‘গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া, অন ডিউটি’ বোর্ড ঝোলানো হন্ডা সিটি গাড়িটির উপরে বেশ কিছু দিন ধরেই নজর রাখছিল পুলিশ। প্রতারণার অভিযোগও কানে আসছিল গাড়ির মালিক, ‘আইপিএস অফিসার’ রাজেশ রায়চৌধুরীর বিরুদ্ধে। কিন্তু সেই ‘আইপিএস’ পরিচয়ের কারণেই তাঁকে প্রথমে ঘাঁটাতে সাহস পাচ্ছিলেন না বাগুইআটি থানার অফিসারেরা। শেষমেশ মঙ্গলবার গভীর রাতে গোপন সূত্রে নির্দিষ্ট কিছু তথ্য পেয়ে হঠাৎই পুলিশ কেষ্টপুরে ওই ‘আইপিএস’-এর ফ্ল্যাটে হানা দিয়ে তুলে আনে গাড়ির চালককে। তাঁকে জেরা করেই জানা যায়, নকল আইপিএস অফিসার রাজেশের আসল নাম শুভঙ্কর হালদার। সে সেনাবাহিনীর এক বহিষ্কৃত কর্মী। ওই রাতেই কেষ্টপুরের ফ্ল্যাট থেকে শুভঙ্করকেও গ্রেফতার করে পুলিশ।
উল্লেখ্য, গত ২ অগস্ট উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়া থেকে পুলিশের ওসি হিসেবে পরিচয় দেওয়া এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়। রবিউল ইসলাম নামে ওই যুবক নিজেকে আমডাঙা থানার ওসি হিসেবে পরিচয় দিত। এ বার বাগুইআটি থানার হাতে ধরা পড়ল নকল আইপিএস শুভঙ্কর। |
তদন্তকারীরা জানান, পুলিশ যে তার উপরে নজর রাখছে, শুভঙ্কর কোনও ভাবে তা টের পায়। তাই কেষ্টপুরে যে ফ্ল্যাটে সে ভাড়া থাকত, সেখান থেকে গা-ঢাকা দিয়েছিল। ফলে মঙ্গলবার রাতে হন্ডা সিটির চালককে প্রথমে এক দফা জেরা করে পুলিশ। চালকের থেকেই শুভঙ্করের নম্বর নিয়ে তাকে ফোন করেন বাগুইআটি থানার আইসি গৌতম মিত্র। ফোনে শুভঙ্কর জানায়, সে সিআইডি-তে রয়েছে। কিন্তু সিআইডি অফিসার ‘গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া’র গাড়ি ব্যবহার করছেন দেখেই গৌতমবাবুর সন্দেহ দৃঢ় হয়। ফলে ওই চালককে দ্বিতীয় বার জেরা করে পুলিশ শুভঙ্করের আসল পরিচয় পায়।
পুলিশ জানিয়েছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপির বাসিন্দা শুভঙ্কর প্রথমে সেনাবাহিনীর সিগন্যাল দফতরের কর্মী ছিল। ২০০৯ সালে তাকে সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কার করা হয়। গত এক বছর ধরে সে কেষ্টপুরে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে বসবাস করছিল। তখন থেকেই নিজেকে ‘আইপিএস’ পরিচয় দিয়ে লোকজনের টাকা আত্মসাৎ করা শুরু করে সে। নিজের হন্ডা সিটি গাড়িতে ‘গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া, অন ডিউটি’ বোর্ড লাগিয়ে, নিজের নামে ছাপানো প্যাডে ‘এনকাউন্টার অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট, আইপিএস’ লিখে সেগুলির সাহায্যে বিভিন্ন সরকারি দফতরে ভালই প্রভাব বিস্তার করে সে। ক্ষমতা জাহির করে নানা জনকে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা-চক্রও গড়ে তোলে শুভঙ্কর। রেল-সহ বিভিন্ন দফতরে চাকরি দেবে বলে রীতিমতো ‘ইন্টারভিউ’ নিত সে। ইন্টারভিউতে পাশ করার পরে চাকরির জন্য নিত অগ্রিম টাকাও।
উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার চম্পক ভট্টাচার্য বলেন, “নির্দিষ্ট খবরের ভিত্তিতে ওই নকল অফিসারের উপরে কিছু দিন ধরে নজর রাখা হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত তাকে ধরা হয়। ধৃতের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মামলা রুজু হয়েছে।”
শুভঙ্করের সঙ্গে পুলিশ তার স্ত্রী পাপিয়া এবং সন্দীপ সাহু, পবনকুমার অগ্রবাল, দীপঙ্কর চক্রবর্তী ও শুভঙ্কর চক্রবর্তী নামে আরও চার জনকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের কাছ থেকে পাঁচটি মোবাইল, ৩২ হাজার টাকা, বেশ কয়েকটি বায়োডেটা, একটি পুলিশের হ্যান্ডবুক, একটি ফরেন্সিক বিজ্ঞানের বই, একটি অশোকস্তম্ভ বসানো প্লেট এবং একটি ‘আইপিএস’ পরিচয়ের নেমপ্লেট উদ্ধার করা হয়েছে। যে গাড়িটি চড়ে শুভঙ্কর ঘুরত, সেটিও আটক করেছে পুলিশ।
বুধবার রাতে ওই গাড়ির চালককে জেরা করেই পুলিশ জানতে পারে, নিজেকে পাঠানকোটে কর্মরত এক সেনা আধিকারিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে সম্প্রতি বাগুইআটি এলাকায় শুভঙ্কর আরও একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছে। সেখানে নিজেকে তরুণ রায়চৌধুরী বলে পরিচয় দিয়েছে শুভঙ্কর। তার স্ত্রীর পরিচয় দিয়ে অন্য এক মহিলাকেও ওই ফ্ল্যাটে এনে সে রেখেছিল। সেই মহিলার পাসপোর্ট পুলিশ আটক করেছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, বুধবারই ওই ফ্ল্যাটের মালিককে ভাড়া দেওয়ার কথা ছিল শুভঙ্করের। ফ্ল্যাটটির হদিস পেয়ে পুলিশ ফ্ল্যাটের মালিককে শুভঙ্করকে ফোন করে কেষ্টপুরের ফ্ল্যাটে এসে ভাড়া দিয়ে যাওয়ার কথা বলতে বলে। ওই ফ্ল্যাটের মালিকের জোরাজুরিতে শেষ পর্যন্ত শুভঙ্কর রাজি হয়। এর পরে শুভঙ্কর কেষ্টপুরে এলে সেখান থেকেই তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। |