৩১ আষাঢ় ১৪১৯ রবিবার ১৫ জুলাই ২০১২


সংবাদের পরিভাষায় যাকে ‘হার্ড নিউজ’ বলে তার বাইরেও বিস্তৃত খবর-রাশি প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
আর সেই পাহাড়-প্রমাণ খবরের খনি থেকে কিছু বিষয় ভিত্তিক সংবাদকে বেছে নিয়ে আমরা সাজিয়েছি ‘সংবাদের হাওয়াবদল’।
সরাসরি বেড়ানোর কথা না-বললেও এইসমস্ত খবর আসলে হাওয়াবদলকে কেন্দ্র করেই। সংবাদের মোড়কে পর্যটন,
চমকে দেওয়া না-জানা তথ্য, জীবজগতের পাশাপাশি পার্বণ, প্রত্নতত্ত্ব— সব মিলিয়ে এক অন্য খবরের জগৎ।

ঐতিহ্য
• নিলামে গাঁধীর বিতর্কিত চিঠি
ব্রিটিশ নিলাম সংস্থা সদবির তরফে জানানো হয়েছে, নিলামে উঠতে চলেছে মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর চিঠি, ছবি ও ব্যক্তিগত কিছু নথি। গাঁধী যখন দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকতেন, সেই সময়কার ব্যবহৃত জিনিসপত্রই নিলাম সামগ্রীর মধ্যে থাকবে বলে জানিয়েছে সদবি কর্তৃপক্ষ। আর তাৎপর্যপূর্ণ হল, তার মধ্যে রয়েছে বন্ধু হেরমান কালেনবাখের সম্পর্কে লেখা গাঁধীর কিছু চিঠিও। স্থপতি কালেনবাখের সঙ্গে গাঁধীর সম্পর্ক নিয়ে ‘বিতর্ক’ দানা বেঁধেছে। ১৯৪৫ সালের ২৫ মার্চ গাঁধী বন্ধু কালেনবাখ সম্পর্কে একটি চিঠি লিখেছিলেন। সেখানে তিনি লিখছেন, “ও আমায় মাঝেমধ্যেই বলত, গোটা বিশ্ব যদি আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, আমি ওর মধ্যেই প্রকৃত বন্ধুকে খুঁজে পাব। প্রয়োজনে সত্যের সন্ধানে পৃথিবীর শেষ বিন্দু পর্যন্ত ও আমার সঙ্গে যেতে রাজি আছে...।” সদবি সূত্রে চিঠিগুলি সম্পর্কে বলা হয়েছে, “চিঠিগুলি থেকে গাঁধী আর কালেনবাখের বন্ধুত্ব সম্পর্কে অনেক নতুন তথ্য পাওয়া যাবে। সেই সঙ্গেই ভারতে গাঁধীর ব্যক্তিগত জীবনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিকেরও হদিস মিলবে।”

• ‘বিপন্ন ঐতিহ্য’ তালিকায় যিশুর জন্মস্থান
‘বিপন্ন ঐতিহ্যমণ্ডিত সৌধ’-এর আখ্যা পেল বেথলেহেম। আর এই ‘বিপন্ন’র তকমা মিলতেই খুশি প্যালেস্তাইনি খ্রিস্টানরা। তামাম খ্রিস্টান দুনিয়ার বিশ্বাস, জেরুজালেমের ‘নেটিভিটি চার্চ’-এর নীচেরই কোনও গুহায় জন্মেছিলেন যিশু। ইউনেস্কোর সাম্প্রতিক রিপোর্টে বিশ্বের ঐতিহ্যমণ্ডিত অথচ বিপন্ন জায়গার তালিকায় এ বার সামিল হল সেই গির্জাও। কিন্তু ঠিক কী সমস্যা রয়েছে সেখানে? ইউনেস্কো সূত্রে বলা হচ্ছে, বেথলেহেমের যে অংশে এই গির্জা রয়েছে, সেখানে যাওয়ার রাস্তার অবস্থা বেহাল। ক্রমাগত জল চুঁইয়ে পড়ে সেই রাস্তা প্রায় ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। অবস্থা এতটাই শোচনীয় যে তীর্থযাত্রীদের পক্ষে এখন বেথলেহেমে যাওয়াটাই অত্যন্ত বিপজ্জনক। বিষয়টিতে রাষ্ট্রপুঞ্জের হস্তক্ষেপ চেয়ে বেশ ক’দিন ধরেই দাবি জানাচ্ছিলেন প্যালেস্তাইনিরা। ইউনেস্কো তাঁদের দাবি মেনে নেওয়ায় তাই ‘বিপন্ন’র স্বীকৃতিতেও আনন্দিত তাঁরা। প্রসঙ্গত, নেটিভিটি গির্জা ছাড়াও ইজরায়েল, পালাউ, ইন্দোনেশিয়া, মরক্কো, চিন, সেনেগাল, এবং কোত-দি’ওয়রের বিশেষ কিছু অঞ্চলকেও বিপন্ন ঐতিহ্যমণ্ডিত স্থান হিসাবে ঘোষণা করেছে ইউনেস্কো।

