পাটশিল্পের সমস্যায় বাড়তি গুরুত্ব দেবে শিল্প দফতর
ত কয়েক দশক ধরে শ্রম দফতরেরই একচেটিয়া মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছিল ‘শ্রমিক সমস্যায় ক্লান্ত’ পাটশিল্প। খাতায়-কলমে এমন নিয়ম না-থাকলেও, এই শিল্পের ক্ষেত্রে কার্যত প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছিল প্রায় যে কোনও সমস্যার জন্য শ্রম দফতরের দ্বারস্থ হওয়া। কিন্তু এ বার পাটশিল্পকে ফের চাঙ্গা করতে এই ‘রেওয়াজ’ বদলাতে চাইছে রাজ্যের ‘পরিবর্তনপন্থী সরকার’। রাজ্যের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে চটকলের ব্যবসায়িক সমস্যা কিংবা কেন্দ্রের আর্থিক সহায়তার মতো বিষয় নিয়ে শিল্প দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষকে। আর শ্রম দফতরের কাজ হবে শ্রমিক সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের পথ খোঁজা।
এ প্রসঙ্গে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “চটকল মালিকদের আমার দফতরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।” মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সংশ্লিষ্ট দুই দফতরের সঙ্গে আলোচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুও জানান, “আমরা নীতিগত ভাবে চাই যে, পাটশিল্পকে যেন কোনও ভাবেই শ্রম দফতরে আটকে রাখা না-হয়। শিল্প দফতরের অধীনেই এর স্থান হওয়া উচিত। শ্রম সংক্রান্ত সমস্যা অবশ্য আমার দফতরই সামলাবে।” তাঁর মতে, পাটের বীজ তৈরি থেকে শুরু করে কারখানায় পণ্য তৈরি পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে শিল্পের প্রয়োজন ও সমস্যা মেটাতে শিল্প দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলা উচিত চটকল মালিকদের। তাঁর কথায়, “পাটের বীজতলা হোক বা কারখানায় যন্ত্রপাতির সমস্যা, এ সবে শ্রম দফতরের কী ভূমিকা থাকতে পারে, তা বুঝি না। কিন্তু তা সত্ত্বেও সমস্ত সমস্যাকেই এই দফতরের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছিল পূর্বতন বাম সরকার।”
প্রসঙ্গত, এ রাজ্যের চটকল শ্রমিকদের দীর্ঘ দিনের অভিযোগ, শ্রম সমস্যাকে হাতিয়ার করেই নানা ভাবে ফায়দা তোলার চেষ্টা করে চটকল মালিকেরা। আর এই শিল্পের যাবতীয় সমস্যাকেই তাই জুড়ে দেওয়া হয় শ্রম দফতরের সঙ্গে। যে কারণে এর আগে বামফ্রন্ট সরকারের জমানায় এই একই দাবি জানিয়েছিল সিটু, আইএনটিইউসি, এআইটিইউসি, হিন্দ মজদুর সভার মতো প্রধান শ্রমিক সংগঠন। পাটশিল্প পুরোদস্তুর শিল্পের মর্যাদা পাক, তা চেয়েছিলেন চটকল মালিকদের একাংশও। কিন্তু বাম আমলে এই সমস্যার সমাধান হয়নি।
অবশ্য রাজ্যের প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেনের দাবি, তাঁর আমলে রুগ্ণ চটকলের বিষয়গুলি মাঝেমধ্যে দেখত তাঁর দফতরের শিল্প পুনর্গঠন বিভাগও। পাটের সমস্যা নিয়ে যোগাযোগ রাখা হত জুট কমিশনারের সঙ্গে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে শ্রম দফতরই যে প্রধান ভূমিকা নিত, তা কার্যত মেনে নিয়েছেন তিনি। নিরুপমবাবুর যুক্তি, “শ্রম দফতরই যে বিশেষ ভাবে দেখত, সে কথা ঠিক। কারণ, চটকলে শ্রমিক সমস্যাই বেশি।”
এক সময় পাটকে বলা হত ‘গোল্ডেন ফাইবার অফ বেঙ্গল’। দেশের প্রায় ৯০% উৎপাদন হয় এ রাজ্যেই। কিন্তু এই শিল্পকে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বদলাতে পারেনি সেই পশ্চিমবঙ্গই। ১৯৯৬ সালে এ রাজ্যে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয় পাটশিল্পের ‘পাবলিক ইউটিলিটি সার্ভিস’-এর মর্যাদা। কিছু দিন পরই তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী বিদ্যুৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের দফতর থেকে মালিকদের সংগঠন আইজেএমএ-কে জানিয়ে দেওয়া হয় যে, এ বার থেকে চটকলের যাবতীয় বিষয় দেখবে শ্রম দফতর।
এ বার এই ‘প্রথা’ বদলাতেই উদ্যোগী হচ্ছে তৃণমূল জোট সরকার। পাটশিল্পকে ফের চাঙ্গা করতে কোমর বাঁধার ইঙ্গিত দিয়ে পূর্ণেন্দুবাবু বলেন, “শিল্প সম্পর্কিত কোর কমিটিতে পাটশিল্পের প্রতিনিধি চেয়েছি। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনাও হয়েছে।” এ ছাড়া, কেন্দ্র যেমন পৃথক পাটনীতি তৈরি করেছে, তেমনই একটি নীতি রাজ্যেও নির্ধারণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
First Page Business Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.