৩১ আষাঢ় ১৪১৯ রবিবার ১৫ জুলাই ২০১২


 
 
স্মৃতির ঐতিহ্য
নিবেদিতার ১৬ নং বাড়ি
আজ যদি আমাদের ভগিনী নিবেদিতা বেঁচে থাকতেন, তবে সার্ধশতবর্ষে স্বামীজির জন্মলগ্নকে তিনি আনন্দ-আবেগে প্রাণবন্ত করে তুলতেন তাঁর ১৬ নং বোসপাড়া লেনের বাড়িটি ঘিরে, যেখানে অগ্নিযুগে তথা স্বাধীনতা-পূর্ব বিপ্লবযুগে হেন মানুষ নেই, যাঁরা তাঁর পবিত্র সান্নিধ্য ও অগ্নিময়ী বাণীতে উজ্জীবিত হননি। তাঁর সংস্পর্শে এসেই সে কালের বিপ্লবী তথা ঋষি অরবিন্দ নিবেদিতার নামকরণ করেছিলেন ‘শিখাময়ী’। এই বাড়িতেই সস্ত্রীক বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র, ঋষি শ্রীঅরবিন্দ, রবীন্দ্রনাথ এসেছেন। আবার শ্রীরামকৃষ্ণ সঙ্ঘজননী শ্রীমা সারদাদেবীরও পদধূলিধন্য নিবেদিতার এই বাগবাজার বোসপাড়া লেনের বাসস্থান তথা স্ত্রীশিক্ষাকেন্দ্র। এ বার স্বামীজির সার্ধশতবর্ষে বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ সরকার এটি অধিগ্রহণ করে তা নিবেদিতার স্মৃতিসংগ্রহশালা, যা আমাদের দৃষ্টিতে এক তীর্থক্ষেত্রে রূপান্তরিত করবে বলে ঘোষণা করেছে। এ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীই প্রধান উদ্যোগী। “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বাগবাজারে বোসপাড়ায় ভগিনী নিবেদিতা যে বাড়িতে থাকতেন, সেটিও অধিগ্রহণ করেছে রাজ্য। বাড়িটি অধিগ্রহণ করে পুরসভার হাতে তুলে দেবে সরকার। পুরসভা সূত্রে খবর, বাড়িটি অধিগ্রহণের জন্য পুরসভা আগেই তৎপর হয়েছিল। কিন্তু ‘দরদাম’ পছন্দ মতো না-হওয়ায় বাড়ির মালিক সেটি দিতে গররাজি হন। মিশনের মাধ্যমে ব্যাপারটি জানতে পেরে উদ্যোগী হন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। সেই কাজও এগোচ্ছে।” এই মর্মে (২৩-৫) আনন্দবাজার পত্রিকায় একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। নিবেদিতার ১৬ নং বোসপাড়া লেনের বাড়ির এই স্মৃতিতীর্থ তথা সংগ্রহশালায় যাঁর অবদান সবচেয়ে বেশি কার্যকর হবে, তিনি আধুনিক কালের প্রখ্যাত গবেষক-লেখক-অধ্যাপক শঙ্করীপ্রসাদ বসু। তাঁর ‘লোকমাতা নিবেদিতা’ এবং ‘বিবেকানন্দ ও সমকালীন ভারতবর্ষ’ এই গ্রন্থ দুটিতে শ্রীবসু যে সব দুষ্প্রাপ্য তথ্যের উল্লেখ করেছেন এবং তাঁর কাছেই সম্ভবত নিবেদিতার অমূল্য চিঠিপত্রের পাণ্ডুলিপি সংগৃহীত আছে, যা তিনি দু’খণ্ডে প্রকাশ করেছেন‘লেটারস অব সিস্টার নিবেদিতা’ নামকরণ করে প্রকাশিত হয় নবভারত পাবলিশার্স থেকে। তাই মনে হয়, নিবেদিতার স্মৃতিমন্দিরটি তৈরি হলে তাতে অধ্যাপক শঙ্করীবাবুর সহযোগিতা অবশ্যই প্রয়োজন হবে। তবে দুঃখের বিষয়, তিনি এখন শারীরিক ভাবে অসুস্থ। তবে তাঁর পুত্ররা (জ্যেষ্ঠ পুত্র গোলপার্ক রামকৃষ্ণ মিশন সংগ্রহশালায় বর্তমানে নিযুক্ত) এ ব্যাপারে খুবই সহযোগী হতে পারবেন বলে আমার ধারণা। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে স্বামীজির সার্ধশতবর্ষে শুভেচ্ছা জানাইতাঁর মানসকন্যার বহু স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি সুন্দর ভাবে নির্মিত হয়ে কলকাতার একটি দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠুক! এই আমাদের আন্তরিক আবেদন।
অবহেলায় নীলরতনের জন্মভিটে
বিস্মৃতির গর্ভে বিলীন হতে চলেছে প্রখ্যাত চিকিৎসক নীলরতন সরকারের জন্মভিটে। ১৮৬১ সালের ১ অক্টোবর অবিভক্ত চব্বিশ পরগনা জেলার নেতড়া গ্রামের যে বাড়িটিতে তিনি জন্মেছিলেন ও বড় হয়েছিলেন, সেই বাড়ি আজ আগাছায় পূর্ণ হয়ে নিশ্চিহ্ন হওয়ার দিন গুনছে। ঘটনাচক্রে সদ্য তাঁর সার্ধশতজন্মবার্ষিকী পার হয়েছে। ১৯৬৬ সালে এই বাড়িতেই জন্মগ্রহণ করেন নীলরতন সরকারের ভাই শিশুসাহিত্যিক যোগীন্দ্রনাথ সরকার। নীলরতন সরকার ১৯১৬-তে রাধাগোবিন্দ কর ও সুরেশপ্রসাদ সর্বাধিকারীর সঙ্গে একযোগে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বেলগাছিয়া মেডিক্যাল কলেজ (বর্তমানে আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল) স্থাপন করেন। অখণ্ড বঙ্গদেশে চিকিৎসা বিজ্ঞানে উন্নত বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি প্রচলনে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও তিনি সম্মানিত হন। যাদবপুরে যক্ষ্মা হাসপাতাল তৈরির জন্যও তাঁর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। অনন্য সামাজিক অবদানের জন্য ব্রিটিশ সরকার নীলরতন সরকারকে নাইট উপাধি দিয়েছিল। কলকাতায় থাকলেও প্রতি মাসে নিয়ম করে নেতড়ার এই বাড়িটিতে এসে তিনি বিনা পয়সায় মানুষের চিকিৎসা করতেন। জন্মের সার্ধশতবর্ষে এসে তাঁর জন্মভিটের স্মৃতিটুকু রয়েছে পুরনো ইট আর আগাছাকে জড়িয়ে। স্থানীয় বাসিন্দা থেকে প্রশাসন, প্রত্যেকে বাড়িটির গুরুত্ব উপলব্ধি করে আগাছা মুক্ত করার উদ্যোগ নিলে বাংলার গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাসের এই স্মৃতিচিহ্ন আরও কিছু দিন বেঁচে থাকতে পারে।


