মঙ্গলবারের সকাল এক ‘উৎসব’ নিয়ে হাজির হয়েছে দার্জিলিংয়ে। ভোরের আলো ফুটতেই পতাকা হাতে দলে দলে মানুষ একত্রিত হয়েছেন। চকবাজার, সুপার মার্কেট, চৌরাস্তা, ম্যাল রোড সর্বত্র পতাকার ছড়াছড়ি। কেউ কেউ আবিরও মেখে নিয়েছেন। সকলের মুখেই জয়ধ্বনি। ‘বাংলার নতুন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ জিন্দাবাদ’। সময় যত বাড়ছিল সেই জয়ধ্বনি পাহাড়ের বাতাসে মিশে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছিল। সকাল ৮টার পরেই সারি সারি গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ে চকবাজারের সুপার মার্কেটে। গাড়িতে পতাকা লাগিয়ে সবাই রওনা হচ্ছিলেন দাগাপুরের দিকে। সেখানে পিনটেল ভিলেজে সভা করবেন বিমল গুরুঙ্গ। সেখান থেকেই শুরু হবে বিজয় উৎসব। রওনা হওয়ার আগে অনেকেই জানালেন, এ দিন সন্ধ্যায় আতসবাজি পোড়ানো হবে পাহাড়ে।
সোমবার ‘জিটিএ’ চুক্তির পরে পাহাড়ে খুশি ছড়িয়েছিল। অনেকেই উচ্ছ্বসিত ছিলেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সেই উচ্ছ্বাস উৎসবে পরিণত হয়েছে। দার্জিলিংয়ের চকবাজারে ছোট্ট দোকান রীতা লামার। বিভিন্ন ধরনের মালা, কসমেটিক্স বিক্রি করে সংসার চলে তাঁর। এ দিন সকালে তিনিও পতাকা হাতে সামিল। তিনি বলেন, “বহুদিন থেকে পাহাড় বঞ্চিত। আমাদের দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে। এ বারে সেই দিন শেষ। বাংলার নতুন মুখ্যমন্ত্রী আমাদের সঙ্গে আছেন। তিনি সাহায্য করবেন। তাই আনন্দে বিমল গুরুঙ্গের সভায় যাচ্ছি।” |
খুশির মেজাজ। মোর্চার তরফে মিষ্টিমুখ করানো হচ্ছে পাহাড়ের বাসিন্দাদের। —বিশ্বরূপ বসাক |
গাড়ি চালান সুরজ প্রধান। শিলিগুড়ি-দার্জিলিং রুটে তাঁর প্রতিদিন যাওয়া-আসা। তাড়াতাড়ি কাজ সেরে আবির মাথায় মেখে পিনটেলে যাবেন বলে রওনা হয়েছেন। একটি পতাকা হাতে নিয়ে সুপার মার্কেটেই দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। বললেন, “চার বছরের আন্দোলনের পরে আমাদের জয় হয়েছে। অনেক কিছু পেয়েছি আমরা। তাই উৎসবে মেতে উঠেছি।”
সোমবার বিকাল ৪টা নাগাদ ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ চুক্তির সময় সবাই চোখ রেখেছিলেন টেলিভিশনের পর্দায়। অনেকেই চুক্তিতে কী রয়েছে তা বোঝার চেষ্টা করছিলেন। রাত পর্যন্ত টেলিভিশন ঘিরেই তাঁদের উচ্ছ্বাস দেখা গিয়েছে। রাতেই খবর পৌঁছে গিয়েছিল মঙ্গলবার সভা করবেন মোর্চা সভাপতি। সকাল হতেই তাঁরা একত্রিত হয়ে আনন্দ করতে করতে রওনা হন সে দিকেই। দার্জিলিংয়ের লেবং ভ্যালির বাসিন্দা সুরেন লামাও হাজির হয়েছিলেন সুপার মার্কেটে। পতাকা হাতে জয়ধ্বনি দিয়ে তাঁরা রওনা হন পিনটেলের দিকে। সুরেনবাবু বলেন, “চুক্তি হওয়ার পর থেকে মনটা কেমন করছিল। টিভি দেখে চুক্তি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি। নেতাদেরও ফোন করি। সব শুনে রাত শেষ হওয়ার অপেক্ষায় ছিলাম। নেতাদের অভিনন্দন জানাতে সকাল সকাল বেরিয়ে পড়েছি।”
এ দিন সকাল থেকে প্রায় দুপুর পর্যন্ত দার্জিলিং, কার্শিয়াংয়ের অধিকাংশ এলাকা কুয়াশাছন্ন ছিল। দার্জিলিং থেকে শিলিগুড়ির পথে রাস্তায় কুয়াশার জন্য মাঝে-মধ্যেই দাঁড়িয়ে যেতে হচ্ছিল গাড়িগুলিকে। তার মধ্যেই মোর্চার পতাকা বাঁধা কয়েকশো গাড়ি নামে পিনটেল ভিলেজে। মোর্চার সহ-সভাপতি প্রদীপ প্রধান বলেন, “জিটিএ চুক্তিতে আমরা সবাই খুশি। পাহাড়ের মানুষ খুশি। তাই আনন্দ তো হবেই।”
|