|
|
|
|
সাক্ষাৎকার... |
|
সামাজিক বা রাজনৈতিক দায়িত্বের দোহাই
দিয়ে উচ্চশিক্ষার মানটা বিসর্জন দেবেন না
প্রাথমিক শিক্ষা থেকে শুরু করে উচ্চতর পঠনপাঠন এবং গবেষণা পর্যন্ত সবটাই তো শিক্ষা।
কিন্তু শিক্ষাজিনিসটাকে একঢালা একটা ছাঁচে ভাবলে চলবে না। কারণ, বিভিন্ন স্তরের মোটেই
এক গোত্রের বস্তু নয়। পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষা ব্যবস্থায়
পরিবর্তন নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। সেই
প্রেক্ষিতে বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী আন্দ্রে বেতেই-এর সঙ্গে একান্ত আলাপে শোভন তরফদার |
|
প্রেসিডেন্সি কলেজ তো আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা পেয়েছিল, এ বার পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক পালাবদলের পরে তাকে নতুন করে গড়ে তোলার একটা চেষ্টা শুরু হয়েছে। প্রেসিডেন্সির নবজন্মের ব্যাপারে কী করা উচিত বলে আপনার মনে হয়? শুধু প্রেসিডেন্সি কেন, আমি বলব আরও অনেকটা ছড়ানো অর্থে বললে, উচ্চশিক্ষার উন্নতি-র জন্য একটি জিনিসই করণীয়। তা হল, ‘মেরিট’-এর ভিত্তিতে যোগ্যতা নির্ণয়। ইংরেজিতে ‘মেরিটারিয়ান প্রিন্সিপল’ নামে একটি কথা আছে। জানি না, ‘মেরিট’-এর ঠিক বাংলা প্রতিশব্দ কী হবে! ‘মেধা’ বললে হয়তো খানিকটা বোঝায়। প্রকৃত মেধা-কে খুঁজে বের করতে হবে, তার কদর করতে হবে। যে ভাবে ‘মেরিট’-এর ভিত্তিতে প্রেসিডেন্সির ‘মেন্টর গ্রুপ’-এর সদস্যদের নির্বাচন করা হয়েছে, আশা করব এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বেছে নেওয়ার সময়, ছাত্রছাত্রী ভর্তির সময়েও সেই একই মান বজায় রাখা হবে। সবাইকে ঠাঁই দিতে হবে, এই যুক্তিতে সেই মানটি শিথিল করা হবে না। এই তো, দিল্লির শ্রীরাম কলেজ অব কমার্স-এ ভর্তি নিয়ে শোরগোল পড়ে গেল।
হ্যাঁ, ভর্তির ন্যূনতম যোগ্যতামান ধরা হয়েছিল একশো শতাংশ নম্বর।
আসনসংখ্যা সীমিত, অথচ পঁচানব্বই শতাংশ নম্বর পেয়েছে, এমন ছেলেমেয়ে তো অনেক। তখন কলেজ কী করবে? এ ব্যাপারে অনেকে অনেক কিছু বলছেন, কিন্তু সমস্যাটা ভেবে দেখার মতো। দেখলাম, সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, এ তো দেখা যাচ্ছে, শেক্সপিয়র এলেও তাঁকে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি করা যাবে না। আমি বলব, এ জাতীয় মন্তব্যের কোনও মানেই হয় না। কথাটা একটু নির্মম, কিন্তু সত্যি যে, প্রয়োজনীয় যোগ্যতামান না থাকলে কাউকেই ভর্তি করা উচিত নয়। আর, সত্যি যদি শেক্সপিয়রই আসতেন, তাঁকেও ভর্তি করা যেত না। কারণ, যতদূর জানি, ভদ্রলোক উচ্চশিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতামান অর্জন করতে পারেননি। (হাসি) ভর্তির ব্যাপারটা খুব বাস্তব একটা সমস্যা, তার সমাধান করা জরুরি। এটাও শুধু দিল্লি বলে নয়, সর্বত্রই। পশ্চিমবঙ্গেও।
বলা হয়, আরও নতুন কলেজ খুলতে হবে...
