|
|
|
|
রাতের ট্রেন চালুরও আশা |
উন্নয়নের ‘প্যাকেজ’ নিয়ে তৈরি রাজ্যের সব দফতরই |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
কত টাকার সাহায্য পাবে জঙ্গলমহল?
পশ্চিম মেদিনীপুর-বাঁকুড়া-পুরুলিয়ার মাওবাদী প্রভাবিত অঞ্চলের সামগ্রিক উন্নয়নে ‘বিশেষ প্যাকেজ’ ঘোষণা করতে সোমবার রাতে মেদিনীপুর পৌঁছলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কত অঙ্কের প্যাকেজ তিনি ঘোষণা করবেন, এ দিন শেষবেলাতেও সেই ছবি পরিষ্কার নয়। তবে সরকারের বিভিন্ন সূত্রে ইঙ্গিত, জঙ্গলমহলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষে প্রায় ১৪০০ কোটি টাকার পরিকল্পনা ঘোষণা করতে পারেন মমতা। যার মধ্যে রাস্তাঘাট, পানীয় জল, স্বাস্থ্য, খাদ্য, সেচ, কৃষি এবং আদিবাসীদের বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পে সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে।
এবং এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে যোজনা কমিশনের তরফে অর্থ সহায়তা চায় রাজ্য। এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের একাধিক বার কথা হয়েছে। বিশেষ প্যাকেজের পরিকল্পনা করা হয়েছে চার বছরের জন্য। তবে উন্নয়নের স্বার্থে রাজ্যও সাধ্যমতো অর্থ খরচ করতে প্রস্তুত বলে মহাকরণ সূত্রে জানানো হয়েছে। পরিকল্পনার পরিধি মোটামুটি কী রকম?
মহাকরণের খবর: সরকারের প্রায় প্রতিটি বিভাগই জঙ্গলমহলের জন্য পরিকল্পনা তৈরি করেছে। যেমন, নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ৮ হাজার বিশেষ কনস্টেবল নিয়োগের কথা ভেবে রেখেছে স্বরাষ্ট্র দফতর। এ বাবদ এক বছরেই খরচ হবে দু’শো কোটি টাকার বেশি। ক্ষুদ্রসেচ ও জলসম্পদ উন্নয়নে ২৩০ কোটি টাকার প্রকল্প তৈরি। পানীয় জলের একাধিক প্রকল্পের পিছনে ব্যয় ধরা হয়েছে ১১০ কোটি। আবার আদিবাসীদের রোজগার বাড়াতে তালপাতার থালা-বাটি-গ্লাস তৈরি, তন্তুবায়দের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প, ও স্বনির্ভরতা-প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে প্রায় ৮০ কোটির পরিকল্পনা বানিয়েছে ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প দফতর। অন্য দিকে জঙ্গলমহলের বাসিন্দাদের দু’টাকা কিলো দরে চাল দেওয়ার কথা মুখ্যমন্ত্রী আগেই ঘোষণা করেছেন। |
|
মেদিনীপুরের সার্কিট হাউসে জেলাকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অশোক মজুমদার |
জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের বাড়বাড়ন্তের কারণ হিসেবে বাম জমানার ‘অনুন্নয়ন’কেই দায়ী করা হয়। নিজেদের ব্যর্থতা বুঝতে পেরে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের আমলে এ জন্য একটি নতুন দফতর গড়া হয়েছিল। এর পরে, ক্ষমতা হারানোর বছরখানেক আগে বামফ্রন্ট সরকার শুধুমাত্র পশ্চিম মেদিনীপুরের জন্য বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল। যদিও কাজের কাজ কিছু হয়নি।
