পুজোর মুখে বর্ধিত এলাকা নিয়ে কাজ শুরুর আগে কলকাতা পুলিশের কাছে এখন বড় ‘চ্যালেঞ্জ’ উৎসবের দিনগুলোয়, বিশেষত বেহালা এলাকার যান-নিয়ন্ত্রণ। আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে যে সমস্ত এলাকা কলকাতা পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আসছে, তার একটা বড় অংশেই এখন বেশ কিছু পুজো দর্শনার্থীদের বিপুল ভিড় টানে। বেহালা ও দক্ষিণ শহরতলির ওই পুজোগুলিতে ভিড়ের চাপ তো আছেই, সেই সঙ্গে ডায়মন্ড হারবার রোডে চলছে জোকা মেট্রোর কাজ। ফলে রাস্তা এমনিতেই সরু হয়ে গিয়েছে। কাজের জেরে রাস্তা বেহালও। অথচ, গত কয়েক বছর ধরেই পুজোর দিনগুলোয় দুর্গাপুর ব্রিজের কাছ থেকে তারাতলা হয়ে পুজোর ভিড় আছড়ে পড়ছে ডায়মন্ড হারবার রোড এবং জেমস্ লং সরণিতে। দায়িত্ব নেওয়ার এক মাসের মাথায় এই জনসমুদ্র কলকাতা পুলিশ কতটা সুষ্ঠু ভাবে সামলাতে পারবে, সেটাই এখন প্রশ্ন। যদিও গত কয়েক বারের পুজোয় সুষ্ঠু যান নিয়ন্ত্রণের দক্ষতা প্রমাণিত। সেই অভিজ্ঞতা সঙ্গে নিয়েই তাঁরা ওই কাজে নামবেন বলে দাবি করেছেন ট্রাফিক-কর্তারা। বর্ধিত এলাকায় থানার সংখ্যা ৯টি থেকে বেড়ে হচ্ছে ১৭টি। আর ট্রাফিক গার্ডের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াচ্ছে দু’টি থেকে দশটি। তা হলে ট্রাফিক-নিয়ন্ত্রণই কেন সব থেকে বড় ‘চ্যালেঞ্জ’ লালবাজারের কাছে? কর্তাদের ব্যাখ্যা, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ট্রাফিক-কর্মীদের ঠিক ভাবে মোতায়েন করে যানজট কমানোর চেষ্টাই ভাবাচ্ছে তাঁদের।
বেহালা ও যাদবপুর ভেঙে মোট যে ১০টি ট্রাফিক গার্ড হচ্ছে, সেগুলি হল ডায়মন্ড হারবার রোড, জেমস লং সরণি, ঠাকুরপুকুর, মেটিয়াবুরুজ, রিজেন্ট পার্ক, যাদবপুর, পূর্ব যাদবপুর, কসবা, তিলজলা এবং গড়িয়া। এই ট্রাফিক গার্ডগুলির মধ্যে জেমস লং সরণি, মেটিয়াবুরুজ, পূর্ব যাদবপুর, কসবা এবং তিলজলা ট্রাফিক গার্ডের বাড়ি সম্পূর্ণ নতুন। গড়িয়ার বাড়িটিও অংশত নতুন করে গড়ার কাজ প্রায় শেষের পথে। প্রতিটি ট্রাফিক গার্ডে এক জন অফিসার-ইন-চার্জ ও অতিরিক্ত অফিসার-ইন-চার্জের সঙ্গে আপাতত গড়ে ১০ জন সার্জেন্ট, পাঁচ জন এএসআই, ৫০-৫৫ জন কনস্টেবল ও ১০-১২ জন হোমগার্ড মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
শুধু তা-ই নয়, নিত্যদিনের সঙ্গে বেহালা ও সংলগ্ন এলাকায় পুজোর যানজট কেমন হতে পারে, তা নিয়ে ট্রাফিক-কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করছেন কর্তারা। কোন কোন রাস্তায়, কেন এবং কখন যানজট বেশি হয়, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ট্রাফিক সিগন্যাল, গার্ড রেল বসানো, ‘নো পার্কিং’ এলাকা চিহ্নিত করা, ‘জেব্রা ক্রসিং’ আঁকার কাজও যুদ্ধকালীন তৎপরতায় করা হবে, দাবি ট্রাফিক-কর্মীদের।
কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) জাভেদ শামিম বুধবার জানান, বর্ধিত এলাকার জন্য দু’টি শাখার (দক্ষিণ শহরতলি ও দক্ষিণ পশ্চিম) দায়িত্বে তিন জন ডেপুটি কমিশনার, পাঁচ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার থাকবেন। প্রতিটি থানায় দু’জন ইনস্পেক্টরের সঙ্গে আপাতত গড়ে ৮-১২ জন সাব-ইনস্পেক্টর, ১০ জন অ্যাসিন্ট্যান্ট সাব-ইনস্পেক্টর, ৫০ জন কনস্টেবল মোতায়েন করা হবে। এক জন করে মহিলা সাব-ইনস্পেক্টরও থাকবেন থানাগুলিতে (এই মুহূর্তে কলকাতা পুলিশের আওতায় যে ৪৮টি থানা রয়েছে, তার প্রতিটিতে অবশ্য মহিলা সাব-ইনস্পেক্টর নেই)।
মহিলা কনস্টেবল পাওয়া না-গেলে মহিলা গ্রিন পুলিশ বা মহিলা হোমগার্ড মোতায়েন করা হবে। তবে আপাতত থানায় সার্জেন্ট মোতায়েন করা যাবে না বলেই লালবাজার সূত্রে খবর। যৌথ ভাবে কর্মীদের মোতায়েন করছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা পুলিশ ও কলকাতা পুলিশ। জেলা পুলিশের পরিকাঠামো তুলনায় কম বলে অধিকাংশ পুলিশ দেওয়া হচ্ছে কলকাতা পুলিশের তরফেই। |