হ্যাঁ, সেটা বলা হয়, কিন্তু তাতেও এই সমস্যাটা কতটা মিটবে, তা বলা কঠিন। নতুন নতুন কলেজ তো খোলাই যায়, তার গুণমান রাতারাতি খুব উঁচু মানের হবে, এতটা আশা করা কঠিন। হ্যাঁ, আরও কিছু ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা যাবে, ঠিক, কিন্তু ভাল কলেজের ওপরে চাপটা থেকেই যাবে, কারণ মেধাবীরা সদ্য গজিয়ে-ওঠা কলেজের বদলে সেখানেই ভর্তি হতে চাইবে। এই অবস্থায় প্রকৃত মেধাকে চিহ্নিত করতে না পারলে সমস্যাটা কমবে না, বাড়তেই থাকবে।
আপনি বরাবরই বলেছেন, উচ্চশিক্ষায় যোগ্যতা নির্ণয়ের একমাত্র ভিত্তি হওয়া উচিত ‘মেরিট’।
উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে মেরিটারিয়ান প্রিন্সিপলকে আক্রমণ করা একটা ‘ফ্যাশন’। শুধু আমাদের দেশে নয়, অন্যত্রও। নীচের দিকে যারা পড়ে আছে, তাদের জন্য কিছুই করব না, তা হয়তো ঠিক নয়, কিন্তু তা বলে মেধার ভিত্তিটাকে আমরা অগ্রাহ্য করতে পারি না। যদি করি, তা হলে কী করে ঠিক করব কে ফার্স্ট ক্লাস পাবে, কাকে সেকেন্ড ক্লাস দেওয়া হবে, কে প্রফেসর হবে, কে লেকচারার! না কি, এ সবই ‘আগে এলে আগে পাবেন’ ভিত্তিতে চলবে?
যোগ্যতা নির্ণয়ের মাপকাঠি যদি মেধা না হয়?
তখন অন্য একটা রাস্তা খোলা থাকে। সুপারিশ। প্রিন্সিপল অব প্যাট্রনেজ। কারও একটা চিঠি নিয়ে গেলেন, কাজটা হয়ে গেল। আমি বলব, মেরিটারিয়ান প্রিন্সিপল-এর যত দোষই থাক, তা সুপারিশ-এর চেয়ে ভাল। মেধার এই অবহেলা শুধু পশ্চিমবঙ্গে হয়েছে তা নয়, অন্যখানেও হয়েছে। নীতিগত ভাবে, সকলের জন্য আমরা সব কিছু সুবিধে করে দেব। কিন্তু, কার্যক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়। সুতরাং, বাস্তবে মেরিটারিয়ান প্রিন্সিপলকে সরিয়ে সেই জায়গাটা নিচ্ছে সুপারিশের নীতি। আলিমুদ্দিন স্ট্রিট থেকে কারও হাতে একটা চিঠি দিয়ে দেওয়া হল এই ছেলেটি খুব ভাল, একে রিডারশিপ দিয়ে দেওয়া হোক। আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা এ ভাবে চলতে পারে না।
আপনি বললেন, উচ্চশিক্ষায় যোগ্যতার মাপকাঠি মেধা ছাড়া কিছু হতেই পারে না। কিন্তু, বুনিয়াদি শিক্ষা?
