৩১ আষাঢ় ১৪১৯ রবিবার ১৫ জুলাই ২০১২


বর্ষা এসেছে আবার...
সুকুমার রায়ের মজার ছড়া ‘খিচুড়ি’— যেখানে দু’টি ভিন্ন প্রজাতীয় প্রাণীর সমন্বয়ে কাল্পনিক এক একটি চরিত্র তৈরি হয়। যেমন, হাঁসজারু, বকচ্ছপ ইত্যাদি। কিন্তু চাল
আর ডালের সমন্বয়ে তৈরি যে নির্ভেজাল ‘পদ’ তার নামও ‘খিচুড়ি’ এবং সেটি কোনও কাল্পনিক ‘রান্না’ নয়। আর কল্পনায় খিচুড়ির ছবি এলে জিভে জল আসতে বাধ্য। এই
খিচুড়িরও ভিন্ন ভিন্ন রূপ, রান্নার রকম ফেরে স্বাদও নানা রকমের। তবে খাদ্যরসিকরা স্বীকার করেন খিচুড়ির স্বাদ খোলে একমাত্র বর্ষাকালে। যে হেতু ‘আপনার রান্নাঘর’-এর
বাইরে বৃষ্টি মিশে যাচ্ছে প্রকৃতির সঙ্গে, তাই ভেতরে চালের সঙ্গে মিশে যাক ডাল। আর নদী-খাল-বিল সেই বর্ষার জলে টইটম্বুর বলে মাছেদের বড় সুদিন এখন। খিচুড়ির
সঙ্গে তাদেরকেও নিয়ে আসা যেতে পারে রান্নাঘর ঘুরিয়ে খাওয়ার পাতে। ইলিশ ইলিশ করে মাথা খারাপ না করে, অন্যান্য মাছ দিয়ে জমে উঠুক ‘আপনার রান্নাঘর’।
সিমাইয়ের খিচুড়ি

উপকরণ

ভাজা মুগডাল সেদ্ধ ভাজা সিমাই গাজর কুচি বিনস কুচি নুন চিনি হলুদ আদা বাটা
শুকনো লঙ্কা গোটা জিরে গোটা গরমমশলা ঘি জিরেগুঁড়ো সাদা তেল


প্রণালী
কড়াইতে সাদা তেল দিয়ে গোটা জিরে, শুকনো লঙ্কা, গোটা গরমমশলা ফোড়ন দিতে হবে।
এ বার সব্জিগুলো দিয়ে নাড়তে হবে।
হলুদ, নুন, আদা বাটা, জিরেগুঁড়ো দিয়ে মিশিয়ে নিন।
এর পর সেদ্ধ ডাল ও ভাজা সিমাই দিয়ে পরিমাণ মতো জল দিয়ে একটু ঢাকা দিয়ে রাখতে হবে।
সব সেদ্ধ হয়ে গেলে চিনি দিয়ে মিশিয়ে নিন।
নামাবার সময় অল্প ঘি দিতে হবে।

সি-ফুড খিচুড়ি

উপকরণ

বাসমতি চাল: ১ কাপ মুগ ডাল: ১ কাপ মুসুর ডাল: আধ কাপ কাঁকড়া টুকরো করা: ৪-৫ টি গলদা চিংড়ি: ২০-২৫ টুকরো
কাঁচালঙ্কা: ২-৩টি লাল লঙ্কা: ১টি পেঁয়াজ: ১টা (বড় আকারের) গরমমশলা: সামান্য ঘি ও সাদা তেল: ভাজার জন্য
ধনেপাতা কুচি: সামান্য নুন: আন্দাজ মতো আদা বাটা, ধনে ও জিরে বাটা: আধ চা-চামচ করে লঙ্কা বাটা: স্বাদ অনুযায়ী হলুদগুঁড়ো: আধ চা-চামচ

প্রণালী
প্রথমে কাঁকড়াগুলি পরিষ্কার করে ধুয়ে ২-৩ মিনিট গরম জলে সেদ্ধ করে নিতে হবে। এর পরে ছোট ছোট টুকরো করে নিন।
গলদা চিংড়ি ভাল করে ধুয়ে ছাড়িয়ে রাখতে হবে।
মুগ ডাল ভেজে নিতে হবে। মুসুর ডাল ও চাল ধুয়ে জল ঝরিয়ে রাখুন।
তেল গরম করে কাঁকড়া ও চিংড়িগুলো ভেজে নিন।
এ বার ঘি গরম করে পেঁয়াজ, লাল লঙ্কা ও গরমমশলা ভেজে নিন।
এর পর চাল, মুসুর ডাল, মুগ ডাল মিশিয়ে দিন। সঙ্গে আদা বাটা, লঙ্কা বাটা, হলুদ বাটা, ধনে ও জিরে বাটা দিয়ে ভাল করে নাড়াচাড়া করুন।
পরিমাণ মতো জল দিয়ে চাল, ডাল সেদ্ধ হতে দিন।
কাঁচালঙ্কা ও অনুমান মতো নুন মেশাতে হবে।
চাল, ডাল প্রায় সেদ্ধ হয়ে এলে কাঁকড়া ও চিংড়িগুলো দিয়ে আরও কিছু ক্ষণ সেদ্ধ হতে দিন।
নামাবার আগে ধনেপাতা ছড়িয়ে দিন।

