|
|
|
|
ব্যাপক গোলমাল প্রফুল্লচন্দ্র কলেজে |
কলেজে কলেজে দখলদারি, সংঘর্ষ, ‘হুমকি’র ঢেউ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের ঢেউ এ বার সরাসরি কলেজগুলিতে গিয়ে পড়ছে।
বিধানসভা ভোটের কিছু আগেই এ রাজ্যের কলেজে কলেজে ছাত্র সংসদের নির্বাচন হয়েছে। অনেক জায়গায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদ জয়ী হলেও বেশির ভাগ কলেজেই ছাত্র সংসদ এসএফআই-এর নিয়ন্ত্রণেই ছিল। বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের বিপুল জয়ের পরে তাদের ছাত্র সংগঠন এখন ‘ভয় দেখিয়ে’ বিভিন্ন ছাত্র সংসদের দখল নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ।
মঙ্গলবার উত্তর চব্বিশ পরগনার আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র কলেজে ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদককে জোর করে পদত্যাগ করানোর চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ। সোমবার একই অভিযোগ উঠেছিল, বিধাননগর কলেজে। এর আগে বহরমপুর কলেজেও মারধর করে ছাত্র সংসদের সম্পাদককে ইস্তফা দিতে বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ মিলেছে।
এ দিন এসএফআইয়ের নিউ ব্যারাকপুর লোকাল কমিটির সম্পাদক প্রদীপ নিয়োগী অভিযোগ করেছেন, “আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র কলেজে এসএফআই-এর সাধারণ সম্পাদক সুমন চাকলাকে নিগ্রহ করে তৃণমূল সমর্থকেরা। তারা গরম জলের পাত্রে সুমনের মুখ ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। তাদের দাবি, সুমনকে পদত্যাগ করতে হবে। এসএফআই সমর্থকদেরও সংগঠন ছেড়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদে যোগ দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে।” তৃণমূল ছাত্র পরিষদ যথারীতি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সংগঠনের তরফে ওই কলেজের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মনোজ সরকার (তিনিও কলেজের কেউ নন) বলেন, “এসএফআই-এর সঙ্গে আলোচনা চলছিল। সেই সময় কলেজের এক শিক্ষাকর্মী গোলমাল বাধান।”
কলেজের অধ্যক্ষ শক্তিব্রত ভৌমিক জানান, এ দিন হঠাৎ তিনি ক্যান্টিন থেকে গোলমালের আওয়াজ পান। “গিয়ে দেখি দু’দল ছাত্রের মধ্যে হাতাহাতি হচ্ছে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের থেকে জানতে পারি, অনেক বহিরাগত কলেজে ঢুকে পড়েছে।” এসএফআই-তৃণমূলের গোলমালের জেরে এ দিন মেধাতালিকাও প্রকাশ করা যায়নি। শিক্ষাকর্মীরা অভিযোগ করেছেন, তাঁদের এক জনকে হেনস্থা করা হয়েছে। প্রতিবাদে তাঁরা ইতিমধ্যেই কর্মবিরতি পালন করতে শুরু করেছেন। বুধবার থেকে শিক্ষকরাও তাতে সামিল হচ্ছেন।
সোমবারই বিধাননগর কলেজে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের এক দল সমর্থক ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক সৌরভ সরকার-সহ কয়েক জন এসএফআই সমর্থকে প্রায় তিন ঘণ্টা আটকে রাখেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। এই কলেজেও ছাত্র সংসদ এসএফআইয়ের দখলে। সৌরভের অভিযোগ, “সোমবার বিকেলে কয়েক জন সমর্থক-সহ আমাকে আটকে রেখে ইস্তফা দেওয়ার জন্য জোরাজুরি করা হয়। লোহার রড, চেন দেখিয়ে মারার ভয় দেখানো হয়। পরে অধ্যক্ষের হস্তক্ষেপে ছাড়া পাই। পুলিশ গাড়ি করে আমাদের সল্টলেকের বাইরে ছেড়ে আসে।” সৌরভের অভিযোগ, এসএফআই না ছাড়লে কলেজের ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড নিতে দেওয়া হবে না বলে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ হুমকি দিচ্ছে। তিনি বলেন, “কলেজের প্রথম বর্ষের পরীক্ষার আসন পড়েছে মতিঝিল কলেজে। সেখানে ছাত্র সংসদ তৃণমূলের দখলে। এসএফআই করলে ওই কলেজে গিয়ে পরীক্ষা দিতে সমস্যা হবে বলেও ছাত্রছাত্রীদের ভয় দেখানো হচ্ছে।” তৃণমূল ছাত্র পরিষদের উত্তর ২৪ পরগনা শাখা অবশ্য ঘটনাটি অস্বীকার করেছে। সংগঠনের তরফে সঞ্জয় রাহা বলেন, “এমন কোনও ঘটনার কথা আমার জানা নেই। আমরা নির্বাচনের মাধ্যমেই ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে থাকব। তার জন্য এক বছর অপেক্ষা করব।”
তৃণমূল ছাত্র নেতারা যাই বলুন, একের পর এক অভিযোগ কিন্তু জমছেই। গত সপ্তাহে বাইপাসের ধারে একটি কলেজের ইতিহাস (অনার্স) দ্বিতীয় বর্ষের এসএফআই সমর্থক এক ছাত্রীকে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বেশ কয়েক জন ছেলেমেয়ে ঘিরে ধরে মারধর করেন বলে অভিযোগ। তাঁকে এসএফআই ছাড়ার হুমকি দেন হামলাকারীরা। এই ঘটনায় ছাত্রীটি আহত হন। তাঁর অভিযোগ, এসএফআই না ছাড়লে তাঁকে তৃতীয় বর্ষের ক্লাস করতে দেওয়া হবে না বলে হুমকি দিয়েছে তৃণমূল।
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী বলছেন, “এই সব অভিযোগ ভিত্তিহীন। এসএফআই-এর কোনও অস্তিত্বই নেই এখন।” তাঁর পাল্টা দাবি, প্রচুর এসএফআই সমর্থক ছাত্রছাত্রী স্বেচ্ছায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদে যোগ দিচ্ছেন। এসএফআইয়ের রাজ্য সভাপতি কৌস্তুভ চট্টোপাধ্যায় এর বিরোধিতা করে বলেন, “দুর্নীতির দায়ে কোনও কোনও কলেজে এসএফআই-এর কিছু সমর্থককে বহিষ্কার করা হয়েছে। তারাই তৃণমূলে যোগ দিয়েছে। আর এ পর্যন্ত জোর করে এসএফআই থেকে পদত্যাগ করানোর ঘটনা ঘটেছে ৬২টি। তৃণমূলের গণতন্ত্রের এটাই নমুনা।” |
|
|
|
|
|