|
|
|
|
শীঘ্রই পার্থকে রিপোর্ট |
সিঙ্গুর প্রশ্নে আইন বদলের
সুপারিশই করবে ভূমি দফতর
সুপ্রকাশ চক্রবর্তী ² কলকাতা |
|
|
সিঙ্গুরে ‘অনিচ্ছুক’ চাষিদের জমি ফেরতের জটিলতা কাটাতে ভূমি সংস্কার দফতর তাদের সুপারিশ প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছে। খুব শীঘ্র সেই সুপারিশ-সহ একটি রিপোর্ট তুলে দেওয়া হবে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাতে। শিল্পমন্ত্রীর আবেদনের ভিত্তিতেই এই কাজ করছে ভূমি দফতর। এই বিষয়ে যিনি প্রধান ভূমিকা পালন করছেন, সেই প্রাক্তন আমলা (রাজ্যের জমি-নীতি কমিটির অন্যতম সদস্যও তিনি) দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় শনিবার বলেন, “সিঙ্গুরের জমি ফেরত দেওয়া নিয়ে ভূমি দফতরের সঙ্গে আমার আলোচনা হয়ে গিয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই সরকারের কাছে সুপারিশ পাঠিয়ে দেবে ভূমি দফতর।”
প্রতিশ্রুতি মতো অনিচ্ছুকদের জমি ফিরিয়ে দিতে ইতিমধ্যে টাটাগোষ্ঠী ও অনুসারি শিল্প সংস্থাগুলির সঙ্গে কথাবার্তা শুরু করেছেন শিল্প দফতরের কর্তারা। এই মুহূর্তে প্রকল্পের জমি নিজেদের দখলে পাওয়াই যে হেতু সরকারের অন্যতম প্রধান কাজ, তাই গোড়া থেকেই কথাবার্তা শুরু হয়ে গিয়েছে। এই কাজ করছে শিল্প দফতর। কিন্তু জমি নিজেদের দখলে এলেও তা কী ভাবে অনিচ্ছুকদের ফিরিয়ে দেওয়া হবে, তাই নিয়েই দেবব্রতবাবুর পরামর্শে ভূমি দফতর সুপারিশপত্র তৈরি করছে। সিঙ্গুরের জমি-জট কাটাতে আপাতত এ ভাবেই এগোচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী ও শিল্পমন্ত্রী।
জমি ফেরতের যে রূপরেখা তৈরি করছে ভূমি দফতর, তাতে সম্ভাব্য পথ হিসেবে জমি অধিগ্রহণ আইন সংশোধনের কথা বলা হচ্ছে। তামিলনাড়ুতে এই কাজ হয়েছে। অন্য কোনও রাজ্যেও তা হয়েছে কি না, সেই তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ ছাড়া অনিচ্ছুকদের জমি ফেরত দেওয়া হবে ‘লিজ’-এর ভিত্তিতে। সেই জমি হস্তান্তরের অধিকারও থাকবে জমির মালিকের। দেবব্রতবাবু শনিবার ফের একই কথা জানিয়ে বলেন, “এ ছাড়া তো অন্য কোনও পথ দেখছি না।”
কিন্তু গোল বেধেছে প্রকল্প এলাকায় ‘অনিচ্ছুকদের’ জমির অবস্থান নিয়ে। পরিসংখ্যান বলছে, প্রকল্প এলাকায় অনিচ্ছুকদের জমি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। যেমন, মূল প্রকল্প এলাকায় (যেটা টাটগোষ্ঠীর হাতে রয়েছে) অধিগৃহীত ৬৪৫.৬৭ একর জমির মধ্যে ‘অনিচ্ছুক’ কৃষকদের জমি রয়েছে প্রায় ১৫০ একর। সেই জমির সঙ্গে যুক্ত ‘অনিচ্ছুক’ কৃষকের সংখ্যা দেড় হাজারের বেশি। আবার ৫৪টি অনুসারি শিল্পের জন্য বরাদ্দ ২৯০ একর জমির মধ্যে প্রায় ৮০ একর জমি রয়েছে ‘অনিচ্ছুকদের’। ওই জমির মালিকের সংখ্যা ৮০০-র বেশি।
এ ছাড়াও ছড়িয়ে রয়েছে আরও প্রায় ১৪ একর জমি, যার মালিকরা জমির দাম নেননি। সব মিলিয়ে ‘অনিচ্ছুক’ চাষির সংখ্যা প্রায় ২৪০০, প্রকল্প এলাকার ৯৯৭.১১ একর জমির মধ্যে চার দিকে যাঁদের জমি ছড়িয়ে রয়েছে।
এই ছড়িয়ে থাকা জমি কী ভাবে ফেরত দেওয়া যায়, সুপারিশপত্রে তারও উপায় দেখানো হয়েছে। রাজ্যের এক মুখপাত্র জানান, সরকারের ঘোষণা মতো কারখানা করার জন্য ৬০০ একর জমি যেমন রাখতে হবে, তেমনই অনিচ্ছুকদের ফেরত দেওয়ার জন্য একলপ্তে ৪০০ একর জমি প্রয়োজন। এই সমস্যা সমাধানের জন্য ‘জমির বদলে জমি’ (ল্যান্ড ফর ল্যান্ড) নীতি নেওয়া যেতে পারে। অর্থাৎ, প্রকল্প এলাকার মধ্যে ‘অনিচ্ছুকদের’ যাঁর যে ধরনের জমি ছিল, অন্যত্র হলেও তাঁকে প্রায় একই মানের জমি ফেরত দেওয়া হবে। অর্থাৎ, কারও তিন ফসলি জমি থাকলে তাঁকে তিন ফসলি, কারও দো-ফসলি জমি
থাকলে তাঁকে সেই ধরনের জমিই বরাদ্দ করার চেষ্টা করা হবে। আবার যাঁর জমি বড় রাস্তা থেকে যত দূরে ছিল, মোটামুটি তেমন দূরত্বেই বিকল্প জমির সংস্থান করা হবে। দেবব্রতবাবুর কথায়, “মূল প্রকল্প এলাকার মধ্যে অনিচ্ছুকদের অনেক জমি রয়েছে। তাই ‘ল্যান্ড ফর ল্যান্ড’ তো করতেই হবে।” জমি ফেরত দিতে গিয়ে আগের সরকারের সঙ্গে টাটগোষ্ঠী ও অনুসারি শিল্প-সংস্থাগুলির যে লিখিত সমঝোতা হয়েছে, তা কোনও ভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে কি না, তার আইনি দিকটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে সরকারকে সাহায্য করছেন জমি নীতি কমিটির অন্যতম সদস্য সোমেন্দ্রচন্দ্র বসু।
এ দিন সন্ধ্যায় সিঙ্গুর নিয়ে তাঁর সঙ্গে আবার বৈঠকে করেন দেবব্রতবাবু।
অবশ্য জট কাটাতে আরও একটি বিষয় বিবেচনা করা হচ্ছে। মহাকরণ সূত্রে খবর, জমি অধিগ্রহণের ফলে ‘অনিচ্ছুক’ কৃষকদের কার তী ধরনের ক্ষতি হয়েছে, তা নির্ধারণের চেষ্টা হচ্ছে। সরকারের এক মুখপাত্র জানান, জমি অধিগ্রহণের ফলে এক শ্রেণির লোকের রুটিরুজিতে টান পড়েছে। একটি অংশের সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে। আবার একটি অংশের সামাজিক সম্মান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব কিছু চূড়ান্ত করার আগে এই দিকগুলিও বিবেচনা করা হবে। |
|
|
|
|
|