বাদশাহী ভুনা খিচুড়ি
উপকরণ
বাসমতি চাল: ১০০ গ্রাম সোনা মুগ ডাল: ৫০ গ্রাম মুসুরির ডাল: ৫০ গ্রাম চিংড়ি মাছ (মাঝারি): ২৫০ গ্রাম আলু (মাঝারি): ২ টি (৫-৬ টুকরো করা)
ডিম সেদ্ধ: ৩টি কড়াইশুঁটি সেদ্ধ: ৫০ গ্রাম টোম্যাটো: ২ টি পেঁয়াজ (মাঝারি): ২টি (১টি পাতলা করে কুচোনো আর অন্যটি ডুমো করে কাটা)
রসুন বাটা: ১ চা-চামচ আদা বাটা: ১ টেবল-চামচ হলুদগুঁড়ো, লঙ্কাগুঁড়ো, জিরেগুঁড়ো: ১ চা-চামচ করে
গরমমশলাগুঁড়ো: আধ চা-চামচ তেল: ৪ টেবল-চামচ ঘি: ১ টেবল-চামচ

ফোড়নের জন্য
আস্ত লবঙ্গ, আস্ত ছোট এলাচ, আস্ত দারচিনি: ৩-৪ টি করে তেজপাতা: ২-৩ টি আস্ত জিরে: ১ চা-চামচ গোলমরিচ দানা: ৮-১০টি

প্রণালী
মুগ ডাল শুকনো প্যানে সামান্য ভেজে, জলে ধুয়ে নিন।
মুসুর ডাল ও চাল আলাদা করে ধুয়ে জল ঝরিয়ে রাখুন।
সেদ্ধ ডিমগুলিতে নুন-হলুদ মাখিয়ে হাল্কা করে ভেজে নিন। ঠান্ডা হয়ে গেলে আধাআধি কেটে নিন।
চিংড়ি মাছ (ল্যাজা রেখে দেবেন) পরিষ্কার করে ধুয়ে নুন-হলুদ মাখিয়ে ১ চামচ গরম তেলে সাঁতলে নিন।
এ বার ননস্টিক প্যানে তেল গরম করে প্রথমে আলুর টুকরোগুলো ভেজে তুলে রাখুন।
এ বার ওই তেলে ফোড়নের মশলা দিন— গরমমশলা ও গোলমরিচ একটু থেতো করে দিলে ভাল হয়।
ফোড়নের সুবাস এলে ওতে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভেজে নিন। পেঁয়াজের রং একটু পাল্টালেই ওতে ডুমো করা পেঁয়াজ দিয়ে দিন।
এ বার রসুন বাটা ও আদা বাটা দিয়ে ১ মিনিট কষে নিন।
হলুদ, লঙ্কা ও জিরেগুঁড়ো দিয়ে ভাল করে নেড়েচেড়ে মিশিয়ে নিন।
এ বার মুগ ডাল দিয়ে আবার নাড়াচাড়া করুন।
তার পর মুসুরির ডাল দিয়ে ভাজা করতে হবে।
টোম্যাটো বড় বড় টুকরো করে কেটে ডালের মধ্যে দিয়ে দিন।
কিছু ক্ষণ নাড়াচাড়া করে পরিমাণ মতো গরম জল দিয়ে ফুটতে দিন।
ফুটতে শুরু করলে আঁচ কমিয়ে ঢাকা দিয়ে দিন।
৩-৪ মিনিট পর ভাজা আলুর টুকরো দিয়ে দিন ও স্বাদ মতো নুন দিন।
যখন আলু-চাল-ডাল প্রায় সেদ্ধ হয়ে জল মরে আসবে তখন গ্যাস বন্ধ করে দিন।
এ বারে একটি ছোট প্যানে ঘি গরম করে সেদ্ধ কড়াইশুঁটি দিন।
এর পর সাঁতলানো চিংড়ি মাছ ও গরমমশলাগুঁড়ো দিয়ে নেড়েচেড়ে ভাল করে মিশিয়ে নিন।
এই মিশ্রণটি এ বার খিচুড়ির সঙ্গে যোগ করুন।
চিনি দিন পরিমাণ মতো।
যদি মনে হয় খিচুড়ির জল শুকিয়ে গেছে তা হলে একটু গরম জল দিতে পারেন।
আরও ২ মিনিট ফুটিয়ে থালায় ঢেলে উপরে একটু ঘি ছড়িয়ে, কাঁচালঙ্কা চিরে, ভেজে রাখা সেদ্ধ ডিম চারপাশে সাজিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।

