শিবিরই কম, রক্তের আকাল চলছে এখনও
ফেব্রুয়ারি-মার্চে ছিল পরীক্ষা আর বিশ্বকাপ ক্রিকেট।
তাই রক্তদান শিবিরের অভাব।
এপ্রিল-মে মাসে বিধানসভা নির্বাচন।
তাই রক্তদান শিবির নেই।
সেই সব মিটে গেল। তবু জুন-জুলাই মাসেও মানিকতলার কেন্দ্রীয় ব্লাড ব্যাঙ্কে বাড়ল না স্বেচ্ছায় দান করা রক্তের পরিমাণ। উল্টে একের পর এক শিবির বাতিল হতে লাগল রবিবার ও ছুটির দিনেও।
এত দিন রক্তের আকালের পরে যখন শিবির পাওয়া যাচ্ছে, তখন কেন সেগুলি করতে পারছেন না ব্লাড ব্যাঙ্ক-কর্তৃপক্ষ? কর্তৃপক্ষের যুক্তি, কর্মীর খুব আকাল। এত কম লোক নিয়ে ব্লাড ব্যাঙ্কের প্রতিদিনের কাজ চালানোই মুশকিল। রক্তদান শিবিরে যাবে কে? রক্তদান আন্দোলনে জড়িত কিছু সংগঠন এবং রাজ্য রক্ত সঞ্চালন পর্ষদের একাংশের অভিযোগ, পুরোটাই কাজ না করার প্রবণতা এবং ইচ্ছে করে রক্ত সংগ্রহ কমানোর ‘চক্রান্ত’। ব্লাড ব্যাঙ্কেরই একটি গোষ্ঠী বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কগুলিকে সুবিধা করে দিতে কেন্দ্রীয় ব্লাড ব্যাঙ্কের শিবির ও রক্তের সংগ্রহ কমাতে চাইছে। সরকারি রিপোর্টই বলছে, শুধুমাত্র বিধানসভা নির্বাচনের জন্য কেন্দ্রীয় ব্লাড ব্যাঙ্কের রক্তের সংগ্রহ কমেছে এমন নয়। গত কয়েক বছর ধরেই পূর্বাঞ্চলের বৃহত্তম এই ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তের সংগ্রহ এবং স্বেচ্ছায় রক্তদান শিবির চোখে পড়ার মতো কমছে। দূরদূরান্ত থেকে আসা মানুষকে রক্ত না পেয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে বা এক ইউনিট রক্ত পেতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে দিনের পর দিন।
গত কয়েক বছরের শুধু জুন মাসের হিসেব বলছে, প্রত্যেক বছর কিছুটা করে কমছে রক্ত সংগ্রহ। ২০০৮ সালের জুনে স্বেচ্ছায় রক্তদানের মাধ্যমে ৯ হাজার ৮৬৩ ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছিল। ২০০৯ সালের জুনে সংখ্যাটা দাঁড়ায় ৭ হাজার ইউনিটে, ২০১০-এ তা হয় ৬ হাজার এবং ২০১১ সালের জুনে মাত্র ৪ হাজার ৪২১ ইউনিট। অথচ, এই কেন্দ্রীয় ব্লাড ব্যাঙ্ককেই পূর্বাঞ্চলের মডেল ব্লাড ব্যাঙ্ক হিসেবে চিহ্নিত করার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। সেখানকার অধিকর্তা সৌরেন্দ্রনাথ গুছাইত জানান, আগে রবিবার ১৫-১৬টি শিবির করা হত। তার জায়গায় লোকবলের অভাবে এখন ১০টি করা হচ্ছে। শনিবার সাত-আটটি শিবিরের জায়গায় চারটি, অন্যান্য ছুটির দিনে মাত্র চারটি এবং সপ্তাহের অন্য কাজের দিন সাকুল্যে দু’টি করে শিবির হচ্ছে।
কিন্তু কতটা কম লোকবল? সৌরেন্দ্রনাথবাবু বলেন, “৪০ জন ল্যাব টেকনিশিয়ান আছেন। ল্যাব টেকনিশিয়ানের ২৬টি পদ ফাঁকা রয়েছে। ২৮টি চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর পদ ফাঁকা। ১০০ ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করতে এক জন চিকিৎসক, দু’জন টেকনিশিয়ান ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মী লাগে। ২৪ ঘণ্টা ব্লাড ব্যাঙ্কের কাজ সামলে এর থেকে বেশি শিবির করার ক্ষমতা আমাদের নেই।” কিন্তু রক্ত সঞ্চালন পর্ষদ জানিয়েছে, এই লোকবল নিয়েই ২০০৮-২০০৯ সালে ১৬৭২টি রক্তদান শিবির করেছিল কেন্দ্রীয় ব্লাড ব্যাঙ্ক। লোকবলের বিশেষ হেরফের হয়নি। কিন্তু তিন বছরের মধ্যে চারশোর বেশি শিবির কমেছে। পাশাপাশি তাদের বক্তব্য, রবিবার তুলনায় বেশি রক্ত সংগ্রহ হলেও কর্মীর অভাবের কথা বলে সেদিন সংগ্রহ করা রক্ত থেকে কেন্দ্রীয় ব্লাড ব্যাঙ্ক প্লাজমা, প্লেটলেটস্ প্রভৃতি উপাদান সংগ্রহ করে না। শুধু সপ্তাহের কাজের দিনে সংগ্রহ করা রক্ত থেকেই উপাদান তৈরি হয়। এর জন্য রক্তের উপাদানের সঞ্চয়ও কমছে।
‘ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স ফোরাম’-এর অপূর্ব ঘোষ, ‘অ্যাসোসিয়েশন অফ ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স ওয়েস্ট বেঙ্গল’-এর দেবব্রত রায় বা ‘কফি হাউস সোশ্যাল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন’-এর দীপঙ্কর মিত্রের মতো অনেকের অভিযোগ, লোক যথেষ্টই রয়েছে। কিন্তু ইচ্ছে করেই তাঁরা শিবিরে যাচ্ছেন না। রবিবার অধিকাংশ কর্মী ছুটি নিয়ে বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কের শিবিরে হাজির থাকছেন। জয়েন্ট ডিরেক্টর ব্লাড সেফটি রতনলাল গঙ্গোপাধ্যায় এ বিষয়ে বলেন, “আমি এ ব্যাপারে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।”
অভিযোগ চক্রান্তের বিস্তারিত...
আরও অভিযোগ, রবিবার ১০টি শিবির করার ক্ষমতা রয়েছে বলে স্বীকার করলেও গত রবিবার কেন্দ্রীয় ব্লাড ব্যাঙ্ক মাত্র ৭টি শিবির করেছে। বাকি শিবির বাতিল হয়েছিল। সেই জায়গায় অন্য অনেক সংগঠন শিবির করতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদের করতে দেওয়া হয়নি। এদের মধ্যে ‘ফ্রেন্ডস অ্যান্ড ওয়েল উইশার্স অফ ভলান্টারি মুভমেন্ট’, ‘বাগবাজার নবীন সঙ্ঘ’, ‘বাণেশ্বর শিব চ্যারিটেব্ল ট্রাস্ট’, ‘কফি হাউস সোশাল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন’-এর মতো অনেক সংগঠন রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন চলতি পরিকাঠামোর পূর্ণ ব্যবহার করে পরিষেবা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন, তখন কেন্দ্রীয় ব্লাড ব্যাঙ্ক কেন তাদের ক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার করছে না, সে প্রশ্ন তুলেছেন রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতেরা।
Previous Story Swasth Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.