|
|
|
|
ফের ‘ঝাঁপ’ মেট্রোয়, ভোগান্তি যাত্রীদের |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
ফের ঝাঁপ দিয়ে মৃত্যু মেট্রোয়। ফের বিকেলের ব্যস্ত সময়ে পরিষেবা বন্ধ থাকায় ভোগান্তি যাত্রীদের। সোমবার বিকেলে চাঁদনি চক স্টেশনে ওই ঘটনার জেরে প্রায় আধ ঘণ্টা বন্ধ থাকে মেট্রো। দাঁড়িয়ে যায় আপ ও ডাউন লাইনের সব ট্রেন। এর জেরে চরম নাকাল হন বহু মানুষ।
মেট্রো সূত্রে খবর, এ দিন বিকেল পৌনে চারটে নাগাদ আচমকা কবি সুভাষগামী একটি এসি ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দেন আশিস শ্রীবাস্তব (১৯) নামে এক তরুণ। গিরিশ পার্ক এলাকার বাসিন্দা আশিস একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্ল্যাটফর্মে হাঁটতে হাঁটতে মোবাইলে কথা বলছিলেন ওই তরুণ। ট্রেন ঢোকার সময়ে হঠাৎই নিজের মোবাইলটি লাইনে ছুড়ে ফেলে পরক্ষণেই নিজেও ঝাঁপ দেন তিনি। ততক্ষণে ট্রেন ঢুকে পড়েছে স্টেশনে। চাকায় পিষে মৃত্যু হয় আশিসের। যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে ট্রেনটিকে কিছুটা পিছিয়ে নিয়ে যান চালক। লাইন থেকে মৃতদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ কুকুর নামিয়ে পরীক্ষার পরে সওয়া পাঁচটা নাগাদ ফের চালু হয় মেট্রো। ওই এসি ট্রেনটিই প্রথম চালানো হয়। এর পরে আপ ও ডাউন লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনগুলিকে একে একে ছাড়া হয়। সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনে বিকেলে পরিষেবা বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েন প্রচুর যাত্রী।
পুলিশ জানিয়েছে, আশিসের পকেট থেকে কিছু ওষুধ মিলেছে। সেগুলি পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, আত্মহত্যা করেছেন আশিস। এই নিয়ে মেট্রোয় ঝাঁপ দিয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটল ১১০টি। তবে ওই তরুণের পরিবারের কাছ থেকে তাঁর আত্মহত্যা করার মতো কোনও কারণ জানা যায়নি বলে দাবি পুলিশের।
অন্য দিকে, নতুন ব্যবস্থা চালু হওয়ার প্রথম তিন দিনেই টোকেন খোয়া যাওয়া নিয়ে জেরবার মেট্রো কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে টোকেন যথাস্থানে ফেরত দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন। গত ৮ জুলাই নতুন গেট এবং কাগজের টিকিটের বদলে প্লাস্টিকের টোকেন চালুর পরে ইতিমধ্যেই খোয়া গিয়েছে প্রায় হাজার ছয়েক টোকেন। এ ভাবে চললে আর্থিক লোকসানের পাশাপাশি নয়া ব্যবস্থাটাই ভেঙে পড়বে বলে আশঙ্কা কর্তাদের। অবশ্য কিছু যাত্রী পরে কাউন্টারে টোকেন ফেরত দিয়ে যান বলেও জানান তাঁরা।
মেট্রোর চিফ অপারেশন্স ম্যানেজার সুরজিৎ দাস যাত্রীদের উদ্দেশে আবেদন করেন, কেউ যেন টোকেন নিয়ে চলে না যান। তিনি বলেন, “কোনও কারণে নির্দিষ্ট গেটে টোকেন ফেলতে সমস্যা হলে তা যেন কাউন্টারে জমা দিয়ে দেওয়া হয়।” টোকেন ফেরত না দিলে ২৫০ টাকা জরিমানার কথা থাকলেও কর্তৃপক্ষের আশ্বাস, কাউন্টারে টোকেন জমা দিলে কেউ কোনও প্রশ্ন করবে না। এক মেট্রোকর্তা সোমবার বলেন, “এক-একটি টোকেনের দাম ২০ টাকা। বাজারে তা বিক্রি হবে না। তবু কেন কিছু যাত্রী এ ভাবে টোকেন নিয়ে বাড়ি চলে যাচ্ছেন, আমরা বুঝতে পারছি না।”
মেট্রো সূত্রে খবর, নতুন গেটে এই তিন দিনে যতগুলি টোকেন ঢোকার জন্য পাঞ্চ করা হয়েছে, বেরনোর গেটে সংখ্যাটা ৬ হাজার কম। কিন্তু গেটের নির্দিষ্ট স্লটে টোকেন না ফেলে যাত্রীরা স্টেশন ছেড়ে বেরোচ্ছেন কী করে?
মেট্রোর মুখপাত্র প্রত্যুষ ঘোষ জানান, নতুন গেটের পাশাপাশি চালু রয়েছে পুরনো গেট। তার অনেকগুলিই খারাপ। কিছু যাত্রী নতুন গেটে টোকেন পাঞ্চ করে ট্রেনে উঠছেন। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছে বেরোচ্ছেন পুরনো গেট দিয়ে বেরোচ্ছেন। টোকেন তাঁদের কাছেই রয়ে যাচ্ছে। মেট্রোর ২৩টি স্টেশনের কাউন্টারে এখন টোকেন আছে সাড়ে তিন লক্ষ। ধাপে ধাপে সংখ্যাটা বেড়ে হবে সাত লক্ষ। শুক্রবার ৪ লক্ষ যাত্রীর মধ্যে টোকেন নিয়ে যাতায়াত করেন ৮৬ হাজার। শনিবার ৩ লক্ষ ৯২ হাজার জনের মধ্যে টোকেন কেনেন ১ লক্ষ ২ হাজার। রবিবার দেড় লক্ষ যাত্রীর মধ্যে টোকেন ক্রেতা ৯১ হাজার।
যাত্রীদের তরফে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা যত টাকা দিচ্ছেন, টোকেনে তত টাকাই ভরে দেওয়া হচ্ছে কি না, তা বোঝার উপায় কী? প্রত্যুষবাবু বলেন, “২৩টি স্টেশনের কাউন্টারের কাছেই রাখা হয়েছে ৬০টি ‘কার্ড ব্যালান্স চেকিং টার্মিনাল’। তার গায়ে টোকেন বা কার্ড ঠেকালেই বোঝা যাবে কত টাকা রয়েছে।” |
|
|
|
|
|