অবশেষে কাল বিকেল পাঁচটায় মন্ত্রিসভার রদবদল করতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। কিন্তু সেই রদবদল ‘বড় মাপের’ হবে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
অথচ দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের মাঝ পর্বে এসে প্রধানমন্ত্রী একটা বড়সড় ঝাঁকুনি দেবেন, এমনটাই প্রত্যাশিত ছিল। একের পর এক কেলেঙ্কারি ও অনিয়মের অভিযোগে সরকার যখন জর্জরিত, তখন ভাবমূর্তি ফেরাতে এমন পদক্ষেপই দরকার ছিল বলে কংগ্রেসের একটা বড় অংশের অভিমত। এবং সেই সম্ভাবনার প্রত্যাশা জাগিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই। জানুয়ারিতে সর্বশেষ রদবদলের দিন তিনি বলেছিলেন, বাজেট অধিবেশনের পরে মন্ত্রিসভার বড়সড় রদবদল হবে। কিন্তু সেই প্রতীক্ষিত মুহূর্তের ২৪ ঘণ্টা আগে পরিবর্তনের ‘মাপ’ নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
আজ সকালে কংগ্রেস সভানেত্রীর সঙ্গে ফের বৈঠক করেন মনমোহন। যদিও মন্ত্রিসভার বদল সংক্রান্ত বিষয়টি নিজেদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছেন সনিয়া-মনমোহন, তবু আজকের বৈঠকের পর কংগ্রেস সূত্রে বলা হয়, বড় ধরনের রদবদলের সম্ভাবনা কম। বিশেষ করে অর্থ, স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও বিদেশের মতো শীর্ষ চার মন্ত্রকে কোনও পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করা হচ্ছে। যাঁর মন্ত্রক বদল নিয়ে জল্পনা হচ্ছিল সবচেয়ে বেশি, সেই বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণ আজ জানিয়েছেন, বুধবার বিদেশ সংক্রান্ত বিষয়ে একটি সাংবাদিক বৈঠক করবেন তিনি। অর্থাৎ, কৃষ্ণ কৌশলে এটাই বুঝিয়ে দিলেন যে, তাঁর মন্ত্রক পরিবর্তন হচ্ছে না।
কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা আজ বলেন, কৃষ্ণকে যে প্রধানমন্ত্রী সরাতে চাইছেন না, তা আগেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তবে সরতে হতে পারে কোম্পানি বিষয়ক মন্ত্রী মুরলী দেওরাকে। তিনি নিজেই সনিয়ার সঙ্গে দেখা করে পদত্যাগের ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন। তাঁর ছেলে মিলিন্দ দেওরাকে মন্ত্রী করা হতে পারে। উত্তর-পূর্ব বিষয়ক মন্ত্রী বি কে হান্ডিক, পরিসংখ্যান ও প্রকল্প রূপায়ণ মন্ত্রী এম এস গিল, আদিবাসী উন্নয়ন মন্ত্রী কান্তিলাল ভুরিয়া এবং নারী ও শিশু কল্যাণমন্ত্রী কৃষ্ণা তিরথকেও সরানো হতে পারে।
পূর্ণমন্ত্রীদের মধ্যে কারও কারও ‘ভার’ লাঘব করা হতে পারে কাল। যেমন, বিলাসরাও দেশমুখের কাছে রয়েছে গ্রামোন্নয়ন ও পঞ্চায়েতিরাজ মন্ত্রক। এর মধ্যে একটি মন্ত্রক তাঁর হাত থেকে নিয়ে নেওয়া হতে পারে। তবে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী কপিল সিব্বলের কাছে টেলিকম মন্ত্রকের অতিরিক্ত দায়িত্ব থাকলেও তা নিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনা কম বলেই কংগ্রেস সূত্রে খবর। সলমন খুরশিদকে সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক থেকে সরিয়ে অন্য কোনও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। আবার বীরাপ্পা মইলিকে আইন মন্ত্রক থেকে সরানোরও সম্ভাবনা রয়েছে।
বাদ যাওয়া মন্ত্রীদের জায়গায় নতুন মুখ যেমন আসবে, তেমনই কয়েক জন প্রতিমন্ত্রীর পদোন্নতি হতে পারে। কর্মদক্ষতা তো বটেই এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক কারণও রয়েছে। উত্তরপ্রদেশ ও পঞ্জাবে ভোট আসন্ন। এই অবস্থায় বেণীপ্রসাদ বর্মাকে পূর্ণমন্ত্রী করা হতে পারে। উত্তরপ্রদেশ থেকে সম্ভাব্য মন্ত্রীদের তালিকায় সঞ্জয় সিংহ ও রাজ বব্বরকেও রাখছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। আবার এম এস গিলের পরিবর্তে পঞ্জাব থেকে এগিয়ে রাখা হচ্ছে, মহেন্দ্র সিংহ কেপি বা প্রতাপ সিংহ বাজওয়াকে। অন্য দিকে বি কে হান্ডিকের পরিবর্তে অসম থেকে মন্ত্রী করা হতে পারে পবন সিংহ ঘাটোয়ারকে। ছত্তীসগঢ় থেকে মন্ত্রী হতে পারেন কংগ্রেস সাংসদ চরণদাস মহান্ত। এ ছাড়া, জয়ন্তী নটরাজন, কিশোর চন্দ্র দেও, জ্যোতি মির্ধার মন্ত্রিসভায় আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
তৃণমূলের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদীও কাল পূর্ণমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেবেন। তিনি রেল মন্ত্রকের দায়িত্ব নেবেন বলেই তৃণমূল সূত্রের খবর। দীনেশের জায়গায় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী হবেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়।
এ ছাড়া, প্রতিমন্ত্রী গুরুদাস কামাথ, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া ও শ্রীকান্ত জেনার পদোন্নতি হতে পারে। যে হেতু কেরলে এ বার মুসলিম লিগ ভাল ফল করেছে এবং অসমে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার তাদের ওপর নির্ভরশীল, তাই ই আহমেদের এ বার পদোন্নতি হতে পারে।
তবে কংগ্রেস বোঝানোর চেষ্টা করলেও ডিএমকে থেকে মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ আসার সম্ভাবনা কম। আলাগিরি-সহ তাদের বর্তমান মন্ত্রীদের মন্ত্রকের কিছু পরিবর্তন ঘটতে পারে। কংগ্রেস সূত্রে খবর, শেষ মুহূর্তে রদবদল ও মন্ত্রক নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন হলে কাল সকালে ফের বৈঠকে বসতে পারেন সনিয়া-মনমোহন। |