|
|
|
|
গুরুঙ্গদের হাতেই অস্ত্র দিল চুক্তি, সরব সিপিএম |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
পাহাড়-চুক্তির মাধ্যমে রাজ্য সরকার গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার হাতে তামাক খেয়েছে বলে এ বার অভিযোগ করল সিপিএম। এই চুক্তির ফলে শুধু তরাই-ডুয়ার্সের সমতল নয়, দার্জিলিঙের পাহাড়েও ‘অশান্তির বীজ’ রয়ে গেল বলে আশঙ্কা রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের। এত দিন পর্যন্ত সিপিএমের আপত্তি ছিল সব দলের সঙ্গে আলোচনা না-করে পাহাড়-চুক্তি সম্পাদনের পদ্ধতি নিয়ে। চুক্তি সই হয়ে যাওয়ার পরে এ বার তারা চুক্তির বিষয়বস্তু নিয়েই প্রশ্ন তুলল।
ত্রিপাক্ষিক চুক্তিতে বলা হয়েছে, পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের জন্য মোর্চার দাবিকে ‘নথিভুক্ত’ রেখেই কেন্দ্র, রাজ্য এবং মোর্চা চুক্তিতে সহমত হচ্ছে। যদিও ওই চুক্তিরই আগের অংশে বলা হয়েছে, দার্জিলিং এবং সমতলের সংশ্লিষ্ট এলাকাকে পশ্চিমবঙ্গের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসাবে বজায় রাখার জন্যই কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার বারবার জোর দিয়েছে। তা হলে তার পরেও গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের দাবিকে চুক্তিতে ‘স্বীকৃতি’ দেওয়া হল কেন, সেই প্রশ্ন তুলেছে সিপিএম। তারা দৃষ্টান্ত দিচ্ছে জ্যোতি বসুর আমলে ১৯৮৮ সালের ত্রিপাক্ষিক চুক্তির, যেখানে সুবাস ঘিসিঙের একই দাবিকে ‘সরকারি চুক্তিপত্রে স্বীকৃতি’ দেওয়া হয়নি।
বিরোধী দলনেতা তথা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র মঙ্গলবার বলেন, “এটা আর দাবি-দাওয়ার পর্যায়ে নেই। চুক্তি হিসাবে স্বাক্ষরিত হয়েছে। মোর্চা নেতারা বলছেন, এক তলা বাড়ি তৈরি হয়েছে! এ বার দো’তলা তুলবেন তার উপরে!” সিপিএমের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী মমতা যে বলছেন রাজ্য অখণ্ড থাকবে, সেই ঘোষণা অবশ্যই স্বাগত। কিন্তু চুক্তিপত্রে গোর্খাল্যান্ডের দাবিকে ‘নথিভুক্ত’ করায় ভবিষ্যতে বিমল গুরুঙ্গেরা বলতেই পারবেন, পৃথক রাজ্যের দাবি থেকে তাঁরা যে সরেননি, সরকারি নথিতেই তার উল্লেখ রয়েছে। এই পরিস্থিতি তৈরির সুযোগ রাজ্য সরকার দিল কেন?
একই ভাবে সিপিএমের দলের দার্জিলিং জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যও বলেছেন, “চুক্তি সই হল ঠিকই।
কিন্তু তার আগে সর্বদল কোনও বৈঠক করে মত নেওয়া হল না। এটা দুর্ভাগ্যজনক। আলাদা রাজ্যের জন্য রাস্তা খোলা রাখায় অশান্তির আশঙ্কা কিন্তু রয়েই গেল বলে আমাদের মনে হচ্ছে।”
গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ)-এর আওতায় সমতলের এলাকা অন্তর্ভুক্তির দাবি বিবেচনার জন্য কমিটির কথা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে চুক্তিতে আরও বলা হয়েছে, শিলিগুড়ি, তরাই ও ডুয়ার্সের অতিরিক্ত অঞ্চল হস্তান্তরের সংস্থান সংশ্লিষ্ট বিধিতে থাকবে। দাবি নিয়ে ঐকমত্য এবং কমিটির সুপারিশের উপরেই বিষয়টি নির্ভর করবে। এই বিষয়টি নিয়েও প্রত্যাশিত ভাবে আপত্তি রয়েছে সিপিএমের। তাদের মতে, দার্জিলিঙে পাহাড়ের তিনটি মহকুমা বাদে সমতলের কোনও এলাকা জিটিএ-র অন্তর্ভুক্ত করা হবে না বলে মোর্চাকে সরাসরিই জানিয়ে দেওয়া উচিত ছিল। তা না-করে কমিটি গড়ে বিষয়টি জিইয়ে রাখায় দু’দিক থেকেই অশান্তি তৈরির অশান্তি থাকল বলে বিরোধী দল মনে করছে। এক দিকে, সমতলে এই নিয়ে প্রতিবাদের জেরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে পারে। আবার পৃথক রাজ্যের দাবির রাস্তা রাজ্য সরকার বন্ধ করে না-দেওয়ায় পাহাড়েও ‘অশান্তির বীজ’ থাকছে। বিরোধী দলনেতার কথায়, “চুক্তি হওয়ার আগে আমরা মূল যে দু’টি আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলাম, তা-ই সত্যি প্রমাণিত হয়েছে! সরকার পক্ষের অবশ্য বক্তব্য, কমিটি গড়ে সমতলের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টিকে ‘নিয়ন্ত্রণে’ আনতে চাওয়া হয়েছে।
ত্রিপাক্ষিক চুক্তির বয়ান এখন কিছু ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে। সেই রকমই একটি প্রতিলিপি হাতে নিয়ে সূর্যবাবু এ দিন বলেছেন, “রাজ্য সরকারের এত গোপনীয়তার পরেও চুক্তি দেখা যাচ্ছে! সরকার তো আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশ করেনি। তাই আমরাই চুক্তি প্রকাশ করে দিলাম। আমরা চাই, সরকার স্পষ্ট করে জানাক, এই চুক্তিই প্রকৃত চুক্তি কি না! এটা আসল চুক্তি না-হলে রাজ্যের স্বার্থে আমরাই খুশি হব!” আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরকার এই বিষয়ে অবস্থান স্পষ্ট করলে তাঁরাও তাঁদের পরবর্তী বক্তব্য জানাবেন বলে সূর্যবাবু জানিয়ে রেখেছেন।
চুক্তি সইয়ের দিনই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেছিলেন, স্বশাসিত পরিষদের নামে গোর্খাল্যান্ড নাম ব্যবহারে বামফ্রন্ট সরকারই রাজি হয়েছিল। সেই বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল গত বছর ১০ অগস্ট। এই প্রেক্ষিতে সূর্যবাবুর ব্যাখ্যা, “নাম ব্যবহারটা ঘটনা। সেই জন্যই আমরা বলেছি, শব্দ ব্যবহার নিয়ে চুক্তি ভেঙে যাক, তা কখনওই চাই না। কিন্তু এই গোর্খাল্যান্ড নামই চূড়ান্ত চুক্তিতে থাকবে কি না, তা নিয়ে সব দলের সঙ্গে সবিস্তার আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে বলে বামফ্রন্ট সরকার তখনই বলেছিল।”
|
এই সংক্রান্ত আরও খবর... |
|
|
|
|
|
|