|
|
|
|
জমির পাট্টা নিয়ে বিক্ষোভ মহম্মদবাজারে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মহম্মদবাজার |
পাট্টা অনুযায়ী জমির দাবিতে বুধবার মহম্মদবাজারের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখালেন বেশ কিছু আদিবাসী লোকজন। নেতৃত্বে ছিল জেলা আদিবাসী গাঁওতা। বিক্ষোভ দেখানোর পাশাপাশি তাঁরা স্মারকলিপিও দেন।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৭৮ সালে মহম্মদবাজার এলাকার গণপুর পঞ্চায়েতের উলপাহাড়ি, ধরমপুর, চৌবেটা ও শাবলা গ্রামের ৪৫-৫০ জন ভূমিহীন আদিবাসীকে কলাইপাহাড়ি মৌজার একাধিক দাগে জমির পাট্টা দেওয়া হয়। সে সময় ক্ষমতায় ছিল বামফ্রন্ট। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, বামফ্রন্ট ক্ষমতায় আসার বছর দু’য়েকের মধ্যে বেশ কিছু ভূমিহীন আদিবাসী লোক জনকে জমির পাট্টা দেওয়া হয়েছিল। প্রাপকদের নামে সে সব জমির রেকর্ড হয়েও যায়। সরকারি নিয়ম মেনে খাজনাও দিচ্ছেন। কিন্তু বাস্তবে কাউকেই জমি দেওয়া হয়নি। দীর্ঘ ৩৪ বছরে জমির পাট্টা পাওয়া অনেকে মারাও গিয়েছেন।
তাঁদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে বি এল অ্যান্ড এল আর ও অফিসে পাট্টা পাওয়া জমি চিহ্নিত করে দখল দেওয়ার জন্য বলা হচ্ছে। কিন্তু আধিকারিকের সে ব্যাপারে কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। আদিবাসী গাঁওতার সম্পাদক রবিন সোরেন ও নেতা সুনীল সোরেন বলেন, “পাঁচামি পাথর খাদান এলাকা সংলগ্ন উলপাহাড়ি, ধরমপুর, চৌবেটা ও শাবলা গ্রামগুলির লোকজন অত্যন্ত গরিব। অধিকাংশ ভূমিহীন। তাঁদের জমির পাট্টা পাওয়ার বিষয়টি ৩৪ বছর আগের। খাতায় কলমে পাট্টা দেওয়ার কথা উল্লেখ থাকলেও বাস্তাবে তাঁরা জমি পাননি। পাট্টা না দিয়ে কার্যত তাঁদের ঠকানো হয়েছে। প্রায় ৬ মাস আগে আকাল মাড্ডি বিষয়টি আমাদের জানান।” তাঁদের দাবি, “কলাইপাহাড়ি মৌজার পাট্টা দেওয়া জমিগুলি বনদফতরের দখলে। বি এল অ্যান্ড এল আর ওকে জমি দেওয়ার জন্য বললে, তিনি জানান, বনদফতরের সঙ্গে কথা বলতে হবে। বনদফতরকে বললে, তাঁরা জানাচ্ছেন, সেখানে দফতরের গাছ আছে।” |
|
ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়। |
উলপাহাড়ির দুর্গা হাঁসদা বলেন, “কলাইপাহাড়ি মৌজায় ১ একর ৫৮ শতক জমি পাট্টা দেওয়া হয়। ২০০৩ সালে পাট্টা রেকর্ড হয়। খাজনাও দিয়ে আসছি। জমি পাব এই আশায় দিন গুনতে গুনতে বয়েক বছর আগে বাবা মারা গিয়েছেন।” তাঁর বৃদ্ধা মা ডুমনীদেবী বলেন, “আমার স্বামী জমি দেখতে পেলেন না। আমিও পাব না।’’ একই বক্তব্য ওই গ্রামের যাসনি মুর্মুর। তাঁর ছেলে গণপুর পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান সিপিএমের রাবণ মুর্মু বলেন, “২০০১-০৫ পর্যন্ত প্রধান ছিলাম। এখনও পার্টির সঙ্গে সক্রিয় ভাবে যুক্ত। জমির ব্যাপারে যখনই বি এল অ্যান্ড এল আর ওকে বলি, তিনি ‘দেখছি দেখব’ করে সময় পার করে দিচ্ছেন।” ধরমপুর গ্রামের কালীপদ সোরেনের নামে ১ একর ৫০ শতক জায়গা পাট্টা দেওয়া হয়েছে। তিনি এখন আর বেঁচে নেই। চৌবেটা গ্রামের বৃদ্ধা ফুলমনি সোরেনের আক্ষেপ, “আর কবে জমি পাব জানি না!”
বি এল অ্যান্ড এল আর ও রবিউল ইসলাম বলেন, “বিষয়টি মাস দু’য়েক আগে আমার নজরে আনেন। তদন্ত করে দেখা গিয়েছে সত্যিকারের পাট্টা পাওয়া লোকজনের ৯০ শতাংশ জমি বনদফতরের দখলে। বনদফতরের সঙ্গে কথা বলেছি। ওই দফতর থেকে জানানো হয়েছে, ১৯৭০ সালে তৎকালীন এডিএম এলআর বনদফতরকে জমি হস্তান্তর করে। বিষয়টি জেলাস্তরে জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সমস্যা সমাধানের জন্য প্রাপকদের কাছ থেকে কিছু দিন সময় চাওয়া হয়েছে।” বন দফতরের মহম্মদবাজারের রেঞ্জ অফিসার অধীরকুমার ক্ষীরহরি বলেন, “ওই এলাকায় ক্যানাল করার সময়ে বনদফতরের জমি নেওয়া হয়েছিল। পরিবর্তে বনদফতরকে যে জমি দেওয়া হয় সেগুলি আদিবাসীদের সংশ্লিষ্ট দফতর কী ভাবে পাট্টা দিল? এর চেয়ে আমার বেশি কিছু বলার নেই।” আদিবাসী গাঁওতার নেতা সুনীল সোরেন বলেন, “সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা ১৫ দিন সময় দিয়েছি।” |
|
|
|
|
|