‘ক্ষুব্ধ’ মমতা
যৌথ বাহিনী প্রত্যাহার, বন্দিমুক্তির দাবি সুমনের
ঙ্গলমহল থেকে অবিলম্বে যৌথ বাহিনী প্রত্যাহার ও সব রাজনৈতিক বন্দির ‘নিঃশর্ত’ মুক্তি দাবি করলেন তৃণমূলের সাংসদ কবীর সুমন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জঙ্গলমহল সফরের আগের দিন এপিডিআর-সহ বিভিন্ন নকশালপন্থী গণসংগঠনের ডাকা এক কনভেনশন মঞ্চ থেকে সুমন এ কথা বলেছেন, যেখানে উপস্থিত ছিলেন ছত্রধর মাহাতোর স্ত্রী নিয়তি মাহাতো। বস্তুত, অন্যদের সঙ্গে ছত্রধর এবং মনোজ মাহাতোরও ‘নিঃশর্ত মুক্তি’র দাবি জানানো হয়েছে সেখানে।
মমতার জঙ্গলমহল সফরকে ‘স্বাগত’ জানিয়েও সোমবার সুমন বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য যাননি। মমতা মুখ্যমন্ত্রী হয়ে যাচ্ছেন। দেখা যাক, কী হয়। কিন্তু কথা ছিল, যৌথ বাহিনী প্রত্যাহার করা হবে। সব রাজনৈতিক বন্দির মুক্তি হবে। আমিও এই দাবি সমর্থন করি।” একই সঙ্গে ইউএপিএ-কে ‘দানবীয় আইন’ বলে সমালোচনা করে সুমন বলেন, “এই আইন বাতিল করতে হবে। ভুয়ো সংঘর্ষে যুক্ত হত্যাকারী পুলিশদের শাস্তি দিতে হবে। সমস্ত রাজনৈতিক ও গণসংগঠনের উপরে জারি করা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে।”
কনভেনশনে কবীর সুমন ।
তৃণমূল সাংসদ নয়, ‘গণ-আন্দোলনের লোক’ হিসাবে তিনি এই কথাগুলি বলছেন বলে সুমনের দাবি। কিন্তু সুমন যা-ই যুক্তি দিন, মমতার জঙ্গলমহল সফরের ঠিক আগে গোটা ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী অত্যন্ত ‘ক্ষুব্ধ’। যদিও প্রকাশ্যে এ নিয়ে কিছু বলেননি। তবে তৃণমূল সূত্রের খবর, এর পরে সুমনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সম্ভাবনা নিয়েও দলের অন্দরে আলোচনা হচ্ছে। অতীতেও বিভিন্ন সময়ে মাওবাদীদের পক্ষ নিয়ে যৌথ বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খোলায় দলের অভ্যন্তরে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন সুমন। বেশ কিছু দিন চুপ থাকার পরে সুমন ফের বুঝিয়ে দিলেন, নিজের অবস্থান থেকে সরতে তিনি নারাজ!
সুমন যে দাবিগুলি করেছেন, এ দিন কনভেনশনে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে সেগুলিই একযোগে তোলা হয়েছে। তিনি তৃণমূলের সাংসদ হয়েও তাঁর ‘পৃথক পরিচয়’ রয়েছে বলে জানিয়ে সুমন বলেন, “আমি তৃণমূলের সাংসদ, এটাই আমার প্রথম পরিচয় নয়। আমি কারও স্বামী, কারও প্রেমিক, কারও বন্ধু! আমি সাংসদ হওয়ার আগে কোনও রাজনৈতিক দলের, এমনকী তৃণমূলেরও কর্মী ছিলাম না। আমি কোনও পার্টির লোক নই। আমি গণ-আন্দোলনের লোক। আমি কী করে চুপ করে থাকব? তাই এই সভায় এসেছি!”

উপস্থিত ছত্রধর মাহাতোর
স্ত্রী নিয়তি মাহাতো।
সুমন বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মাওবাদীরা দেশের প্রধান শত্রু। প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে বলেছিলাম, মাওবাদীরা প্রধান শত্রু হতে পারে না। প্রধান শত্রু হচ্ছে ক্ষুধা, অপুষ্টি, অশিক্ষা।” এই সূত্র ধরে তিনি শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুকেও এক হাত নিতে ছাড়েননি। সুমন বলেন, “শুনলাম রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী নাকি বলেছেন, প্রয়োজনে বন্দুক হাতে উন্নয়ন করতে হবে। জানি না, উনি এ কথা বলেছিলেন কি না! আমরা পরিবর্তনের কথা বলেছিলাম। যা পরিস্থিতি, সব দেখে শুনে শঙ্কিত! তাই বাধ্য হয়ে কথা বলতে হচ্ছে।” প্রসঙ্গত, পূর্ণেন্দুবাবু অতীতে নকশালপন্থী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে তিনি তৃণমূলের সদস্য হিসাবে রাজ্যের মন্ত্রী।
জঙ্গলের মানুষ আত্মমর্যাদা চায়, এ কথা জানিয়ে সুমন বলেন, “মানুষ মর্যাদার সঙ্গে রুটি চায়। তোমার দিকে রুটি ছুড়ে দিলাম, তা নয়।” তাঁকে যে ‘মাওবাদী’ বলা হয়, নিজেই তা জানিয়ে সুমন বলেন, “আমাকে কেন মাওবাদী বলে জানি না! এত জন থাকতে আমিই বা মাওবাদী হব কেন?” সভায় উপস্থিত বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “এঁরা সকলে একই কথা বলছেন।” তাঁর মতে, “জঙ্গলমহলে শান্তি প্রস্তাব নিয়ে কেউ আন্তরিক নয়। তা হলে সরকার তো বলতে পারত, তোমরা যাও। কথা বলো। সৈন্য, পুলিশ তোমাদের সঙ্গে যাবে না।” সুমনের আক্ষেপ, “শান্তি প্রস্তাবও দেওয়া হয়। মাওবাদী নেতা আজাদকে খুনও করা হয়! দু’টো কি একসঙ্গে চলতে পারে?” সন্তোষ রানা, নব দত্ত, নবারুণ ভট্টাচার্য প্রমুখ কনভেনশনে উপস্থিত ছিলেন।
কনভেনশনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘রাজনৈতিক বন্দিদের ‘কেস টু কেস স্টাডি’ করে মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে রাজ্য কমিটি গঠন করলেও বামফ্রন্ট সরকারের শাসনে দায়ের করা মামলায় পুরনো গণ-আন্দোলনের কর্মীদের নতুন করে গ্রেফতার শুরু হয়েছে’। উদ্যোক্তাদের দাবি, শঙ্খ ঘোষ, অপর্ণা সেন, কৌশিক সেন, বিভাস চক্রবর্তী প্রমুখ তাঁদের প্রস্তাবে সমর্থন জানান। সিপিআই (মাওবাদী)-র পক্ষ থেকে বিক্রম বলেন, ‘মাওবাদীদের উন্নয়নে বাধা দেওয়ার অভিযোগ মিথ্যা। পুলিশ জনসাধারণের উপরে অত্যাচার চালাচ্ছে। তা বন্ধ হচ্ছে না’।
ছবি:বিশ্বনাথ বণিক
Previous Story Rajya Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.