দিন আসে, দিন যায়, তার ফাঁকেই ইতিহাসে ঢুকে পড়ে তার চলাচলের খবর। পুরনো দিনের শহুরে খবর দিয়ে চেনা যায় এখনকার
অতি পরিচিত শহরের অতীতটাকে, তার নাগরিক জীবনযাপন থেকে খেলাধুলো, সংস্কৃতি বা কূটকচালি থেকে রাজনীতির হাল।
পঞ্চাশ বছর আগের কলকাতা শহরের গতিবিধি চিনতে ২১ ডিসেম্বর ১৯৬২ থেকে ২০ জানুয়ারি ১৯৬৩ এক মাসের কিছু বিশেষ খবর।

রবিবার, ৭ পৌষ, ১৩৬৯ (২ পৌষ, ১৮৮৪ শকাব্দ) SUNDAY, DECEMBER 23, 1962
• চিনা আক্রমণ প্রতিরোধ সভা: চিনা আক্রমণ প্রতিরোধে আজ নিম্নলিখিত স্থানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে সভার আয়োজন করা হইয়াছেঃ-

নৃশংসতার পরিচয়ঃ বমডি-লা অঞ্চলে অসামরিক লোকজনের উপর চীনারা যে পৈশাচিক অত্যাচার করিয়াছিল, বর্তমান চিত্র তাহারই প্রত্যক্ষ নিদর্শন। আমাদের অসামরিক কর্মচারিগণ বমডি-লায় ফিরিয়া গিয়া দুইজন সাধারণ মানুষের মৃতদেহ দেখিতে পান। তাহাদের হত্যা করা হইয়াছিল।
প্রকাশ স্মৃতি সঙ্ঘ ও সাহাপুর যুব সঙ্ঘ
চীনা আক্রমণের প্রতিবাদে আজ সকাল ৭টায় খিদিরপুরের বিভিন্ন পথে জাতীয় সঙ্গীত, নজরুল গীতি, অতুলপ্রসাদের গান, ডি এল রায়ের গান প্রভৃতি গাহিতে গাহিতে পথ পরিক্রমায় বিভিন্ন সঙ্গীত শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক, বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ এবং সঙ্ঘ ও সমিতিসমূহ যোগদান করিবেন।

উঃ কলিকাতা নাগরিক সম্মেলন
চীনা আক্রমণ প্রতিরোধে উত্তর কলিকাতার নাগরিকদের কর্তব্য নির্ধারণ করিয়া কার্যসূচী গ্রহণ ও তাহা রূপায়ণের উদ্দেশ্যে উত্তর কলিকাতার নাগরিকদের এক সম্মেলন আজ সকাল ৮টায় মিনার সিনেমা হলে অনুষ্ঠিত হইবে। সভাপতি মেয়র শ্রীরাজেন্দ্রনাথ মজুমদার এবং বিধানসভার অধ্যক্ষ শ্রীকেসবচন্দ্র বসু সম্মেলনের উদ্বোধন করিবেন। বক্তাঃ সর্বশ্রী হেমন্ত বসু এম-এল-এ, অধ্যাপক সমর গুহ, মন্ত্রী পূরবী মুখার্জি প্রভৃতি।

সারা ভারত ফরোয়ার্ড ব্লক (শ্যামপকুর কমিটি)
আজ বৈকাল ৫টায় জগত্ মুখার্জি পার্কে চীনা আক্রমণের প্রতিবাদে ফরোয়ার্ড ব্লক শ্যামপুকুর কমিটির উদ্যোগে জনসভা। সভাপতিঃ শ্রীকুমার দত্ত (কাউন্সিলার), বক্তাঃ সর্বশ্রী হেমন্তকুমার বসু এণ-এল-এ, অধ্যাপক নির্মল বসু, ডাঃ রবি রায়, কমল গুহ এম-এল-এ, সত্যানন্দ ভট্টাচার্য (কাউন্সিলার) প্রভৃতি।

৬২ পল্লী নাগরিক সম্মেলন
চীনা আক্রমণের বিরুদ্ধে নাগরিকদের কর্তব্য নির্ধারণ করিয়া কর্মসূচী গ্রহণ ও তাহা রূপায়ণের উদ্দেশ্যে ৬২ পল্লীর নাগরিকদের এক সভা আজ বৈকাল ৪টায় ত্রিকোন পার্কে (অগ্রগামী ব্যামাগারে) অনুষ্ঠিত হইবে।

