কলকাতা ও হাওড়া শহরে ট্রাফিকের অব্যবস্থা কাটাতে আরও একটি কমিটি গড়ল কলকাতা হাইকোর্ট। এর আগেও আদালত একটি কমিটি তৈরি করেছিল। তবে, সেটির কোনও সুপারিশই আজ পর্যন্ত কার্যকর হয়নি। ফলে এই ধরনের কমিটির কার্যকারিতা নিয়েই এ বার প্রশ্ন উঠেছে।
শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় কী ভাবে যানজট কমানো যায়, তার পথ খুঁজতে হাইকোর্ট ২০০৫ সালের মে মাসে চার সদস্যের একটি কমিটি গড়েছিল। ব্রেবোর্ন রোড, স্ট্র্যান্ড রোড, মহাত্মা গাঁধী রোড, নেতাজি সুভাষ রোড, কালীকৃষ্ণ ঠাকুর রোড, রবীন্দ্র সরণি এবং চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে ট্রাফিক ব্যবস্থার হাল ফেরাতে ওই কমিটি একটি রিপোর্ট দেয়। তাতে ফুটপাথ থেকে হকার সরানোর সুপারিশ করা হয়েছিল। কিন্তু বামফ্রন্ট সরকার তা কার্যকর করেনি। কলকাতা ও হাওড়ার ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ে পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের করা একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানির সময়ে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি পিনাকীচন্দ্র ঘোষ এবং বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চে বুধবার এই সব প্রসঙ্গ ওঠে। |
আগের রিপোর্টের সুপারিশ কার্যকর না হওয়ার প্রসঙ্গ স্মরণ করিয়ে দিলে ডিভিশন বেঞ্চ এ দিন নতুন একটি আট সদস্যের কমিটি তৈরি করে দেয়। আগের কমিটি ছিল আইনজীবীদের। এ বারের কমিটিতে থাকছেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার, ডি সি (ট্রাফিক), কলকাতা ও হাওড়া পুরসভার দুই কমিশনার, হাওড়ার পুলিশ সুপার, সরকারি কৌঁসুলি অশোককুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এবং পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। দুর্গাপুজোর পরে দু’সপ্তাহের মধ্যে ওই কমিটিকে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। ট্রাফিকের অব্যবস্থা দূর করতে যখনই কোনও উদ্যোগ হয়েছে, তখনই পথচারীদের রাস্তায় হাঁটা বন্ধ করতে ফুটপাথ হকারমুক্ত করার প্রসঙ্গ উঠেছে। এই কমিটির রিপোর্টেও হকার উচ্ছেদের প্রসঙ্গ আসতে পারে। কিন্তু বর্তমান সরকার আগেই জানিয়েছে, কোনও ভাবে হকার উচ্ছেদ করা যাবে না।
পথ আটকে মিছিল ও সভা করা নিয়েও এ দিন একই মামলায় শুনানি হয় ওই ডিভিশন বেঞ্চে। এ বিষয়ে আদালত সব দলের কাছ থেকে মতামত চেয়েছিল। বিজেপি আগেই রাস্তা আটকে মিছিল ও সভা করার পক্ষে মত দেয়। এ দিনই আদালতে সিপিএমের লিখিত মত জানানোর কথা ছিল। কিন্তু ওই দলের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আগামী কাল মুখ্যমন্ত্রী সর্বদল বৈঠক ডেকেছেন। সব দলের মত নিয়ে সরকারি নীতি প্রণয়ন হবে। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানার জন্য আদালতের অপেক্ষা করা উচিত।” তিনি আদালতকে জানান, পথ আটকে মিছিল এবং সভা বন্ধ বা নিয়ন্ত্রণের কোনও নির্দেশ জারি করলে তা রাজ্যের প্রশাসনিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। ফলে, তা কার্যকর না হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন মেয়র বিকাশবাবু এই প্রসঙ্গে শ্রমিকদের দাবি আদায়ের জন্য মিছিল ও সভা করার অধিকারের প্রশ্নও তোলেন।
কিন্তু ঠিক উল্টো কথা বলেছেন কলকাতা পুরসভার আইনজীবী ও রাজ্য সরকারের কৌঁসুলি অশোককুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। অশোকবাবু বলেন, “তাই বলে রাস্তায় মিছিল, জনসভা করে অ্যাম্বুল্যান্স আটকে দেওয়াও বাঞ্ছনীয় নয়। আদালত অভিভাবকের ভূমিকা পালন করছে। আদালত যে আদেশই দিক, প্রশাসন তা কার্যকর করবে।”
দুই পক্ষের মতামত শোনার পরে আদালত জানায়, রাজ্য সরকার এই ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নেয়, তা জানার জন্য অপেক্ষা করা হবে। পুজোর পরে দু’সপ্তাহের মধ্যে এই মামলার শুনানি হবে। তার মধ্যে যেন রাজ্য সরকার মিছিল ও জনসভা নিয়ে তাদের নীতি ঘোষণা করে। |