নদীবাঁধ মেরামতির কাজ বন্ধ করে দিলেন ‘ক্ষুব্ধ’ সেচ কর্তারা |
তৃণমূল বিধায়কদের একাংশের প্রশ্ন ছিল বাঁধ মেরামতির ক্ষেত্রে সেচ দফতরের কাজের পদ্ধতি নিয়ে। তাঁরা বলেছিলেন, বিনা টেন্ডারে কিংবা বিনা ওয়ার্ক অর্ডারে কাজ হলে দুর্নীতির অবকাশ থেকেই যায়। সেচ দফতরের কর্তাদের পাল্টা যুক্তি ছিল, কোনও কোনও ক্ষেত্রে জরুরি পরিস্থিতিতে কাজ করতে গেলে এ সবের জন্য অপেক্ষা করলে চলে না। কিন্তু ‘জরুরি ভিত্তিতে’ কাজের পরিস্থিতি তৈরি হতে না দিয়ে আগে থেকে পরিকল্পনামাফিক কাজ হবে না কেন সে প্রশ্নও তুলেছিলেন বিধায়কেরা। এত সব প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে একই সঙ্গে ‘আহত’ এবং ‘ক্ষুব্ধ’ হয়েছেন। যার জেরে হাওড়া জেলার নদীবাঁধ মেরামতির কাজ গত দিন সাতেক ধরে বন্ধ করে দিয়েছেন তাঁরা। কাজ বাকি ছিল আর সামান্যই। এই অবস্থায় আচমকা অতিবৃষ্টি বা বন্যা হলে পরিস্থিতি কী হবে, তা নিয়ে গ্রামবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
জেলাশাসক সঙ্ঘমিত্রা ঘোষের কথায়, “সেচ দফতররের বাস্তুকারেরা যদি অভিমান বা ক্ষোভের কারণে কাজ বন্ধ করে দেন, আমি তাঁদের সঙ্গে কথা বলব। তবে বিনা টেন্ডার ও ওয়ার্ক অর্ডারে জরুরি ভিত্তিতে কাজ করার প্রথা সেচ দফতরের আছে।” |
হাওড়ার হাটবাউড়িয়ার কাছে হুগলি নদীর জলের তোড়ে ক’দিন আগেই এ ভাবে ধস নেমেছিল নদীবাঁধে। নিজস্ব চিত্র। |
জেলা ‘ভিজিল্যান্স অ্যান্ড মনিটারিং কমিটি’-এর বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক জেলার বিধায়কদের নিয়ে সম্প্রতি জেলা পরিষদে বন্যা পরিস্থিতি আলোচনার জন্য একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে জেলার ১৬ জন বিধায়ক হাজির ছিলেন। ডাকা হয়েছিল সেচ দফতরের বাস্তুকারদের। সেখানেই তৃণমূল বিধায়কদের একাংশ প্রশ্ন তোলেন, নদী বাঁধ মেরামতির জন্য যে সব কাজ সেচ দফতর করছে, তার জন্য কোনও টেন্ডার হয়নি। ঠিকাদারদের দেওয়া হয়নি কোনও ওয়ার্ক অর্ডার। তাঁদের অভিযোগ, এই ভাবে কাজ করা বেআইনি।
গত পনেরো দিন ধরে আমতা, শ্যামপুর, উলুবেড়িয়া প্রভৃতি এলাকায় দামোদর, রূপনারায়ণ, হুগলি প্রভৃতি নদীর বাঁধের ভাঙনের অংশগুলি মেরামত করছে সেচ দফতর। সব মিলিয়ে কাজ হচ্ছে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার। একাধিক ঠিকাদার সংস্থা কাজ করছে। সেচ দফতরের দাবি, প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ হয়ে গিয়েছে। বাকি ১০ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে গেলে বন্যা প্রতিরোধের ক্ষেত্রে তেমন কোনও সমস্যা হবে না।
বৈঠকে তৃণমূল বিধায়কদের একাংশ এই সব কাজ নিয়েই প্রশ্ন তোলেন বলে জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর। সেচ দফতরের বাস্তুকারের পাল্টা বলার চেষ্টা করেন, বর্ষার শুরুতে কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির ফলে নদী বাঁধের অবস্থা খারাপ হয়ে পড়েছিল। ফলে জরুরি ভিত্তিতে ঠিকাদারদের ওই সব কাজ করার জন্য বরাত দেওয়া হয়। কারণ, টেন্ডার বা ওর্য়াক অর্ডার দেওয়ার জন্য অন্তত একমাস সময় লাগে। তা ছাড়া, বর্ষার সময়ে বাঁধের ভাঙনের চেহারা প্রতিমুহূর্তে পাল্টে যেতে থাকে। এই সব কাজের সঠিক প্রকল্প রিপোর্টও করা যায় না। সেই কারণে বিনা টেন্ডারে এবং বিনা ওয়ার্ক অর্ডারেই বাঁধ মেরামতির জরুরি কাজগুলি করতে হয়। সেচ দফতরের বাস্তুকারেরা এই সব যুক্তিতে অবশ্য বিধায়কদের ওই অংশটি সন্তুষ্ট হননি। এর পরেই সেচ দফতরের বাস্তুকারেরা বাকি কাজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন।
উলুবেড়িয়া দক্ষিণ কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক পুলক রায় বলেন, “সেচ দফতরের কাছে আমাদের প্রশ্ন ছিল, সারা বছর কাজ না-করে কেন শুধু বন্যার আগেই কাজ করা হয়। জরুরি ভিত্তিতে কিছু কাজ অবশ্যই করতে হবে। কিন্তু এমন অনেক কাজ হচ্ছে, যেগুলির ক্ষেত্রে ঠিকাদারকে ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া যেত। বিনা টেন্ডারে বা ওয়ার্ক অর্ডারে কাজ হলে দুর্নীতির অবকাশ থেকে যায়। এই পদ্ধতির পরিবর্তন দরকার। কাজ করাতে গেলে ওয়ার্ক অর্ডার দিতেই হবে।”
সেচ দফতরের আমতা মহকুমার নির্বাহী বাস্তুকার রঘুনাথ চক্রবর্তী বলেন, “জরুরি কাজ বিনা ওয়ার্ক অর্ডারে করার প্রথা বহু পুরনো। এই ভাবেই সর্বত্র সেচ দফতরের কাজ হয়। কিন্তু বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে যে ভাবে আলোচনা হল, তারপরে আমরা আর বিনা ওয়ার্ক অর্ডারে কাজ করব না। তাতে দেরি হয় হোক। সব কাগজপত্র তৈরি করে তবে কাজে হাত দেব। বিনা দোষে কলঙ্কের ভাগীদার হব কেন?” বিষয়টি নিয়ে জেলাশাসকের সঙ্গে তিনি আলোচনা করবেন বলে জানান সেচ দফতরের হাওড়া ডিভিশনের নির্বাহী বাস্তুকার রবীন মুখোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “যে বৈঠকে বিষয়টি আলোচনা হয় তাতে আমি ছিলাম না। তবে বিনা টেন্ডারে বা ওয়ার্ক অর্ডারে কাজ করানো নিয়ে যে দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে, তাতে বিভাগীয় বাস্তুকারেরা আহত হয়েছেন বলে আমাকে তাঁরা জানিয়েছেন। তাঁরা কাগজপত্র তৈরি না-করে বাকি কাজ করতে চাইছেন না। যাইহোক, কাগজপত্র তৈরি হচ্ছে। আশা করি খুব শীঘ্র সমস্যা মিটে যাবে। জেলাশাসকের সঙ্গেও সমস্যাটি নিয়ে আলোচনা করব।” |