• শেক্সপিয়রের রচনাবলীর ‘বিশেষ’ সংস্করণ
লন্ডনে প্রদর্শিত হবে ‘শেক্সপিয়র রচনাবলী’র একটি ‘বিশেষ’ সংস্করণ। ‘বিশেষ’, কেননা রচনাবলীর এই সংস্করণটি জেলে বসে পড়তেন নেলসন ম্যান্ডেলা-সহ দক্ষিণ আফ্রিকার বহু কারাবন্দি। দক্ষিণ আফ্রিকার কুখ্যাত রবেন দ্বীপের কারাগারে শেক্সপিয়রের এই সংস্করণটি লুকিয়ে এনেছিলেন আর এক বন্দি এস ভেঙ্কটরত্নম। বর্ণবৈষম্য-বিরোধী আন্দোলনের সময় এই জেলে বন্দি থাকাকালীন শেক্সপিয়রের লেখায় প্রভাবিত হয়েছিলেন ম্যান্ডেলা। সংস্করণটিতে তাঁর ও সেই সময়কার অন্যান্য বন্দিদের লেখা ‘নোট’ও পাওয়া গিয়েছে। ‘বিশেষ’ এই সংস্করণটি পরিচিত ছিল ‘রবেন দ্বীপের বাইবেল’ নামে। বইটির প্রচ্ছদে দীপাবলীর শুভেচ্ছা জ্ঞাপক কার্ড থেকে নেওয়া হিন্দু দেবদেবীর ছবি। জেলরক্ষীদের নজর এড়াতে এই ‘ছদ্মবেশ’ বেশ কাজে এসেছিল বন্দিদের। রচনাবলীতে ম্যান্ডেলার প্রিয় ছিল ‘জুলিয়াস সিজার’-এর একটি অংশ, যেখানে রোমান রাষ্ট্রনায়করা ‘আইডস অফ মার্চ’-এ সেনেটের উদ্দেশে রওনা হচ্ছেন। ‘বিশ্ব শেক্সপিয়র উত্সব’-এর অঙ্গ হিসেবে এই প্রদর্শনীতে থাকবে শেক্সপিয়র সংক্রান্ত ২০০টি দ্রষ্টব্য। সম্প্রতি লন্ডনের গ্লোব ও রোজ থিয়েটারের খননস্থলে উদ্ধার হওয়া বস্তুও থাকবে এই প্রদর্শনীতে। ব্রিটিশ সংগ্রহালয়ে ‘শেক্সপিয়র: স্টেজিং দ্য ওয়ার্ল্ড’ শীর্ষক এই প্রদর্শনীটি শুরু হবে আগামী ১৯ জুলাই।

প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার
• কান্দিতে মিলল সূর্য বিগ্রহ ও স্থানক-বিষ্ণু মূর্তি
কান্দির খড়গ্রামের পারুলিয়া অঞ্চলে পুরান দিঘি নামে এক জলাশয় থেকে মিলল একটি মস্তকহীন বিগ্রহ ও পুজোর উপচার— শাঁখ ও মাটির পাত্র। পুরাতাত্ত্বিকেরা জানাচ্ছেন, ওই প্রত্নবস্তুগুলি সম্ভবত সেন যুগের। সে ক্ষেত্রে ওই এলাকায় একাদশ-দ্বাদশ শতকে ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির প্রভাব বৌদ্ধ সংস্কৃতির সমতুল্য হয়ে উঠেছিল, এমনটাও মনে করা হচ্ছে। ইতিহাসবিদ বিজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পাল আমলে গোটা বাংলা জুড়েই বৌদ্ধদের প্রভাব ছিল। তার মধ্যে রাঢ় বাংলায় প্রভাব ছিল বেশি। খড়গ্রাম, পারুলিয়া এলাকাতেও তাই বৌদ্ধ প্রভাব ছিল। কিন্তু এই এলাকায় বর্ণহিন্দুদের সঙ্গে তাঁদের সহাবস্থান ছিল।” পাল রাজারা ছিলেন বৌদ্ধ। তার পরে সেন আমলে ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির প্রভাব বাড়তে থাকে। সেখানেও সেই সমৃদ্ধির ছাপ পড়েছে। পারুলিয়া থেকে পাওয়া মূর্তিটি সেন যুগের অনুপম শিল্পকলার নিদর্শন। রাজ্য পুরাতত্ত্ব দফতরের উপ-অধিকর্তা অমল রায় বলেন, ‘‘মস্তকহীন মূর্তিটি সূর্য মূর্তি হতে পারে। সম্ভবত সেন যুগে নির্মিত। ওই যুগের শিল্পকলার নৈপুণ্য দেখা যাচ্ছে।’’ সম্প্রতি খড়গ্রামের ঝিল্লি অঞ্চলে নামুপাড়া তালোয়া নামে একটি জলাশয় থেকে আরও একটি বিগ্রহের সন্ধান পাওয়া গেছে। সেটি সাড়ে তিন ফুট লম্বা দেড় ফুটের বেশি চওড়া। অমলবাবু এ প্রসঙ্গে বলেন, “আয়ুধ দেখে মনে হচ্ছে মূর্তিটি সম্ভবত একাদশ-দ্বাদশ শতকে নির্মিত ‘স্থানক-বিষ্ণু’ মূর্তি। এই মূর্তি আগে দক্ষিণবঙ্গে কমই পাওয়া যেত। বর্তমানে বিভিন্ন জায়গা থেকে এই মূর্তি আমরা পাচ্ছি।” তাঁর কথায়, “এখান থেকে আমাদের মনে হচ্ছে, ওই সময়ে ব্রাহ্মণ্য-বৈষ্ণব ধর্মের বিপুল প্রভাব তৈরি হয়েছিল।” ইতিহাসবিদেরা জানাচ্ছেন, গোটা এলাকা জুড়েই একই সঙ্গে ছড়িয়ে রয়েছে মধ্যযুগের বৌদ্ধ সংস্কৃতির প্রভাব। রক্তমৃত্তিকা মহাবিহার, কর্ণসুবর্ণ এবং সাগরদিঘিতে বৌদ্ধ উপাসনাস্থল ও শাসনকেন্দ্রের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। অনুমান করা হয়, এই এলাকা ছিল বিক্রমশীলা মহাবিহার থেকে বর্তমান উত্তর-পূর্ব বিহারের সে যুগের একাধিক প্রধান নগরীর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।