টিপস: চিংড়ি মাছের ভুনা খিচুড়ির সঙ্গে বেসনে ভাজা ‘কিছুমিছু’ বা মাছ ভাজা খুব ভাল জমবে।

গোলমেলে চিংড়ি

উপকরণ

নুন হলুদ মাখিয়ে গ্রাইন্ডারে পেস্ট করা চিংড়ি মাছ সেদ্ধ ডিম নারকেলের দুধ নুন পেঁয়াজ কুচি
রসুন বাটা হলুদগুঁড়ো আদা বাটা কাঁচালঙ্কা কুচি চিনি গরমমশলাগুঁড়ো
সাদা তেল



প্রণালী
কড়াইতে তেল দিয়ে প্রথমে পেঁয়াজ কুচি, রসুন বাটা ভাজতে হবে।
এর পর পেস্ট করা চিংড়ি মাছ দিয়ে ভাল করে নেড়েচেড়ে ভেজে নিন।
এ বার কাঁচালঙ্কা কুচি, পরিমাণ মতো নুন ও আদা বাটা দিয়ে কষতে হবে।
মিশ্রণ থেকে তেল ছাড়লে নারকেলের দুধ ও একটু চিনি দিয়ে ভাল করে নাড়তে থাকুন।
প্রয়োজনে সামান্য জল দিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে জল শুকিয়ে এলে অন্য পাত্রে নামিয়ে রাখুন।
কড়াইতে আবার অল্প তেল দিয়ে সেদ্ধ করা ডিম, নুন হলুদ মাখিয়ে ভেজে নিন।
এ বার চিংড়ির মিশ্রণটি ঢেলে দিন কড়াইতে আর ভাল করে মিশিয়ে দিন।
গরম গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।


পার্সলে সরষে চিংড়ি

উপকরণ

বড় বা মাঝারি মাপের চিংড়ি: ৫০০ গ্রাম (পরিষ্কার করা এবং খোসা ছাড়ানো) তাজা পার্সলে পাতা: এক আঁটি (না-থাকলে, শুকনো পার্সলে: ৫ চা-চামচ)
রসুনের পেস্ট: ২ চা-চামচ সরষে বাটা: ৩-৪ টেবল-চামচ কাঁচালঙ্কা: ২-৩টে মাঝ বরাবর চেরা টোম্যাটো: ১টি (মাঝারি মাপের)
শুকনো লঙ্কাগুঁড়ো: স্বাদ অনুযায়ী গোটা কালো সরষে, কালো জিরে, হলুদগুঁড়ো, নুন: আন্দাজ মতো
‘মাইল্ড’ অলিভ অয়েল: প্রয়োজন মতো সরষের তেল: প্রয়োজন মতো

প্রণালী
চিংড়ি মাছগুলো হলুদগুঁড়ো, অল্প শুকনো লঙ্কাগুঁড়ো, রসুনের পেস্ট, ২ টেবল-চামচ পার্সলে পাতা কুচি
(শুকনো পার্সলে হলে ২ চা-চামচ ) ও সরষের তেল দিয়ে মেখে রেখে দিন।
খুব ভাল হয় ফ্রিজে সারা রাত রাখলে। সময় কম থাকলে ৩-৪ ঘণ্টা রাখলেও যথেষ্ট।
এক কাপ জলে সরষে বাটা, অল্প নুন, এক চামচ হলুদগুঁড়ো দিয়ে পেস্ট বানিয়ে রাখুন।
কড়াইতে অলিভ অয়েল দিয়ে চিংড়ি মাছ হাল্কা করে ভেজে তুলে রাখুন।
আবার কড়াইতে অলিভ অয়েল দিয়ে অল্প গরম করে কালো জিরে ও গোটা সরষে দিন।
অল্প নাড়াচাড়া করে কাঁচালঙ্কা ও টোম্যাটো কুচি দিন।
কম আঁচে কিছু ক্ষণ ভাজার পর টোম্যাটো নরম হয়ে এলে সরষে বাটার পেস্ট ঢেলে দিন।
কিছু ক্ষণ ফুটতে দিতে হবে যাতে জল অর্ধেক হয়ে যায়।
এ বার ভাজা চিংড়ি মাছ, বাকি কুচোনো পার্সলে পাতা, আন্দাজ মতো জল ও নুন দিয়ে আরও কিছু ক্ষণ ফুটতে দিন।
ঘন হয়ে এলে নামিয়ে গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।
 
