অব্যবস্থার সেই চেনা ছবি, হাওড়ায় আত্মীয়দের ক্ষোভ
৪ মাস আগের জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার সময়ের দৃশ্যটাই যেন সোমবার ফিরে এল হাওড়া স্টেশনে।
যাত্রী সহায়তা কেন্দ্রের সামনে স্বজনহারাদের কান্না। মৃত ও আহতদের তালিকার সামনে উদ্বিগ্ন আত্মীয়দের ভিড়। রেলের তালিকায় প্রিয়জনের খোঁজ না মেলায় স্টেশন জুড়ে তাঁদের ছোটাছুটি, হয়রানি। আর রেলের থেকে কোনও সহায়তা না পাওয়ার একরাশ অভিযোগ।
হাওড়া-দিল্লি কালকা মেলের দুর্ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরে সোমবার সকাল থেকে এটাই ছিল হাওড়া স্টেশনের ছবি। বেলা যত গড়িয়েছে, স্টেশনের অনুসন্ধান কেন্দ্রের সামনে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা লোকের ভিড় তত বেড়েছে। যাঁদের মধ্যে রেলের দেওয়া তালিকায় নাম না থাকা যাত্রীর আত্মীয়দের সংখ্যাই বেশি।
কালকা মেলের ট্রেন দুর্ঘটনার খবর পেয়ে সকালেই মুর্শিদাবাদের কান্দি থেকে ভাইপো মাসাদুর শেখের খোঁজে হাওড়া স্টেশনে চলে এসেছিলেন কাকা আসফার আলি। যাত্রী সহায়তা কেন্দ্রের সামনে রেলের দেওয়া মৃত ও আহতদের তালিকা আঁতিপাতি করে খুঁজেও ভাইপোর নাম পাননি তিনি। শেষে ভাইপোর একটা ছবি নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন স্টেশনের এ দিক-ও দিক, রেল কর্তাদের ঘরে-ঘরে। স্টেশন ম্যানেজারের ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, “সকাল থেকে ঘুরছি। কিন্তু ভাইপো কোথায় আছে, কেমন আছে, জানতে পারিনি। শুনেছিলাম, আত্মীয়দের নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছে রেল। তাই হাওড়ায় চলে এসেছিলাম। কিন্তু কেউ তো কিছু বলছেনই না।” আসফার জানান, তাঁর ভাইপো ছিলেন এস-২ কামরায়। দিল্লি থেকে সৌদি আরবে যাচ্ছিলেন কাজের সন্ধানে। তাঁর সঙ্গে এক বন্ধুও ছিলেন। কিন্তু কাল দুপুর থেকে দু’জনেরই মোবাইল বন্ধ।
একই অবস্থা হুগলির কুন্তিঘাট থেকে আসা গুরুচাঁদ ঘরামির-ও। শনিবার সন্ধ্যায় ওই ট্রেনের অসংরক্ষিত কামরায় চড়ে দিল্লি রওনা দিয়েছিলেন তাঁর পরিবারের ৫ মহিলা। গুরুচাঁদবাবুর মা কালীতারাদেবী, মেয়ে সুস্মিতা, দিদি সুমিত্রা বিশ্বাস এবং তাঁর দুই মেয়ে দোলন ও দীপা। সকলেই দিল্লি যাচ্ছিলেন পরিচারিকার কাজ করতে। কিন্তু কারও খোঁজ মিলছে না। সারা দিন ঘোরাঘুরি করেও রেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ওই পাঁচ জনের খোঁজ পাননি তিনি।
হাওড়া স্টেশনে যাত্রী সহায়তা কেন্দ্রের সামনে ভাই রাহুলের খোঁজে এসে কোনও সহায়তা পাননি হাওড়ার দাশনগরের বাসিন্দা উত্তম বর্মন। উত্তমবাবু বলেন, “দুর্ঘটনার এত ঘণ্টা পরেও রেল আহত ও মৃতদের সম্পূর্ণ তালিকা কেন দিচ্ছে না, বুঝতে পারছি না। এমনকী কী ভাবে, কোন ট্রেনে ঘটনাস্থলে যাব, তারও কোনও দিশা রেলের কর্তারা দিতে পারছেন না।”
দুর্ঘটনায় পড়া ট্রেনযাত্রীদের আত্মীয়দের সাহায্যের ব্যাপারে আজ সারা দিন ধরে এ রকমই ঢিলেঢালা ভাব ছিল হাওড়া স্টেশনে। পুরনো স্টেশন কমপ্লেক্সের অনুসন্ধান কেন্দ্রের সামনে একটা সহায়তা কেন্দ্র খোলা হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু দুপুর পর্যন্ত নতুন কোনও তথ্য না আসায় ওই সহায়তা কেন্দ্রে বসা দুই রেলকর্মী অসহায় হয়ে বসেছিলেন। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক রেলকর্মী বলেন, “এতটা সময় কেন লাগছে, বুঝতে পারছি না। কোনও তথ্যই আমাদের কাছে আসছে না। এত মানুষকে উত্তর দিতে পারছি না। এর পর তো আমরাই আক্রান্ত হব!”
রবিবার রাত পর্যন্ত রেল কর্তৃপক্ষ মৃত যাত্রীদের মধ্যে ৭ জনের নাম জানাতে পেরেছিলেন। সোমবার দেড়টা নাগাদ আসে দ্বিতীয় দফার তালিকা। তখন জানানো হয় মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫৩। কিন্তু মাত্র ১২ জনকে শনাক্ত করা গিয়েছে। এর পর বেলা সাড়ে তিনটে নাগাদ আসে তৃতীয় তালিকা। তাতে ঘোষণা করা হয়, মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৬৫। চিহ্নিত করা হয়েছে আরও ৩৫ জনকে। এর মধ্যে এ রাজ্যের যাত্রী রয়েছেন ৫ জন। আহতদের ফতেপুর ও কানপুরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বেলা চারটে নাগাদ সহায়তা কেন্দ্রের সামনে রেলের টাঙানো তালিকার সামনে দাঁড়িয়ে খুড়তুতো ভাইয়ের নাম খুঁজছিলেন হাওড়ার বড়গাছিয়ার বাসিন্দা সুপ্রভাত ঢ্যাং। মৃতদের তালিকায় ২১ নম্বরে ভাই সুদীপের নামটা দেখেই কেঁদে ফেললেন তিনি। পরে জানান, ১৮ বছরের সুদীপ একাই দিল্লি রওনা হয়েছিল চণ্ডীগড়ে পিসতুতো দাদার কাছে, গয়নার কাজ শিখতে। দুর্ঘটনার আধ ঘণ্টা আগেও বাবার সঙ্গে মোবাইলে কথা হয় তার। বলেছিল, একটু পরেই দুপুরের খাওয়া সেরে নেবে। এটাই ছিল ওর সঙ্গে শেষ কথা। সুপ্রভাতবাবুর অভিযোগ, রবিবার সারা রাত ভাইয়ের কোনও খোঁজ দিতে পারেননি রেল কর্তৃপক্ষ। শেষে চণ্ডীগড় থেকে ঘটনাস্থলে ছুটে আসা আত্মীয়দের মারফত এ দিন দুপুরে জানতে পারেন, এস-২ কামরা কেটে সুদীপের দেহ বের করা হয়েছে।
Previous Story Calcutta Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.