• মিজোরামে ভাংছিয়ার প্রস্তরফলকের হদিস মিলল
জাতীয় প্রত্নতত্ত্ব দফতরের মানচিত্রে ঠাঁই পেল মিজোরাম। সৌজন্যে ‘মেনহির্স অফ ভাংছিয়া’ বা ভাংছিয়ার প্রস্তরফলক। উত্তর-পূর্বের সব ক’টি রাজ্যের কোনও না কোনও সৌধ প্রত্নতত্ত্ব দফতরের তালিকাভুক্ত। মিজোরাম পূর্ণ রাজ্য হওয়ার ২৫ বছর পরে সেই তালিকায় স্থান পেল। কারণ এত দিন পর্যন্ত মিজোরামে প্রত্নতাত্ত্বিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ কোনও কিছুর হদিস সরকারের কাছে ছিল না। কিন্তু এ বার চম্পাই জেলার ভাংছিয়া গ্রামে পাথরে খোদাই এমন কিছু নিদর্শন মিলেছে যা বিস্মিত করেছে প্রত্ন বিশেষজ্ঞদের। সম্প্রতি পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, চম্পাই জেলার ভাংছিয়া গ্রামের ‘মেনহির্স’গুলি আসলে পাথরে খোদাই করা শিকারের দৃশ্য। ইতিহাসবিদদের অনুমান, বেশ কয়েকশো বছরের পুরনো শিলা এইগুলি। ভাংছাই গ্রাম থেকে তিন ঘণ্টার পথ পার হয়ে, প্রস্তরখণ্ডগুলির কাছে পৌঁছতে হয়। এলাকার নাম কাওটছুয়া রোপুই। অর্থ, প্রধান প্রবেশপথ। মোট ১৭১টি প্রস্তরখণ্ড রয়েছে সেখানে। ইনট্যাক-এর বিশেষজ্ঞরা ২০১০ সালে প্রথমবার সেখানে যান। এএসআই কর্তারা আসেন ঠিক এর পরের বছর। ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ট্রাস্ট ফর আর্ট অ্যান্ড কালচারাল হেরিটেজ’ বা ‘ইনট্যাক’-এর মিজোরামের কনভেনর পি রোমিনথঙ্গা জানান, তিব্বতি-বর্মি উপজাতির মানুষ এই এলাকায় থাকতেন। কথিত, এখান থেকে একটি পাথরের তৈরি রাস্তা, মায়ানমার সীমান্তের টিয়াউ নদী অবধি বিস্তৃত ছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রস্তরখণ্ডগুলির ক্ষয় হয়েছে। বেশ কিছু পাথর, স্থানীয় বাসিন্দারা বাড়ি বানানোর কাজে ব্যবহার করেছেন। তবে, গ্রামবাসীরা খোদিত পাথরগুলিকে যথেষ্ট সম্মান করেন। ইনট্যাকের উদ্যোগ ও এএসআই কর্তাদের সরেজমিনে পর্যবেক্ষণের পরে, প্রস্তরখণ্ডগুলি ‘সংরক্ষিত সৌধ’-এর তকমা পেয়েছে।

• বিশ্বের প্রাচীনতম প্রাকৃতিক মুক্তো
বিশ্বের সবথেকে পুরনো প্রাকৃতিক মুক্তোর সন্ধান মিলল। বিশেষজ্ঞদের মতে, সংযুক্ত আরব আমিরশাহির একটি কবর থেকে খুঁজে পাওয়া এই মুক্তোটি খ্রিস্টপূর্ব ৫৫৪৭-৫৩৩৫ সময়কার। ফরাসি গবেষকরা জানিয়েছেন, এখানেই বিশ্বের সর্বপ্রথম ঝিনুক থেকে মুক্তো খোঁজার কাজ শুরু হয়েছিল। এ বিষয়ে ‘অ্যারাবিয়ান আর্কিওলজি অ্যান্ড এপিগ্রাফি’ শীর্ষক জার্নালে বিস্তারিত ভাবে লিখেছেন আমিরশাহিতে ফ্রান্সের বিদেশমন্ত্রকের প্রত্নতাত্ত্বিক বিষয়ক কাজে নিযুক্ত ভিনসেন্ট শার্পেনটিয়ের, সোফি মেরি-সহ অনেকেই। তাঁদের মতে, রত্ন বিশেষজ্ঞ ও ব্যবসায়ীরা এত দিন মনে করতেন, পাঁচ হাজার বছর আগের জাপানের জোমোন মুক্তোই বিশ্বের সবথেকে পুরনো। কিন্তু সাড়ে সাত হাজার বছরের পুরনো ও ০.০৭ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের এই প্রাচীন মুক্তোটি উদ্ধারের ফলে সে ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। আরব উপকূলে ‘পিন্কটাডা মার্গারিটিফেরা’ প্রজাতির ঝিনুকের ভালভ ব্যবহার করা হত টুনা ও হাঙরের মতো বড় মাছ শিকারের টোপ হিসেবে। কিন্তু আরব আমিরশাহির উম আল-কুয়েইন-এ খুঁজে পাওয়া এ মুক্তো ব্যবহার করা হত মৃত মানুষের অন্ত্যেষ্টিকাজে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের মুক্তো বেশির ভাগ সময়েই মৃত মানুষের মুখে, বিশেষত তাদের ঠোঁটের উপরের দিকে রাখা হত।