‘মেরিটারিয়ান প্রিন্সিপল’-এর উপর কিছু কিছু নিয়ন্ত্রণ, আমি বলব কিছু অ্যান্টিডোট থাকা দরকার। যেমন আমি মনে করি, অ্যাকসেস টু এডুকেশন। কার হবে, কার হবে না। এই বিষয়টা নিয়ে প্রথমেই ভাবা দরকার যে, শিক্ষা জিনিসটাকে একঢালা একটা ছাঁচে ভাবলে চলবে না। কারণ, সেটা মোটেই এক গোত্রের বস্তু নয়। প্রাথমিক শিক্ষা থেকে শুরু করে উচ্চতর পঠনপাঠন এবং গবেষণা পর্যন্ত সবটাই তো শিক্ষা। কিন্তু, প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে অ্যাকসেস টু এডুকেশন-এর যে নীতি হওয়া উচিত, উচ্চতর গবেষণার ক্ষেত্রে তা কখনওই কার্যকর হওয়া উচিত নয়। প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে রেস, কাস্ট, জেন্ডার যেমন কখনওই বিচার্য নয়, তেমনই আমি বলব, এবিলিটি, মেরিট, পারফর্ম্যান্স-ও বিবেচ্য হতে পারে না। প্রশ্নটা যখন কোনও শিশুর স্কুলে ভর্তি হওয়ার, তখন আমি কখনওই বলতে পারি না যে, এই বাচ্চাটা একটু বোকা বোকা, একে স্কুলে নেব না। প্রাথমিক শিক্ষার অধিকার সকলের। কিন্তু, উল্টো দিকে, ধরা যাক, পিএইচ ডি অ্যাডমিশন! সেখানে, রেস, কাস্ট বা জেন্ডার-এর প্রশ্ন নিশ্চয়ই সরিয়ে রাখব, কিন্তু এবিলিটি, মেরিট, পারফর্ম্যান্স? সেগুলোও বাদ। তা-ও তো হচ্ছে।
|
|
লেখাপড়া করে যে...। পশ্চিমবঙ্গের একটি গ্রামীণ প্রাথমিক বিদ্যালয়। |
মানবিক কারণ দেখিয়ে আমরা পিএইচ ডি ফেলোশিপ পর্যন্ত ,সবার জন্য খুলে দিয়েছি। কিন্তু, সেটা কারা পেতে পারে? একেবারে কিছুই না জেনে আজকাল লোকে পিএইচ ডি নিয়ে বেরোচ্ছে। এটা আমি সব বিষয়ে বলতে পারি না, কিন্তু আমার নিজের বিষয়ে যথেষ্ট জোর দিয়েই বলতে পারি। কারণ, আমি অনেক ইন্টারভিউ নিয়েছি, যারা পিএইচ ডি পেয়ে গিয়েছে, পিএইচ ডি করছে, তাদের আমি সব সময়ই প্রশ্ন করি, কী বই পড়েছ, কী পড়ছ? পাঁচটা ভাল বইয়ের নাম পর্যন্ত বলতে পারে না। যারা পিএইচ ডি করছে, তাদের বই পড়ার পাশাপাশি আরও একটা বড় দায়িত্ব প্রফেশনাল জার্নাল পড়া। কিন্তু, প্রফেশনাল জার্নাল দূরস্থান, অনেককেই দেখেছি, ইকনমিক অ্যান্ড পলিটিক্যাল উইকলি-র নাম পর্যন্ত শোনেনি। তা সত্ত্বেও এরা পিএইচ ডি হচ্ছে, রীতিমতো ফেলোশিপও পাচ্ছে। যুক্তি দেওয়া হচ্ছে, ফেলোশিপ কেন দেওয়া হবে না? এরা দুঃস্থ, এরা দলিত, এরা মহিলা।
সে ক্ষেত্রে সামাজিক দিক থেকে একটা ক্ষমতায়নের যুক্তি দেওয়া হয়।
ঠিকই, কিন্তু সেটা করার অন্য অনেক রাস্তা আছে। পিএইচ ডি ফেলোশিপ কেন? বলা হয়, ঠিক আছে, পরে এরা পড়াশোনা করে নেবে! আরে, কবে আর করে নেবে? এই দাক্ষিণ্য বিতরণটা কাস্ট-এর দিক থেকেও করা হয়, ক্লাস-এর দিক থেকেও। ভারতের একটি মুখ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি জনৈক ছাত্রের পিএইচ ডি থিসিস-এর পরীক্ষক ছিলাম। দেখলাম, থিসিসটি অতি খারাপ ভাবে লেখা, লেখকদের নামের বানান পর্যন্ত জানে না, লেখার কোনও বাঁধুনি নেই, আমি মন্তব্য করলাম যে, একে থিসিসটি ফের লিখতে বলা হোক। তাতে সেই ছাত্রটি আঘাত পেয়েছিল। সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, যিনি সেই থিসিসটির সঙ্গে যুক্ত, তিনিও দেখলাম বেশ ক্ষুব্ধ। তাঁরা সবাই আমার থেকে সিনিয়র। মৌখিক পরীক্ষার দিন আমাকে বললেন, হ্যাঁ, ডক্টর বেতেই, আমরা তো সবাই অক্সফোর্ড-কেমব্রিজে গিয়ে ইংরেজি শিখতে পারি না! আরে, ইংরেজি শেখার জন্য অক্সফোর্ড-কেমব্রিজ যেতে হবে কেন? আমি অক্সফোর্ড-কেমব্রিজ-এ গিয়ে ইংরেজি শিখিনি। নির্মলকুমার বসুও সে সব জায়গায় গিয়ে ইংরেজি মকসো করেননি। যত্ন করে লেখার যে একটা দাম আছে, তাকে আমরা হেয় করি। পাছে, মেধার গুরুত্ব মানতে হয়।
পশ্চিমবঙ্গেও কি মেধার অবমূল্যায়ন ঘটেছে?
