কোচবিহার শহর ঘেঁষে বয়ে গিয়েছে উত্তরের ঐতিহ্যবাহী নদী তোর্সা। এই অঞ্চলেও যথেচ্ছ হারে বৃক্ষচ্ছেদন হচ্ছে। যথারীতি মাটি ক্ষয়ে গিয়ে তৈরি হচ্ছে ভূমিধস। আর সেই পলি গিয়ে জমছে তোর্সায়। যার ফলে নাব্যতা হারাচ্ছে তোর্সা।
কোচবিহার জেলার নানা জায়গার উপর দিয়ে তোর্সা নদী প্রবাহিত। কোনও কোনও স্থানে নদীর ভাঙন এমন বিপজ্জনক আকার নিয়েছে যে আতঙ্কিত হচ্ছেন সেই এলাকার লোকজন। সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে দূষণ। কোচবিহার শহরের আবর্জনার ভার বহন করতে হয় এই তোর্সা নদীকেই। যাবতীয় আবর্জনা এই নদীতেই জমে। যার ফলে শুধু নাব্যতা হ্রাস নয়, বোরালী, মৌরলা, ট্যাংরা, পাথরচাটা-র মতো নদীর মাছ দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। অবিলম্বে ব্যবস্থা না নিলে আগামী প্রজন্ম হয়তো শুধু ইতিহাস বইতে পড়বে তোর্সা, তার মীন সন্তানদের ইতিবৃত্ত। তীর্থঙ্কর মণ্ডল। দিনহাটা, কোচবিহার
ধ্বংসের মুখে মাজুলি দ্বীপ
পৃথিবীর নদীসৃষ্ট সব থেকে বড় দ্বীপ ছিল আমাদের মাজুলি দ্বীপ। আগে এর আয়তন ছিল ১,২৫০ বর্গ কিলোমিটার বা ৪৮৩ বর্গ মাইল। কিন্তু ১৭৫০ সালের এক বিধ্বংসী বন্যা ও জলোচ্ছাসে ব্রহ্মপুত্রের গতিপথ পরিবর্তন হয় এবং নদী দু’ভাগে ভাগ হয়ে যায়। দক্ষিণ ব্রহ্মপুত্র বা বুড়ালুই, উত্তরে সুবনসিরি বা খেঁরকুটিয়া। জুতি (ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদী) দ্বীপটিকে ঘিরে রাখে। এই খেঁরকুটিয়া নদীটি উত্তর দিকে এসে সুবনসিরি নদীতে মিশেছে। তাই সুবনসিরি নদী উত্তর দিক থেকে এবং ব্রহ্মপুত্রের দক্ষিণ পাড় মাজুলি দ্বীপকে মূল ভূখণ্ড থেকে পৃথক করে রেখেছে। উত্তরে লখিমপুর, দক্ষিণ-পশ্চিমে গোলাঘাট, দক্ষিণ-পূর্বে শিবসাগর ও দক্ষিণে জোরহাট কুড়ি কিলোমিটার দূরে।
ক্রমাগত ভূমিক্ষয় ও ভূকম্পের ফলে এই বৃহত্তম নদী-সৃষ্ট দ্বীপ মাত্র ৪২১.৬৫ বর্গকিলোমিটার বা ১৬৩ বর্গমাইল আয়তনে (২০০১ সালের হিসাব) এসে পৌঁছেছে। ব্রাজিলের বানালাল দ্বীপ সর্ববৃহৎ নদীসৃষ্ট দ্বীপের মর্যাদা পেয়েছে।
অতীতের ২৪৩টি গ্রামের মধ্যে এখন মাত্র ১৪৪টি গ্রাম নিয়ে মাজুলি বিরাজমান। ষোলোশো শতাব্দীর সাংস্কৃতিক রাজধানী ছিল এই মাজুলি। প্রতি দিন ব্রহ্মপুত্রের গতিপথ পরিবর্তনে এক-একটি গ্রাম ক্রমক্ষীয়মান। মিচিং, দেওরি, সনোওয়াল, কোশারি উপজাতিদের বাস এই দ্বীপভূমিতে। চৈতন্যদেবের জন্মের ৩২ বছর আগে শঙ্করদেবের আবির্ভাব ঘটে। শঙ্করদেব ও মাধবদেবের মণিকাঞ্চন যোগাযোগও ঘটে এই দ্বীপে। অসমিয়া সংস্কৃতির ও বৈষ্ণব ধর্মের মূল কেন্দ্র হিসাবে গড়ে ওঠে এই মাজুলি। তৈরি হয় মঠ ও ধর্মীয় আখড়া, অসমিয়া ভাষায় ‘সত্র’। ৬৫টি সত্রের মধ্যে ভাঙনে মাত্র ২৩টি টিকে আছে। নানান জীববৈচিত্র গাছ-গাছালি, পাখ-পাখালি ভরা সুন্দরী মাজুলিকে ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের মর্যাদা দিতে চলেছে। অথচ ভয়ঙ্কর ভূমিক্ষয় ও ঘন ঘন বন্যা-সহ প্রাকৃতিক কারণে আজ ধ্বংসের পথে মাজুলি দ্বীপ। সঞ্জীব রাহা। কৃষ্ণনগর, নদিয়া
