|
||||
ইতিহাসের আখরে অপরূপ গ্রিস | ||||
সুভাষ সরকার | ||||
গ্রিসের রাজধানী আথেন্সে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আমন্ত্রণ পেতেই আনন্দে লাফিয়ে উঠলাম। মনের পর্দায় ভাসতে থাকল আলেকজান্ডার থেকে অলিম্পিক। যথা সময়ে টিকিট কেটে রওনা দিলাম। সঙ্গে আমার স্ত্রী-ও। আকাশ থেকে ভূমধ্যসাগরের নীল জল আর তার কোলে ছবির মতো আথেন্স শহর দেখেই মন দুলে উঠল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর— পর্বতময় এবং দ্বীপময় দেশ গ্রিস। বিমানবন্দর থেকে ট্যাক্সি করে পৌঁছলাম গ্রিসের ন্যাশনাল মিউজিয়ামের খুব কাছেই, আমাদের হোটেলে। এখান থেকে বাস, ট্রলি-বাস, মেট্রো সবই হাঁটা পথ। | ||||
|
||||
প্রথম দিন বেলা বাড়ার আগেই সকাল সকাল বেরিয়ে পড়লাম পৃথিবী বিখ্যাত ও গ্রিক স্থাপত্যের ‘চরম নিদর্শন’ পার্থেনন দেখতে। আমাদের তাজমহলের মতোই বিখ্যাত পার্থেনন। ইউনেস্কো পার্থেননকে ‘ওয়ার্লড হেরিটেজ সাইট’ হিসাবে ঘোষণা করেছে। আথেন্স শহরের মাঝখানে অ্যাক্রোপোলিস পাহাড়ের উপর অবস্থিত এই পার্থেনন আসলে একটি প্রাচীন মন্দির। বেশ খানিকটা পাহাড়ে চড়ে যা দেখলাম,
তাতে মন ভরে গেল। ‘ডরিক’ শৈলীতে তৈরি ৩১ মিটার চওড়া, ৭০ মিটার লম্বা এবং ২০ মিটার উঁচু এই বিশাল মন্দির পুরোটাই মার্বেলের। ৪৬টি বিশাল (প্রতিটি ২ মিটার মোটা) স্তম্ভের উপরে ছিল ছাদ, যা বর্তমানে নেই। মন্দিরের মাঝখানে ছিল হাতির দাঁত, মূল্যবান কাঠ এবং সোনা দিয়ে গড়া ১২ মিটার উঁচু এথিনা দেবীর মূর্তি। সে মূর্তিও এখন নেই। এথিনার নামেই এই শহরের নাম আথেন্স। এথিনা ছিলেন বিদ্যা, বুদ্ধি এবং আধ্যাত্মিকতার দেবী, তবে প্রয়োজনে যুদ্ধও করতেন সমান দক্ষতায়। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে নির্মিত হয় এই পার্থেনন। ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে গ্রিস বিভিন্ন বিদেশি রাজ্যের অধীনে ছিল। তাই পার্থেনন কখনও গির্জা, কখনও মসজিদ হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। গ্রিস যখন তুরস্কের অধীনে ছিল, তখন তুর্কি সেনারা পার্থেননকে দুর্গ হিসাবে ব্যবহার করে। ১৬৮৭ সালে যুদ্ধের সময় তাদের বারুদের গুদামে আগুন লেগে বিস্ফোরণ হয়। ফলে পার্থেননের অনেকটা অংশ ধ্বংস হয়ে যায়। ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে তুরস্কের অটোমান সাম্রাজ্যের শাসকরা (তখনও তারা গ্রিসের উপর আধিপত্য করত) পার্থেননের অনেক ভাস্কর্য ও মূর্তি ইংরেজ রাজদূত লর্ড এলগিনকে বিক্রি করে দেয়। লর্ড এলগিন এগুলি জাহাজে করে ইংল্যান্ডে নিয়ে যান। ব্রিটিশ সরকার তাঁর থেকে সেই সব ভাস্কর্য কিনে পরে তা ব্রিটিশ মিউজিয়ামে রেখে দেয়। তখন থেকে এগুলি ব্রিটিশ মিউজিয়ামেই আছে এবং ‘এলগিন মার্বেলস’ নামে বিখ্যাত। গ্রিক সরকার অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও সেগুলি আজও ফেরত পায়নি। সেগুলো কেমন দেখতে ছিল তা বোঝানোর জন্য কিছু কিছু মূর্তির নকল বানিয়ে বসানো হয়েছে— যেমন পার্থেননের প্রবেশদ্বার ‘প্রপিলিয়া’র একাংশে নারী মূর্তির আকারের স্তম্ভগুলি। |
||||
হেরোডিয়ন থিয়েটার |
||||
পার্থেনন দেখে পাহাড় থেকে নামবার সময় চোখে পড়ে দু’টি প্রাচীন থিয়েটার— ডাইওনিসাস ও হেরোডিয়ন। ২৪০০ বছরের পুরনো ডাইওনিসাস থিয়েটারের বিশাল ধ্বংসাবশেষ দেখে অবাক হতে হয়। এখানে ১৬ হাজার দর্শকাসন আছে। প্রাচীন গ্রিসে নাটকের খুব চল ছিল। সে সময়ের বেশির ভাগ গ্রিক নাটকই ছিল বিয়োগাত্মক। ইউরিপিডিস, সফোক্লিস, আরিস্টোফেনিস প্রভূতরা ছিলেন গ্রিসের বিখ্যাত নাট্যকার। ১৮০০ বছরের পুরনো ‘আউটডোর থিয়েটার’ হেরোডিয়নে ১২০০ দর্শকাসন আছে। একে মেরামত করে প্রতি বছর গ্রীষ্মকালে অনেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আমাদের অবশ্য সে সব দেখার সুযোগ হল না, কারণ তখনও গ্রিসে গ্রীষ্ম আসতে দু’মাস দেরি। অ্যাক্রোপোলিস পাহাড়ের পাদদেশে নবনির্মিত অ্যাক্রোপোলিস মিউজিয়াম একটি বড় আকর্ষণ। আধুনিক শৈলীতে কাচ ও স্টিলে নির্মিত এই মিউজিয়ামের বিভিন্ন তলায় গ্রিক সভ্যতার বিভিন্ন সময়ের মূর্তি, ভাস্কর্য, দেওয়ালে খোদাই করা শিল্প (ফ্রিজ) ইত্যাদি সাজানো হয়েছে খুবই রুচিসম্মত ভাবে। গ্রিক সভ্যতার অনেক জিনিস পৃথিবীর অন্যান্য মিউজিয়ামেও রাখা আছে (যেমন ব্রিটিশ মিউজিয়াম বা ল্যুভ্রে), তাদের অনেক প্লাস্টার প্রতিলিপিও রাখা হয়েছে এখানে। ভাল করে দেখতে গেলে বেশ কয়েক ঘণ্টা সময় লাগে। গ্রিসকে পাশ্চাত্য সভ্যতার জন্মভূমি বলে মনে করা হয়। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে গণতন্ত্রের জন্ম আথেন্সেই। জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই রাজ্য চালাতেন। নির্বাচনে যাঁরা অংশ নিতেন না, শাস্তি স্বরূপ তাদের মুখে লাল রং মাখিয়ে দেওয়া হত! এই যুগে পর পর অনেক দার্শনিক ও চিন্তাবিদ জন্মেছিলেন গ্রিসে। তাদের মধ্যে সক্রেটিস, প্লেটো এবং অ্যারিস্টটলের নাম উল্লেখযোগ্য— যাঁরা রাজনীতি ও দর্শনে পাশ্চাত্য সভ্যতার উপর গভীর ছাপ রেখে গেছেন। প্লেটোর লেখা বই ‘রিপাবলিক’ এখনও শ্রদ্ধার সঙ্গে সারা পৃথিবী জুড়ে পড়া হয়। সন্ধেবেলায় গেলাম