মঙ্গলবার, ৯ পৌষ, ১৩৬৯ (৪ পৌষ, ১৮৮৪ শকাব্দ) TUESDAY, DECEMBER 25, 1962
• শুভ বড়দিন: ঢং-ঢং-ঢং—সোমবার রাত্রে ঘড়ির দুটি হাত বারোটার ঘরে এক হবার সাথে সাথে কলকাতা ও শহরতলির ছোট-বড় গীর্জাগুলিতে গুরুগম্ভীর স্বরে একটানা ঘন্টাধ্বনিতে জানিয়ে দল খৃষ্টমাস উত্সবের সূচনা, ক্রিশ্চিয়ান সমাজের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উত্সবের আমন্ত্রণ-বাণী। শুভ বড়দিন। অনেক আগে থেকেই সমবেত হয়েছিলেন আবালবৃদ্ধবনিতা খৃষ্টধর্মালম্বিগণ, অঙ্গে তাঁদের নানা রঙের সুবেশ পারিপাট্য, মনে উত্সব উচ্ছ্বাসের উন্মাদনা। গীর্জাগুলিও সুসজ্জিত। পরিবেশ ভাবগম্ভীর—মনোরম। অনুষ্ঠানের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হলো বিভিন্ন গীর্জায় প্রভু যীশুর বন্দনাগান এবং সর্বশক্তিময়ের কাছে ব্যক্তি ও ব্যষ্টি কল্যাণসাধনের প্রার্থনা। এটি ধর্মীয় দিক। খৃষ্টমাসের উত্সবের আরেক দিক খৃষ্টান অ-খৃষ্টাননির্বিশেষে মহানগরীর সকল শ্রেণীর জনগণের মনেই উচ্ছল আনন্দের ছোঁয়াচ। গত কয়েকদিন ধরেই তার পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশে খৃষ্টমাসের দিনটি বড়দিনরুপে পরিচিত এবং আকাঙ্খিতও। সেই আনন্দের অভিব্যক্তি ঘটবে বিশেষ করে আজ, মঙ্গলবার। আলীপুরের চিড়িয়াখানায়, ময়দানে, যাদুঘরে, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে আর শিবপুরে বোটানিক্যাল গার্ডেনে। শতসহস্র নরনারী, কিশোরকিশোরী ও তরুণতরুণী ছুটবেন সে সব স্থানে; কেউ বা জীবজন্তু ও প্রদর্শনী দেখতে, কেউ বা পিকনিক করতে। প্রতিবারই এমন হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটবে না। চৌরঙ্গীর অভিজাত পাড়ার বিভিন্ন দোকানে কয়েকদিন আগে থেকেই বুড়ো সান্তা-ক্লজ এবং খৃষ্টমাস কেকের আবির্ভাব ঘটেছে প্রচুর পরিমাণে। বিপনীগুলোও নানা সাজে সজ্জিত, যেন রুপসীর রুপবিন্যাসের এক একটি প্রদর্শনী। সে অঞ্চলেও সোমবার থেকেই দর্শকদের ঠাসাঠাসি, ভীড় সুরু হয়।


ভাসমান চিকিত্সালয়ঃ রাজ্যপাল পদ্মজা নাইডু শুক্রবার প্রথম ভাসমান
চিকিত্সালয়ের উদ্বোধন করেন। ভাসমান চিকিত্সালয়টি এখন কালীঘাটে
টালির নালায় রহিয়াছে। রাজ্যপালের বামে কোচবিহারের
মাহারাজা ও মহারানী রহিয়াছেন। — আনন্দ-চিত্র।


বুধবার, ১০ পৌষ, ১৩৬৯ (৫ পৌষ, ১৮৮৪ শকাব্দ) WEDNESDAY, DECEMBER 26, 1962
• দুর্দিনের বড়দিন: কাল কলকাতার বড়দিন গেল। ‘ইচ্ছা হয় হিঁদুয়ানী রাখিব না আর।’ যে বড়দিন দেখলে মনে মনে এমন বাসনাও গুঞ্জরিত হয়ে উঠত, যে বড়দিন দেখে একদিন বাঙ্গালী কবি বলে উঠেছিলেন—‘দিশীকৃষ্ণ মানিনেক ঋষিকৃষ্ণ জয়, মেরিমাতা মেরিসূত বেরি গুড বয়’, সে বড়দিন আজ আর নেই। দোকানে হোটেলে উঁকি দিলেই আজ আর কেউ হাত বাড়িয়ে এগিয়ে এসে বলে না —‘যত পার কসে খাও টেক টেক টেক’— সন্ধ্যায় তালতলা ইন্টালীপাড়ায় পা দিলেই কানে আসে না, ‘তারা রা-রা রা-রা রা-রা সুমধুর গান’ কিংবা ‘গুড় গুড় গুম গুম লাফে লাফে তাল’। বড়দিনের অবশ্যই আজ আর তত বড় গলা নেই। এখন আর চৌরঙ্গীর ঘরে ঘরে সেই গড়েরবাদ্যি বাজে না, ‘রণবেশী’ গোরার ‘মাঠে ঘাটে হাটে বাটে’ হোরা মেরে বেড়ায় না, জাহ্নবীর জলে ‘সাহেবের হুড়োহুড়ি’ দেখা যায় না। বড়দিন এখন একান্তভাবেই স্বদেশী ব্যাপার। শুধু আন্দ্রুস পিন্দ্রুস...ডিসোজা গমিস’দের নয়,— বেলগাছিয়া থেকে বেহালা কমবেশী সকলের। কেন না, সেদিনের মত ক্যালেন্ডারের তেরো আনা জুড়ে ছুটির হুকুম না থাকলেও শীতের হাওয়ায় পুরানো সেই ছুটির খবর আজও ঘরে ঘরে-ছাদে বারান্দায়, মাঠে পার্কে— রোদের নেশা প্রত্যেকের অন্তরে। তাছাড়া, সাহেবরা না থাকলেও এখনও বড়দিন আছে—কারণ এখনও রেস আছে, পিকনিক আছে, সার্কাস আছে, ভেটের পুরানো মাহাত্ম্য আছে এবং মহারানীর সহি-বিমুক্ত হলেও খেতাবের রেওয়াজ আছে। সর্বোপরি আছে সেই— ডিসেম্বর। পুরানো খাতাটা শেষ পাতা বন্ধ করতে করতে কেন জানি মানুষ মাত্রই হঠাত্ দার্শনিক হয়ে ওঠেন— কনিষ্ঠ কেরানীরও মনে হয় তিনি আর ছোট নন, বড়—প্রকাণ্ড।