টাঙ্গনের বুক থেকে হারিয়েছে কাশ
নেই কোনও রাখালের বাঁশির সুর। গোধূলি বিকেলে গরু-মোষ-ছাগল নিয়ে আশপাশের গ্রামের ছেলেমেয়েদের প্রাণচঞ্চল কর্মব্যস্ততা হারিয়ে গিয়েছে বহু দিন। এক দিন এখানে শরতের কাশফুলের বাহারি মেলা বসে যেত। আর রুক্ষ-শুষ্ক শীতের দিনে কুলবাগান জুড়ে ছিল ছেলেমেয়েদের দিনরাত আনাগোনা। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বংশীহারি ব্লকের জামাড় ও সিহলের মাঝখানে মোকামপুর গ্রামের টাঙ্গন নদীর তীরবর্তী এই কাশবন আর কুলবন আজ আর নেই। কিছু মাটি চোরের সক্রিয়তা ও প্রশাসনের উদাসীনতায় এই প্রাকৃতিক উদ্যান আজ তার অস্তিত্বের অন্তিম পর্যায়ে। উত্তর-দক্ষিণে লম্বা এই কাশবন কম করেও পঞ্চাশ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত ছিল। কিন্তু এখন এক একর জমিতেও কাশবন নেই। আসলে জমিই নেই। জমি কেটে গভীর ও প্রশস্ত এক খাল কাটা হয়েছে। যেখানে হয়তো কোনও দিনই কাশ বা কুলগাছের জীবাশ্ম খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হবে। টাঙ্গনের বুক চিরে মাটি খোঁড়া হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
অধিকাংশ মাটি নিয়ে যাওয়া হয় নিকটবর্তী ইটভাটায়। কিছু দালাল এই মাটি চুরিতে ইটভাটার মালিকদের সহায়। মাটি কাটতে কাটতে টাঙ্গন নদী, মহীপাল-বুনিয়াদপুর রোডের কাছে চলে এসেছে। বর্ষাকালে নদীর জল রাস্তায় চলে আসে। বাঁধ বলতে পিচ ঢালা রাস্তাটি। অন্য দিকে রাস্তার পূর্ব দিকেও কিছু দিন আগে মাটি কাটা হচ্ছিল। এ ভাবে চলতে থাকলে নদী কিন্তু রাস্তার অস্তিত্ব ধ্বংস করে অন্য খাতে বইতে শুরু করবে। নদী ও রাস্তার এ রকম চরম পরিস্থিতিতেও প্রশাসনের হেলদোল নেই। স্থানীয় কিছু পরিবেশপ্রেমী যুবক বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট ভূমি সংস্কার দফতরের দ্বারস্থ হয়েছিল। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। এ বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। একটি নীরব নদী ও একটি সদাচঞ্চল রাস্তার স্বার্থে। বিপ্লবকুমার রায়। মালিগাঁও, দক্ষিণ দিনাজপুর
—নিজস্ব চিত্র
ছবিতে বন্যপ্রাণ
পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে ইতিমধ্যেই পস্তাচ্ছি আমরা। বিশ্ব উষ্ণায়নের ফল
হাতেনাতে পেয়েও টনক নড়ে
ক’জনের?
ব্যাতিক্রম অবশ্য আছে। আর সেই ব্যাতিক্রমী
মানুষদের প্রচেষ্টাকে কুর্নিশ করি আমরা। তাঁদের দলবদ্ধ অথবা
ব্যক্তিগত
উদ্যোগকে স্বাগত
জানিয়ে পাঠক সমক্ষে নিয়ে আসার পরিকল্পনার শরিক হতে চাইলে আমাদের জানান নীচের ঠিকানায় সংবাদের হাওয়াবদল
হাওয়াবদল আনন্দবাজার পত্রিকা, ইন্টারনেট সংস্করণ
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট
কলকাতা ৭০০০০১ ই-মেল করুনhaoabadal@abp.inঅথবাhaoabadal@gmail.com
Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.