ঐতিহ্য |
• ভারত সেরা ‘উদ্যান’ |
প্রতিরক্ষা দফতরের তাগিদে নিউ কোচবিহার রেল স্টেশনের সূচনা হয় ১৯৬৪ সালে। ১৯৬২-তে ভারত-চিন যুদ্ধে চিনা সৈন্য অরুণাচল সীমান্ত পেরিয়ে অসমের তেজপুর পর্যন্ত চলে আসে। সে সময় যোগাযোগের অপ্রতুলতা অনুভূত হয়েছিল সৈন্য চলাচল, রসদ যোগান ইত্যাদি ক্ষেত্রে। তখন ঠিক হয়, মালদহ থেকে অসমের গৌহাটি পর্যন্ত প্রথম পর্যায়ে ব্রডগেজ রেলপথ স্থাপিত হবে। ১৯৬৪-তে প্রাথমিক পর্যায়ে নিউ বঙ্গাইগাঁও পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু হয়। কোচবিহার শহরের উত্তরপ্রান্তে কয়েকশো একর জমির উপর তৈরি হয়েছিল নিউ কোচবিহার রেলস্টেশন। ধীরে ধীরে বিস্তৃতি ঘটেছে রেললাইনের। শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছে কোচবিহার রেলস্টেশনটিরও। সম্প্রতি নিউ কোচবিহার রেল স্টেশনের সামনের উদ্যান কাটিহার রেল স্টেশনের উদ্যানকে দ্বিতীয় স্থানে ঠেলে দিয়ে সারা ভারতে সবচেয়ে বড় রেল স্টেশন উদ্যান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। এই স্বীকৃতির জন্য ৪,২৯৮ বর্গমিটারের এই ‘উদ্যান’ লিমকা বুক অব রেকর্ডস বইতেও স্থান পেয়েছে। নানা রকম গাছপালার সঙ্গে ফোয়ারা, বসবার বেঞ্চ, রাত্রিতে আলোর ব্যবস্থা-সহ স্থান পেয়েছে একটি কার্যকাল শেষ হয়ে যাওয়া স্টিম ইঞ্জিন।
|
• ক্ষীরগ্রামের দুই মন্দিরে পূজিত যোগাদ্যা |
প্রাচীন কাল থেকেই মঙ্গলকোটের ক্ষীরগ্রাম বিখ্যাত এক জনপদ। এক সময় এই জনপদের দেবী যোগাদ্যার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল দূর-দূরান্তে। আজ বর্ধমান জেলার অন্তত ৫০টি গ্রামে যোগাদ্যা পুজোর প্রচলন রয়েছে। তবে দেবীর উদ্ভবস্থলের মর্যাদা পেয়েছে ক্ষীরগ্রামই। কথিত আছে, ক্ষীরগ্রাম দেবীর ৫১ পীঠের এক পীঠ। কিন্তু প্রাচীন যোগাদ্যা মূর্তিটি কোনও ভাবে হারিয়ে গিয়েছিল। বর্ধমানের মহারাজা কীর্তি চন্দ এই গ্রামে যোগাদ্যার একটি মন্দির নির্মাণ করান। সম্ভবত তাঁরই আদেশে হারিয়ে যাওয়া মূর্তিটির অনুকরণে একটি দশভুজা মহিষমর্দিনী মূর্তি তৈরি করেন দাঁইহাটের প্রস্তর শিল্পী নবীনচন্দ্র ভাস্কর। নতুন তৈরি হওয়া মূর্তিটি অবশ্য বছরের অন্যান্য সময়ে ডুবিয়ে রাখা হত ক্ষীরদিঘির জলেই। ৩১ বৈশাখ তা জল থেকে তুলে এনে সর্বসমক্ষে রাখা হত। এর মধ্যে হঠাৎই ঘটে গেল অলৌকিক এক কাণ্ড। তিন বছর আগে, ক্ষীরদিঘি সংস্কারের সময় নতুন মূর্তির সঙ্গেই উঠে এল ‘হারিয়ে যাওয়া’ পুরনো যোগাদ্যা মূর্তিটি। মূর্তি ফেরত পাওয়ার আনন্দে আশপাশের গ্রামের বাসিন্দাদের সাহায্যে গ্রামের মানুষ গড়ে তুললেন সম্পূর্ণ আলাদা একটি মন্দির। সেই মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত হল ফিরে পাওয়া দেবী-মূর্তি। ফলে বহিরাগতরা এখন গ্রামে গেলেই দর্শন পান দেবীর। ক্ষীরগ্রামে পুরনো যোগাদ্যা মন্দিরে তোরণদ্বারের স্থাপত্য দর্শকদের বিশেষ নজর টানে।
|
• কলকাতার ডুবে যাওয়া জাহাজ থেকে রুপো উদ্ধার |
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ডুবে যাওয়া ব্রিটিশ জাহাজ এসএস গেয়ারসোপ্পা থেকে প্রায় ৪৪ টন রুপো উদ্ধার হল সম্প্রতি। এর অর্থমূল্য প্রায় তিন কোটি সত্তর লক্ষ ডলার। তৎকালীন ব্রিটিশ যুদ্ধ পরিবহণ মন্ত্রকের জাহাজ এসএস গেয়ারসোপ্পা ১৯৪১ সালে কলকাতা বন্দর থেকে রওনা দেয়। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছনোর আগেই আয়ারল্যান্ড উপকূলের ৩০০ মাইল দূরে জার্মান হামলায় ডুবে যায় সেটি। উত্তর অতলান্তিকের প্রায় পনেরো হাজার ফুট নীচে গত বছর জাহাজটির ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করে একটি মার্কিন সংস্থা। তখনই জানা যায়, প্রচুর রুপোর বাট রয়েছে জাহাজটিতে। সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করে তাদের ওই রুপো তুলে আনার বরাত দেয় ব্রিটিশ সরকার। চুক্তি অনুযায়ী, উদ্ধার হওয়া রুপোর অর্থমূল্যের ৮০ শতাংশ পাবে সংস্থা, ২০ শতাংশ ব্রিটিশ সরকার। সেই কাজে নেমেই মিলেছে এই ‘সাফল্য।’ এখনও পর্যন্ত প্রায় ১২০০টি রুপোর বাট তোলা হয়েছে, যার মূল্য তিন কোটি সত্তর লক্ষ ডলার। মার্কিন সংস্থাটির দাবি, কোনও জাহাজের ধ্বংসাবশেষ থেকে দামি ধাতু উদ্ধারের এটাই সব থেকে বড় ঘটনা।
|
প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার |
• ব্রিটেনে মিলল বিরল ‘বেদি’ |
ব্রিটেনের কামব্রিয়ায় রোমান দুর্গে খনন কাজ চালাচ্ছিলেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। আর সেখানেই মিলল একটি বিরলতম বেদি। ১৪২ বছর পর এই ধরনের সাফল্য প্রত্নতাত্ত্বিকমহলে বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছে। বেদিটি ভাল ও অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছেন ওখানকার এক দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক। তিনি জানিয়েছেন, ‘‘মাটির নীচের দিকে বেদিটির মূল অংশটি থাকায় সে দিকটি অক্ষত রয়েছে। রোমান দেবতা ‘জুপিটার অপ্টিমাস ম্যাক্সিমাস’কে যে এটি উত্সর্গ করা হয়েছিল তার প্রমাণও মিলেছে। আমাদের অনুমান, বেদিটি দ্বিতীয় ও তৃতীয় শতকের।’’ জানা গিয়েছে, নেদারল্যান্ডস থেকে আসা টাইটাস অ্যাটিয়াস টিউটর নামে এক কম্যান্ডার এটিকে তৈরি করিয়েছিলেন। ১৮৭০ সালে এই রকম আরও ১৭টি বেদি আবিষ্কার করেন স্থানীয় এক ব্যক্তি। তাঁর জমিতে পাওয়া সেই বেদিগুলি এখন সংরক্ষিত আছে রোমের এক মিউজিয়ামে। অন্য দিকে সম্প্রতি পাওয়া বেদিটির আবিষ্কর্তা জন মারে নামের এক ব্যক্তি। যে জায়গায় এই প্রাচীন বস্তুটি পাওয়া গিয়েছে সেখানে এক সময় কাঠের বড় বড় প্রাসাদ ছিল। নিউ কাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অয়ান হেইনস জানিয়েছেন, প্রথম দিকে মনে করা হয়েছিল বেদিগুলিকে ধর্মীয় কারণে সমাধিস্থ করা হয়েছে। কিন্তু সেটা সঠিক নয়। এই আবিষ্কারের ফলে এটা স্পষ্ট যে, সে সময় বেদিগুলি তাদের ধর্মীয় গুরুত্ব হারানোয় রোমানরা বাড়ি তৈরির কাজে এগুলিকে ব্যবহার করতেন। তাঁর মতে এই ধরনের আবিষ্কার প্রায় হয় না বললেই চলে।
|
• ‘কিং অফ পিরামিডস’ ফারাও স্নেফ্রু |
মরুভূমির মধ্যে ২.৩ বর্গ মাইল এলাকা জুড়ে পিরামিড তৈরিতে নিজের দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন ‘কিং অফ পিরামিডস’ ফারাও স্নেফ্রু। সম্প্রতি এক গবেষণায় এই তথ্যই উঠে এসেছে। আসলে পিরামিড বলতে যা বোঝায় দু’বার ব্যর্থ হওয়ার পর দাসুরে প্রথম সেটি নির্মাণ করেন স্নেফ্রু। জানা যায়, পিরামিডটি তৈরি করতে দাসুর থেকে ২০ মাইল দূরের কায়রো থেকে ৩.৫ লক্ষ কিউবিক মিটার নির্মাণ দ্রব্য আনিয়েছিলেন তিনি। তবে ৪৫০০ বছরের প্রাচীন এই পিরামিড নির্মাণে মানুষের ভূমিকা কতখানি ছিল প্রকৃতির নিয়মে তার প্রমাণ কিন্তু লোপাট হয়ে গিয়েছে। এ তো গেল পিরামিড তৈরির কথা।