পরিবেশ ও বন্যপ্রাণ
• পরিবেশ দফতরের রিপোর্টে অনিশ্চিত মন্দারমণির ভবিষ্যৎ
দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের আওতায় ঢুকেছে মন্দারমণি ও তার লাগোয়া ছ’টি মৌজা। সেই হিসাবে নগরোন্নয়ন দফতরের পক্ষ থেকে নিয়ম মাফিক জানতে চাওয়া হয়েছিল, মন্দারমণির লাগোয়া আর পাঁচটি মৌজা— সিলামপুর, সোনামুই, দাদনপাত্রবাড়, মানিয়া ও দক্ষিণ পুরুষোত্তমপুর, সৈকত-বিধি বা সিআরজেড (কোস্টাল রেগুলেশন জোন)-এর কোন পর্যায়ে পড়ে। পরিবেশ সচিব আরপিএস কাঁহালো জানিয়েছেন, মন্দারমণি-সহ উল্লেখিত ওই ৬টি মৌজাই সিআরজেড-১ এর আওতাভুক্ত। যার অর্থ, জোয়ারের সময় সমুদ্রের জল তট উজিয়ে ওই মৌজাগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে প্রায় নিয়মিত। উপগ্রহ চিত্রে গত দু’দশকের যে ‘ইমেজ’ পাওয়া গিয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে প্রায় প্রতি পক্ষেই হাই-টাইডের সময়ে ওই মৌজাগুলি কার্যত বানভাসির চেহারা নেয়। ফলে, ২০১১ সালের সিআরজেড-এর নিয়ম বিধি অনুসারে, ওই ৬টি মৌজার কোথাও নির্মাণ কাজ বৈধ নয়। পরিবেশ দফতরের ওই চিঠির পাশাপাশি, রাজ্যের ‘ইনস্টিটিউট অফ এনভায়রনমেন্ট সায়েন্স অ্যান্ড ওয়েটল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট’-এর (আইইএসডব্লুএম) রিপোর্টও প্রায় একই কথা বলছে। এ দিকে, আইইএসডব্লুএমের ডিরেক্টর অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের রিপোর্ট বলছে, মন্দারমণি-সহ ৬টি মৌজাই ‘ইন্টার-টাইডাল এরিয়া’ অর্থাৎ হাইটাইড লাইন (ভরা জোয়ারের সময় সমুদ্রের জল তট উজিয়ে যতটা পৌঁছয়) থেকে লো-টাইড লাইনের মধ্যে পড়ে। ওই এলাকায় নির্মাণ দূরস্থান, জনবসতই কাম্য নয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, পরিবেশের নিয়মকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের প্রশস্ত এই সমুদ্রতটের অনেকটা হোটেল-রিসর্টের দাপটে বেদখল হয়ে গিয়েছে। আর এই ক্রমবর্ধমান অবৈধ নির্মাণের গ্রাসে সংশয়ে মন্দারমণির ভবিষ্যৎ।

• নিঃসঙ্গ জর্জের স্মরণসভা

‘রিমেমবারিং জর্জ’— জর্জের স্মরণসভা। সান্তাক্রুজ দ্বীপের গলিঘুঁজি ঘুরে মোমবাতি মিছিলটা এসে থামে গ্যালাপাগোস ন্যাশনাল পার্কে। ঘোলা জলের সেই ডোবাটার পাশে। যার আনাচে-কানাচে গত একচল্লিশ বছর ঘুরে বেড়িয়েছে সে লোনসাম জর্জ। পৃথিবীর অন্যতম আদিম প্রাণিকুলের এক মাত্র সদস্য, পিন্টা প্রজাতির কচ্ছপ। নিঃসঙ্গ সেই কচ্ছপের প্রয়াণেই স্মরণসভা, ‘রিমেমবারিং জর্জ’। “একা একাই চলে গেল জর্জ” আফশোস ঝরে পড়ে পার্কের রেঞ্জার ফুয়েস্তো লেরেনার গলায়। গত চল্লিশ বছর ধরে জর্জকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন তিনি। তাঁরই পরিচর্যায় ছিল ইকুয়েডরের এই ‘জায়েন্ট টরটয়েজ’। একাই বটে! জর্জের সঙ্গিনীর খোঁজে গোটা দুনিয়া ঢুঁড়ে ফেলেছিল সে দেশের ‘চার্লস ডারউইন ফাউন্ডেশন’। খোঁজ পড়েছিল আলিপুর চিড়িয়াখানাতেও। কিন্তু মেলেনি। ছড়ানো ছিটানো বুনো ঘাস, আগ্নেয়শিলার স্তূপ আর কর্দমাক্ত ডোবায় তার নিঃসঙ্গতার বয়স হয়ে গিয়েছিল দেড়শো বছর কিংবা তারও বেশি। গত ২৪ জুন ভোরবেলায় সেখানেই নিশ্চুপে মারা গিয়েছে সে। তার সঙ্গেই লুপ্ত হয়ে গিয়েছে পিন্টা প্রজাতির কচ্ছপ। ইকুয়েডর দ্বীপের প্রায় সাড়ে ছ’শো মাইল উত্তরে ছোট্ট দ্বীপ পিন্টা। সেখানকার অতিকায় কচ্ছপকুলের এগারোটি প্রজাতির মধ্যে পিন্টা (জিওসেলোনে এলিফ্যান্টোপাস এবিনডোনি) অন্যতম। গোটা উনিশ শতক জুড়ে মৎস্যজীবী, তিমিশিকারি বা ওই পথে পাড়ি দেওয়া নাবিকেরা প্রায়ই ওই দ্বীপগুলিতে জাহাজ ভিড়িয়ে সংগ্রহ করে নিতেন সফরের রসদকচ্ছপ। পিন্টা প্রজাতির কচ্ছপের গায়ে যখন ‘নিশ্চিহ্ন’ তকমা প্রায় এঁটে বসেছে, তখনই, ১৯৭১ সালে স্থানীয় বনকর্মীরা খুঁজে পেয়েছিলেন প্রায় নির্জীব জর্জকে। তখনই তার বয়স অন্তত একশো ছাড়িয়েছে। পঞ্চাশের দশকে আমেরিকায় হইচই ফেলা টিভি অ্যাঙ্কর জর্জ লেসলি গোবেলের নামে তার নাম রাখা হয় ‘লোনসাম জর্জ’।