বড়দিনের শুভেচ্ছা


• নগরদর্শন:
চার্ণক্য
কলকাতার মত আর কোন শহরে এত ফুটপাত শিল্পী আছে বলে আমার জানা নেই। পথে বেরোলেই আপনার নজরে পড়বে কোথাও না কোথাও একজন আধ-পাগলা লোক কাঠকয়লা আর চকখড়ি নিয়ে ফুটপাত চিত্রবিচিত্র করে চলেছে। চারিদিকে লোকজনের ভিড়, পথচারী অন্যরা একবার উঁকি মেরে পাশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে আর মাঝখানে সর্বদৃষ্টির মধ্যমণি হয়ে সেই নাম না জানা শিল্পী আপন মনে এঁকে চলেছে রাম, সীতা, হনুমান, মহাদেব। কিংবা অন্য কোন দেবদেবীর অতিকায় প্রতিকৃতি। সাদা আর কালো রঙের সঙ্গে কখনও কখনও মেশে হলুদের গুঁড়ো, গোলাপী খড়ি। এই শিল্পীদের চেহারাও দেখবার মত। প্রায়ই খালি গা, আধোবাস টুটাফাটা এবং মাথার চুল উসকোখুসকো। দেখে মনে হবে পাগল, এবং তাদের দু’একজন হয়ত তাই। কিন্তু এমন কয়েকজনের সঙ্গে আমি সাক্ষাত্ করেছি, যাদের কিছুতেই খ্যাপা বলা চলে না। বরং দেখা গেছে, কথায় বার্তায় বেশ বাহাদুর। হরিশরামের সঙ্গে আমার আলাপ হয়েছিল ফ্রি স্কুল স্ট্রীটের ফুটপাতে। সেদিন লোকজনের ভিড় বেশী নেই, গন্ধমাদন পাহাড় হাতে হনুমানের এক ছ-ফুটী ছবির পাশে সে তখন বিড়ি ফুঁকছিল। বললুম ‘‘কে শিখিয়েছে তোমাকে ছবি আঁকা?’’
হরিরাম কোন জবাব দিল না।মুখের আধপোড়া বিড়িটা কাছের ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলে আমার দিকে একদৃষ্টে চেয়ে রইল। আমি নাম জানতে চাইলুম।
নাম বলল। এবং আরও বলল, তার বাড়ি উত্তরপ্রদেশের বালিয়া জেলায়। কলকাতায় আছে আজ ‘‘চওবিস বরষ’’। এখন তার বয়স চল্লিশ।
‘‘কিন্তু এমন সুন্দর ছবি আঁকার হাত হল কোত্থেকে?’’
হরিশরাম একগাল হেসে বললে, ‘‘কারও কাছেই শিখিনি, না জানি কেমন করে হাতে এসে গেছে।’’
‘‘পেট চলে কি করে?’’
আমার প্রশ্নের উত্তরে বললে—
‘‘দু’চারজন ছবির ওপর পয়সা ছুঁড়ে দিয়ে চলে যায়। কোনদিন খাবার জোটে, কোনদিন জোটে না।’’
‘‘কাজ করলেই তো পার?’’
হরিশরাম এবারে শুধু বিজ্ঞের মত হাসি হাসল। কোন জবাব না দিয়ে আর একটা বিড়ি ধরাল। খানিক গুম মেরে বসে বললে— ‘‘বাবুজী, এইখানেই তো মুশকিল, কাজ যদি করতেই পারব তাহলে এমন দিওয়ানা হয়ে বসে আছি কেন? কাজ তো আগে করতামই, কিন্তু কোলের বাচ্চা নিয়ে বউটা যে মরে গেল হঠাত্ই।’’
হরিশরাম কাঠকয়লা নিয়ে হনুমানের পাশেই ছবি আঁকতে আবার বে গেল। মুহূর্তের মধ্যে চোখের সামনে ভেসে উঠল রাম সীতা।
বিদায় নেবার আগে মনে হল, এই সীতার সঙ্গে বালিয়া জেলার কোন একটি গাঁয়ের কোন মেয়ের মুখের আদল হয়ত থাকতে পারে।

শুক্রবার, ১২ পৌষ, ১৩৬৯ (৭ পৌষ, ১৮৮৪ শকাব্দ) FRIDAY, DECEMBER 28, 1962
• চীনা আক্রমণের নিন্দায় যাদবপুর অঞ্চলে বিরাট শোভাযাত্রা: গত ২৩শে ডিসেম্বর সকালে যাদবপুর-টালীগঞ্জ-গড়িয়া আন্তবিদ্যালয় চীনা আক্রমণ প্রতিরোধ কমিটির আহ্বানে অন্যূন পঞ্চাশটি স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও পরিচালক সমিতির সভ্যবৃন্দ নিজ নিজ বিদ্যালয়ের ফেস্টুন-সহ কমিউনিস্ট চীনের ভারত আক্রমণের প্রতিবাদে বিজয়গড় ময়দানে সমবেত হইয়া এক বিশাল শোভাযাত্রা সহকারে বিজয়গড় মেইন রোড, যাদবপুর সেন্ট্রাল রোড, রাজা সুবোধ মল্লিক রোড ধরিয়া অগ্রসর হয়। দেশাত্মবোধক সঙ্গীত-সহ ‘বন্দেমাতরম’, ‘ভারত মাতা কি জয়’, সাম্রাজ্যবাদী কম্যুনিস্ট চীন ভারত ছাড়, দেশদ্রোহী ভারত ছাড় প্রভৃতি ধ্বনি সহকারে শোভাযাত্রীরা বিভিন্ন স্থান পরিভরমণ করেন। প্রায় বিশ সহস্র ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা এই শোভাযাত্রায় যোগদান করেন। বিভিন্ন রাস্তা পরিক্রমা করিয়া শোভাযাত্রাটি রেড রোড ধরিয়া বিজয়গড় শিক্ষা নিকেতনের সম্মুখস্থ ময়দানে জমায়েত হয়। বিজয়গড় বালিকা বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষয়িত্রী শ্রীমতী ফুলরাণী গুহ সভানেত্রীস্থ করেন। সভার প্রারম্ভে নেফা ও লাদাক রণাঙ্গনে নিহত ভারতীয় জওয়ানদের আত্মার উদ্দেশে নিবেদন করিবার জন্য দুই মিনিট মীরবতা পালন করা হয়। সভার সাম্রাজ্যবাদী ও সম্প্রসারণকামী কম্যুনিস্ট চীনের ভারত আক্রমণের প্রতিবাদে, দেশদ্রোহী কমিউনিস্টদের ও রবীন্দ্র সরোবরে দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী শিক্ষকদের উপর চীন দরদীদের গুন্ডামির তীব্র নিন্দা করিয়া সভানেত্রী শ্রীমতী গুহ, বিমল দে, মণি পাল ও তুষার কাঞ্জিলাল বক্তৃতা করেন। সভার এই মর্মে তিনটি প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের পর সভা শেষ হয়।