কিন্তু কী ভাবে তিনি এই পিরামিড গড়ে তুলেছিলেন? তা জানতে জ্যামিতিক নকশার সাহায্য নিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। দাসুরে যে জ্যামিতিক নকশা পাওয়া গিয়েছে, সেটি নীল নদ সৃষ্ট বলেই বিজ্ঞানীরা মনে করছেন। পাশাপাশি এই ২.৩ বর্গ মাইল জুড়ে সুবিশাল এলাকা কোনও ভাবেই প্রাকৃতিক নিয়মে গড়ে ওঠেনি আশ্চর্য হলেও সে কথাই জানিয়েছেন গবেষকরা। তাঁদের মতে দাসুরের এই জ্যামিতিক নকশাটি তৈরি করেছিলেন স্বয়ং ফারাও স্নেফ্রু।
|
পরিবেশ ও বন্যপ্রাণ |
• পরিযায়ীর ভ্রমণে হাল ধরতে ‘চুম্বক কোষ’ |
শীতকাল আসার সঙ্গে সঙ্গেই গাছের ডালে ডালে দেখা মিলবে অজানা রংবেরঙের নানা প্রজাতির পাখির। সেই সুদূর সাইবেরিয়া থেকে বংশবিস্তারের উদ্দেশ্যে ঠিক এই সময়ে তারা ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার মতো নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে হাজির হবেই। ঠিক যেমন মনার্ক প্রজাপতি শীতকালে সুদূর কানাডা থেকে মেক্সিকো উপকূলে হাজির হয় ডিম পাড়তে। আবার একই ভাবে বর্ষার প্রজননের সময় ইলিশ বা রেনবো ট্রাউট মাছ সমুদ্র থেকে হাজারমাইল পথ পাড়ি দিয়ে চলে আসে নদীতে। কিন্তু এই পরিযায়ী প্রাণীরা কী ভাবে এতটা পথ চিনে যাতায়াত করে? এই নিয়ে অনেক গবেষণাও হয়েছে। আর সেই গবেষণা অনুযায়ী, বিজ্ঞানীদের অনুমান, এই পরিযায়ী প্রাণীরা পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রকে কেন্দ্র করে দিক নির্ধারণ করে। সম্প্রতি ‘প্রসিডিং অফ দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স’ জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে এক দল বিজ্ঞানীর দাবি, রেনবো ট্রাউট মাছের দেহে তাঁরা খুঁজে পেয়েছেন বিশেষ ধরনের কোষ যার নিজস্ব চৌম্বক ক্ষমতা রয়েছে। বিজ্ঞানীদের মতে, এই কোষগুলোর বিশেষ ক্ষমতার সাহায্যেই হাজার হাজার মাইল দূরের পথ পাড়ি দিলেও পথ হারায় না ট্রাউট মাছেরা। গবেষক দলের অন্যতম ক্যালটেকের জৈব ভূবিজ্ঞানী জোসেফ কিরশ্চভিঙ্ক জানিয়েছেন, এই গবেষণার জন্য প্রথমে ট্রাউট মাছের ঘ্রাণেন্দ্রিয় থেকে কিছু কোষ আলাদা করা হয়েছিল। একটি কৃত্রিম চৌম্বক ক্ষেত্র সৃষ্টি করে তার মধ্যে ওই কোষগুলিকে রেখে দেওয়া হয়। জোসেফের দাবি, এর পর অনুবীক্ষণ যন্ত্রে ওই কোষগুলিকে পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখা যায়, কিছু কোষ ওই চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রভাবে বেঁকে গিয়েছে। জোসেফের মতে, কোনও কোষের যদি নিজস্ব চৌম্বক ধর্ম থাকে তা হলেই এক মাত্র তারা চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রভাবে ঘুরে যেতে পারে। পৃথিবী মাঝে মাঝে নিজের চৌম্বক ক্ষেত্রের পরিবর্তন করে। পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র পরিবর্তিত হওয়া মাত্র ট্রাউটির মস্তিষ্কে আগের থেকে কিছুটা অন্যরকম বার্তা পৌঁছয়। আর এই ভাবেই পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে তারা যাত্রাপথের দিক নির্ণয় করে। তবে, ট্রাউট মাছের মতো অন্য পরিযায়ী প্রাণীরাও একই রকম ভাবে চুম্বক ক্রিস্টালের সাহায্যে দিক নির্ণয় করতে পারে কি না সেটা অবশ্য জানা যায়নি।
|
• উত্তর-পূর্বের চোরাচালানের লক্ষ্য এখন টোকে গেকো |
