টেক্সাস |
হিউস্টন দুর্গাবাড়ির মাতৃবন্দনা |
|
পুজোর শুরু |
হাইওয়ে ৬-এর ধারে সিলার রোড। এই রাস্তার একেবারে শেষে গেলে চোখে পড়বে হিউস্টন দুর্গাবাড়ি সোসাইটির দুর্গা মন্দির। ২০১১-য় উত্সবের শুরু হয়েছিল মহাষষ্ঠীর সোনাঝরা শরতের সকালে মন্দিরে কাঁসর, ঘণ্টা, ঢাক আর মহিসষাসুরমর্দিনী’র স্তোত্রপাঠ ও আগমনী গানে। হিউস্টনের প্রবাসী বাঙালির ঘুম ভেঙেছিল ‘রেডিও মস্তি হিউস্টন’-এর প্রভাতি মহালয়ার অনুষ্ঠান শুনে। বোধনের সকালে প্রধান পুরোহিত বিষ্ণুপদ গোস্বামীকে সে দিন পুজোয় সাহায্য করেছিল নতুন প্রজন্মের তিন খুদে ব্রাহ্মণ দেবাংশু, ঈলান ও অর্ণাভ। কাঁসর, ঘণ্টা ও ঢাকে ছিল দেবতনু, নীলাঞ্জন, সাহিল, অনুরাগ ও বিবর্তন।
অন্য সময় অনর্গল ইংরেজিতে কথা বলা আর পাঁচটা মার্কিনি বাচ্চা বলে যাদের মনে হবে তারা দুর্গাবাড়ির মায়ের আরতির কাজে ছিল ষোল আনা বাঙালি। দেশের বর্তমান প্রজন্ম যখন পশ্চিমী সভ্যতা নিয়ে মাতামাতি করতে ব্যস্ত তখন হিউস্টনের দ্বিতীয় প্রজন্মের শিশুরা তাদের নিজেদের শেকড়ের উত্সবটিকে আরও বেশি করে আঁকড়ে ধরেছে।
এ বছর দুর্গাবাড়ির একাদশ বর্ষ। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছিলেন দুর্গাবাড়ির তত্কালীন প্রেসিডেন্টকে।
|
পুজোর বৈশিষ্ট্য |
নতুন বেনারসি ও ফুলের সাজে মা সেজেছিলেন রানির সাজে। কার্তিকের বেগুনি রঙের পোশাক সকলেরই বেশ নজর কেড়েছিল।
বিষ্ণুপদ গোস্বামীর নেতৃত্বে ও অমৃত আচার্য, অরুণ নিয়োগী, জয়দেব গোস্বামী ও পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়ের সহযোগিতায় মন্দিরের পুজো প্রতি বছরের মতো সব নিয়ম মেনেই হয়েছিল পঞ্চমী থেকে নবমী পর্যন্ত।
|
ভোগ বিশেষত্ব |
দুর্গাবাড়ির মহিলা স্বেচ্ছাসেবকরা প্রতিদিনকার ভোগ তৈরি করেন অত্যন্ত যত্ন সহকারে। ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীতে যথাক্রমে ছয়, সাত, আট ও নয় রকমের সব্জি, ভাজা, মিষ্টি, ফল দিয়ে সাজানো হয়েছিল মায়ের ভোগ। রান্নাঘরের সামনের মাঠে বিশাল তাঁবুর নীচে দু’বেলা দর্শনার্থীদের জন্য ছিল ভোগ প্রসাদ ও ডিনারের সুব্যবস্থা। |
|
পুজোর আকর্ষণ |
নবমী পুজোর পর সপ্তাহের শেষে দুর্গাবাড়ির পুজো কমিটির সর্বজনীন দুর্গোত্সব আনুষ্ঠানিক ভাবে পালিত হয় ৬ থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত। মার্কিন মুলুকে একমাত্র হিউস্টনেই এই রকম ধুমধাম সহকারে টানা ন’দিন ধরে শারোদোত্সব উদযাপিত হয়। আলোয় সেজেছিল দুর্গাবাড়ি। কলাভবনের নীচের তলায় বসেছিল জামাকাপড়, গয়নার দোকান। বাইরে বাচ্চাদের জন্য ছিল আলাদা তাঁবুর নীচে গেম, ডি জে মিউজিক, ক্লাউন ও খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা।
সাবেকিয়ানা আর পাড়া প্যান্ডেলের স্বাভাবিক পরিবেশের সঙ্গে ‘রেডিও মস্তি হিউস্টন’-এর বাংলার আড্ডা শহরে এনে দিয়েছিল ছোটখাট এক বাংলা। কলকাতায় যখন থিমের যুদ্ধ তখন হিউস্টনের সর্বজনীন দুর্গোত্সবের থিম ছিল ‘সবুজ’ অর্থাত্ পরিবেশ সুরক্ষার জন্য ‘সবুজ’ পন্থায় বিশ্বাসী দুর্গাবাড়ি কর্তৃপক্ষ নানা ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। বায়োডিগ্রেডেবল কাঁটা-চামচ, ক্যান, প্লেট, মিষ্টির বাক্স এবং কলাভবনের চারপাশে ‘লেড’ লাইটের ব্যবহার— এমনকী মহিলাদের পরনের সবুজ শাড়িগুলিও সেই সবুজ সংকেতই ছড়িয়ে দিয়েছিল সকলের মনে। পোশাকে, প্রসাধনে নতুন সাজে সেজেছিল সকলে।
বিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী সৈকত মিত্র, সৌমেন নন্দী, প্রতিভা সিংহ, অনিক ধরদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অনুষ্ঠান করেছিলেন স্থানীয় শিল্পীরা। নৃত্যালেক্ষ ঋতু সংহার, ছোটদের নাটক লক্ষ্মীর পরীক্ষা, রবীন্দ্রনাথের প্রেম-পূজা-প্রকৃতি আর স্থানীয় আশা-কিশোর-রফি-হেমন্তকণ্ঠীদের গান একেবারে মাতিয়ে দিয়েছিল। এ সবের সঙ্গে উপরি পাওনা ছিল দুর্গাবাড়ির নিজেস্ব পত্রিকা ‘শারদ অর্ঘ্য’র একগুচ্ছ কবিতা, গল্প, ছবি ও উপন্যাস।
|
উদ্যোক্তা |
হিউস্টন দুর্গাবাড়ি সোসাইটি |
তথ্য: জয়া ঘোষ, হিউস্টন |
|
|
|
|