মৃত্তিকাগর্ভে সুপ্ত আগুনের আতঙ্কে ধানবাদের ঝরিয়ার ঐতিহ্যশালী কলেজের ভবিষ্যৎ নিয়েই সংশয় দেখা দিয়েছে। ঝরিয়ার রাজপরিবারের দর্শনীয় ভবনে অবস্থিত ৬০ বছরের পুরনো রাজা শিবপ্রসাদ কলেজটিই ঝরিয়ার একমাত্র কলেজ। মাটির তলায় পরিত্যক্ত খনির আগুন কলেজটিকে প্রায় ছুঁয়ে ফেলছে দাবি করে তা সরানোর পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় খনন ও জ্বালানি-বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র (সিএমএফআর)। প্রশাসনের এই পরামর্শে ক্ষুব্ধ কলেজের ছাত্রেরা কাল মঙ্গলবার গোটা ঝরিয়ায় বন্ধের ডাক দিয়েছেন।
বিসিসিএল-এর খনি এলাকায় অবস্থিত ঝরিয়া শহরের প্রায় পুরোটাই কার্যত মাটি চাপা আগুনের উপরে দাঁড়িয়ে। শহরের বেশির ভাগ অংশ থেকেই জনবসতি পুরোপুরি সরিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু রাজনৈতিক টানাপোড়েনেতা বেশ কয়েক বছরেও সারা যায়নি। এ বার ঐতিহ্যশালী কলেজটি সরানো নিয়েও বিতর্কের ঝড় উঠেছে। কলেজের ছাত্র সংসদ ইতিমধ্যে বিসিসিএল-এর সিএমডি তাপসকুমার লাহিড়ি ও ধানবাদের কালেক্টর সুনীলকুমার বার্নওয়ালের কুশপুতুল দাহ করেছে। এসএফআই এবং ডিওয়াইএফ-ও এই আন্দোলনের শরিক। তাদের অভিযোগ, স্থানীয় প্রশাসন ও বিসিসিএল কর্তৃপক্ষের গয়ংগচ্ছ ভাবেই পরিস্থিতি ক্রমশ হাতের বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে। এখনও চেষ্টা করলে পরিখা কেটে বা অন্য পদ্ধতিতে কলেজটিকে বাঁচানো সম্ভব। ধানবাদের ডিসি বার্নওয়াল অবশ্য স্পষ্টই বলেন, “এখন এ কলেজ সরানো ছাড়া উপায় নেই। পড়ুয়াদের সুবিধার কথা মাথায় রেখেই কলেজের বিকল্প জায়গা দ্রুত ঠিক করা হবে।” |
সিএমএফআর সূত্রের খবর, ২০০৭ সাল থেকেই ক্রমশ মাটির তলার আগুনের জিভ লকলকিয়ে কলেজের দিকে ধেয়ে আসছে। ২০০৭ সালে ৯৭ মিটার দূরে ছিল আগুন। এক বছর আগে তা ৭৬ মিটার দুরত্বের মধ্যে চলে আসে। মাসে প্রায় ২.২ মিটার করে এগোনোর হার বজায় রেখে গত জানুয়ারিতে আগুন কলেজের ৪৩ মিটারের মধ্যে চলে আসে। কেন্দ্রীয় বিশেষজ্ঞদের দাবি, চলতি মাসে এই দূরত্ব কমে ৩০ মিটারে এসে দাঁড়িয়েছে। কলেজে লাগোয়া জলের ট্যাঙ্ক থেকে মিনারেল এরিয়া ডেভলেপমেন্ট অথরিটি ঝরিয়ায় জল সরবরাহ করে। ওই ট্যাঙ্কের থেকে মাত্র ২০ মিটার দূরে এখন আগুন। প্রশাসনের বক্তব্য, আর পরিখা খুঁড়ে লাভ নেই। কলেজটিকে সরাতেই হবে।
বিশেষজ্ঞরা এখন কলেজের দেওয়াল খুঁড়ে ড্রিলিং করে আগুনের বিপদের গুরুত্ব বুঝতে চান। কলেজের অধ্যক্ষ কিরণ সিংহ ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, নিরাপত্তার স্বার্থে কলেজ ভাঙাভাঙিতে তাঁর আপত্তি নেই। কিন্তু ওই কলেজটির সঙ্গে ঝরিয়াবাসীর দীর্ঘদিনের আবেগ জড়িয়ে। কলেজের ছাত্রনেতা রাকেশ কুমার সিংহের দাবি, “এত দিন প্রশাসন বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি বলেই বিপদ এতটা বেড়েছে। এখনও প্রশাসন চাইলে পরিস্থিতি সামলাতে পারে।”
পরিস্থিতি বুঝে রাজনৈতিক দলগুলিও আসরে নামছে। কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ ধীরজ সাহু বলেন, “ঝাড়খণ্ডের বিজেপি সরকার ঐতিহ্যশালী কলেজটাকে উপড়ে ফেলা চায়। তারই ষড়যন্ত্র চলছে। আমি সনিয়া গাঁধী ও কয়লামন্ত্রী শ্রীপ্রকাশ জয়সোয়ালের সঙ্গে কথা বলব। কলেজটিকে বাঁচাবই বাঁচাব।” বিক্ষোভ আন্দোলন চললেও কলেজ কী ভাবে বাঁচানো যাবে, তার সদুত্তর কারও কাছে নেই। |