লম্বায় বড়জোড় ২০ ইঞ্চি। ওজন খুব বেশি হলে ৪০০ গ্রাম। অথচ চোরাশিকারের বাজারে গন্ডারের থেকেও মহার্ঘ্য এই ছোট্ট সরীসৃপ। অর্থের লোভে এ বার গন্ডার নয়, তার চেয়ে অনেকগুণ ছোট, টোকে গেকো শিকারে মেতে উঠেছে উত্তর-পূর্বের গ্রামবাসীরা। মণিপুরের গ্রামগুলিতেই টোকে গেকো শিকার চলছে। মায়ানমার হয়ে চিনে পাড়ি দিচ্ছে গেকোর দেহ। দাম শুনলে চমকে উঠতে হয়। প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে একটি গন্ডার মেরে তার খড়্গ পাচার করে মেলে ২০ লক্ষ টাকা। সেখানে টিকটিকি সদৃশ একটি গেকো মারলে ২০ লক্ষ টাকা অবধি মিলতে পারে। চিনাদের বিশ্বাস, সরীসৃপ প্রজাতির এই টোকে গেকো থেকে এডস ও ক্যান্সারের ওষুধ মেলে। সেই বিশ্বাসই নিশাচর, টিকটিকিসদৃশ এই প্রাণীদের ক্ষেত্রে কাল হয়েছে। আগে উত্তর-পূর্ব ভারত, নেপাল, বাংলাদেশ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ফিলিপিন্স ও পশ্চিম নিউ গিনিতে টোকে গেকো পাওয়া যেত। শিকারিদের পাল্লায় পড়ে ফিলিপিন্স ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় টোকে গেকো এখন লুপ্তপ্রায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, পুরুষ টোকে গেকো ১১ থেকে ২০ ইঞ্চি অবধি লম্বা হয়। স্ত্রী টোকে গেকোর দৈর্ঘ্য ৭ থেকে ১৯ ইঞ্চি। এদের গড় ওজন হয় ১৫০ থেকে ৪০০ গ্রাম। দেখতে সাধারণ টিকটিকির জাতভাই হলেও নীলাভ দেহে হলুদ বা লাল বুটি ও চেরা বড় চোখ তাদের বিশেষত্ব। মণিপুরের পার্বত্য এলাকায় ছোট টোকে গেকো প্রচুর দেখা গেলেও বড়দের দেখা মেলে কম। শিকারিদের দৌরাত্ম্যে টোকে গেকো ফিলিপিন্সে বিরল হয়ে ওঠায় ইতিমধ্যে সে দেশে এই সরীসৃপ হত্যা, চালান, সংগ্রহ করা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এমনিতে এই প্রজাতিটি আইইউসিএন-এর তালিকায় বিপন্ন তালিকাভুক্তও নয়। কিন্তু পরিবেশপ্রেমীদের আশঙ্কা, সরকার যতদিনে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত হবে, ততদিনে যে হারে চোরাচালান শুরু হয়েছে তাতে মণিপুরে এই প্রজাতি খুব শীঘ্রই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
|
• নজরদারিতে গোয়েন্দা-বিমান |
বন্যপ্রাণীদের গতিবিধি জানতে এবং চোরাশিকারীদের উপর নজরদারি চালাতে এ বার চালকবিহীন গোয়েন্দা-বিমান উড়বে কাজিরাঙার আকাশে। দেশের মধ্যে, কাজিরাঙাই প্রথম জাতীয় উদ্যান, যেখানে এমন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে নজরদারি চালানো হবে। বন্যায় ব্যাপক প্রাণহানি এবং চোরাশিকারিদের রমরমা দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে রাজ্য সরকার, ন্যাশনাল টাইগার কনজারভেশন অথরিটি (এনটিসিএ) ও ওয়াইল্ডলাইফ ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার কর্তারা বিশেষ বৈঠকে বসেন। সেখানেই চালকবিহীন বিমান চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অসমের অরণ্যগুলিতে, বিশেষ করে বন্যার সময়, নজরদারি চালানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। ফলে এক দিকে, প্রাণীদের মৃত্যু যেমন বেড়ে যায়, তেমনি নজরদারি না থাকায় চোরাশিকারিরাও গন্ডার ও অন্যান্য প্রাণী হত্যার সুযোগ কাজে লাগায়। এনটিসিএ সদস্যরা জানান, কাজিরাঙায় বিমান চালানোর বিষয়টি বাস্তবায়িত হতে অন্তত মাস ছয়েক সময় লাগবে। বিমানটি একবারে ৪ ঘণ্টা উড়তে পারবে। বিমানে লাগানো ক্যামেরায় ছবি দেখে, ব্যবস্থা নিতে পারবে কর্তৃপক্ষ। রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে এই বিমানটি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। বন্যার সময় প্রাণীদের গতিবিধির উপর নজর রাখা, চোরাশিকারিদের উপরে নজর রাখা-সহ নানা ধরনের কাজে, উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে পারবে এই বিমান।
|
পার্বণ |
• দশ দিনের ‘ওনম’ |
