|
|
|
|
বণিকসভার কর্তাদের কাছেও সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব চাইলেন মমতা |
কিশোর সাহা • শিলিগুড়ি |
দার্জিলিং, ঘুম, কালিম্পঙের নানা এলাকায় মাঝারি ও ছোট মাপের অন্তত ৫০টি হোটেল। গঙ্গারামপুরে তাঁতশিল্প তো কোচবিহারে ভেষজ উদ্যান। দিনহাটায় তামাক ভিত্তিক শিল্প-কারখানা। মালদহে আম নির্ভর শিল্প কারখানা। উত্তরবঙ্গের ছয় জেলায় ১২টি বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষার প্রতিষ্ঠান। আত্রেয়ী পাড়ে বালুরঘাট থেকে কুমারগ্রামের সঙ্কোশ পর্যন্ত পর্যটনের প্রসারে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে শতাধিক প্রকল্প।
মোটামুটি এ ভাবেই নানা শিল্পের মাধ্যমে উত্তরের পাহাড়-সমতলকে একই সূত্রে বেঁধে ফেলতে আসরে নেমে পড়েছে রাজ্য সরকার। তিন দিনের সফরে উত্তরবঙ্গবাসীকে সেই বার্তা দিয়ে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই কাজে তিনি ও তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যেরা কতটা আন্তরিক তা তিনদিনের সফরে বারেবারেই বুঝলেন উত্তরবঙ্গের বণিক সংগঠনের কর্তারাও। প্রায় বিনা ‘অ্যাপয়েনমেন্ট’-এ শিলিগুড়ি মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের সময় দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তা-ও মঙ্গলবার দুপুরে সরকারি সভামঞ্চে ওঠার সময় কাটছাঁট করে। সভামঞ্চের পাশেই বেশ কিছুক্ষণ ধরে তাঁদের সমস্যার কথা শুনলেন। তা সমাধানের জন্য শুকনো আশ্বাস দেওয়ার মধ্যে গেলেন না, সোজাসুজি বলে দিলেন, ‘আপনারা কলকাতায় আসুন। সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব নিয়ে আসুন। সব রকম সাহায্য করা হবে।” সঙ্গে সঙ্গে দিনক্ষণ ঠিক করে আলোচনায় বসার নির্দেশও দিলেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কেও। |
|
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের সঙ্গে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। মঙ্গলবার সন্দীপ পালের ছবি। |
শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় দু’দিনের সফরে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করে জেলা ধরে ধরে দ্রুত কী করণীয় তার রূপরেখা তৈরির কাজও এগোলেন। সরকারি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার তাড়া থাকা সত্ত্বেও কয়েকজন শিল্পোদ্যোগীকে সময় দিলেন পার্থবাবুও।
শুধু তাই নয়, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে উত্তরবঙ্গের বণিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করার দিন ক্ষণও চূড়ান্ত করে ফেললেন পার্থবাবু। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ২৮ জুলাই কলকাতায় মহাকরণে উত্তরবঙ্গের শিল্পোদ্যোগীদের নিয়ে বৈঠকে বসবেন শিল্পমন্ত্রী। যেখানে থাকবেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রও। কারণ, দায়টা তাঁরই যে বেশি। সে জন্য তিন দিনের সফরে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আসা কেন্দ্র ও রাজ্যের অন্য মন্ত্রীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে নানা প্রকল্পের ব্যাপারে সম্মতি আদায়ের জন্য কাকভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ছুটে বেড়াতেও দেখা গেল তাঁকে। গৌতমবাবু বললেন, “সাড়ে তিন দশকে উত্তরবঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার তো হয়ইনি। উল্টে যে জট পাকিয়ে রাখা হয়েছে তা ছাড়াতেই দু’মাস চলে গিয়েছে। পুজোর আগেই ছয় জেলায় সুনির্দিষ্ট প্রকল্পের কাজ শুরু করতে হবে।”
বস্তুত, উত্তরবঙ্গে শিল্পায়নের বিষয়টিকে যে ভাবে মুখ্যমন্ত্রী অগ্রাধিকার দিচ্ছেন তাতে আশায় বুক বাঁধছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও। শিলিগুড়ি মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি দলের মুখপাত্র ওমপ্রকাশ অগ্রবাল জানান, তাঁরা ১০টি সুনির্দিষ্ট বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। সব শুনে মুখ্যমন্ত্রীকে সরাসরি কলকাতায় ডেকে পাঠান। নির্দিষ্ট বিনিয়োগের প্রস্তাব নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এত প্রকল্পের কথা ভাবা হয়েছে। কবে, কী ভাবে কতটা হবে? শিল্পমন্ত্রী বললেন, “উত্তরবঙ্গ তো রাজ্যের বাইরে নয়। গোটা রাজ্যে শিল্পের জন্য ‘এক জানালা’ ব্যবস্থার আওতায় আনা হচ্ছে উত্তরবঙ্গকে। সমীক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্সকে। কী ধরনের শিল্প কোথায় হতে পারে তার রূপরেখা নিয়ে দীর্ঘ বৈঠকও হয়েছে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীর সঙ্গে। শীঘ্রই চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরি করে কাজ শুরু হয়ে যাবে। উত্তরের পাহাড়-সমতলকে উন্নয়ন ও শিল্পায়নের সূত্রে গাঁথতে মুখ্যমন্ত্রী বদ্ধপরিকর। কাজেই দুশ্চিন্তার কিছু নেই।”
|
এই সংক্রান্ত আরও খবর... |
|
|
|
|
|