• ক্ষুদ্রতম মাছির খোঁজ মিলেছে, দাবি তাইল্যান্ডে

তাইল্যান্ডে বিশ্বের ক্ষুদ্রতম মাছির খোঁজ মিলেছে বলে দাবি করলেন এক দল মার্কিন বিজ্ঞানী। মাত্র ০.৪ মিলিমিটার দীর্ঘ এই মাছিটির বিজ্ঞানসম্মত নাম ইউরিপলেটিয়া নানাকনিহালি। ‘জার্নাল অ্যানালস অফ দি এন্টমোলজিক্যাল সোসাইটি অফ আমেরিকা’য় এই আবিষ্কার প্রকাশিত হয়েছে। তাইল্যান্ডের একটি জাতীয় উদ্যান থেকে মাছিটির নমুনা সংগ্রহ করে সে দেশের একটি পরিবেশপ্রেমী সংগঠন। তবে সেটি যে একটি নতুন প্রজাতি, তা আবিষ্কারের কৃতিত্ব লস অ্যাঞ্জেলসের ‘ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম’-এর গবেষক ব্রায়ান ব্রাউনের। ব্রায়ানের কথায়, “আকারে একটি লবণের দানার থেকেও ছোট মাছিটি। বাড়িতে আমরা যে মাছি দেখি, এর পাশে সেটাকে একটা গডজিলার মতো দেখায়!” ক্ষুদ্রস্য ক্ষুদ্র এই মাছির জীবনচক্রটিও আকর্ষণীয়। ব্রায়ান জানাচ্ছেন, পিঁপড়ের দেহে পরজীবী হিসেবে বাস করে এরা। সেখানেই ডিম পাড়ে মাছিটি। ডিমগুলি এর পর পিঁপড়ের মাথায় স্থানান্তরিত হয়। সেখানে ডিম ফুটে লার্ভা বের হয়। আক্ষরিক অর্থেই পিঁপড়ের মাথা খেয়ে বড় হয় লার্ভাগুলি! এক সময় পিঁপড়ের দেহ থেকে খসে পড়ে মাথাটি। সেই মাথাটিতে প্রায় ‘বাসা’ বেঁধে থাকে মাছির লার্ভা। প্রায় দু’সপ্তাহ পর লার্ভা থেকে পূর্ণাঙ্গ মাছি তৈরি হয়।

পার্বণ
• লাদাখের ‘হেমিস ফেস্টিভ্যাল’
হেমিস— লাদাখের বৃহত্তম বৌদ্ধ গুম্ফা। ১৬৭২ সালে সেনগে নামগিয়ালের রাজত্ব কালে এটি নতুন করে তৈরি হয়। তবে এই গুম্ফার প্রাচীনত্ব নিয়ে আছে নানা ‘মিথ’। কথিত, এখানে ঘুরে গিয়েছেন স্বয়ং যিশুখ্রিস্ট। তিব্বতি লুনার মাসের দশম দিনে গুরু পদ্মসম্ভবার জন্মদিনে শুরু হয়ে এই রঙিন উত্সব, চলে দু’দিন ধরে। প্রতি বারো বছর অন্তর তিব্বতি তথা চিনা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী আসে ‘ইয়ার অফ মাঙ্কি’। এই বিশেষ সময়ে প্রতি বছরই রূপ বদল করে হেমিস উত্সব। তখন বের করা হয় পবিত্র থংকাগুলিকে। বিশালাকায় এই থংকাগুলির উচ্চতা প্রায় ২২ থেকে ২৫ ফুট। সুতোর অসাধারণ কারুকাজ করা এই থংকাগুলিতে আছে গুরু পদ্মসম্ভবার জীবনী। তার উপর বসানো থাকে বিভিন্ন দামি পাথর। ২০০৪ সালের পর এই থংকাগুলিকে ফের বের করা হবে ২০১৬-য়। উত্সবের সভাপতিত্ব করেন গুম্ফার প্রধান লামা। এই উত্সবে সনাতন তিব্বতি বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে বিচিত্র পোশাক পরে নাচেন গুম্ফার লামারা। স্থানীয় মানুষজনরাও পরেন চিরাচরিত পোশাক। মেলা উপলক্ষে এ সময়ে বহু পর্যটক ভিড় করেন লাদাখে।