কেরলের বৃহত্তম উত্সবের নাম ওনম। অগস্ট মাসের শেষ দিকে দশ দিন ব্যাপী দক্ষিণ ভারতীয় এই মহোত্সব শুরু হয়। সমস্ত বৈষম্য ও ভেদাভেদ ভুলে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের কয়েক হাজার মানুষ অংশ নিয়ে থাকেন এই উত্সবে। এই উত্সবে কেরল বঙ্গদেশের ‘নবান্ন’-এর মতোই কৃষি ও কৃষিজ ফসলের উত্পাদনকে কেন্দ্র করে সেজে ওঠে। একই সঙ্গে চলে দক্ষিণ ভারতীয় ঐতিহ্য সমৃদ্ধ বিভিন্ন নৃত্য। চলে নানা প্রতিযোগিতাও— নৌ-প্রতিযোগিতা, তলোয়ারের খেলা ইত্যাদি। ওনমের প্রথা মেনে নানা রঙের শাড়ি, অলঙ্কার ও ফুলের গয়নায় সেজে ওঠেন মহিলারা। এ সময়টায় বিভিন্ন দক্ষিণী ঘরানার খাবারের পসরা নিয়ে জাঁকজমকের সঙ্গে চলে খাদ্য উত্সব। বিভিন্ন রঙে রাঙানো চাল ও ‘পুক্কালম’(মালায়লম শব্দ, মানে ফুলের পাপড়ি) দিয়ে প্রত্যেকে বাড়ির সামনেটা সাজান ‘রঙ্গোলি’তে। অতিথি আপ্যায়নের এটি একটি প্রতিকী প্রথা। ওনমের চতুর্থ দিনে হয় ‘মহাভোজ’। এ সম্পর্কে মালায়লম ভাষায় একটা প্রবাদ আছে,‘কন্নম ভিত্তু ওনম উন্ননম’ যার অর্থ সমস্ত সঞ্চয় দিয়েও মহাভোজের আয়োজন করা উচিত্।
|
• তিজ উত্সব |
হিন্দু ধর্ম মতে ‘তিজ উত্সব’ একটি প্রাচীন পবিত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠান, যা বর্তমানে উত্সবে পরিণত হয়েছে। তিজ মাতার আরাধনাকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত এই প্রাচীন ধর্মীয় অনুষ্ঠানটি তিজ উত্সব নামেই পরিচিত। প্রতি বছর শ্রাবণ মাসের ত্রয়োদশ তিথিতে দেবী পার্বতী তিজ মাতা রূপে পূজিত হন। রাজস্থানে জুলাই-অগস্ট মাসে এই উত্সব খুব নিষ্ঠা ও ভক্তির সঙ্গে পালন করা হয়। পুরাণ মতে মহাদেবকে নিজের স্বামী রূপে পেতে পার্বতী তপস্যা শুরু করেন। দীর্ঘ ১০৮ বছরের উপবাস ও কঠোর তপস্যার পর এই দিনটিতে পার্বতীকে মহাদেব নিজের স্ত্রী রূপে গ্রহণ করেন। তাই এই দিনে নিজেদের বৈবাহিক শান্তি ও সমৃদ্ধি অটুট রাখতে রাজস্থানের হাজার হাজার বিবাহিত মহিলা তিজ পালন করেন। তবে সংসারের মঙ্গল কামনায় বর্তমানে বিবাহিত-অবিবাহিত প্রায় সব মহিলাই এই উত্সব পালন করেন খুব নিষ্ঠার সঙ্গে।
|
• তরমুজ মেলা |
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কুমারগঞ্জ থানার বটুন গ্রামে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হল বিখ্যাত তরমুজ মেলা। বটুনের ঐতিহ্যবাহী চামুণ্ডা কালীপুজো উপলক্ষে প্রতি বছর এই মেলা বসে। মেলায় মনিহারি দ্রব্যের দোকান, খেলনা, হস্তশিল্প, ফলের আচার নিয়ে বিক্রেতারা হাজির হন। কিন্তু প্রতি বছর তরমুজ নিয়ে চাষিদের হাজির হওয়াটা মেলাকে অন্য মাত্রায় পৌঁছে দেয়। আত্রেয়ী নদীর ধারে কুমারগঞ্জ থানা এলাকা তরমুজ চাষের জন্য বিখ্যাত। কলকাতা ও উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে এখান থেকে তরমুজ চালান দেওয়া হয়। তাই তরমুজ চাষে চাষিদের উৎসাহ দিতে মানুষ মেলাকে বেছে নিয়েছেন। এখানে সেরা চাষিকে পুরস্কৃত করাও হয়।
|
পর্যটন কেন্দ্র |
• যাত্রাপ্রসাদ |
জলপাইগুড়ির গরুমারা জঙ্গলে বেড়াতে গেলে আসতেই হবে ‘যাত্রাপ্রসাদ নজর মিনার’-এ। চেকপোস্ট থেকে সাত কিলোমিটার দূরে জঙ্গলের গভীরে ঢুকে বন্য জন্তু দর্শনের আদর্শ স্থান এই নজর মিনার। গাছের সবুজ ছায়ার আড়ালে এই নজর মিনার থেকে মূর্তি নদীর ধারে ঘাসের জঙ্গলে বাইসন, গন্ডার, স্পটেড ডিয়ার কিংবা নদীর ধারে পেখম মেলা ময়ূরের নাচ দেখা যায়। এক সময় বনবিভাগে আদর্শ কুনকি হাতি হয়ে উঠেছিল যাত্রাপ্রাসাদ। বহু জঙ্গি হাতিকে ঘায়েল করেছে সে। গরুমারার জঙ্গল এবং সেখানকার বুনোদের সম্পর্কে সমঝদার ছিল বনকর্মীদের বাধ্য এই হাতি। গৌরীপুরের