— আচ্ছা এখানে ভর্তি হতে
হলে কি করতে হবে?

বমডিলা হইতে চীনারা একটি অস্ত্রোপচারের
টেবিল লইয়া গিয়াছে। —সংবাদ

শনিবার, ১৩ পৌষ, ১৩৬৯ (৮ পৌষ, ১৮৮৪ শকাব্দ) SATURDAY, DECEMBER 29, 1962
• ধাপায় বেআইনীভাবে নির্মিত ঘরবাড়ী কর্পোরেশনের সভায় ভাঙ্গিয়া ফেলার সিদ্ধান্ত: ধাপায় কর্পোরেশনের জমি হইতে প্রায় তিনশত জবরদখলকারীকে অপসারণ করিবার এবং বে-আইনীভাবে নির্মিত ঘরবাড়ী ভাঙ্গিয়া ফেলিবার জন্য শুক্রবার কর্পোরেশনের সভায় এক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিরোধী দলের সদস্যগণ ঐ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করিয়া সভাকক্ষ ত্যাগ করেন। তাঁহাদের বক্তব্য এইরূপঃ ধাপায় প্রায় তিনশত ভূমিহীন কৃষক পরিবার গত কয়েক বছর ধরিয়া কর্পোরেশনের ছয়শত বিঘা জমি ভোগ করিতেছে সভা। কিন্তু ঐ সকল কৃষক পরিবার ন্যায়সঙ্গত হারে উক্ত জমির ইজারা লইতেও প্রস্তুত আছে। এবং জমি ইজারা দিলে কর্পোরেশনের রাজস্বও বৃদ্ধি হইবে। সুতরাং ঐ তিনশত কৃষক পরিবারকে বাস্তুচ্যুত না করিয়া উক্ত জমি তাহাদের নিকট ইজারা দেওয়াই বাঞ্ছনীয়। কংগ্রেস পক্ষ হইতে অল্ডারম্যান শ্রীবঙ্কিমচন্দ্র দত্ত এইরূপ মন্তব্য করেন যে, ময়লা ফেলিবার জায়গায় অভাবের দরুন কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ ধাপায় ঐ ছয়শত বিঘা জমি ব্যবহার করিতে বাধা হইতেছেন। কর্পোরেশনের অধীনে এতবড় ভূখণ্ড অন্য কোথাও খালি পড়িয়া নাই। এই অবস্থায ঐ সকল জবরদখলকারী উদ্বাস্তুর অপসারণ করা অপরিহার্য হইয়া পড়িয়াছে। নাগরিক স্বার্থ যাহাতে ক্ষুন্ন না হয় সেইজন্যই এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হইয়াছে।

রবিবার, ১৪ পৌষ, ১৩৬৯ (৯ পৌষ, ১৮৮৪ শকাব্দ) SUNDAY, DECEMBER 30, 1962
• কমলালেবু নাগালের বাহিরে: শীতের মরসুমী ফল কমলীলেবু। শীত এখন মাঝপথে। কলিকাতার শীত বড়জোর আর এক মাস আছে। তারপর বিদায়ের পালা; সেইসঙ্গে কমলালেবুর মরসুমও শেষ হইয়া যাইবে। কিন্তু শহরে কমলালেবু এখনও নাগালের বাহিরে। একটু ভাল লেবু একজোড়ার দাম কমপক্ষে চার আনা বা পঁচিশ নয়া পয়সা। অর্থাত্ টাকায় আটটা। মধুমিষ্টি লেবুর দর আরও বেশী। এবার আসাম হইতে লেবু একরকম আসিতেছে না বলা চলে। নাগপুর এবং দার্জিলিং জেলা হইতে প্রতিদিন বার তের ওয়াগন লেবু শহরে পৌঁছিতেছে মাত্র। ওয়াগন চলাচলে দেরী হওয়ায় উহার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ নাকি পচিয়া যাইতেছে। এ সম্পর্কে বৃহস্পতিবার ফল বিক্রেতাদের এক মুখপাত্র বলেন, এখন দার্জিলিং ও সিকিমের লেবু বেশী আসিবার সময়। শিলিগুড়ির গায়ে ব্রডগেজ লাইনে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন হইতে দুই—তিন দিনের মধ্যে কলিকাতায় লেবু আসিবার কথা। কিন্তু সে জায়গায় চার—পাঁচ দিনও লাগিয়া যাইতেছে। ফলে পথেই বহু লেবু পচিয়া যাইতেছে। দার্জিলিংয়ের লেবু তিন—চার দিনের মধ্যেই পচিতে শুরু করে। অন্যদিকে নাগপুর হইতেও লেবু আমদানির ব্যাপারে অসুবিধার সৃষ্টি হইয়াছে বলিয়াও তিনি জানান। আগে পাসেঞ্জার ট্রেন সহিত লেবুর ওয়াগন আসিত। কিন্তু এখন পার্সেলে উহা পাঠান হয়। পার্সেল ট্রেনটি সোজা সম্বলপুর পর্যন্ত আসে। তারপর লেবুর ওয়াগন পুনরায় অন্য কোন ট্রেনের সহিত জুড়িয়া দেওয়া হয়। ফলে অন্তত একদিন বেশী সময় লাগিয়া যায় বলিয়া তিনি অভিযোগ করেন।