• যুগলকিশোরের মেলা
জ্যৈষ্ঠ্য মাসের সংক্রান্তিতে নদিয়া জেলার আড়ংঘাটায় যুগলকিশোরের বিশেষ উৎসবে মন্দির প্রাঙ্গণে এক মাসের মেলা বসে। এক সময় আড়ংঘাটা চূর্ণি নদীর পাড়ে জঙ্গলাকীর্ণ স্থান ছিল। যুগলকিশোরের মন্দিরকে ঘিরে ধীরে ধীরে জনপদ গড়ে ওঠে। তখন যাতায়াতের রাস্তা ছিল জলপথে চূর্ণি নদী আর হাঁটা পথে পশ্চিমে বীরনগর। আরও পশ্চিমে গঙ্গার তীরে ফুলিয়া গ্রাম। পরবর্তী কালে ইংরেজ আমলে রেলপথ চালু হলে আড়ংঘাটা স্টেশন স্থাপিত হয়। নদিয়া জেলার বিশিষ্ট গবেষক প্রয়াত মোহিত রায় নদিয়া জেলার পুরাকীর্তি বইতে আড়ংঘাটার যুগলকিশোর মেলা ও মন্দিরের সবিশেষ বর্ণনা দিয়েছেন। উত্তরপ্রদেশের এক মহন্ত বৃন্দাবন থেকে কৃষ্ণের মূর্তি এনে বর্ধমান জেলায় গঙ্গার তীরে সমুদ্রগড়ে বসবাস করতেন। বর্গির হাঙ্গামা শুরু হলে মহন্ত গঙ্গা পার হয়ে চূর্ণি নদীর পূর্ব পাড়ে এই জায়গায় এসে কৃষ্ণমূর্তির নিত্যপূজা শুরু করেন। এ কথা নদিয়া-রাজ কৃষ্ণচন্দ্রের গোচরে এলে তিনি কৃষ্ণকে একা না রেখে তাঁর সঙ্গে রাধারানির একটি ধাতুমূর্তি জুড়ে দেন। একত্রে দুই মূর্তির নামকরণ হয় যুগলকিশোর। পুজোর জন্য দেড়শো বিঘা জমি দেন তিনি। গড়ে ওঠে মন্দির। পাঁচকুঠুরির দালান মন্দিরটি উঁচু ভিতের উপর স্থাপিত। যুগলকিশোর মাঝখানে বড় সিংহাসনের উপর দণ্ডায়মান। এ হল মধ্যযুগের বৈষ্ণব আন্দোলনের ফসল। মন্দিরের বাইরে দু’পাশে থাম বরাবর দশাবতারের কাজ রয়েছে যা বাংলার লোকচিত্রকলার সমৃদ্ধির কথা স্মরণ করায়। চার কোণে রয়েছে তুলসীমঞ্চ। মন্দির চত্বরে বাঁধানো বকুল গাছকে ঘিরে বেড়ে উঠেছে তুলসী গাছ। এখানেই মেলার সময় সাধুসন্তরা জড়ো হয়। রাতে বাউলের আসর বসে। দূর দূরান্ত থেকে দর্শনার্থী মেলায় এসে রাত্রিবাস করে পর দিন ঘরে ফেরে।

• আম উৎসব
রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনার আর্থিক সহযোগিতায় এবং উদ্যান পালন দফতরের উদ্যোগে রায়গঞ্জের ক্যারিটাস হলে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হল ‘আম উৎসব ২০১২’। উৎসবে রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় দেড়শো আম চাষি বিভিন্ন প্রজাতির আম ও আমজাত খাদ্যসামগ্রী নিয়ে হাজির হয়েছিলেন। উত্তর দিনাজপুর জেলা উদ্যান পালন দফতরের আধিকারিক সমরেন্দ্রনাথ খাঁড়া বলেন, “জেলায় আমের উৎপাদন বাড়াতে এই প্রথম আম উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। জেলার চাষিদের উৎসাহ বাড়াতে উৎসবে রাজ্যের বিভিন্ন জেলার আম চাষিদের সামিল করা হয়েছে।” প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, আম উৎসবে উত্তর দিনাজপুর জেলা ছাড়াও দক্ষিণ দিনাজপুর, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, মালদহ, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, উত্তর ২৪ পরগনা ও হুগলি জেলার আম চাষিরা নানা প্রজাতির আম, আমসত্ব, আচার, আমচুর, সরবত, জেলি ও জ্যাম-সহ বিভিন্ন সামগ্রী নিয়ে হাজির হয়েছিলেন। প্রদর্শনীতে রাজ্যের বিভিন্ন জেলার চাষিদের আনা কালাপাহাড়, ল্যাংড়া, সূর্যাপুরি, হিমসাগর, চম্পা, চন্দনকোষা, তোতাপুরি, ইক্ষুভোগ-সহ ৫০টিরও বেশি প্রজাতির আম জায়গা করে নিয়েছে।

• আনারস উৎসব

আগামী ১০-১২ অগস্ট শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে শুরু হচ্ছে ‘আনারস উৎসব’। শিলিগুড়ির বিধাননগরে আনারস পার্কে উৎসবের আয়োজন হচ্ছে। সম্প্রতি এসজেডিএ-তে উৎসবের আয়োজন নিয়ে বৈঠক হয়। ঠিক হয়েছে, উৎসবে আনারস চাষিদের উন্নত পদ্ধতিতে চাষের খুঁটিনাটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে কর্মশালা, আলোচনাসভা হবে। প্রতি সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এসজেডিএ’র চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন, “শিলিগুড়ি এবং লাগোয়া এলাকায় আনারস চাষ জনপ্রিয় করতে এই উদ্যোগ।”