সুভাষচন্দ্রের স্মৃতি
ডাউহিল ট্রেকিং করে ক’দিন কার্শিয়াঙে ছিলাম। কার্শিয়াং শহর থেকে হিলকার্ট রোড ধরে মাত্র ২ কিলোমিটার দূরে প্রবীণ স্বাধীনতা সংগ্রামী শরৎচন্দ্র বসুর বাড়িতে নেতাজি অন্তরীন ছিলেন। ভবনটি গিদ্দা পাহাড়ে টিএন রোডে অবস্থিত। ১৯৩৮ সালে হরিপুরা কংগ্রেসের সভাপতি হিসাবে ভাষণ রচনা করেন তিনি এই বাড়িতে বসেই। অন্তরীন থাকাকালীন নেতাজি গিদ্দা পাহাড়ের অপরূপ নৈসর্গিক দৃশ্য উপভোগ করে গভীর প্রশান্তি লাভ করেন। নেতাজির স্মৃতিবিজড়িত এহেন ভবনটি নেতাজি ইনস্টিটিউট ফর এশিয়ান স্টাডিজ ও নেতাজি মিউজিয়াম তথা হিমালয়ের সমাজ-ভাষা-সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র হিসাবে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের অন্যতম দ্রষ্টব্য স্থান। এই মিউজিয়ামটি খুব সুন্দর সাজানো-গোছানো। হিলকার্ট রোড থেকে বাঁ হাতের সরু অপ্রশস্ত টিএন রোডটুকু একদম ভাঙাচোরা বড় বড় গর্ত-সহ একটি দুরন্ত বাঁক আর প্রাণান্তকর চড়াই ও ছোট বড় ভাঙা হাম্প নিয়ে কঙ্কালের মতো দাঁড়িয়ে আছে। তাই ছোট বা বড় গাড়ি এমনকী আধুনিক ছোট প্রাইভেট কার চলাচলও বন্ধ। একটু বয়স্ক প্রবীণ নাগরিক বিশেষত মা-বোনেদের এই চড়াই-উতরাই পথ অতিক্রম করে নেতাজির স্মৃতিবিজড়িত ভবনে পৌঁছানো প্রায় দুঃসাধ্য। আমরা চাই, অবিলম্বে কর্তৃপক্ষ টিএন রোডের উপযুক্ত সংস্কার সাধন করে গাড়ি চলাচলের উপযোগী করে গড়ে তুলুক।
—নিজস্ব চিত্র
ছবিতে বন্যপ্রাণ

Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player

 
 
 

Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player


রোজের আনন্দবাজার এ বারের সংখ্যা সংবাদের হাওয়াবদল আপনার রান্নাঘর স্বাদবদল চিঠি পুরনো সংস্করণ