ঘটেছে। কতটা কাস্ট-এর ভিত্তিতে হয়েছে, তা জানি না, কিন্তু ক্লাস-এর ভিত্তিতে তো হয়েছেই। সবাই সমস্বরে বলল, গরিবের ছেলেমেয়েকে সব কিছু করে দাও। নিশ্চয়ই তাদের জন্য করতে হবে, কিন্তু কারও যদি একটা ন্যূনতম যোগ্যতাও না থাকে, তা হলে স্রেফ গরিবের ছেলে বলেই তাকে আমি পিএইচ ডি অ্যাডমিশন দেব না। বরং, গরিবের ছেলে যাতে সেই যোগ্যতামানটা অর্জন করতে পারে, তাকে যাতে ঠিক মতো তৈরি করা যায়, সে দিকে জোর দেওয়া উচিত। তা না করে, সবাইকে পিএইচ ডি দিয়ে দাও, ফেলোশিপ বিলোনো শুরু করো! বলা হচ্ছে, সবাইকে আই আই টি-তে ভর্তির সুযোগ দিতে হবে। কী করে? না, নতুন নতুন আই আই টি খুলে! দেশে এখন নতুন নতুন অনেক আই আই টি হয়েছে, কিন্তু কী তাদের রিসোর্স? গণ-হারে পিএইচ ডি, ফেলোশিপ ইত্যাদি বিতরণের সময় ভাবা দরকার, এ ভাবে কি শিক্ষার উঁচু মানটা আদৌ বজায় রাখা সম্ভব? কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বেশ কয়েক লাখ। মুম্বই বিশ্ববিদ্যালয়ে বোধহয় বারো না তেরো লাখ। কী করে চালাবে? কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বছরের ইংরেজি পরীক্ষায় বঙ্কিমচন্দ্র ফেল করেছিলেন। পরে গ্রেস মার্ক পেয়ে পাশ করেন। আর এখন তো পাইকারি হারে নম্বর। বিশ্ববিদ্যালয় তো আর নব্বই শতাংশ ছাত্রছাত্রীকে ফেল করাতে পারে না। সুতরাং, পাশের হার ওই রকমই থাকবে। ষাট শতাংশ। সত্তর শতাংশ। যদি দেখা যায়, যারা ফেল করছে, তাদের অধিকাংশই গরিব, তখন তো তুলকালাম কাণ্ড হবে, কৈফিয়ত দিতে হবে, সেই ভয়ে পাশ করিয়ে দেয়। এম এ পরীক্ষা হলে অন্তত পঞ্চান্ন শতাংশ নম্বর দিয়ে দাও। কেন? না, ওই নম্বরটুকু না পেলে এম ফিল করতে পারবে না, পিএইচ ডি করতে পারবে না, চাকরি পাবে না। আমি বলব, একটা ইরেসপন্সিবল হিউম্যানিটারিয়ানিজম চলেছে। একটা কথা শুনি, বিশ্ববিদ্যালয় চালানো একটা সামাজিক দায়িত্ব। সামাজিক দায়িত্ব তো বটেই, কিন্তু অ্যাকাডেমিক দায়িত্ব? সামাজিক দায়িত্ব, রাজনৈতিক দায়িত্ব ইত্যাদির দোহাই দিয়ে অ্যাকাডেমিক স্ট্যান্ডার্ডটাকে তো বিসর্জন দিয়ে দেওয়া যায় না।
আর প্রাথমিক শিক্ষা?
আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে অবিলম্বে ভাল করা উচিত। একটা বেসিক সাপোর্ট স্ট্রাকচার যাতে চালু থাকে। আমার মেয়ে শিক্ষার অর্থনীতি নিয়ে গবেষণা করেছে, স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচ ডি-ও করেছে। ও-ই আমাকে জানিয়েছিল যে এম আই টি-র একটা সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, যে কোনও কাজের দিনে ভারতের প্রাথমিক স্কুলগুলোতে অন্তত পঁচিশ শতাংশ শিক্ষক অনুপস্থিত থাকেন। তো, এটা শুনে আমি মেয়েকে বললাম, তুমি অর্থনীতির ছাত্রী, এ সব নিয়ে অংক কষবে, আমি তো অ্যানথ্রপলজিস্ট। আমি হলে কী প্রশ্ন করতাম জানো? ওই যে পঁচাত্তর শতাংশ স্কুলে হাজির থাকে, তারা কী করে? বিভূতিবাবুর পথের পাঁচালী-র সেই মাস্টারমশাই যে ভাবে পড়াতেন, সে ভাবেই পড়ানো হয়, না কি পড়ানোর অন্য কোনও পদ্ধতি আছে? এই যে সরকার থেকে স্কুল-টুল নিয়ে অজস্র সমীক্ষা চালানো হয়, পরিসংখ্যান জড়ো করা হয়, এ সব আমার মতে অর্থহীন। বরং, গ্রামের স্কুলগুলো কী ভাবে চলছে, অন্য ধাঁচের স্কুলগুলো কী ভাবে চলে, তা নিয়ে আরও গবেষণা চালানো উচিত। ভারত যখন স্বাধীন হয়, তখন আমরা ভারতের গ্রাম সম্পর্কে প্রায় কিছুই জানতাম না। তার পর, যেন একটা ঝোঁকেই বলব, অনেকগুলো ভিলেজ স্টাডি হল। আমি এক গ্রামে গিয়ে এক বছর ছিলাম। এম এন শ্রীনিবাস-ও গ্রামে ছিলেন, টি এন মদন ছিলেন। গ্রাম সম্পর্কে একটা ধারণা হল।
তা হলে কি বলবেন, সরকারি উদ্যোগ ‘গ্রাম’-কে ঠিকমতো চিনতে পারছে না বলেই ঠিক যা দরকার, তা করা হয়ে উঠছে না?
আমি বিশ্বাস করি, শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয়, ভারতের নানা প্রত্যন্তে ছড়িয়ে থাকা স্কুল সম্পর্কে আমাদের কোনও ধারণা নেই। এখনও নেই। শুধু সরকারকে দোষ দিয়ে লাভ কী? যে ভাবে কোনও পাবলিক স্কুল চলে, তার সঙ্গে গ্রামের কোনও স্কুলের কতটা ফারাক? এ সব নিয়ে কাজ হওয়া দরকার। আমি ওই যে গ্রামটায় গিয়ে এক বছর ছিলাম, তার পরে একটা বই লিখেছিলাম, ওই গ্রামেই একটা স্কুল আছে, রামকৃষ্ণ স্কুল, সেই স্কুলটা নিয়েই এক জন কাজ করছেন। তাঁকে আমার ছাত্রও বলতে পারেন, থাকেন ওখানেই। ওঁর কাছেই শুনলাম, গ্রামে যাঁদেরই একটু আর্থিক ক্ষমতা আছে, তাঁরা ছেলেমেয়েদের মাইল দুয়েক দূরে পাশের একটা ছোট মফস্সল শহরের স্কুলে পাঠিয়ে দেন। সবচেয়ে বড় কথা, যাঁরা ওই স্কুলের শিক্ষক, তাঁরা কেউই নিজেদের বাচ্চাকে ওই স্কুলে পড়ান না। যাঁরা আরও একটু সচ্ছল, তাঁরা মাইল আটেক দূরে তাঞ্জোরের স্কুলে ছেলেমেয়েদের পাঠান। তো, এই এক মাইল, দু’মাইল, আট মাইলের ব্যবধানে আমরা যে সব স্কুল পাচ্ছি, তাদের মধ্যে আকাশপাতাল ফারাক! এটা কেন হচ্ছে, কী ভাবে এই ব্যবধানটা কমিয়ে আনা যায়, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা দরকার। |
|
|
|
|
|