একটি গ্রিক ‘ট্যাভার্নে’। এখানে রাতের খাওয়াদাওয়ার সঙ্গে মনোরঞ্জনের জন্য দেশীয় নাচগান হয়। শুরু হল ‘ওপা’— গ্রিসের প্রাচীন সঙ্গীত শৈলী। ধীরে ধীরে দ্রুত তালের গান শুরু হল। সারিবদ্ধ বা গোল হয়ে পাশের ব্যক্তির কাঁধে হাত রেখে সমবেত নাচ ‘সিরটাকি’ খুবই জনপ্রিয় (‘জোর্বা দি গ্রিক’ চলচ্চিত্রের জন্য আরও বেশি বিখ্যাত)। গ্রিক পুরুষ ও মহিলারা সাধারণ ভাবে সুদর্শন, খড়্গনাসা ও কালো চুলের অধিকারি। গ্রিক সঙ্গীতের প্রধান বাদ্যযন্ত্রের নাম ‘বুজুকি’, যা খানিকটা ম্যান্ডোলিনের মতো দেখতে, তিন বা চার তারের যন্ত্র, তবে এর স্বর অনেকটা গিটারের মতো। বুজুকি-র তালে তালে দর্শকদের করতালিতে জমে উঠল হলঘর। অনুষ্ঠান শেষে সেই সুরে ও তালে মাতোয়ারা হয়ে হোটেলে ফিরলাম প্রায় মাঝরাতে, শহরের রাস্তাঘাট তখনও কিন্তু বেশ জমজমাট! পরের দিন বেরোলাম আথেন্স শহর দেখতে। প্রথমেই শহরের মাঝখানের অলিম্পিক স্টেডিয়াম। আধুনিক অলিম্পিক গেমসের জন্মস্থান কিন্তু গ্রিস। ১৮৯৬ সালে প্রথম আধুনিক অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত হয় আথেন্সের ‘পান-এথেনাইকো’ স্টেডিয়ামে, মাত্র ১৪ টি দেশকে নিয়ে। ১০৮ বছর পর আবার অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হয় গ্রিসে, ২০০৪ সালে। সে বার যোগ দিয়েছিল প্রায় ২০০টি দেশ। সেই সময় এই স্টেডিয়ামের প্রভূত উন্নয়ন করা হয়। স্টেডিয়াম থেকে ২৬ মাইল দূরে অবস্থিত ম্যারাথন শহর— ম্যারাথন দৌড় এই শহর থেকে শুরু হয়ে শেষ হয় স্টেডিয়ামে। পর্যটকদের আকর্ষণকেন্দ্র এই স্টেডিয়ামে আজকাল জাতীয় ফুটবল খেলাও হয়। এর পর গেলাম আথেন্স এবং গ্রিসের রাজনৈতিক কেন্দ্রস্থল ‘সিন্তাগ্মা’ (সংবিধান) স্কোয়্যারে। এর সামনেই পার্লামেন্ট ভবন ও জাতীয় উদ্যান। আথেন্সে কিছু না কিছু মিছিল রোজ লেগেই থাকে, আর সেগুলো শেষ হয় সিন্তাগ্মা স্কোয়্যারে। একটু দূরেই অজ্ঞাতনামা সৈনিকদের স্মৃতি বেদি। তার সামনে প্রাচীন আর বর্ণাঢ্য পোশাকে সজ্জিত ‘প্রেসিডেন্সিয়াল’ সৈনিকদের কঠোর প্রহরা। তাঁদের আনুষ্ঠানিক চলার ধরন দেখবার মতো। এখান থেকে আধ মাইল দূরে আথেন্সের বাণিজ্যিক কেন্দ্র ওমোনিয়া স্কোয়্যার (গ্রিক ভাষায় ওমোনিয়া শব্দের অর্থ হল একতা)— বড় বড় দোকানপাট, জাঁকজমক আর ভিড়ে ভরা। সন্ধের পরে ওমোনিয়া যেন জেগে ওঠে আমোদপ্রিয় মানুষের ভিড়ে। পর্যটন গ্রিসের অর্থনীতির একটি বিশেষ অংশ। নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া এবং তুলনামূলকভাবে কম খরচের জন্য সারা পৃথিবী থেকে বছরে