পর্যটন কেন্দ্র
• পাখি-পর্যটনের কেন্দ্রবিন্দু ডুয়ার্স
জঙ্গলের ভেতরে আগাছা ঢাকা অপরিসর পরিত্যক্ত খাল এখন পর্যটনের কেন্দ্রবিন্দু। এক সময় ছিল নেহাতই একটি সরু খাল। শিলটং নামে একটি ঝোরা থেকে তৈরি অপরিসর খালটি এতটাই জঙ্গলে ভরে থাকত যে মাছ ধরার জলও পাওয়া যেত না। ঝোরার জল মেশা খালটি একটা নিচু জলায় গিয়ে শেষ হয়। এখন সেই খাল অন্তত পঞ্চাশটি প্রজাতির মাছে ভরা জলাশয়। রয়েছে কাঁকসা, অঞ্জু, সরপুঁটি, নটওয়া, ল্যাটার মতো বিরল প্রজাতির মাছও। শীতকালে সেখানে ভিড় জমায় পরিযায়ী পাখির দল। অধুনা বিরল মদনটাক, ডাহুক, বালিহাঁস, সরাল, পান্ডুবির মতো স্থানীয় পাখিদের আস্তানাও ওই জলাশয়। যা দেখতে ভিড় উপচে পড়ে পর্যটকদের। বন দফতরের পরিভাষায় পাখি-পর্যটনের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু জলপাইগুড়ি জেলার গোঁসাইহাট। পাখি দেখার জন্য জলাশয়ের পাশে তৈরি করা হয়েছে নজর মিনার। রাত্রিবাসেরও ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে। নজর মিনারের পাশে তৈরি করা হয়েছে একটি ইকো পার্ক। বনভোজনের আয়োজন-সহ রয়েছে বিনোদনের ব্যবস্থাও। গভীর জঙ্গলের ব্যাকড্রপে নজরমিনারে বসে পাখি দেখে একান্তে সময় কাটানোর পাশাপাশি জলাশয়ে বোটিংও পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বছরে গড়ে অন্তত ১০ হাজার পর্যটক আসে এখানে। একটি খাল থেকে জলাশয় তৈরি এবং সেই জলাশয়কে কেন্দ্র করে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে ওঠা বিরল ঘটনাই বটে। সম্প্রতি বন দফতরের একটি সমীক্ষা রিপোর্টে জানা গিয়েছে, প্রায় ২৩ রকম প্রজাতির পাখি ওই জলাশয়ে দেখা যায়।


• পর্যটক টানতে নয়া উদ্যোগ
আরও বেশি পর্যটক টানতে কালনা-নবদ্বীপ-মায়াপুরকে নদীর মাধ্যমে সংযুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার। এই তিন জায়গার মধ্যে স্টিমার চলাচল শুরু হবে, থাকবে লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো-র ব্যবস্থা, এই কথা জানালেন পর্যটনমন্ত্রী রচপাল সিংহ। তিনি আরও জানান, হাইওয়ে থেকে বীরভূমের তারাপীঠে ঢোকার মুখে একটা তোরণ তৈরি করা হবে। গোটা রাস্তায় থাকবে আলোর ব্যবস্থা। মন্দিরের সৌন্দর্যায়নের পাশাপাশি সেখানকার নদীরও সংস্কার হবে। অন্য দিকে, চুরুলিয়ায় কাজী নজরুল ইসলামের বাসভূমি ও তার সংলগ্ন কিছু জায়গা নিয়ে একটি পর্যটন-চক্র তৈরির পরিকল্পনার কথাও সম্প্রতি জানিয়েছেন রচপাল সিংহ।

• পর্যটনের নতুন নাম সাপুতারা
মহারাষ্ট্র সীমান্তে সমুদ্রতল থেকে প্রায় ১ হাজার মিটার উচ্চতায় গুজরাতের একমাত্র শৈলশহর সাপুতারা। সাপুতারাকে ‘অ্যাবোড অব সারপেন্টস’ বা সাপদের স্বর্গরাজ্য বলা হয়। সহ্যাদ্রী পর্বতমালার কোলে অবস্থিত বলেই এখানকার তাপমাত্রার ঊর্দ্ধসীমা গরম কালেও কখনও ২৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড অতিক্রম করে না। রামায়ণে কথিত, রামচন্দ্র ১৪ বছর বনবাসের মধ্যে ১১ বছরই সাপুতারার জঙ্গলে কাটিয়েছিলেন। তাই বলে শুধু মাত্র ধর্মীয় মাহাত্ম্য নয়, এখানে পর্যটকরা আসেন পাহাড়, অভয়ারণ্য, নদী এবং সাপুতারা লেকের সংমিশ্রণে গড়ে ওঠা এক অপূর্ব সুন্দর জায়গা দেখতে। শতাব্দী প্রাচীন এখানকার অরণ্যে এখনও সেই প্রাচীনত্ব বজায় রয়েছে। বছরে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার পর্যটক আসেন এরই আকর্ষণে। এক দিকে রয়েছে সাপুতারা লেকে বোটিং ও রোয়িংয়ের ব্যবস্থা। অন্য দিকে ট্রেকিং প্রিয় পর্যটকদের জন্য রয়েছে ট্রেক করে পাহাড়ে ওঠার আকর্ষণ। আবার চাইলে সর্পগন্ধা নদীতে রিভার রাফ্টিংও করা যায়। তবে শুধুমাত্র অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় পর্যটকরাই যে এখানে আসেন তা নয়, যাদের অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ নয়, তারাও অনায়াসেই ডুব দিতে পারেন সাপুতারার ‘রূপ-সাগরে’। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা জলপ্রপাত আর দেশের দীর্ঘতম ‘পুষ্পক’ রোপওয়েও পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। মিউজিয়াম, থিয়েটারও রয়েছে। ‘হোলি’ এখানকার সবচেয়ে বড় উত্সব। প্রচুর সরকারি-বেসরকারি হোটেল রয়েছে এখানে।