ভিন্ন স্বাদে রুই মাছ

উপকরণ

রুই মাছ: ৪/৫ টুকরো পেয়াঁজ: ১টা (কুচি করা) আদা বাটা: আধ চামচ রসুন কুচি: আধ চামচ টোম্যাটো: ২টো (টুকরো করা) ধনেগুঁড়ো: ১ চামচ
জিরেগুঁড়ো: ১ চামচ গরমমশলা (এলাচ, দারচিনি, লবঙ্গ): আধ চা-চামচ তেজপাতা: ২টো শুকনো লঙ্কা: ২টো কসুরি মেথি: দুই চিমটে
পাঁচফোড়ন ও কাশ্মীরি মরিচ: আধ চামচ লঙ্কার গুঁড়ো: আধ চামচচিনি, নুন, হলুদ: আন্দাজ মতো সরষের তেল: প্রয়োজন মতো

প্রণালী
মাছের টুকরোগুলো ধুয়ে নুন-হলুদ মাখিয়ে সরষের তেলে ভেজে তুলে রাখতে হবে।
এ বার ওই কড়াইতে আর একটু তেল দিয়ে তাতে প্রথমে একটু চিনি দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিন।
এ বার ওতে গরমমশলা, শুকনো লঙ্কা, তেজপাতা ও পাঁচফোড়ন দিতে হবে।
ভাল গন্ধ বেরোলে পেয়াঁজ কুচি দিয়ে হাল্কা করে ভেজে নিন। তার পর রসুন কুচি দিন।
এর পর আদা বাটা, হলুদগুঁড়ো, লঙ্কাগুঁড়ো, কাশ্মীরি মরিচ, জিরেগুঁড়ো, ধনেগুঁড়ো দিয়ে ভাল করে নাড়তে থাকুন।
পুরো মিশ্রণটি ভাল করে ভাজা হয়ে গেলে টোম্যাটোর টুকরো দিয়ে দিন।
কিছু ক্ষণ ভাজার পরে, অর্ধেক মশলা মিক্সিতে দিয়ে পেস্ট করে নিতে হবে। প্রয়োজনে সামান্য জল দিতে পারেন।
এ বার কড়াইতে ভাজা মাছগুলোর উপর পেস্টটা ঢেলে দিন। একটু কসুরি মেথি ছড়িয়ে দিন।
অল্প জল দিয়ে কড়াই ঢাকা দিয়ে রাখুন।
জল ফুটতে আরম্ভ করলে ২-৩ মিনিট রেখে নামিয়ে নিন। পরিবেশন করুন গরম ভাতের সঙ্গে।

টিপস: বাড়িতে জায়ফল-জয়িত্রীর গুঁড়ো থাকলে, টোম্যাটো দেওয়ার পরে এক চিমটি দিয়ে দিলে খুব ভাল গন্ধ হয়।

 
সিমাইয়ের খিচুড়ি সি-ফুড খিচুড়ি বাদশাহী ভুনা খিচুড়ি
সুমনা দে মল্লিক,
হায়দরাবাদ
বুলা ভট্টাচার্য,
শিকাগো
শুচিস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায়,
লাউটোকা, ফিজি

গোলমেলে চিংড়ি পার্সলে সরষে চিংড়ি ভিন্ন স্বাদে রুই মাছ
সায়ন্তী ভট্টাচার্য,
সুইডেন
মৌমিতা দে,
আমস্টারডাম
অর্পিতা সাহা নন্দ
হিলস বোরো, ওরেগন



আপনারাও পাঠাতে পারেন নতুন পুরনো ভিন্ন স্বাদের নানা রেসিপি, ছবি-সহ, নীচের ঠিকানায়
হাওয়াবদল, আপনার রান্নাঘর
আনন্দবাজার পত্রিকা, ইন্টারনেট সংস্করণ
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট
কলকাতা ৭০০০০১

ই-মেল করুন haoabadal@abp.in অথবা haoabadal@gmail.com

সংক্ষিপ্ত পরিচিতির সঙ্গে আপনার ছবি পাঠানো বাধ্যতামূলক।


রোজের আনন্দবাজার এ বারের সংখ্যা সংবাদের হাওয়াবদল স্বাদবদল চিঠি পুরনো সংস্করণ