• রবিবার ইডেন উদ্যানে চিত্র তারকাদের প্রদর্শনী ক্রিকেট: জাতীয় প্রতিরক্ষা ভাণ্ডারে অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে স্পোর্টস্ কো—অর্ডিনেশন কমিটি ও চিত্রতারকাদের আয়োজিত প্রদর্শনী খেলা আজ রবিবার বেলা ১০টা ১৫ মিনিটের সময় ইডেন উদ্যানে হইতেছে। খেলাটিতে শ্রীহেমন্ত মুখার্জির দলের সহিত কানন ভট্টাচার্যের দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিবে। অতীত দিনের খ্যাতকীর্তি ক্রিকেট খেলোয়াড় ও চিত্রতারকাদের সংমিশ্রণে গঠিত দুইটি দলের খেলাই খেলাই এই প্রদর্শনী ক্রিকেটের একমাত্র আকর্ষণ নহে। খেলোয়াড়দের সহিত পুরুষ ও মহিলা চিত্রতারকাদের মার্চপাস্ট পুলিশ ব্যান্ডের ঐকতান, প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পীদের দেশাত্মবোধক সঙ্গীত, ভি বালসারর অর্কেস্ট্রা অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ। এই অনুষ্ঠানের জন্যই গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার ৪খানি নুতন সঙ্গীত রচনা করিয়াছেন এবং সুরকার হেমন্ত মুখার্জি তাহাতে সুর সংযোজনা করিয়াছেন। খেলার বিরতির ফাঁকে ফাঁকে হেমন্ত মুখার্জির পরিচালনায় এই সঙ্গীত পরিবেশন করা হইবে। রাজ্যপাল পদ্মজা নাইডু মধ্যাহ্নভোজের সময় প্রতিরক্ষা সার্টিফিকেট ও বন্ড বিক্রয় করিবেন। মহিলা চিত্রতারকারা প্রতিরক্ষার জন্য অর্থ সংগ্রহ করিবেন। ২০’টাকা, ৫’টাকা, ৩’টাকা, ২’টাকা ও আট আনার টিকিট প্রতি গেটে পাওয়া যাইবে।
ইডেনে নামছে মহিলা ব্রিগেড। সামনের
সারিতে অনুভা গুপ্ত ও মঞ্জু দে।
হেমন্ত মুখার্জি একাদশের হয়ে ফিল্ডিংয়ে নামছেন
তরুণ কুমার, অসিতবরণ প্রমুখ।
যাহাদের মধ্য হইতে দুইটি দল গঠিত হইবে তাহাদের নাম দেওয়া হইলঃ—
শ্রীহেমন্ত মুখার্জির দল— সত্যজিত্ রায়(অধিনায়ক), ডি দে (সহ—অধিনায়ক),মানকড়, মুস্তাক আলি, কমল ভট্টাচার্য, পি সেন, অনিল চ্যাটার্জি, গোপাল সান্যাল, জহর রায়, বসন্ত চৌধুরী, জে ডি ইরানী, সুধীর মুখার্জি, বিশ্বজিত্ চ্যাটার্জি, নির্মল কুমার, অজয় কর, তরুণ কুমার, অসিত সেন, অজিত চ্যাটার্জি, শ্যামল মিত্র, অসিতবরণ ও সৌমেন্দ্র রায়।
শ্রীমতি কানন ভট্টাচার্যের দল—
জহর গাঙ্গুলী(অধিনায়ক), নির্মল চ্যাটার্জি (সহ—অধিনায়ক), অমরনাথ, জিতেন ব্যানার্জি, এ দেব, পি চ্যাটার্জি, দিলীপ মুখার্জি, ধীরজ দাস, প্রভাত মুখার্জি, ভানু ব্যানার্জি, সৌমিত্র চ্যাটার্জি, কালী ব্যানার্জি, বিকাশ রায়, অসীম কুমার, সত্যেন চ্যাটার্জি, অর্ধেন্দু মুখার্জি, মানবেন্দ্র মুখার্জি, উত্তম কুমার, অনুপ কুমার, অজয় বিশ্বাস, ইন্দার সেন ও সুজিত সরকার।
আম্পায়ার্স— পাহাড়ী সান্যাল, মধু বসু, হেমচন্দ্র ও এনএল জালান।

