সেই অন্ধকারে কত ঘণ্টা কেটেছে হিসেব নেই। মনে হচ্ছিল অনন্তকাল! শুধু বুঝতে পারছিলেন আশপাশের কেউ আর বেঁচে নেই। দুর্ঘটনাগ্রস্ত কালকা মেলের এস-২ কামরার যাত্রী উত্তম কুমার বারবার সেই কথাই বলছেন।
তাঁর কামরাটি বেলাইন হয়ে গিয়ে অন্য কামরার নীচে চলে গিয়েছিল। উত্তমবাবু বলেন, “অন্ধকারের মধ্যে চারদিকে থেকে শুধু যন্ত্রপাতি ভেঙে পড়ার আওয়াজ আসছিল। আর আর্তনাদ শুনতে পাচ্ছিলাম। কিন্তু আমার আশেপাশের কেউ নড়াচড়া করছিল না। বুঝতে পারছিলাম, অন্তত দশ জন মারা গিয়েছেন।” প্রায় একই অভিজ্ঞতা হাওড়ার হামিদ উল শেখেরও। তিনি বলেন, “বাড়ির লোকদের সঙ্গে অন্তত চার ঘণ্টা কামরার মধ্যে আটকে ছিলাম। মনে হচ্ছিল অনন্তকাল।” দুর্ঘটনাগ্রস্ত কালকা মেলের ১৬৭ জন যাত্রী আজ বিশেষ ট্রেনে কানপুর থেকে দিল্লি পৌঁছন ভোর ছ’টা নাগাদ। তাতে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা হামিদ উল শেখ, শাবানা নাজ, রজতকান্ত মাইতিরা। রেলের তরফে ১২ জন চিকিৎসককে নিয়োগ করা হয়েছিল স্টেশনে। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সতীশ কুমার গড়ি জানান, এক জনকে এইম্সের ট্রমা সেন্টারে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের অধিকাংশেরই মাথায় চোট। বর্তমানে দিল্লির খানপুরের বাসিন্দা রজতকান্ত মাইতির স্ত্রীর মাথায় চোট লেগেছে। হুগলির দিলীপ দলুইয়ের যেমন উপরের বার্থে ওঠার লোহার মইতে মাথা ঠুকে গিয়ে রক্তারক্তি কাণ্ড ঘটে। নিজেই কোনও রকমে জামা দিয়ে মাথায় ব্যান্ডেজ বেঁধে নেন।
স্টেশনেই প্রাথমিক চিকিৎসা করা হচ্ছিল দিল্লিতে ফেরা কনিষ্ঠতম যাত্রীটির। পাঁচ বছরের সমর। তার পায়ে চোট লেগেছে। শুধু একটাই কথা শিশুটির মুখে, “মুঝে বহুত ডর লাগা।” সমরের বাবা জানান, এস-৯ কামরায় ছিলেন তাঁরা। ‘কপালগুণে’ দুর্ঘটনার পরেই আপৎকালীন জানলা দিয়ে বেরিয়ে
এসেছিলেন। শাবানা নাজ জানান, তাঁদের কামরায় সবাইকে মাত্র একটা জানলা দিয়ে বেরোতে হয়েছে।
এমন সব অভিজ্ঞতা বলার পাশাপাশি রেলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানাচ্ছিলেন যাত্রীদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, দুর্ঘটনার পর যাত্রীদের খাবার-জলের ব্যবস্থাও করেননি রেলকর্তারা। কলকাতা থেকে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর স্তরে ভর্তি হতে যাচ্ছিলেন বছর একুশের তৃণা মজুমদার। দুর্ঘটনার পর খোয়া গিয়েছে মার্কশিট-সহ যাবতীয় দরকারি কাগজপত্র। পায়ে চোটও লেগেছে। তৃণার কথায়, “ঘটনার ঘণ্টা তিনেক পরে উদ্ধারকারীরা আসেন। তত ক্ষণ এক ফোঁটা জলও পাইনি।” হামিদ উল শেখের অভিযোগ, উদ্ধারের পর একটি বাসে গাদাগাদি করে তাঁদের কানপুরে নিয়ে আসা হয়। উপরন্তু ওই বাসের কন্ডাক্টর একেকজনের কাছ থেকে ৫০ টাকা করে ভাড়াও আদায় করেন। |