে জেলে যান।
সেটা ঘটলেও কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। এবং শুধু দিল্লিতে নয়, দেশের অন্যত্রও। ফলে সরকারের দুশ্চিন্তা বাড়ছে। দিল্লি জুড়ে এখন শুধু তেরঙ্গা আর ‘ভারত মাতা কি জয়’ ধ্বনি। বাসে বা মেট্রো রেলের মধ্যেও অণ্ণার নামে জয়ধ্বনি উঠছে। গোটা শহরের মানুষ রামলীলা ময়দানমুখী। গাড়িতে, মোটরবাইকে চেপে, মাথায় গাঁধী-টুপি পরা অণ্ণার সমর্থকরা হাতে পতাকা নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। রাস্তার মাঝখানে হঠাৎ হঠাৎ তাঁরা দাঁড়িয়ে পড়ছেন। যার ফলে গোটা রাজধানীতে যানজট ছড়িয়ে পড়েছে। নাকাল হয়েছেন সাধারণ মানুষ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.