সোমবার, ১৫ পৌষ, ১৩৬৯ (১০ পৌষ, ১৮৮৪ শকাব্দ) MONDAY, DECEMBER 31, 1962
• তারকাখচিত স্বর্গোদ্যান: মুস্তাক আলীর হাতে বল, উত্তমকুমারের হাতে ব্যাট— এমন যুগলমিলন দৃশ্য তারিয়ে তারিয়ে দেখার সৌভাগ্য ক্রিকেট আর সিনেমা-পাগল খুব কম বাঙালীর জীবনেই ঘটেছে। যারা ব্যতিক্রম, হলপ করে বলতে পারি, ১৯৬২ সালের ৩০শে ডিসেম্বর তারিখটা তারা সোনার জলে বাঁধিয়ে রাখবে। শহর কলকাতার জনপ্রিয়তার উচ্চচূড়ে যে কয় জন, তাঁদের অন্যতম মুস্তাক আলী ছিলেন হেমন্ত মুখার্জির দলে, আর অন্যজন উত্তমকুমার কানন দেবীর একাদশে। ভোজ বিরতির আগেই কয়েকটি ওভার গিয়েছে, যখন বোলার মুস্তাক আলী প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যাটসম্যান উত্তমকুমারকে ঘায়েল করার চেষ্টা করছেন। পারেননি। চওড়া কাঁধ আর লম্বা হাত দুলিয়ে মুস্তাক যতবার বল ছুঁড়ছেন, উত্তমকুমার ততবারই ব্যাট ঠেকিয়ে নিজের উইকেট এবং জনপ্রিয়তা বাঁচিয়েছেন। এমন কি এক ফাঁকে একটি রানও নিজের খাতায় জমা রাকতে ভোলেননি। রবিবার ইডেন উদ্যানে প্রতিরক্ষা তহবিলের সাহায্যে প্রদর্শনী ক্রিকেট খেলার কথা বলছি। একদিনের এই খয়রাতি খেলায় একদিকে কানন দেবীর দলে অধিনায়ক ছিলেন জহর গাঙ্গুলী, অন্যদিকে হেমন্ত মুখার্জির দলে সত্যজিত্ রায়। লালা অমরনাথ, মুস্তাক আলী কমল ভট্টাচার্য, খোকন সেন প্রমুখ প্রবীণ খেলোয়াড়রা ছাড়াও ছিলেন বাধা বাধা সব অভিনেতা অভিনেত্রী এবং গাইয়ে বাজিয়ের দল।
‘যুদ্ধের’ আগে দুই মহানায়ক, সঙ্গে বিকাশ রায়।
রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী সমেত কিছু মন্ত্রী উপমন্ত্রীও ছিলেন হাজির। ফিল্ম স্টার আর মিনিস্টারে ঠাসা ইডেন উদ্যানের এমন ‘নক্ষত্র-খচিত’ চেহারা আর কোন দিন দেখিনি। তবে এত তারকার মাঝখানেও এদিনের ধ্রুবতারা সুচিত্রা সেন। মুস্তাক-উত্তমের লড়াইও তার কাছে হার মেনেছে। দুপুর বারটায় তিনি যখন এলেন, মাঠের পিচ ছেড়ে সকলের নজর প্যাভেলিয়নের কাছের ওই গ্যালারিটিতে। কেননা সুচিত্রা সেন সেখানেই সশরীরে বর্তমান। ওই ভিড়ের মধ্যমণি যে সুচিত্রা সেন প্রথমে টের পাইনি। বুঝিয়ে দিল ডিউটি দিতে আসা একজন পুলিশ। কত স্কোর, কার উইকেট পড়ল ইত্যাদি প্রসঙ্গ মুলতুবি রেখে শত শত লোক যখন কোন একজন মহিলাকে চাক্ষুষ দেখে নয়ন সার্থক করার জন্য হিমড়ি খেয়ে পড়েছে এবং আমিও ভিড়ের ঠেলায় দাঁড়িয়ে পড়তে বাধ্য হয়েছি, ঠিক আমার পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা একজন লাঠি হাতে পুলিশ তখনই ফিসফিস গলায় বললে— ‘‘দাদা, মাথাটা সরান, সুচিত্রা সেনকে একটু দেখে নিই।’’

মঙ্গলবার, ১৬ পৌষ, ১৩৬৯ (১১ পৌষ, ১৮৮৪ শকাব্দ) 1 January, 1963
শীতকালে গরম চানাচুর বেচি।
তাতে গরম কাপড়ের খরচ বাঁচে।
• শীত পড়ার পর ‘শীতলতম দিবস’ সোমবার: শীতে কাঁপতে কাঁপতে সোমবার কলকাতায় অনেককেই বলতে শোনা গেছে “এমন শীত আর পড়েনি।” কথাটা ঠিক, আবার ঠিক নয়। এইবার শীত পড়ার পর তাপাঙ্ক এই দিনের আগে ১১ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডে (৫১.৮ ডিঃ ফাঃ) নামে নাই। সেদিক দিয়ে সোমবার ছিল এই মরশুমের ‘শীতলতম দিবস’। কিন্তু আবহাওয়া অফিস জানান ১১ ডিঃ সেঃ ঠাণ্ডা এই সময় মোটেই অস্বাভাবিক নয়, স্বাভাবিক।
তাছাড়া গত বছর ১৯৬১ সালের ৩১শে ডিসেম্বর ঠান্ডা ছিল আরও বেশী ৯.৭ সেন্টিগ্রেড বা ৪৯.৫ ডিঃ ফাঃ। তবে বিগত আরও তিন বছরের শেষ দিনের ঠান্ডার ওপর এই বছরের বর্ষ শেষের ঠান্ডা টেক্কা মেরেছে। ৩১শে ডিসেম্বর সর্বনিম্ন তাপ ছিল ১৯৬০-য়ে —১৮.৩ সেঃ(৬৪.৯ ফাঃ), ১৯৫৯ সালে— ১৩.৮ সেঃ(৫৬.৭ ফাঃ) এবং ১৯৫৮ সালে —১১.৬ সেঃ(৫২.৯ ফাঃ)।
সোমবার দিনের বেলার অর্থাত্ সর্বোচ্চ তাপ বরং স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ সেন্টিগ্রেড কম ছিল। ঐ তাপ উঠেছিল ২৩.৩ ডিঃ সেঃ(৭৪ ডিঃ ফাঃ) পর্যন্ত। আবহাওয়া অফিসের পূর্ব ঘোষণা:- এই রকম ‘স্বাভাবিক ঠান্ডা’ আরও দিন দুই বজায় থাকবে। মঙ্গলবার রাত্রের তাপ আর কিছু কমতে পারে। এর বেশী আর কিছু জানা যায় নাই।