জমিদারের কাছ থেকে কোচবিহারের রাজপরিবার উপহার হিসেবে পেয়েছিল যাত্রাপ্রসাদকে। পরে কোচবিহারের রাজপরিবার হাতিটিকে দান করেছিল জলদাপাড়া অভয়ারণ্যে। সেখান থেকে তার ঠাঁই হয় গরুমারার জঙ্গলে। ১৯৯৬-এর গোড়ার দিকে বয়সজনিত কারণে যাত্রাপ্রসাদের মৃত্যু হলে বনবিভাগ ভালবাসা ও কৃতজ্ঞতা স্বরূপ এই ওয়াচ টাওয়ারটি তার নামে উৎসর্গ করে। এখানেই শেষ নয়। নজর মিনারের সামনে বসানো হয়েছিল মাহুত সমেত যাত্রাপ্রসাদের ফাইবার গ্লাসের একটি মূর্তিও। কিন্তু বুনো হাতিরা পরিখা পার হয়ে এসে সে মূর্তিটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। গরুমারার বনকর্মীদের বিশ্বাস, অন্য হাতিরা যাত্রাপ্রসাদকে হিংসা করত, সে জন্যই তারা এই কাণ্ডটি ঘটিয়েছিল। যাত্রাপ্রসাদ না থাকলেও তার নামাঙ্কিত এই ওয়াচ টাওয়ারটিতে দৈনিক চার দফায় ১৬০ জন পর্যটক হাজির হন। গরুমারার জঙ্গলে আজও এ ভাবেই যাত্রাপ্রসাদ জানান দিচ্ছে তার অস্তিত্ব।
|
• আর পর্যটন নয় বাঘের ডেরায়: সুপ্রিম কোর্ট |
বন্য জীবনে পর্যটকদের অবাধ প্রবেশ রুখতে কড়া পদক্ষেপ নিল সুপ্রিম কোর্ট। দেশের সমস্ত ব্যাঘ্র প্রকল্পের ‘কোর’ অঞ্চলে সব রকমের পর্যটন বন্ধ করার নির্দেশ দিলেন শীর্ষ আদালত। পর্যটনের নামে বাঘের ডেরায় বেআইনি ভাবে হোটেল, রিসর্ট নির্মাণ হচ্ছে, সম্প্রতি এই মর্মে একটি জনস্বার্থ মামলা হয়। সেই মামলার শুনানিতেই এই নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালতের বেঞ্চ। বাঘের অবাধ বিচরণের জন্য ব্যাঘ্র প্রকল্পের যে অংশ নির্দিষ্ট করা হয় তাকেই বলে ‘কোর’ অঞ্চল। অনেক ক্ষেত্রে অরণ্যবাসীদেরও সেই অঞ্চলেই বাস। কিন্তু সংশোধিত আইন বলছে, বাঘ বাঁচাতে এবং তাদের জীবন নিরুপদ্রব করতে হলে ‘কোর’ এলাকায় মানুষের আনাগোনা সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ করতে হবে। কোনও গ্রাম বা জনপদ সেখানে থাকবে না। ওই ‘কোর’ অঞ্চল ঘিরেই তৈরি করতে হবে ‘বাফার’ এলাকা, যাতে বাঘ কোনও ভাবে ছিটকে বেরিয়ে এলেও জঙ্গলের বাইরে না যায়। স্থানীয় তফসিলি জাতি-উপজাতি বা অরণ্যবাসীরা ওই ‘বাফার’ এলাকায় থাকতে পারবেন। দেশে ৪১টি ব্যাঘ্র প্রকল্প রয়েছে। সর্বশেষ সমীক্ষা অনুযায়ী, সেখানে বাঘের সংখ্যা ১৭০০। যদিও উপদ্রুত ও দুর্গম হওয়ায় কিছু ব্যাঘ্র প্রকল্প এখনও সুমারির আওতায় আসেনি। তার সঙ্গেই রয়েছে চোরাশিকারির দৌরাত্ম্য। এই পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে স্বাগত জানিয়ে ন্যাশনাল টাইগার কনজারভেশন অথরিটি (এনটিসিএ)-র সদস্য সচিব রাজেশ গোপাল বলছেন, “আমরা দীর্ঘ দিন ধরেই বলছি বিভিন্ন ব্যাঘ্র প্রকল্পে পর্যটকদের গতিবিধি বাঘের ব্যক্তিগত জীবনে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।” ওয়াইল্ডলাইফ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ার বিজ্ঞানী ওয়াই ভি ঝালার কথায়, “এখন পর্যটন হয় ওই ক্রিটিক্যাল টাইগার হ্যাবিট্যাট-এরই একটি ছোট অংশে। তা বন্ধ হলে বাঘেদের মঙ্গলই হবে।”
|
• ‘এয়ারো বেলুন’-এ নগরদর্শন |
