কালিয়াচক
ফের হেনস্থার শিকার স্বাস্থ্যকর্তা
ন্ত্রী ও প্রশাসনের আশ্বাস ছিল। বহাল হয়েছিল দেহরক্ষীও। তবু কর্মস্থলে হেনস্থার শিকার হলেন মালদহের কালিয়াচক-৩ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক (বিএমওএইচ) শুভরঞ্জন ভট্টাচার্য।
সোমবার বৈষ্ণবনগর থানার বেদরাবাদে ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগী দেখার সময় কংগ্রেস ও তৃণমূলের এক দল সমর্থক শুভরঞ্জনবাবুকে হেনস্থা করেন বলে অভিযোগ। দেহরক্ষীর সামনেই তাঁর হাত ধরে টানাটানি করে পিছন থেকে ‘চড়-থাপ্পড় মারা’ হয়। দেহরক্ষী ওই স্বাস্থ্য-কর্তাকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে হামলাকারীরা তাঁকেও আটকে রাখেন। আধ ঘণ্টা ধরে এই ‘নিগ্রহ’ চলার পরে পাশের ক্যাম্প থেকে পুলিশকর্মীরা ছুটে গেলে হামলাকারীরা পালায়।
এই ঘটনায় নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়েছে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক, নার্স-সহ সমস্ত স্বাস্থকর্মীদের মধ্যে। তাঁদের অভিযোগ, বরুণ ঘোষ নামে এলাকার এক তৃণমূল কর্মী এর আগে হাসপাতালের কর্মীদের কাছে টাকা দাবি করেছেন। হাসপাতালে চাকরি দেওয়ার জন্য ‘চাপ’-ও দিচ্ছিলেন। জুন মাসে শুভরঞ্জনবাবুকে রিভলভার দেখিয়ে খুনের হুমকি দেন বলেও অভিযোগ। শনিবার রাতে তিনিই হাঁসুয়া নিয়ে ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ঢুকে এক চিকিৎসককে খুনের হুমকি দিলে আতঙ্কে ভর্তি থাকা সমস্ত রোগীকে সদর হাসপাতালে ‘রেফার’ করে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তালা ঝুলিয়ে দেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা।
নিরাপত্তার দাবিতে রবিবার জেলাশাসক, পুলিশ সুপার ও জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দ্বারস্থ হন শুভরঞ্জনবাবু-সহ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। ঘটনাটি জেনে মালদহ জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র বরুণকে অবিলম্বে গ্রেফতারের করার নির্দেশ দেন পুলিশকে। জেলাশাসকের নির্দেশে ওই চিকিৎসককে এক জন দেহরক্ষীও দেওয়া হয়।
তার পরেও এ দিনের ‘হামলা’য় ক্ষুব্ধ মন্ত্রী। তাঁর কথায়, “মালদহে জেলা প্রশাসন একদম ভেঙে পড়েছে। যেই হামলা করুক, পুলিশ কেন তাকে গ্রেফতার করবে না? আজও যারা হামলা করেছে, পুলিশ তাদের ধরুক। আমরা বাঁচাতে যাব না। এই ধরনের ঘটনায় দল কোনও প্রশ্রয় দেবে না। বরুণ ঘোষকে গ্রেফতার করা হলে এমন ঘটনা ঘটত না।” হামলার খবর পেয়ে এ দিন ডিআইজি (মালদহ রেঞ্জ) শশীকান্ত পূজারি এবং পুলিশ সুপার ভূবন মণ্ডল ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান। পুলিশ সুপার বলেন, “ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলেছি। হামলাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হবে। অভিযুক্ত বরুণ ঘোষকে ধরতে তল্লাশি চলছে।”
শুভরঞ্জনবাবু বলেন, “প্রথমে ভেবেছিলাম কংগ্রেস, তৃণমূলের সমর্থকরা বোধ হয় আমাদের সাহস দিতে এসেছেন। অচিরেই ভুল ভাঙে। দলীয় পতাকা ও ফেস্টুন হাতে নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে জরুরি বিভাগে ঢুকে ওঁরা আমাকে গালিগালাজ করেন। বলতে থাকেন, আমি সিপিএমের লোক। হাসপাতালে বসে কংগ্রেস ও তৃণমূলের ক্ষতি করার চেষ্টা করছি। আমাকে এখানে চাকরি করতে দেওয়া হবে না বলেও হুমকি দেন ওঁরা। হাত ধরে টানাটানি করেন। দেহরক্ষীকেও আটকে রাখেন। এর পরে কী করে পরিবার নিয়ে এখানে থাকব, জানি না।”
চিকিৎসকদের সংগঠন ‘আসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টরস’-এর জেলা সম্পাদক মলয় সরকার বলেন, “আমরা চাই, স্বাভাবিক পরিবেশে কাজ করতে। কেন প্রশাসন মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে পারছে না, বুঝতে পারছি না। আতঙ্কিত চিকিৎসকেরা কী ভাবে মানুষকে পরিষেবা দেবেন?” সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বিশ্বনাথ ঘোষের ‘কটাক্ষ’, “দলীয় কর্মীর দোষ ঢাকতে এখন অহেতুক ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিককে যৌথ ভাবে হেনস্থা করছে কংগ্রেস-তৃণমূল। এটাই ওদের সংস্কৃতি। ”
এই অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক দেবপ্রিয় সাহার দাবি, “ডাক্তারদের উপরে হামলার নিন্দা করছি। আমাদের কেউ এই হামলার পিছনে নেই।” তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক দুলাল সরকার বলেন, “দলের বদনাম করতে স্থানীয় কিছু তৃণমূল নেতা জেলা কিংবা রাজ্য নেতৃত্বকে না জানিয়েই কিছু সমাজবিরোধীকে দলে নিয়েছে। তারাই এই সমস্ত গোলমাল করছে। পুলিশকে বলেছি, যারা উল্টোপাল্টা কাজ করছে, গ্রেফতার করুন। যারা অপরাধমূলক কাজ করছে, দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।”
First Page Swasth Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.