|
|
|
|
সম্পাদকীয় ২... |
আতঙ্কযাত্রা |
কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে দুইটি রেল দুর্ঘটনা, একটিতে মৃতের সংখ্যা সত্তরের কাছাকাছি। এই দুর্ঘটনা দুইটির কারণ কী, তাহা নিশ্চয়ই তদন্তসাপেক্ষ। কিন্তু এই অঘটন আবার দেখাইয়া দিল যে, ভারতীয় রেল ক্রমশ নিরাপত্তাহীন যাত্রার প্রতীক হইয়া উঠিতেছে। রেলপথের রক্ষণাবেক্ষণ, প্রযুক্তিগত আধুনিকীকরণ, নিরাপত্তা সংক্রান্ত সর্বশেষ বন্দোবস্তগুলির কোনওটিই ভারতীয় রেল যথেষ্ট মাত্রায় গ্রহণ করে নাই। রেলের আধুনিকীকরণের জন্য অপরিহার্য তহবিল সংগ্রহের দিকে মনোনিবেশ করার বদলে যাত্রিভাড়া ও পণ্যমাসুল একই রাখিয়া উন্নয়নকে উত্তরোত্তর ভর্তুকিনির্ভর করিয়া তোলা হইয়াছে। পরিণাম সকলের চোখের সামনে। প্রয়োজনীয় উন্নয়ন এবং রক্ষণাবেক্ষণকে প্রাপ্য গুরুত্ব না দিবার ঐতিহ্য কায়েম হইয়া গেলে এমনই হয়। পরিকাঠামো প্রস্তুত অর্থাৎ নূতন রেলপথ না বানাইয়া নিত্যনূতন ট্রেন চালু করা হয়। রেলপথের আধুনিকীকরণ উপেক্ষিত হইতে থাকে। অবহেলিত হইতে থাকে যাত্রী-নিরাপত্তা। একদা স্বচ্ছন্দ ও নিশ্চিন্ত যাত্রা বলিয়া গণ্য রেলযাত্রা এখন আতঙ্কযাত্রায় পরিণত।
অথচ যে ভাবে রেল মন্ত্রকের কাজকর্ম পরিচালিত হয়, তাহাতে যাত্রিস্বার্থের প্রতি মৌখিক দরদের অতিরিক্ত কোনও কল্যাণভাবনা নজরে পড়ে না। এই মুহূর্তেই রেল দফতরে তিন-তিন জন রাষ্ট্রমন্ত্রী আছেন, কিন্তু এক জনও পূর্ণমন্ত্রী নাই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইস্তফার পর প্রধানমন্ত্রীর হস্তেই আপাতত পূর্ণ মন্ত্রকের দায়িত্ব থাকিলেও সেটা প্রথাগত অন্তর্বর্তিকালীন ব্যবস্থা, প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ নাই আলাদা করিয়া রেলের জন্য সময় দিবার। যাঁহাদের তাহা ছিল, সেই তিন রাষ্ট্রমন্ত্রীর কেহই কিন্তু দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান নাই। মুকুল রায়, যিনি আবার কেন্দ্রীয় জাহাজ মন্ত্রকেরও প্রতিমন্ত্রী, কলিকাতায় স্থিত থাকিয়াছেন। আগে বৃহৎ রেল দুর্ঘটনায় বহু মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর তাহার নৈতিক দায় স্বীকার করিয়া রেলমন্ত্রীর পদত্যাগের মধ্যে হয়তো অবাঞ্ছিত নাটকীয়তা থাকিত। কিন্তু একই সঙ্গে তাহাতে হতাহতদের প্রতি দায়বদ্ধ সহমর্মিতার প্রতিফলনও থাকিত। নাটকীয়তার প্রয়োজন নাই, দায়বদ্ধতার প্রয়োজন আছে। দায়বদ্ধতার অর্থ আবেগ নয়, বক্তৃতা নয়, শব্দের আড়ম্বর নয়। দায়বদ্ধতাকে অর্থপূর্ণ করিয়া তুলিবার জন্য প্রয়োজন একটি যথাযথ প্রশাসন এবং যোগ্য পরিকাঠামো। গত মাসের সূচনায় রেল প্রতিমন্ত্রী মুকুল রায় জানাইয়াছিলেন, নিরাপত্তা জোরদার করিবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনগুলিতে সংহত নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৈয়ারি করা হইবে, রেলের বিভিন্ন সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণের বন্দোবস্ত আরও ভাল করা হইবে, ‘যাত্রীদের নিরাপত্তাই হইবে ভারতের রেলের প্রথম ও প্রধান অগ্রাধিকার’। এই ধরনের বিবৃতি শ্রুতিমধুর, কিন্তু এত কাল পরেও কেন রেলমন্ত্রীদের এই কথা বলিতে হয়, বলিবার দরকার হয়, তাহাই বড় প্রশ্ন। রবিবারের দুইটি দুর্ঘটনা সেই প্রশ্নই সম্মুখে আনিল। |
|
|
|
|
|