|
|
|
|
ফের প্রতিহিংসা হবে কি, উদ্বেগ সূর্যকান্তের |
স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় • কোতুলপুর |
অবশেষে দুই নিহত সিপিএম নেতার বাড়িতে গিয়ে পরিবারকে সান্ত্বনা দিলেন বামফ্রন্ট নেতৃত্ব।
সোমবার বিধানসভায় বামফ্রন্ট্রের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের নেতৃত্বে বামফ্রন্টের এক প্রতিনিধিদল যায় বাঁকুড়ার কোতুলপুর থানার সাইমনি গ্রাম ও বিষ্ণুপুর থানার জন্তা গ্রামে। গত ১১ জুন সাইমনি গ্রামে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে মারা হয় সিপিএম নেতা অলোক বেওরাকে। ২৫ জুন পাশের জন্তা গ্রামে একই কায়গায় পিটিয়ে মারা হয় সিপিএমের বিষ্ণুপুর-উত্তর লোকাল কমিটির সদস্য সীতারাম কুণ্ডুকে।
পরপর দলের দুই নেতা খুন হয়ে গেলেও সেই সময় দুই গ্রামে গিয়ে নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর ‘সাহস’ দেখাননি জেলা সিপিএম নেতারা। দলের জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্র বলেছিলেন, “ওখানে যাওয়ার মতো পরিবেশ নেই। দলের যে কেউ আক্রান্ত হতে পারেন।” |
|
নিহত নেতাদের বাড়িতে বাম নেতারা। ছবি: শুভ্র মিত্র। |
এ দিন ওই দুই গ্রামে গিয়ে সূর্যকান্ত মিশ্র প্রায় একই কথার পুনরাবৃত্তি করলেন। বললেন, “অনেক কষ্ট নিয়েই এসেছি। এখানে আসার অধিকার ছিল না। আমরা উদ্বিগ্ন, ফিরে যাওয়ার পরে ফের কোনও প্রতিহিংসা না ছড়ায়!” সামনে বিরোধী নেতার ‘পাইলট কার’। পিছনে পুলিশের গাড়ি। সঙ্গে জেলার এক সিপিএম সাংসদ, দুই সিপিএম বিধায়ক, সিপিএমের জেলা সভাধিপতি এবং সিপিএম, সিপিআই, ফরওয়ার্ড ব্লক, আরএসপি-র জেলা সম্পাদক-সহ ১৫ জনের প্রতিনিধি দল। দলটি প্রথমে যায় জন্তা গ্রামে। সূর্যকান্তবাবু বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ সীতারাম কুণ্ডুর বাড়িতে পা রাখতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন নিহতের স্ত্রী মিঠু দেবী। স্বামীর হত্যায় জড়িতদের কঠোর শাস্তি চান। সীতারামবাবুর ভাই রাধেশ্যামবাবু প্রতিনিধিদলকে বলেন, “গ্রামের মানুষ ভয়ে খোঁজ নিতে আসতে পারছেন না। আমরা এখনও দাদাকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে মেরে ফেলার ভয় কাটিয়ে উঠতে পারিনি।”
পরের গন্তব্য সাইমনি। আধ ঘণ্টারও বেশি সময় গ্রামের নিহত সিপিএম নেতা অলোক বেওরার বাড়িতে কটিয়ে সূর্যকান্তবাবুরা যখন ফেরার পথে, তখন অলোকবাবুর ছেলে সহদেব বলে উঠলেন, “বাবার মৃত্যুর জন্য বিএ ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা দিতে পারলাম না। এখন আশঙ্কা করছি, আপনারা আসায় ফের ঝামেলা না হয়। তাঁকে বিরোধী দলনেতার সান্ত্বনা, “পুলিশকে বিশেষ ভাবে নজর দিতে বলা হয়েছে। তবে ধৈর্য ধরতে হবে। কোনও প্ররোচনায় পা দেওয়া চলবে না। এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে।”
নিহত দুই পরিবারের সদস্যদের হাতে দলের তরফে ১০ হাজার টাকা করে তুলে দেওয়া হয়। বাম প্রতিনিধিদলের পরিদর্শনের সময় এলাকা কার্যত সুনসান ছিল। গুটিকয়েক বাসিন্দা কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে ভিড় জমিয়েছিলেন দু’টি বাড়িতে। সাইমনি গ্রামের এক সিপিএম সমর্থক অভিযোগ করেন, তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা তাঁদের সিপিএম না করার হুমকি দিচ্ছে। জন্তার কোনও বাসিন্দাই অবশ্য মুখ খোলেননি।
ফেরার আগে সাংবাদিকদের সূর্যকান্তবাবু বলেন, “বিধানসভা নির্বাচনের পর বাঁকুড়া জেলাতে আমাদের তিন নেতাকে নৃশংসভাবে মারা হল। রাজ্যে মোট ২৪ জন এই নির্বাচনের পরে খুন হয়েছেন। অলোক বেওরার অপরাধ, তিনি এই এলাকায় হিমঘরের মুটে-মজদুর সংগঠনের নেতা ছিলেন। তাই বাবা, স্ত্রী ও ছেলের সামনে তাঁকে পিটিয়ে মারা হল। বৃদ্ধ বাবাকেও পেটানো হয়।” এ দিন ওই বৃদ্ধের বুকের এক্স-রে রিপোর্ট খুঁটিয়ে দেখেন চিকিৎসক সূর্যকান্তবাবু। একই ভাবে, জন্তা গ্রামের সীতারাম কুণ্ডুর প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, “সীতারামবাবুর অপরাধ, তিনি এই গ্রামের গরিব মানুষদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। দু’টি ক্ষেত্রেই এঁদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ ছিল না।” |
|
|
|
|
|