সম্পাদকীয় ১...
স্বাভাবিক মিত্র
চিন হইতে ভারতের শিক্ষণীয় বিষয়ের তালিকাটি নিঃসন্দেহে দীর্ঘ। কী ভাবে সহযোগিতার মাধ্যমে, অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রতিবেশীকে সুবিধা করিয়া দিয়া, কোনও অঞ্চলে নিজের প্রতিপত্তি বাড়াইতে হয়, এক্ষণে তাহা অবশ্য শিক্ষণীয়। মুহূর্তটি জরুরি, কারণ বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণের সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরে এক অ-পূর্ব সম্ভাবনা সৃষ্টি হইয়াছে বাংলাদেশের সহিত দৃঢ়তর সম্পর্ক গড়িয়া তুলিবার সম্ভাবনা। চিন তাহার উল্কাগতির উত্থানের প্রাথমিক পর্যায়েই নিজের বাজার পূর্ব এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলির নিকট খুলিয়া দিয়াছিল সরকারি লাল ফিতার ফাঁস ছাড়াই। ফলে, চিনের আর্থিক বৃদ্ধির সুফল এই দেশগুলিও পাইয়াছে। তাহারা চিনকে অঞ্চলের ‘স্বাভাবিক নেতা’ হিসাবে দেখিতে শিখিয়াছে। চিন তাহার আর্থিক, রাজনৈতিক সকল সুফলই পাইয়াছে, পাইবে। দক্ষিণ এশিয়ার কাহিনি পৃথক। একটি পরিসংখ্যান: পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির মোট বৈদেশিক বাণিজ্যের কুড়ি শতাংশ নিজেদের মধ্যে চলে; দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতে বহু দশক ধরিয়া এই অনুপাত মাত্র দুই শতাংশ। কেন দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে আর্থিক সম্পর্ক পোক্ত হইল না, তাহার বহু কারণ আছে। পাকিস্তানের অন্ধ ভারত বিরোধিতা সার্ক-এর ন্যায় উদ্যোগের ব্যর্থতার একটি বড় কারণ। ভারতও প্রতিবেশী দেশগুলির সহিত নিজের আর্থিক সমৃদ্ধি ভাগ করিয়া নেওয়ার চেষ্টা করে নাই, দক্ষিণ এশিয়ায় নিজের স্বাভাবিক মিত্র তৈরি করিতে পারে নাই। সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ বাংলাদেশের সহিত সেই মৈত্রীর সম্ভাবনা তৈরি করিয়াছে। সেই সম্ভাবনাকে সযত্নে বিকশিত করিবার দায়িত্ব ভারতীয় নেতাদের।
ভারত এবং বাংলাদেশের অর্থনীতির আয়তনের কোনও তুলনা হয় না। ফলে, যে সম্পর্ক মূলত অর্থনীতির ভিত্তিতে গড়িয়া উঠিবে, তাহার স্বার্থে দুই দেশ সমান পথ হাঁটিবে, এমন প্রত্যাশাও অর্থহীন। বাংলাদেশের জন্য শর্তহীন ভাবে ভারতীয় বাজার খুলিয়া দিতে হইবে যাহাতে বাংলাদেশি বিনিয়োগকারীরা ভারতকে স্বাভাবিক বাজার হিসাবে বিবেচনা করিতে পারেন। বাংলাদেশি পণ্যের উপর কোনও আমদানি শুল্ক আরোপ করা চলিবে না। বাংলাদেশের নিকট ইহার প্রতিদান চাহিবার প্রশ্নই নাই। তাহাতে ভারতের কোনও ক্ষতি নাই। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের মোট রফতানির পরিমাণ ১৫০০ কোটি ডলার, আর ভারতের মোট আমদানির পরিমাণ ৩২,১০০ কোটি ডলার। বাংলাদেশের সমস্ত পণ্যও যদি ভারতীয় বাজারে পৌঁছায়, তাহারও প্রভাব ভারতীয় অর্থনীতির উপর নামমাত্র। কিন্তু, লাভ বিপুল। সেই লাভকে অর্থনীতির নিক্তিতে মাপিলে চলিবে না। প্রথম লাভ, বাংলাদেশ ভারতকে ‘মিত্র’ হিসাবে দেখিতে শিখিবে, ফলে ভারত-বিদ্বেষের রাজনীতির পালে হাওয়া খানিক হইলেও কমিবে। আন্তর্জাতিক মঞ্চে কিছু বিশ্বস্ত বন্ধু ভারতের প্রয়োজন, এবং সেই বন্ধু প্রতিবেশী হইলে ভাল। দ্বিতীয়ত, ভারত-বিদ্বেষ কমিলে বাংলাদেশ ভারত-বিরোধী সন্ত্রাসবাদের নিশ্চিন্ত আশ্রয় না-ও থাকিতে পারে। তৃতীয় লাভ, বাংলাদেশের স্থলপথ বিনা বাধায় ব্যবহারযোগ্য হইলে ভারতের উত্তর-পূর্ব প্রান্তের চির-অবহেলিত রাজ্যগুলিতে পৌঁছাইবার কাজটি সহজ হইবে।
আরও একটি লাভ স্পষ্ট বাংলাদেশের সহিত সম্পর্কের উন্নতি ঘটিলে, বাণিজ্যের প্রসার ঘটিলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির সহিত বাণিজ্য সহজ হইবে। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই সেই বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র হইবে পশ্চিমবঙ্গ, বিশেষত কলিকাতা। কলিকাতা বন্দর এক সময় ভারতে অগ্রগণ্য ছিল। এখন বাণিজ্যের ভূগোল এবং অর্থনীতি উভয়ই বদলাইয়াছে, ফলে পশ্চিম ভারতের বন্দরগুলিই মুখ্য। বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির সহিত বাণিজ্য কলিকাতাকে দেশের অর্থনৈতিক ভূগোলের মানচিত্রে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করিতে পারে। শুধু কলিকাতাই নহে, বাংলাদেশ সংলগ্ন প্রতিটি নগরকেন্দ্রই এই বাণিজ্যে লাভবান হইবে। তাহাতে পশ্চিমবঙ্গের লাভ, ভারতেরও। অতএব, সেপ্টেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবিত বাংলাদেশ সফরের পূর্বেই ভারতের তরফে উদ্যোগ করিতে হইবে। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বা এককালীন আর্থিক সাহায্য নহে, বাংলাদেশকে আন্তরিক ভাবে সাহায্য করিবার ইচ্ছাটি যথাযথ ভাবে প্রতিষ্ঠা করিতে হইবে। এখনই সেরা সময়। শেখ হাসিনা এবং তাঁহার দল ঐতিহাসিক ভাবেই ভারতের প্রতি সু-মনোভাবাপন্ন। ভারতের তরফে আন্তরিক সদিচ্ছা দক্ষিণ এশিয়ার ভবিষ্যৎকে নূতন করিয়া লিখিতে পারে।
First Page Editorial Next Item


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.