উড়োজাহাজে নয়, এ বার বেলুনে চড়েই মাটির ৫০০ ফুট উপর থেকে কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকার দৃশ্যাবলী দেখা যাবে রবীন্দ্র সরোবর থেকে। এর জন্য খরচ পড়বে মাথাপিছু সর্বাধিক ১০০ টাকা। প্রায় ১০০ ফুট উঁচু ও ৫৫-৬০ ফুট ব্যাসার্ধের একটি বেলুনে হিলিয়াম গ্যাস ভরে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে তোলা হবে আকাশে। বেলুনের বেশ কয়েক ফুট নীচে থাকবে একটি বৃহৎ মাপের গোলাকৃতি প্ল্যাটফর্ম, যা বেলুনের সঙ্গে যুক্ত থাকবে অনেকগুলি তারের মাধ্যমে। ওই প্ল্যাটফর্মেই যাত্রীরা দাঁড়াবেন। প্ল্যাটফর্মটি এমন হবে, যাতে ২০-৩০ জন অনায়াসে দাঁড়াতে বা ঘোরাফেরা করতে পারেন। যাত্রী-নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পাটাতনটি সম্পূর্ণ ঘেরা থাকবে স্বচ্ছ পর্দার মতো কিছু দিয়ে। গ্যাস ভরা বেলুনটিকে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে উড়িয়ে দেওয়া হবে এমন উচ্চতায় যাতে বেলুনের নীচে থাকা যাত্রিবাহী পাটাতনটি ৫০০ ফুট উঁচুতে অবস্থান করবে। বেলুনটি একটি তার দিয়ে সর্ব ক্ষণ বাঁধা থাকবে মাটিতে থাকা একটি স্থায়ী বেদির সঙ্গে। যাতে কোনও ভাবেই তা নির্দ্দিষ্ট এলাকার বাইরে উড়ে চলে যেতে না পারে। বেলুনটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় থামলে আরোহীরা ইচ্ছে মতো ঘোরাফেরা করে দেখতে পারবেন শহরের যাবতীয় সৌন্দর্য। ঘুরে দেখা শেষ হলেই আবার বেলুনটি ধীরে ধীরে নেমে আসবে। দিনের আলো ছাড়া রাতের অন্ধকারেও ওই বেলুনটি ওড়ানো যাবে। শহরের সৌন্দর্যায়ন ও রবীন্দ্র সরোবরকে জনগণের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে বেলুনে করে এক সঙ্গে ২০-৩০ জনকে প্রায় ১১ তলা বাড়ির সমান উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
|
পরিষেবা |
• যাত্রী বাড়াতে কেএলএম এয়ারলাইন্সের নতুন উদ্যোগ |
যাত্রী সংখ্যা বাড়াতে কেএলএম রয়্যাল ডাচ এয়ারলাইন্স এ বার ফেসবুকের সদস্যদের জন্য ‘ট্রিপ প্ল্যানার’ নামে একটি নতুন ‘অ্যাপ্লিকেশন’ চালু করল। এই পরিষেবার মাধ্যমে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করতে পারবেন। শুধু তাই নয়, নিজেদের পছন্দসই জায়গা বাছা থেকে শুরু করে ভ্রমণের সম্ভাব্য তারিখে বিমানের টিকিট পাওয়া যাবে কি না, বা পাওয়া গেলে কত দাম হবে, সে সব তথ্যই এই প্রযুক্তির সাহায্যে সহজেই মিলবে। তাঁরা চাইলে একই সঙ্গে টিকিট বুকও করতে পারবেন www.klm.com এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে। চলতি বছরে ‘মিট অ্যান্ড সিট’-এর পর কেএলএম এয়ারলাইন্সের এটি দ্বিতীয় ‘অ্যাপ্লিকেশন’ যা ফেসবুক সদস্যদের ইতিমধ্যেই সারা ফেলেছে। ‘ট্রিপ প্ল্যানার’-এর আরও একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল সদস্যদের রুচি অনুযায়ী ভ্রমণের নতুন নতুন জায়গা সম্বন্ধে খোঁজখবর দেওয়া। তা ছাড়া ভ্রমণের মুখ্য উদ্দেশ্যকে মাথায় রেখে সদস্যদের জন্য সব থেকে আদর্শ তিনটি পরামর্শও দেবে এই অত্যাধুনিক পরিষেবা।
|
• এ বার পুজোয় চলমান ক্যাফেটেরিয়া |
কলকাতার শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্য ট্রামকে আরও আকর্ষনীয় করতে উদ্যোগী হল ক্যালকাটা ট্রাম কোম্পানি (সিটিসি)। এ বার তারা ‘মোবাইল ক্যাফেটেরিয়া’ বা চলমান ট্রামের ভেতর ক্যাফেটেরিয়া কলকাতার রাস্তায় চালাবে। কলকাতাই ভারতের একমাত্র শহর যেখানে এখনও পর্যন্ত এই শতাব্দী প্রাচীন পরিবহণ ব্যবস্থা চালু রয়েছে। তবে খুব চিন্তার বিষয় যে, ট্রাম পশ্চিমবঙ্গের সব থেকে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া পরিবহণ ব্যবস্থা। ট্রামের জন্য প্রত্যেক বছর ভর্তুকি বাবদ ৬০০ কোটি টাকা খরচ করে রাজ্য সরকার। