|
|
|
|
শহিদ দিবস পালনেও ‘পরিবর্তন’ গড়বেতায় |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
রাজ্যে ‘পালাবদল’ হয়ে গিয়েছে। এ বার ‘হাতবদল’ হল শহিদ দিবসের অনুষ্ঠানও।
গড়বেতার বাঁশদা গ্রামে ১৯৪৯ সালের ২৬ আষাঢ় পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়েছিল তিন জন খেতমজুরের। সেই থেকে এই দিনটিকে প্রতি বছরই শহিদ দিবস হিসেবে পালন করে বামেরা। গোড়ায় সিপিআইয়ের উদ্যোগে দিনটি পালিত হত। ১৯৮০ সাল থেকে বামফ্রন্টই ছিল নানা কর্মসূচির আয়োজক। তবে এ বারের ২৬ আষাঢ় অর্থাৎ সোমবার ‘পরিবর্তনে’র সাক্ষী রইল বাঁশদা গ্রাম। বামফ্রন্ট নয়, শহিদ দিবস পালিত হল তৃণমূলের উদ্যোগে।
বামেদের অভিযোগ, তৃণমূল তাদের শহিদ দিবস পালন করতে দেয়নি। গড়বেতার এই গ্রামে লাল ঝান্ডা উড়বে না বলে ‘হুঁশিয়ারি’ দেওয়া হয়েছে। সিপিআইয়ের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক সন্তোষ রাণার ক্ষোভ, “সেই ১৯৫০ সাল থেকে দিনটি পালিত হচ্ছে। এ বারও আমরা শহিদ দিবস পালনে উদ্যোগী হই। কিন্তু তৃণমূল নেতৃত্ব হুঁশিয়ারি দেন, বাঁশদায় আর লাল পতাকা উড়বে না। বামফ্রন্টের কেউ গ্রামে কোনও কর্মসূচি পালন করতে পারবে না।” তৃণমূল অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। দলের গড়বেতা ব্লক সভাপতি সুভাষ মাঝির দাবি, “এমন হুঁশিয়ারি দলের কেউ দেয়নি। অভিযোগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তা ছাড়া, এ বারও শহিদ দিবস পালন করা হয়েছে। গ্রামবাসীরাই স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে এই কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন।”
সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামের ‘ঘা’ শুকোতে গত বছর রীতিমতা ঘটা করে বাঁশদা গ্রামে শহিদ দিবস পালন করে বামফ্রন্ট। এসেছিলেন প্রাক্তন মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষ। এ বার অবশ্য একেবারেই উল্টো ছবি। বিধানসভা নির্বাচনে পালাবদলের পরে গড়বেতা আর সিপিএমের ‘খাসতালুক’ নেই। এলাকাছাড়া সুশান্তও। এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের দাবি, শহিদ দিবস পালনের সাংগঠনিক শক্তিই নেই বামেদের। তাই গ্রামের মানুষের আবেগকে গুরুত্ব দিয়ে তৃণমূলই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
সোমবার বিকেলের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা তৃণমূল নেতা অসীম ওঝা, দলের ব্লক সভাপতি সুভাষ মাঝি প্রমুখ। অসীমবাবু বলেন, “এ বার আমরাই শহিদ দিবস পালন করেছি। পরে আরও বড় কর্মসূচি হবে। এত দিন শহিদ পরিবারকে নিয়ে শুধু রাজনীতি করেছে সিপিএম ও তার শরিকেরা। আমরা তাঁদের প্রকৃত সাহায্য করব।” ঠিক কী হয়েছিল ১৯৪৯ সালে? ন্যায্য মজুরি ও জমিতে অধিকারের দাবিতে জমিদার-জোতদার বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছিলেন খেতমজুরেরা। ওই বছর ২৬ আষাঢ় বাঁশদায় বিদ্রোহ চরম আকার নেয়। অভিযোগ, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলোপাথাড়ি গুলি ছোড়ে পুলিশ। মৃত্যু হয় সুধীর লায়েক, পার্বতী লায়েক ও ভবতারণ লায়েকের। তাঁদের স্মৃতিতে গ্রামে শহিদ বেদি তৈরি হয়। তার পর থেকে বামেদের উদ্যোগেই প্রতি বছর দিনটি পালিত হয়েছে। বিশেষ এই দিনটিতে বাঁশদায় এসেছেন গীতা মুখোপাধ্যায়, মণিকুন্তলা সেন, কামাখ্যা ঘোষের মতো বাম নেতৃবৃন্দ। এই স্মৃতিচারণ করে সিপিআই নেতা সন্তোষ রাণার ‘আক্ষেপ’, “১৯৪৯-এ লড়াইটা হয়েছিল জমিদার-জোতদারদের দল কংগ্রেসের সঙ্গে সর্বহারাদের। তৃণমূলের জন্মও তো সেই কংগ্রেস থেকে। ইতিহাস ভুলিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করতেই ওদের এই চেষ্টা।” এ দিনের শহিদ স্মরণ অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন ১৯৪৯ সালে নিহত সুধীর লায়েকের ছেলে শম্ভুবাবু। বাম-আমলেও অনুষ্ঠানে এসেছেন। এ দিন শহিদ দিবস পালনের আয়োজন কারা করল, তা নিয়ে অবশ্য শম্ভুবাবুর কোনও মাথাব্যথা নেই। তাঁর আক্ষেপ একটাই, “এত বছরেও আমরা কোনও আর্থিক সাহায্য পাইনি।” |
|
|
|
|
|