এক কোটির উপর পর্যটক আসেন এখানে। গ্রিসের জনসংখ্যার (মাত্র এক কোটি তেরো লক্ষ) এক তৃতীয়াংশের উপর বাস করেন আথেন্সে এবং তাঁদের বেশির ভাগই থাকেন অ্যাপার্টমেন্টে। শহরের প্রতি বাড়ির বারান্দায় ফুল, লতাপাতার বাহার! বিকেলের দিকে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছলাম অ্যাক্রোপোলিস পাহাড়ের নীচে পুরনো বাজার এলাকা প্লাকা-য়। সরু রাস্তা, গলির মধ্যে গলি, তার মধ্যে অসংখ্য দোকান, ভিড়ে গিজগিজ করছে। পর্যটকদের জন্য সব রকমের জিনিস এখানে মজুদ— গ্রিসের বিখ্যাত এম্ব্রয়ডারি করা কাপড়জামা থেকে স্যুভেনির (বিশেষ করে পার্থেনন-এর) সবই হাজির। পাওয়া যায় সোনার গয়নাও। গ্রিক গয়নার কারুকাজ অতি সুন্দর এবং দামও তুলনায় সস্তা। বাজার সেরে রাতের খাবারের জন্য ঢুকলাম প্লাকার একটি রেস্তোরাঁয়। বাইরে বসে খাওয়ার ব্যবস্থা আছে এখানে। ভারতীয় খাবারের সঙ্গে কিছু কিছু সাদৃশ্য আছে— যেমন রায়তার মতো জাজিকি (tzatziki), বেগুনের ভর্তার মতো মেলিটজানোসালাটা (melitzanosalata), পালং শাকের পকোড়ার মতো স্পেনেকোপিতে (spanakopita) ইত্যাদি। প্রধানত ছাগলের দুধ থেকে তৈরি ফেটা চিজ গ্রিসে খুবই বিখ্যাত। বিফ ছাড়াও ছাগল ও ভেড়ার মাংস খেতে ভালবাসেন এখানকার মানুষ। মুসাকা (moussaka) ও পাইডাকিয়া (paidakia) খুব জনপ্রিয় মেইন কোর্স। শেষ পাতে খাঁটি মধু, মেওয়া ও ফিলো দিয়ে তৈরি বাকলাভা (baklava) খেয়ে পেট-মন ভরিয়ে হোটেলে ফিরলাম। আমার স্ত্রী মিষ্টি খেতে ভালবাসেন, তাই দ্বিতীয় প্লেটের জন্য অনুরোধ করা হল। |
||||
|
||||
ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ১৪০০ দ্বীপ আছে গ্রিসে। তার অনেকগুলোতই কোনও জনবসতি নেই। বেশ কিছু দ্বীপ পর্যটকদের ভিড়ে জমজমাট। তাদের মধ্যে মিকনস এবং রোডস দ্বীপের সমুদ্রতট খুব বিখ্যাত এবং সেখানে নাকি আমোদপ্রমোদের ব্যবস্থাও বেশ চমকদার। তবে সময়ের অভাবে আমাদের যাওয়া হল না সেখানে। কাছাকাছির কোনও দ্বীপে যাব বলে ঠিক করলাম। পর দিন বাসে চড়ে রওনা দিলাম গ্রিসের বৃহত্তম বন্দর পিরিয়াস-এর দিকে, উদ্দেশ্য এগিনা দ্বীপ দেখতে যাওয়া। গোটা আথেন্স
শহরের রাস্তার ধারে লাগানো হয়েছে অসংখ্য কমলালেবুর (বিশেষ ধরনের) গাছ। ফলগুলো অখাদ্য, কিন্তু এই বসন্তকালে গাছে ফুটে থাকা দারুণ সুগন্ধী ফুলগুলো গোটা শহরকে যেন মাতিয়ে রেখেছে। প্রাচীন কাল থেকেই গ্রিকরা সমুদ্র-পটু। এখনও তারা নৌ-বাণিজ্যে এগিয়ে। গ্রিসের ওনাসিস (যিনি এক সময় জ্যাকেলিন কেনেডিকে বিয়ে করেন) এবং নিয়ারকোস জাহাজ দুনিয়ায় দুই