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন আয় না বাড়লে ভারতবর্ষের অন্যান্য শহর যেমন মুম্বই, দিল্লি, পটনা, কানপুর চেন্নাই এবং নাসিককের মতো কলকাতাতেও এই পরিবহণ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়া হবে। তাই পরিবহণ দফতর, পর্যটন দফতর এবং আইআরসিটিসি-র সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই ক্যাফেটেরিয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ চলছে। সম্ভবত দুর্গা পুজোর আগেই এর কাজ সম্পূ্র্ণ হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্র। মদনবাবু আরও জানিয়েছেন এ ব্যাপারে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে এবং আগামী এক মাসের মধ্যেই একটি বিস্তারিত রিপোর্ট দেবে। ক্যাফেটেরিয়ার খাবার পরিবেশনের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে আইআরসিটিসি-কে।
সিটিসি-র আয় বাড়ানোর জন্য প্রথম পর্যায়ে ক্যাফেটেরিয়ার পর আরও এক গুচ্ছ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। যেমন, এসি ট্রাম, লাভজনক রুটে আরও বাস চালানো, অব্যবহৃত বাস ডিপোগুলিকে পার্কিংলট হিসেবে ব্যবহার করা ইত্যাদি। এ ছাড়া ট্রামের টিকিটের ভাড়া দেড় টাকা পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে পরিবহণ দফতরকে। বর্তমানে প্রায় ২৫০টি ট্রাম রয়েছে সিটিসি-র কাছে। কিন্তু মাত্র ১২০টি চালানোর মতো অবস্থায় রয়েছে। অতিরিক্ত এই ১৩০টি ট্রামকে সারিয়ে চালানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। যাত্রী সংখ্যা বাড়াতে ভিক্টোরিয়ার পাশে ট্রাম লাইন পাতার অনুমতিও চাওয়া হয়েছে রাজ্য সরকারের কাছে।
|
• ট্রেনে পরিবেশিত খাদ্যের মান বাড়াতে বিশেষ উদ্যোগ রেলের |
সম্প্রতি দিল্লি-রাঁচি রাজধানী এক্সপ্রেসে যাত্রীদের জন্য পরিবেশিত খাবার খেয়ে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থ যাত্রীদের মধ্যে ঝাড়খণ্ডের একজন সাংসদও ছিলেন। এই ঘটনায় রীতিমতো নড়েচড়ে বসেন ভারতীয় রেলের শীর্ষ কর্তারা। খাদ্য পরিবেশনের দায়িত্বে থাকা ইন্ডিয়ান রেলওয়ে ক্যাটারিং অ্যান্ড ট্যুরিজম কর্পোরেশনের কাছ থেকে তড়িঘড়ি এই দায়িত্ব নিজেদের হাতে নিয়ে নেয় ভারতীয় রেল। রাজধানী এক্সপ্রেসের মতো দেশের প্রথম শ্রেণির ট্রেনই নয়, বাকি সমস্ত ট্রেনেই এ বার থেকে উন্নত মানের খাদ্য পরিবেশনে বিশেষ নজর দেবে রেলওয়ে বোর্ড। ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয় তার জন্য দেশের প্রতিটি অঞ্চল ভাগ করে পরিবেশিত খাদ্যের উপর কড়া নজরদারির নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। দাম নিয়ে যাতে কারচুপি না হয় তার জন্য প্রতিটি প্যাকেটে খাবারের দাম লেখা থাকবে। প্যন্ট্রিকারের কর্মচারীদের সতর্ক করা হয়েছে যাতে যাত্রীদের কাছ থেকে কোনও ভাবেই বেশি মূল্য না নেওয়া হয়। যাত্রীদের যথাযথ রসিদও এ বার থেকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ঠিক ভাবে নজরদারি করার জন্য রেলওয়ে বোর্ড বেশ কিছু পর্যবেক্ষক সমৃদ্ধ একটি বিশেষ দল গঠন করছে। যার কাজ হবে চলমান ট্রেনে আচমকা হানা দিয়ে পরিবেশিত খাদ্যের গুণগত মান পরীক্ষা করা। খাদ্যের গুণগত মান বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে প্যান্ট্রিকারের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকেও নজর দেবে এই দল। এ ব্যাপারে এই দলটিকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে হাজিপুরের হোটেল ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ক্যাটারিং ইনস্টিটিউশনে। ইতিমধ্যে ৮০ জন পর্যবেক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে।
|
|
|
|