• দিঘায় স্পা, ডিয়ার পার্ক
পূর্ব মেদিনীপুরের সৈকত শহর দিঘাকে আরও মোহময়ী ও আকর্ষণীয় করতে বেশ কিছু পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য সরকার। দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ ও বন দফতরের যৌথ উদ্যোগে সৈকতের ঝাউবনে ‘ডিয়ার পার্ক’ গড়ে তোলা ছাড়াও পিপিপি মডেলে (পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপে) ‘এথনিক স্পা’, রোপওয়ে প্রভৃতি খোলার পরিকল্পনা করা হয়েছে। দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, দিঘা মেরিন অ্যাকোয়ারিয়ামের পাশে তিন একর ঝাউবনে ‘ডিয়ার পার্ক’ হবে। এ ছাড়াও দিঘার শেষ প্রান্তে ওড়িশা সীমান্তে উদয়পুর সমুদ্র সৈকতে প্রায় ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি হতে চলেছে ‘এথনিক স্পা’। কেরলের উপকূল, লাক্ষাদ্বীপ বা দুবাইয়ের বালুকাবেলার অনুকরণে প্রায় সাড়ে তিন একর জায়গার উপর ইকো-ফ্রেন্ডলি পরিবেশে গড়ে ওঠা এই ‘স্পা’তে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা ভিড় জমাবেন বলে আশা পর্ষদ কর্তৃপক্ষের।

পরিষেবা
• কলম্বোয় মিলবে ভারতীয় রেলের টিকিট
শ্রীলঙ্কা এয়ারলাইন্সের উদ্যোগে এ বার থেকে কলম্বো বিমানবন্দেরে পর্যটকদের জন্য পাওয়া যাবে ভারতীয় রেলের টিকিট। প্রাথমিক ভাবে শুধুমাত্র নয়াদিল্লির জন্য টিকিট বুকিং করতে পারবেন পর্যটকরা। পরে এই এয়ারলাইন্সের উড়ান দেশের যে সব জায়গায় যায়, সেখানকার টিকিটই বুকিং করতে পারবেন পর্যটকরা। বেলজিয়াম রেলস্টেশনে যেমন শ্রীলঙ্কা এয়ারলাইন্সের টিকিট আগাম বুকিং করার সুবিধা রয়েছে, সে রকম ভারতীয় রেলের সঙ্গেও কথাবার্তা চলছে যাতে একই ব্যবস্থা এখানেও করা যায়। বতর্মানে শ্রীলঙ্কা এয়ারলাইন্সের ৯৯টি উড়ান ভারতের মোট ১১টি জায়গায় যাতায়াত করে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, দিল্লির জন্য প্রাথমিক ভাবে টিকিট বুকিংয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে, পরে চেন্নাই ও হায়দরাবাদের টিকিটও বুক করা যাবে। এই ব্যবস্থা কার্যকর হলে অন্যান্য বিদেশি এয়ারলাইন্সও আহগ্রী হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে পর্যটনের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে দেশের আর্থিক উন্নতিও হবে। ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের ভারতীয় শাখা ভারতীয় রেলের সঙ্গে আলোচনা করছে যাতে একই জায়গা থেকে বিমান এবং রেলের টিকিট বুক করা যায়।

• শীঘ্রই মেট্রো রেল নাগপুরে
দিল্লির পর এ বার নাগপুরেও মেট্রো রেল চালু করার কথা চলছে। এ ব্যাপারে একটি বিস্তারিত সমীক্ষা-পরিকল্পনা দিতে বলা হয়েছে দিল্লি মেট্রো রেল কর্পোরেশনকে। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে এই প্রকল্প রূপায়ণে প্রায় ৮,০০০ কোটি টাকা খরচ হবে। প্রায় ৩৭ কিলোমিটার জুড়ে থাকবে এই মেট্রো রেলপথ। নাগপুরবাসীর বহু দিনের দাবি ছিল একটি দ্রুত ও নির্ঝঞ্ঝাট পরিবহণ ব্যবস্থার। তাঁদের দাবি মেনেই এই মেট্রো রেল প্রকল্প রূপায়ণের উদ্যোগ নিয়েছে মহারাষ্ট্র সরকার। এই প্রকল্পের জন্য শতাব্দী প্রাচীন নাগপুর জেল শহরের বাইরে সরানোর কথাও ভাবা হচ্ছে। সে জায়গায় একটি আধুনিক ভূগর্ভস্থ প্লাজা স্টেশন বানানোর পরিকল্পনা রয়েছে কর্তৃপক্ষের।


খবর এক মুঠো
এক ঝলকে ঘুরে আসা ভিন্ন স্বাদের খবর-দুনিয়ায়...
 
ইন্টারনেট থেকে নেওয়া ও নিজস্ব চিত্র।


রোজের আনন্দবাজার এ বারের সংখ্যা সংবাদের হাওয়াবদল আপনার রান্নাঘর স্বাদবদল চিঠি পুরনো সংস্করণ