|
|
|
|
আদালতের নির্দেশে ছেলে ফিরল মায়ের কাছে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • তমলুক |
অভাবের তাড়নায় ছেলেকে ‘দত্তক’ দিয়েছিলেন জন্মদাত্রী মা। কয়েক বছর পরে সেই ছেলেকেই ফিরে পাওয়ার আশায় আদালতের দ্বারস্থ হলেন তিনি। জন্মদাত্রী মায়ের অভিযোগ, পালিতা বাবা-মা তাঁর ছেলের উপর যারপরনাই অত্যাচার চালাচ্ছে। পালিতা বাবা-মা-র কাছে থাকার ইচ্ছাপ্রকাশ করলেও এগারো বছরের ওই বালককে অবশ্য জন্মদাত্রী মায়ের কাছেই ফিরিয়ে দিয়েছে আদালত। সোমবার তমলুকের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে এই মামলার রায় নিয়ে ছিল বিশেষ কৌতূহল। বিচারক সোনালী নন্দী চক্রবর্তী জন্মদাত্রী মা সবিতা দাসের কাছেই ছেলে সিন্টুকে ফিরিয়ে দেওয়ার আদেশ দিলে কান্নায় ভেঙে পড়েন পালিতা মা অরুণা দাস। প্রয়োজনে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। |
|
আদালত চত্বরে সিন্টু। নিজস্ব চিত্র। |
তমলুক থানার বাড়-আস্তাড়া গ্রামের সবিতাদেবীর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল ঘাটালের নাড়াজোলের পেশায় বাস কন্ডাক্টর কমল দাসের। অসুখে ভুগে কমলবাবু অকালে মারা গেলে দুই নাবালক ছেলে সিন্টু-মিন্টুকে নিয়ে অথৈ জলে পড়েন সবিতাদেবী। শ্বশুরবাড়ি থেকে বেরিয়ে ঘাটাল শহরের কৃষ্ণনগরে একটি ভাড়া বাড়িতে ওঠেন তিনি। ভাড়াবাড়ির মালিক সুবল দাসের মেয়ে অরুণা ও তাঁর স্বামী শত্রুঘ্ন দাস এক ছেলেকে দত্তক নিতে চাইলে রাজি হয়ে যান সবিতাদেবী। পাঁশকুড়ায় অরুণাদেবীর পরিবারে পাঠিয়ে দেন বড় ছেলে সিন্টুকে। অভিজিৎ নাম নিয়ে স্কুলে ভর্তি হয় সিন্টু। পাঁশকুড়ার ব্রাডলিবার্ট স্কুলের পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছিল সে।
এ দিকে, গত ২৯ জুন সবিতাদেবী থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন, তাঁর ছেলেকে শত্রুঘ্নবাবু ও তাঁর আত্মীয়রা অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছে। সবিতাদেবীর অভিযোগ, পালিতা বাব-মা-র অত্যাচারের হাত থেকে রেহাই পেতে ছেলে তাঁর কাছে ফিরে গিয়েছিল। কিন্তু শত্রুঘ্নবাবুরা জোর করে তাঁকে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছে। থানা ব্যবস্থা না নেওয়ায় ছেলেকে ফিরিয়ে দেওয়ার আর্জি জানিয়ে তমলুক মহকুমা আদালতের দ্বারস্থ হন সন্ধ্যাদেবী। আদালতের নির্দেশে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় সিন্টুকে পুলিশ ‘উদ্ধার’ করে। শনিবার আদালতে বিচারকের কাছে গোপন জবানবন্দি দেয় সিন্টু। সোমবার ফের ওই মামলার শুনানি হয়। সবিতাদেবীর আইনজীবী আদালতে অভিযোগ করেন, সিন্টুকে ভরণপোষণের লোভ দেখিয়ে নেওয়া হয়েছিল। যে ভাবে স্ট্যাম্প পেপারে স্বাক্ষর করিয়ে দত্তক নেওয়া হয়েছিল তা অবৈধ। অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচতে সিন্টু জন্মদাত্রী মায়ের কাছে ফিরে এলে তাকে অপহরণ করে নিয়ে যান শত্রুঘ্নবাবু ও তাঁর আত্মীয়েরা। অপহরণের অভিযোগ অস্বীকার করে শত্রুঘ্নবাবুর আইনজীবী বলেন, “অভিজিৎ ওরফে সিন্টুকে সন্তান স্নেহেই পালন করতেন অরুণাদেবী ও শত্রুঘ্নবাবু। সিন্টু নিজেও পালিতা বাবা-মা-র কাছেই থাকতে চায়।” বিচারক উভয়পক্ষের জবানবন্দি শোনার পরে নাবালক সিন্টুকে জন্মদাত্রী মায়ের কাছেই ফিরিয়ে দেন। অপহরণের মামলা চলবে।
এ দিন আদালতে আগাগোড়াই নির্বিকার ছিল সিন্টু। রায় শোনার পরেও আদালত চত্বরে সে পালিতা বাবা-মা-র কাছে থাকার ইচ্ছাই প্রকাশ করে। আর সবিতাদেবী বলেন, “ছেলেকে ফিরে পেয়ে আমি খুশি। বাপের বাড়িতে থেকে ওকে মানুষ করব।” |
|
|
|
|
|