বুধবার, ১৭ পৌষ, ১৩৬৯ (১২ পৌষ, ১৮৮৪ শকাব্দ) 2 January, 1963
• আড়িয়াদহে স্ত্রী-শিক্ষা প্রসারের ব্যবস্থা: আড়িয়াদহ দক্ষিণেশ্বর এলাকায় স্ত্রী-শিক্ষা প্রসারের উদ্দেশ্যে স্থানীয় ‘শিক্ষা উন্নয়ণ কমিটি’ দুইটি বালিকা বিদ্যালয় এবং একটি কলেজের আর্থিক উন্নয়নের কর্মসূচী গ্রহণ করিয়াছেন। সোমবার ঐ সম্পর্কে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় সভাপতিত্বকালে শ্রমমন্ত্রী শ্রীবিজয় সিং নাহারমেয়েদের সুশিক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। সভায় ২৪ পরগণা জেলা-শাসক শ্রীঅমল মজুমদার বক্তৃতা দেন এবং শ্রীশৈলেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদকের বিবরণ পাঠ করেন। জাতীয় প্রতিরক্ষা তহবিলে দান স্বরূপ কমিটি শ্রমমন্ত্রীকে ৫০১ টাকা দেন।

• বিবেকানন্দ জন্ম-শতবর্ষ পূর্তি উত্সব: মঙ্গলবার আশুতোষ কলেজ ভবনে অখিল ভারত হিন্দু মহাসভার উদ্যোগে স্বামী বিবেকানন্দ জন্মোত্সব সমিতির সাধারণ সম্পাদক শ্রীধিরাজ বসু জানাইতেছেন যে, নাগরিকগণের পক্ষে স্বামী বিবেকানন্দের শততম জন্মোত্সব গত বত্সর ২৮শে জানুয়ারী শ্যাম স্কোয়ারে উদ্বোধন হয়। বর্ষব্যাপী অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি উত্সব আগামী ১৭ই জানুয়ারী হইতে ২৭শে জানুয়ারী ভূপেন্দ্র বসু এভিনিউস্থ শ্যাম স্কোয়ারে অনুষ্ঠিত হইবে। এই উপলক্ষে স্বামীজীর জীবন ও কর্মধারার পরিচয় জ্ঞাপক মৃন্ময় মূর্তি ও শিল্প প্রদর্শনীর আয়োজন হইয়াছে। সদস্যভুক্তির হার ২ ও ৫ টাকা। প্রদর্শনীর জন্য যোগাযোগ করিতে হইবে—শ্রীঅলোক মুখোপাধ্যায়, ১৩৬, চিত্তরঞ্জন এভিনিউ, কলিকাতা-৭ ফোন—৩৪-৫৩৪৩, শ্রীরমাপ্রসাদ চৌধুরী (মোহিনী মেডিকাল হল), ২৫, ওয়েলেসর্লি স্ট্রীট, কলিকাতা-১৬, ফোন—২৪-৫০৫৭ অথবা শ্রীধিরাজ বসু, ১৮/১, সাহিত্য পরিষদ স্ট্রীট, গোরাচাঁদ ভবন, কলিকাতা-৬, টেলিফোন—৫৫-৪০৮৫, ৫৫-৬৫৩৯।

— পরীক্ষার খাতা দেখতে পারিনি স্যার,
টেক্সট বুক লিখতে ব্যস্ত ছিলাম।

এবার আমাদের লোক কম,
পরীক্ষায় বেশী ছাত্র ফেল করাবেন না।


• নগরদর্শন:
চার্ণক্য

ওষুধের নাম শুনেই আকৃষ্ট হয়েছিলাম, পরে জানলাম তার আবিষ্কর্তা এই কলকাতা শহরেরই একজন বাঙালী বিজ্ঞানী—নাম ডক্টর ডি কে রায়। আমরই এক বন্ধু সেদিন আড্ডায় বসে খবরটা দেন। জানান, দীর্ঘ সাত বছরের কঠিন সাধনার পর লিউকেসিয়া এবং টিউমারের এক আশ্চর্য এন্টি বায়োটিক আবিষ্কার করেছেন ওই বিজ্ঞানী। দেশে-বিদেশে চিকিত্সক মহলে তাই নিয়ে সম্প্রতি বেশ সাড়া পড়ে গেছে। ওষুধের নাম দেওয়া হয়েছে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শ্রীজওহরলালের নামে—‘জওহররীন’। ডক্টর রায় কলকাতারই এক ছোট্ট গলিতে ততোধিক ছোট ল্যাবরেটরিতে বসে এই বিষয়ে পরীক্ষা চালিয়েছেন। এক টুকরো পচা আলু নাকি এই আবিষ্কারের উত্স। তিনি কিছুদিন কাজ করেছেন মার্কিন দেশের খ্যাতনামা বিঞ্জানী অধ্যাপক কোলাচভের অধীনে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত বায়ো কেমিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপনায়ও যুক্ত আছেন গত দশ বছর। ডক্টর রায়কে তাঁর নতুন আবিষ্কারের জন্য প্রধানমন্ত্রী শ্রী নেহরু শুভেচ্ছা পাঠিয়েছেন। আমরাও তাঁকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।

