দুপুর পৌনে দু’টো নাগাদ সেই বহু প্রতীক্ষিত ফোনটি এল ৭ নম্বর রেসকোর্স রোড থেকে। এল তালকাটোরা রোডে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং লোদী এস্টেটে দীনেশ ত্রিবেদীর কাছে।
ফোনের ও পারে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। প্রধানমন্ত্রীর প্রথম প্রশ্ন, কোথায় আছেন? দু’জনেই জানান, তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে এক দিন আগেই দিল্লি পৌঁছে গিয়েছেন তাঁরা। নিশ্চিন্ত প্রধানমন্ত্রী এর পর তাঁদের আমন্ত্রণ জানান, আগামিকাল রাষ্ট্রপতিভবনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য।
পরবর্তী রেলমন্ত্রী হবেন দীনেশ ত্রিবেদী এবং কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় আনুষ্ঠানিক ভাবে এই ঘোষণাটুকুই শুধু বাকি। কিন্তু তৃণমূল নেত্রী এর মধ্যেই দু’জনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ এবং শুভেচ্ছা জানিয়ে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর ফোন আসার পর মোবাইলে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন সুদীপ-দীনেশের সঙ্গে। তবে যে হেতু মন্ত্রিসভার রদবদলের মতো একটি বিষয় এবং না-আঁচালে বিশ্বাস নেই, তাই আপাতত কারও কাছেই বিশেষ মুখ খুলছেন না দুই তৃণমূল সাংসদ। আজকের দিনটাও কাটিয়েছেন আর পাঁচটা সাধারণ দিনের মতো, নিজেকে উত্তেজনার বাইরে রেখে। |
সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় |
দীনেশ ত্রিবেদী |
|
পরশু রাতে সস্ত্রীক রাজধানীতে পৌঁছেছেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ খবরটি পাওয়ার পর কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়ে দিবানিদ্রায় ডুব দিলেন। তাঁর সতীর্থ দীনেশ ত্রিবেদী ডুব দিলেন রবীন্দ্রসঙ্গীতে! দুপুরে খবর পাওয়ার পর নিজের আই প্যাডে শুনলেন একের পর এক গান। কোনও সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দেওয়া নয়, দিনটি কাটালেন স্ত্রী এবং পুত্রের সঙ্গে অলস আড্ডায়। আজ বিকেলেই এসে পৌঁছেছেন তাঁর স্ত্রী-পুত্র। ভবিষ্যতের মন্ত্রকটি নিয়ে আগাম কোনও কথা বলতে নারাজ দীনেশ। শুধু ঘনিষ্ঠমহলে দু’টি কথাই জানিয়েছেন ভাবী রেলমন্ত্রী। এক, নেত্রীর দেখানো পথেই চলবেন তিনি। ২০২০-র যে ‘ভিশন ডকুমেন্ট’ মমতা তৈরি করে দিয়েছেন, সেটিই তাঁর বাইবেল। দ্বিতীয়ত, কাজ করবেন অবশ্যই জাতীয় প্রেক্ষাপটকে মাথায় রেখে। কিন্তু নেত্রীর মতো পশ্চিমবঙ্গ থাকবে তাঁরও অগ্রাধিকারের মধ্যে।
চার বারের বিধায়ক ও তিন বারের সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে এই প্রথম নতুন দায়িত্ব (মন্ত্রিত্ব) পেতে চলেছেন। জানাচ্ছেন, “স্বাস্থ্য মন্ত্রকে কাজ করার সুযোগ পেলে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাজ্যে আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের হাতেই স্বাস্থ্য দফতরটি রেখেছেন। আমাকে তিনি সেই বিভাগেই কেন্দ্রীয় সরকারে যুক্ত করে দিলেন, এটাই তো বড় কথা।” সুদীপবাবু জানিয়েছেন, মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলানোর পাশাপাশি ১ অগস্ট থেকে শুরু হতে যাওয়া সংসদ অধিবেশনটিও তাঁর কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক অতীতে এই প্রথম সংসদ চলবে, কিন্তু মমতা থাকবেন না। সুদীপের কথায়, “সংসদে সিপিএম যাতে গণ্ডগোল করতে না পারে, সে দিকেও নজর রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন নেত্রী।” |