|
|
|
|
রেলকর্মীরা সদয় ভিন্ রাজ্যে, নিজ রাজ্যে পুলিশ রূঢ় |
প্রশান্ত পাল • পুরুলিয়া |
নিজের শহরে পা রেখে ব্রিজগোপাল চণ্ডকের মনে হল, তিনি নতুন জীবন পেয়েছেন। আর মনে হল, সুদূর ইলাহাবাদ স্টেশনে রবিবার রাতে রেলকর্মীদের কাছে যে সৌজন্যের ব্যবহার পেয়েছেন, নিজের শহরে সোমবার রেলপুলিশের কাছে পাওয়া ব্যবহারের সঙ্গে তার কত ফারাক। কালকা মেলের দুর্ঘটনা থেকে বরাতজোরে বেঁচে ফিরলেও নিজের শহরের রেলপুলিশের ‘রূঢ়’ ব্যবহারে বেশ দুঃখ পেয়েছেন পুরুলিয়ার মধ্যবাজার এলাকার বাসিন্দা, ব্যবসায়ী ব্রিজগোপালবাবু। সোমবার সন্ধ্যায় বাড়ির বিছানায় শুয়ে দুঃস্বপ্নের সেই কয়েক ঘণ্টার অভিজ্ঞতা যেমন শুনিয়েছেন, তেমনই বারবার বলছিলেন এই দু’রকম ব্যবহারের কথাও। বলছিলেন, “আমি দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনের যাত্রী শুনে অত রাতেও মুম্বই মেলে বার্থের ব্যবস্থা করে দিলেন ইলাহাবাদের রেলকর্মীরা। আর এখানে পুরুলিয়া স্টেশনের জিআরপি আমার মোবাইলের সিমকার্ড খোয়া যাওয়ার অভিযোগটুকুও নিতে চাইল না!” |
|
পুরুলিয়ার নিজের বাড়িতে ব্রিজগোপাল-সুজিত মাহাতো |
ব্যবসার কাজে উত্তরপ্রদেশের শিকোহাবাদে যাচ্ছিলেন ৫৯ বছরের ব্রিজগোপালবাবু। শনিবার রাত সওয়া ১০টা নাগাদ আসানসোল থেকে উঠেছিলেন হাওড়া-দিল্লি কালকা মেলে। এ দিন বাড়িতে বলছিলেন, “রবিবার দুপুর ১২টার কিছু পরে বাড়ির লোকের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলে সবে এস-৪ কামরার আপার বার্থে (৩ নম্বর) খেতে বসেছিলাম। প্যান্ট্রির ছেলেটা একটু আগেই খাবার দিয়েছে। ট্রেন তখন মলওয়াঁ স্টেশন ছেড়েছে। খুব বেশি গতি ছিল না। হঠাৎ প্রচণ্ড ঝাঁকুনি। সপাটে ট্রেনের মেঝেয় আছড়ে পড়লাম। গোটা কামরা দুলছে। আমরা একে অপরের গায়ে ধাক্কা খাচ্ছি। মাথায়, গায়ে ধাক্কা লাগছে কখনও বার্থের, কখনও স্যুটকেসের।”
দুলতে দুলতে এক সময় দরজা দিয়ে বাইরে ছিটকে পড়েন তিনি। তার পরে যা দেখলেন, সেই দৃশ্য এখনও দুঃস্বপ্নের মতো তাড়া করছে তাঁকে। ব্রিজগোপালবাবুর কথায়, “অত বড় বড় কামরাগুলো যেন খেলনা গাড়ির মতো দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছে। চার পাশে আহতদের আর্ত চিৎকার। কয়েক জন যাত্রী আমারই মতো বাইরে ছিটকে পড়েন। রক্তে ভেসে যাচ্ছিল তাঁদের চারপাশ।”
ফোন, ব্যাগ সবই তো কামরায় থেকে গিয়েছে। একটি অ্যাম্বুল্যান্স ফতেপুর পৌঁছে দেয় ওই ব্যবসায়ীকে। সেখান থেকে বাসে করে রবিবার রাত সওয়া ৮টা নাগাদ পৌঁছন ইলাহাবাদ স্টেশনে। কালকার টিকিট দেখে রেলরকর্মীরা ট্রেনে বার্থের ব্যবস্থা করেন। সকালে আসানসোল স্টেশনে পৌঁছে প্যাসেঞ্জার ট্রেনে দুপুরে পৌঁছন পুরুলিয়ায়। বিকেলে বিকল্প সিমকার্ড পেতে রেলপুলিশে অভিযোগ করতে যান ব্রিজগোপালবাবু। তাঁর অভিযোগ, “রেলপুলিশ আমাদের সটান বলে দিল, যেখানে ঘটনা ঘটেছে, সেখানে যান অভিযোগ করতে। আমরা কিছু করতে পারব না।” তাঁর আক্ষেপ ভিন্ রাজ্যে কত ভাল ব্যবহার পেলাম। আর নিজের শহরেই জুটল এমন ব্যবহার।” রাতে খড়্গপুর রেলপুলিশের সুপার শঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, “ঘটনার কথা এই শুনলাম। খোঁজ নিয়ে দেখছি।” রাতে খড়্গপুর রেলপুলিশের সুপার শঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, “আমি ঘটনার কথা এই শুনলাম।” |
|
|
|
|
|