এ বার তাই ক্ষমতায় আসার আগেই তৃণমূলনেত্রী ঘোষণা করেছিলেন, তাঁরা সরকার গড়লে জঙ্গলমহলবাসীর সামগ্রিক উন্নয়নের পরিকল্পনা করবেন। সেখানকার মানুষ যাতে ভাতে-কাপড়ে থাকতে পারেন, সে ব্যবস্থা করবেন। আর সরকার গঠনের দু’মাসের মধ্যে সেই সহায়তার রূপরেখা নিয়ে এ দিন সপার্ষদ জঙ্গলমহলে পৌঁছেছেন মুখ্যমন্ত্রী। আজ, মঙ্গলবার পশ্চিম মেদিনীপুরের নয়াগ্রাম এবং কাল বুধবার বাঁকুড়ার সারেঙ্গায় সরকারি, অ-সরকারি মিলিয়ে একাধিক অনুষ্ঠানে থাকবেন তিনি। সঙ্গে থাকবেন রাজ্যের একাধিক মন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুকুল রায়-দীনেশ ত্রিবেদী এবং মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, ডিজি’র মতো শীর্ষ আমলারা। বুধবার রাতে মুখ্যমন্ত্রীর কলকাতায় ফেরার কথা।
পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া মিলিয়ে জঙ্গলমহলে মাওবাদী প্রভাবিত ব্লক ২৩টি। মুখ্যমন্ত্রীর প্যাকেজ ঘোষণার লক্ষ্য মূলত সেগুলোকে ঘিরে। তবে কিছু উন্নয়ন প্রকল্পের প্রভাব তিন জেলার সর্বত্র পড়বে বলে জানিয়েছেন সরকারের এক মুখপাত্র। জঙ্গলমহলে দু’দিনের সফরে উন্নয়ন-পরিকল্পনার ‘নমুনা’ হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী হতদরিদ্রদের মধ্যে পাট্টা-পেনশন-মোটরবাইক-স্কলারশিপ বিলি করবেন। যার জন্য এ দিন কলকাতা থেকে ওই সব জায়গায় অ্যাম্বুল্যান্স, ভ্রাম্যমান হাসপাতাল-আইসিইউ এবং মোটরসাইকেল নিয়ে যাওয়া হয়। জঙ্গলমহলের তিন জেলা ও পূর্ব মেদিনীপুরের রাস্তাঘাটের উন্নতির লক্ষ্যে বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরে বৈঠক করছেন পূর্তমন্ত্রী সুব্রত বক্সীও।
সরকারি সূত্রের খবর: সার্বিক উন্নয়ন প্যাকেজের পাশাপাশি আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীদের জন্য নতুন পুনর্বাসন প্রকল্পও ঘোষণা করতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। জঙ্গলমহলে যৌথবাহিনীর অভিযানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ২০১০-এর জুনে আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীদের জন্য পুনর্বাসন প্রকল্প ঘোষণা করেছিল বাম সরকার।
তার পরে গত এক বছরে তাতে সাড়া দিয়েছেন মাত্র তিন জন। মমতার পরামর্শে আগের পুনর্বাসন প্রকল্পটিকে ঘষেমেজে আরও আকর্ষণীয় করা হয়েছে। বিশেষত, মাওবাদীরা অস্ত্র ছাড়লে কেন্দ্রীয় নির্দেশিকার তুলনায় তাঁদের আরও বেশি টাকা দেওয়ার কথা বলা থাকছে নতুন প্রকল্পে।
এ দিকে ২০১০-এ জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনা ঘটা ইস্তক জঙ্গলমহল দিয়ে রাতের ট্রেন চলাচল বন্ধ। গত প্রায় এক বছরে রেল ও রাজ্যের বহু আলোচনাতেও জট খোলেনি। সম্প্রতি রেল-পুলিশের ডিজি দিলীপ মিত্র এলাকা পরিদর্শন করে এসেছেন। তার পরে ফের রাতের ট্রেন চালুর চেষ্টা চালাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। সফরে সেই মর্মেও ঘোষণা হতে পারে। এ ছাড়া বন্দিমুক্তির বিষয়টি তো রয়েছেই। তার সঙ্গে অবশ্য কাঁটাও কিছু রয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গে নতুন সরকার গঠনের দু’মাসের মধ্যে ‘আপাত শান্ত’ জঙ্গলমহলে মাওবাদীরা ফের সক্রিয় হয়ে ওঠার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে রাজ্য প্রশাসনকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতর। এর প্রেক্ষিতে অস্ত্র ছেড়ে শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। জঙ্গলমহলের সভায় তিনি সেই আবেদন ফের জানাতে পারেন। কিন্তু যৌথবাহিনী প্রত্যাহার না-হওয়ায় মাওবাদীরা তাঁর ডাকে কতটা সাড়া দেবে, তা বলা মুশকিল। |
|
|
|
|
|