|
|
|
|
দুর্গাপুরে নীরব প্রশাসন |
বাইক-স্কুটিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে স্কুল পড়ুয়ারা |
সুব্রত সীট • দুর্গাপুর |
ইস্পাতনগরীর শিবাজি রোড ধরে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন এক প্রৌঢ়। স্কুল-অফিস শুরুর সময়ে ব্যস্ত রাস্তা। উল্টো দিক থেকে বেপরোয়া ভাবে আসা এক স্কুটির ধাক্কায় ছিটকে পড়লেন প্রৌঢ়। স্কুটির চালক এক কিশোরী। টাল সামলে উঠে তার ছোট্ট প্রতিক্রিয়া, ‘সরি’। জামা থেকে ধুলো ঝাড়তে ঝাড়তে প্রৌঢ়ের ক্ষোভ, “সরি বললেই কী সাত খুন মাফ!” সে কথা অবশ্য কানে গেল না কিশোরীর। তার আগেই স্কুটি চালিয়ে সে হাওয়া। প্রৌঢ়ের স্বগতোক্তি, “ওদের আর দোষ কী! যাদের দেখার কথা, তারাই তো চোখ বন্ধ করে রেখেছে।”
স্কুটি বা মোটরবাইক চালিয়ে স্কুল পড়ুয়াদের চলাফেরা দুর্গাপুরের রাস্তায় স্বাভাবিক দৃশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন স্কুল, বিশেষ করে ইংরেজিমাধ্যম স্কুলগুলিতে বাইক বা স্কুটিতে চড়ে পড়ুয়াদের যাতায়াত বেড়েই চলেছে। তারা মূলত একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া। লাইসেন্স পাওয়ার বয়স হয়নি। তাই তাদের অধিকাংশেরই ‘ড্রাইভিং লাইসেন্স’ নেই। অথচ দিনের পর দিন বাইক বা স্কুটি নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তারা। স্কুল বা টিউশন পড়তে যাওয়া থেকে শুরু করে বিকেলে শপিং মল বা মাল্টিপ্লেক্সে ঢুঁ মারা, সবেতেই সঙ্গী সেই মোটরবাইক বা স্কুটি। ফলে, ছোটখাটো দুর্ঘটনাও লেগে রয়েছে শহরের রাস্তায়।
|
|
ছবি: বিশ্বনাথ মশান। |
রাজীব গাঁধী ময়দান সংলগ্ন একটি স্কুলে গেলেই দেখা মেলে, সামনের সাইকেল স্ট্যান্ডে সার দিয়ে রাখা মোটরবাইক ও স্কুটি। স্কুলটিতে শুধু একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পড়াশোনা হয়। অর্থাৎ, অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীরই বয়স ১৮ বছরের কম। ছুটির পরে মোটরবাইক নিয়ে স্কুল চত্বর ছেড়ে যাচ্ছিলেন দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র প্রেমপ্রকাশ সাউ। বাইক চালিয়ে স্কুলে আসা সম্বন্ধে প্রশ্ন করতে তার জবাব, “আমি তো একা নই, অনেকেই বাইকে চড়ে আসে।” বলতে বলতেই হুশ করে বেরিয়ে গেল সে। বিধাননগরের একটি স্কুল থেকে স্কুটি নিয়ে বেরোচ্ছিল একাদশ শ্রেণির ছাত্রী পরিণীতা হালদার। স্কুটি নিয়ে স্কুলে আসা প্রসঙ্গে সে বলে, “বাস-অটোতে ভিড় হয়। সময়ও বেশি লাগে। স্কুটিতে অনেক স্বাধীনতা থাকা।” কিন্তু লাইসেন্স তো নেই? পরিণীতার কড়া উত্তর, “ভাল চালাতে জানি কি না, সেটাই আসল। তাছাড়া লাইসেন্স থাকা সত্ত্বেও কাউকে ধাক্কা মারলে কী রেহাই পাব?”
ছেলে-মেয়েদের বাইক-স্কুটি নিয়ে যাতাযাতের ব্যাপারে বিকার নেই অভিভাবকদেরও। বি-জোনের আইনস্টাইন অ্যাভিনিউয়ের বাসিন্দা দেবাশিস চৌধুরীর মেয়ে দেবদত্তা বিধাননগরের একটি স্কুলে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী। মেয়ের স্কুটি নিয়ে স্কুলে যাওয়ার ব্যাপারে দেবাশিসবাবুর সাফাই, “মেয়েকে স্কুলে পৌঁছে দেওয়ার সময় আমার নেই। বাসে যেতে হলে দু’বার বাস পাল্টাতে হবে। তাই স্কুটি কিনে দিয়েছি।” কিন্তু ড্রাইভিং লাইসেন্স? আমতা আমতা করে দেবাশিসবাবু স্বীকার করেন, এই বিষয়টি কখনও গুরুত্ব দিয়ে দেখেননি। পড়ুয়াদের বাইক নিয়ে দৌরাত্ম্যের বিষয়ে দুর্গাপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শুভঙ্কর সিংহসরকার জানান, মাঝে মধ্যে লাইসেন্সহীন বাইক বা স্কুটি চালকদের ধরে জরিমানা করা হয়। তবুও পড়ুয়াদের নিয়মিত বাইক-স্কুটি নিয়ে স্কুল যাওয়া প্রসঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের স্বীকারোক্তি, “প্রতি দিন শহরের সব রাস্তায় নজরদারির পরিকাঠোমা নেই। তবে কয়েক দিন ছাড়া নজরদারি চলে।” আর এক পুলিশ আধিকারিকের দাবি, “আমাদের পাশাপাশি পরিবহণ দফতরও নিয়মিত অভিযান চালালে সমস্যা কমতে পারে।” মহকুমা পরিবহণ আধিকারিক অনিমেষ সিংহরায় অবশ্য এ ব্যাপারে কিছু বলতে চাননি। তিনি শুধু বলেন, “যা বলার মহকুমাশাসক বলবেন।” দুর্গাপুরের মহকুমাশাসক মৌমিতা বসু বলেন, “লাইসেন্স ছাড়া বাইক বা স্কুটি চালানো বেআইনি। ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে কথা বলে অবিলম্বে এই অভ্যাস বন্ধ করার ব্যবস্থা হবে।” |
|
|
|
|
|