|
|
|
|
পশ্চিমে রুগ্ণ স্বাস্থ্য-পরিষেবা |
খরচই হয়নি স্বাস্থ্যখাতের ১৮ কোটি |
সুমন ঘোষ • মেদিনীপুর |
যেখানে দু’টি গ্রামীণ হাসপাতাল অবিলম্বে প্রয়োজন, সেখানে একটি দিয়েই কাজ চালানো হচ্ছে। যে ক’টি হাসপাতাল সচল, সেখানেও হতশ্রী দশা। যথাযথ পরিষেবাই মেলে না। অথচ পরিসংখ্যান বলছে, স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ টাকার অনেকটাই পড়ে রয়েছে।
চিত্রটা পশ্চিম মেদিনীপুরের। এমনিতেই পিছিয়ে পড়া জেলা হিসেবে চিহ্নিত পশ্চিম মেদিনীপুর। জঙ্গলমহল-সহ প্রায় সর্বত্রই স্বাস্থ্য বেহাল। সম্প্রতি জঙ্গলমহলে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর মানোন্নয়নে তৎপর হয়েছে রাজ্যের নতুন সরকার। সম্প্রতি স্বাস্থ্যকর্তারা জঙ্গলমহলের বিভিন্ন হাসপাতাল পরিদর্শনেও এসেছিলেন। জঙ্গলমহলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কেন বেহাল, এ নিয়ে কাটাছেঁড়া শুরু হতেই উঠে এসেছে নতুন তথ্য। দেখা যাচ্ছে, ২০১০-১১ অর্থবর্ষে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ টাকা খরচই করতে পারেনি প্রশাসন। ওই আর্থিক বছরে প্রায় ২১টি কোটি ২২ লক্ষ টাকা পেয়েছিল জেলা। তার মধ্যে মাত্র ৩ কোটি ২১ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। পড়ে রয়েছে প্রায় ১৮ কোটি টাকা! বরাদ্দ অর্থ খরচ করতে না পারায় পরবর্তী ধাপের টাকাও মেলেনি।
দিনে দিনে তাই আরও বেহাল হয়েছে জঙ্গলমহলের স্বাস্থ্য-পরিষেবা। যে কটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও হাসপাতাল রয়েছে, সেগুলিতে রোগীর ভয়ানক চাপ। জঙ্গলমহলের ১১টি ব্লকের জনসংখ্যা ১৬ লক্ষ ৬২ হাজার। এলাকা প্রায় ৪ হাজার ৩০৬ বর্গ কিলোমিটার। ইন্ডিয়ান পাবলিক হেলথ স্ট্যান্ডার্ড (আইপিএইচএস) অনুযায়ী, ৮০ হাজার জনসংখ্যা পিছু একটি গ্রামীণ হাসপাতাল বা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকতে হবে। কিন্তু জেলার জঙ্গলমহলে ১ লক্ষ ৫১ হাজার মানুষের জন্য রয়েছে একটি গ্রামীণ হাসপাতাল বা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র! ১১টি ব্লকে মোট ২টি গ্রামীণ হাসপাতাল ও ৯টি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রয়োজনের তুলনায় ১০টি হাসপাতাল কম। ২০ হাজার জনসংখ্যা পিছু একটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকার কথা। বর্তমানে জঙ্গলমহলে রয়েছে ৩২টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। হিসেব অনুযায়ী, ৫১টি কম। ৩০৭টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মধ্যে ১৪৫টিই রয়েছে ভাড়া বাড়িতে। ৩০ হাজার মানুষ পিছু একটি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র। চিকিৎসকও অপ্রতুল। বর্তমানে চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ৭৮ জন। আইপিএইচএসের নিয়ম অনুযায়ী, সাড়ে তিন হাজার মানুষ পিছু এক জন চিকিৎসক থাকবেন। অথচ জঙ্গলমহলে অনুপাত দাঁড়াচ্ছে ১:২১০০০! অর্থাৎ ছয় গুণ বেশি!
শুধু জঙ্গলমহল নয়, জেলার অন্যত্রও চিকিৎসা পরিষেবা রীতিমতো বেহাল। আইপিএইচএসের নিয়মকে মাপকাঠি ধরলে, পর্যাপ্ত চিকিৎসা পরিকাঠামোই নেই। হাসপাতাল রয়েছে, চিকিৎসক নেই, চিকিৎসক রয়েছে তো ওষুধ নেই। রক্ত পরীক্ষা থেকে ছোটখাট পরীক্ষার জন্যও রোগীদের বেসরকারি প্যাথলজিতে পাঠানো হয়, কথায় কথায় ‘রেফার’ করে দেওয়া, রোগীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ এমন নয় যে অর্থাভাবে পরিকাঠামো উন্নয়ন করা যায়নি। প্রশাসনিক পরিসংখ্যা বলছে, ২০১০-১১ আর্থিক বছরের পাওয়া টাকা খরচই করতে পারেনি প্রশাসন। সাব-সেন্টারের নিজস্ব বাড়ি তৈরি ও উন্নয়ন খাতে দেড় কোটির বেশি টাকা পড়ে রয়েছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র রক্ষণাবেক্ষণ খাতে পড়ে রয়েছে প্রায় দেড় কোটি টাকা, ব্লক ও প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের যন্ত্রপাতি কেনার খাতে প্রায় ১ কোটি টাকা, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উন্নয়ন খাতে প্রায় ১ কোটি টাকা, ব্লক হাসপাতালের উন্নয়নে প্রায় ৯০ লক্ষ টাকা পড়ে রয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিটি ক্ষেত্রেই সরকার টাকা বরাদ্দ করেছিল। সেই মতো টাকা পাঠানোও শুরু হয়। কিন্তু খরচ করতে না পারায় চলতি বছরে এই খাতে মাত্র ৪৬ লক্ষ টাকা পেয়েছে জেলা। এ বিষয়ে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সবিতেন্দ্র পাত্র বলেন, “আগে জঙ্গলমহলে অস্থির পরিস্থিতির জন্য কাজের গতি কিছুটা শ্লথ ছিল। ফলে সে ভাবে কাজ করা যায়নি। এ বার দ্রুত কাজ করার চেষ্টা হচ্ছে। সরকারকে জানিয়েছি, চিকিৎসক ও কর্মীর অনেক পদ শূন্য রয়েছে। সেগুলি পূরণ হলে পরিস্থিতির অনেকটাই পরিবর্তন হবে।” |
|
|
|
|
|