কিংবদন্তী নাম। পিরিয়াস বন্দরে পৌঁছে এগিনার জন্য টিকিট কাটলাম, বেশি দাম দিয়ে দ্রুতগামী ফেরি ‘ফ্লাইং ডলফিন’-এ। ফেরির ভিতরটা বাতানুকুল ও সুন্দর বসার জায়গা। বন্দর থেকে বেরিয়ে সমুদ্রে পড়তেই গতি বেড়ে গেল, জলকে প্রায় না ছুঁয়েই যেন উড়ে চললাম আমরা। অন্যান্য জাহাজ ও ফেরিকে পিছনে ফেলে চল্লিশ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম এগিনার বন্দরে। ফেরি থেকে নেমে ফেরিওয়ালাদের ভিড় এড়িয়ে বন্দরের বাইরে বেরোতেই চোখে পড়ল অনেক কাজুবাদামের দোকান। দাম মোটেই সস্তা নয়। জলের বোতল এবং কিছু খাবার কিনে দ্বীপটা ঘুরে দেখার জন্য বাস ধরলাম। এই বাস আমাদের নিয়ে যাবে দ্বীপের অন্য প্রান্ত মেরিনা বিচে। পথের দু’ধারে ইউক্যালিপটাস গাছের বন, নাম না-জানা অসংখ্য ফুলে ভরা গাছ, আর পাহাড়ের ঢালে ছবির মতো সারি সারি বাড়ি। ধীরে ধীরে পাহাড়ি রাস্তা অতিক্রম করে শহরে ঢুকল আমাদের বাস। |
||||
এগিনা দ্বীপ বন্দর |
||||
সৈকতে পৌঁছে দেখি প্রচুর ভিড়— কেউ রোদ পোহাচ্ছে, কেউ বা সাঁতার কাটছে। ভূমধ্যসাগরের জলের রং অপরূপ নীল (প্রায় কোবাল্ট ব্লু)। এই ধরনের নীল জল ভারতের আশেপাশের সমুদ্রে দেখা যায় না। জলে অনেক নৌকো চলছে, পালতোলার পাশাপাশি স্পিডবোটও। বিচের উপরেই একটি রেস্তোরাঁয় বসে সমুদ্র দেখতে দেখতে দুপুরের খাওয়া সারলাম। আমার স্ত্রী প্রচুর ঝিনুক কুড়ালেন। আশেপাশে অনেক দোকান স্যুভেনির দিয়ে সাজানো। একটা দোকানে বাদাম চিক-এর মতো কাজু বাদামের ‘ব্রিটল’ বিক্রি হচ্ছে দেখলাম। সারা দিন ডানায় রোদ লাগিয়ে নীড়ে ফেরার সময় হল। বিকেল বেলায় একটা ধীর গতির বড় জাহাজে চাপলাম আথেন্সে ফেরার জন্য। আমাদের সঙ্গে সঙ্গে উড়ে চলল এক ঝাঁক গাঙচিলও। জাহাজের উপরের ডেক থেকে দেখলাম ভূমধ্যসাগরের উপর অপূর্ব সূর্যাস্ত। সূর্য যত ঢলতে থাকে, সমুদ্রের জলের রংও নীল থেকে গাঢ় নীল এবং শেষে কালো হতে লাগল। এক সময় রক্তাভ সোনার বরণ সূর্য দিগন্তে ডুব দিল। সন্ধ্যায় আথেন্স শহরের ঝলমলে আলোকমালার প্রতিফলন জলের ঢেউয়ের উপর নাচতে আরম্ভ করল। সমুদ্রকে বিদায় জানিয়ে জাহাজ থেকে নেমে হোটেলে ফিরলাম। সমস্ত ‘ভাল’ই এক সময় শেষ হয়ে যায়— তেমন করেই আমাদের গ্রিসে থাকার মেয়াদও ফুরিয়ে এল। পর দিন গ্রিস থেকে নোঙর তুলে রওনা দিলাম রোমের দিকে— ইতালি দেখার জন্য। |
||||
|
||||
|
||||
ছবি: লেখক ও ইন্টারনেট* লেখকের আরও ভ্রমণকথা • |
||||
রোজের আনন্দবাজার • এ বারের সংখ্যা • সংবাদের হাওয়াবদল • আপনার রান্নাঘর • স্বাদবদল • চিঠি • পুরনো সংস্করণ | ||||