সুবাস ঘিসিঙের গোর্খা পার্বত্য পরিষদের চেয়ে কত বেশি ‘স্বাধীনতা’ পেয়েছে গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ), তা বোঝাতে চুক্তিপত্রের হাজার-হাজার প্রতিলিপি বিলি করল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা! সোমবার যেখানে চুক্তি সই হয়েছে, সেই ‘পিনটেল ভিলেজ’-এ মঙ্গলবার বেলা ১২টা থেকে বিকেল পর্যন্ত মোর্চা সমর্থকদের মধ্যে বিলি করা হল চুক্তির প্রতিলিপি। একই সঙ্গে প্রায় ৪ ঘণ্টা ধরে হল জনসভা। সঙ্গে মিষ্টি বিলিয়ে হল বিজয় উৎসবও।
শুধু তা-ই নয়, দেড় ঘণ্টা ধরে বক্তৃতা দিয়ে চুক্তি ব্যাখ্যা করে শুনিয়েছেন বিমল গুরুঙ্গ। জিটিএ কী পরিমাণ ক্ষমতা পেয়েছে, কেন্দ্র ও অর্থ কী ভাবে বিপুল আর্থিক বরাদ্দ দেবে, সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন মোর্চার শীর্ষ নেতা। জিটিএ গড়ার পরে আগামী দিনে ফের গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে অন্য কেউ সরব হতে পারেন, এমন আশঙ্কাও পাহাড়ে অনেকের মধ্যেই রয়েছে। তাতে অশান্তির পরিবেশ তৈরি হতে পারে। কিন্তু গুরুঙ্গ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, জিটিএ গড়লেও তাঁদের ‘হৃদয়ে’ যে গোর্খাল্যান্ডের স্বপ্ন রয়েছে, তা নিয়ে আগামী দিনে আন্দোলনের অধিকার শুধু তাঁদেরই থাকবে। গুরুঙ্গের কথায়, “মনে রাখবেন, আমি কিন্তু জিটিএ চুক্তিতে সই করিনি! আমার হৃদয়ে গোর্খাল্যান্ড। সেই স্বপ্ন মুছতে চাই না। সেই স্বপ্ন বুকে নিয়েই জিটিএ-কে সামনে রেখে উন্নয়ন করব। শুধু গোর্খা নয়, সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়াই আমার লক্ষ্য। সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সবাইকে সতর্কও থাকতে হবে।” প্রসঙ্গত, চুক্তিতে খোদ গুরুঙ্গের সই না-থাকা বিপজ্জনক ইঙ্গিত বলে সোমবারই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য সীতারাম ইয়েচুরি। |
বস্তুত, চুক্তি সই থেকেই গুরুঙ্গ ‘সতর্ক’। এই কারণে তিনি সোমবারের অনুষ্ঠানে হিন্দিতে যা বলেছিলেন, নেপালিতে তা বলেছিলেন একটু অন্য ভাবে। বিশেষ করে তরাই-ডুয়ার্স নিয়ে। হিন্দিতে তিনি বলেছিলেন, তরাই-ডুয়ার্সের দাবি নতুন কমিটি ‘বিবেচনা করবে’। আর নেপালিতে বলেছিলেন, ওই কমিটি তরাই-ডুয়ার্সের অধিকার তাঁদের হাতে ‘দিয়ে দেবে’!
আমাদের আন্দোলনের জেরেই জিটিএ হয়েছে। তা নিয়ে আমাদেরই একমাত্র আন্দোলনের অধিকার রয়েছে।” পাশাপাশিই তাঁর অকপট স্বীকারোক্তি, “আমাদেরও যেমন কিছু রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তেমনই রাজ্যের শাসক দলেরও রয়েছে। সেটা সকলকে মাথায় রাখতে হবে। বুঝতে হবে।
মনে রাখতে হবে, সিপিএম আমাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী বলে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা আমাদের ‘দাজুভাই’ বলে কাছে টেনে নিয়েছেন।”
এর পরেই মুখ্যমন্ত্রীর আন্তরিকতার কথা বলতে গিয়ে আবেগবিহ্বল হয়ে পড়েন গুরুঙ্গ। ভিড়ে ঠাসা সভায় তিনি বলেন, “আমরা ছিলাম বঞ্চিত সন্তান। মমতাদেবী আমাদের কাছে মায়ের মতো। তিনি বঞ্চনা ভুলিয়ে কাছে টেনে নিয়েছেন। বঞ্চিত ছেলেরাই তো চেঁচামেচি করে মায়ের থেকে অনেক কিছু আদায় করে নেয়! এই মায়ের (মমতা) কাছে আমাদের অনেক আশা! উনি আমাদের সব সময় পাশেই থাকবেন বলে ভরসা আছে।” গুরুঙ্গ জানিয়ে দেন, তরাই ও ডুয়ার্সের এলাকা নির্ধারণের কমিটির সুপারিশের পরেই নির্বাচন করে স্বয়ংসম্পূর্ণ জিটিএ তৈরি হবে।
ওই সভায় মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি-সহ অনেকেই বক্তৃতা করেন। রোশন বলেন, “সুবাস ঘিসিঙের মতো আমরা চুক্তি গোপন করিনি। সবাইকে বিস্তারিত জানালাম। জিটিএ-র ক্ষমতা অনেক বেশি। নামের মধ্যে গোর্খাল্যান্ডের স্বীকৃতি রয়েছে। আর আলাদা রাজ্যের দাবি নিয়ে সভাপতি লড়াই করবেন। রাজ্যের চুক্তি সভাপতি সই করবেন।” |