• এন সি সির শিক্ষার্থীদের বিমান চালনার সুযোগ, বেহালায় নবনির্মিত বিমান অবতরণ ক্ষেত্রে বিমান উঠা-নামা আরম্ভ: কর্মসূচীর বাড়াবাড়ি ছিল না, বক্তৃতার ঝামেলাও নয়। মঙ্গলবার ইংরাজী নববর্ষে বেহালায় নবনির্মিত বিমান অবতরণ ক্ষেত্রে “বেঙ্গল ফ্লাইং ক্লাব”-এর বিমান উঠা নামা শুরু হয়। সকাল ৮টায় এন সি সির শিক্ষানবীশ শ্রী পি কে দত্ত এবং চীফ্ পাইলট ইনস্পেক্টর শ্রী এস এল রায় ক্লাবের টাইগার মথটি লইয়া প্রথম আকাশে উড়েন। পরে এন সি সি-র অন্যান্য শিক্ষার্থীরও পালা আসে। আগামী কয়মাস ধরে প্রধানত এন সি সি-র শিক্ষার্থীদের বিমান চালনার সুযোগ দেওয়া হইবে। আপাতত ১৬০ জন শিক্ষার্থী আছে। এই সংখ্যা বাড়িবে আশা করা যায়। সরাসরি ভারতীয় বিমান বাহিনীতে নিয়োগের উদ্দেশ্যে ভারত সরকার এখানে বৃত্তিভোগী দশজন ছেলে পাঠাইবেন। অন্যান্য কৃতী শিক্ষার্থীকেও এরূপ সুযোগ দেওয়া হইবে। উক্ত ক্লাবের পঁচাত্তরজন পূর্ণ সদস্য এবং চল্লিশজন ছাত্র সদস্য আছেন। শিক্ষার্থীদের বিমান চালনার জন্য প্রতি ঘণ্টায় খরছ পড়ে দশ টাকা। আসলে এর জন্য খরচ হয় ঘণ্টায় একশত টাকার কাছাকাছি। এ ব্যাপারে ঘাটতি পুরণ হয় কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের বার্ষিক ষাট হাজার টাকার তহবিল হইতে। ১৯২৮ সালে বেঙ্গল ফ্লাইং ক্লাবের প্রতিষ্ঠা হয়। তখন ক্লাবের সদস্যরা দমদম বিমানঘাটিতে বিমান চালনা শিখতেন। গত মহাযুদ্ধে ক্লাবটি বারাকপুরে স্থানান্তরিত হয়। কিছু দিনের জন্য আলিপুরে ছোট্ট একটা বিমান অবতরণ ক্ষেত্রও ব্যবহার করা হইয়াছিল। ক্লাবের ট্রেনিং প্লেনের সংখ্যা এখন মাত্র এক। আশা করা যায়, অদূরভবিষ্যতে এই সংখ্যা তিনে দাঁড়াইবে। ক্লাবের অনেক সদস্যের নাম এখন দেশের বিমান ব্যবস্থার সহিত জড়িত হইয়া আছে। এয়ারমার্শার স্বর্গত সুব্রত মুখার্জি এক সময় এই ক্লাবের সদস্য ছিলেন, ভাইস মার্শাল রঞ্জন দত্তও।

বৃহস্পতিবার, ১৮ পৌষ, ১৩৬৯ (১৩ পৌষ, ১৮৮৪ শকাব্দ) 3 January, 1963
• কলিকাতা হোমগার্ড বাহিনী ১২ই জানুয়ারী মুখ্যমন্ত্রীর সম্মুখে শপথ লইবেন: কলিকাতা হোমগার্ড বাহিনীর এক হাজার সদস্য আগামী ১২ই জানুয়ারী পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী শ্রীপ্রফুল্লচন্দ্র সেনের সম্মুখে শপথ গ্রহণ করিবেন। এই উপলক্ষে এইদিন সকাল আটটায় ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে এক সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হইয়াছে। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী হোমগার্ড বাহিনীর অভিবাদনও গ্রহণ করিবেন। শপথ বাক্যটি সংক্ষিপ্ত। মাত্র ৪৬টি শব্দ বিশিষ্ট এই শপথ বাক্যে বলা হইয়াছে: ‘এতদ্বারা আমি শপথ করিয়া বলিতেছি যে, আমি ভারতবর্ষ ও ভারতীয় সংবিধানের প্রতি যথার্থ আইনানুগ আনুগত্য ও বিশ্বস্ততা পোষণ করিব। আমি আমার কর্তব্য সততা, আনুগত্য এবং নিরপেক্ষতা সহকারে সম্পাদন করিব।’ জানা গিয়াছে, হোমগার্ডদের টুপিতে কি প্রতীক থাকিবে, সে সম্পর্কে যে দ্বিমত ছিল, তাহার অবসান হইয়াছে। ঠিক হইয়াছে টুপির ব্যাজে অলিভ গাছের পাতা ও সিংহ মূর্তি থাকিবে। আরও জানা গিয়াছে, আগামী ২৬শে জানুয়ারী প্রজাতন্ত্র দিবসেও হোমগার্ড বাহিনী প্যারেডে অংশগ্রহণ করিবেন। আগামী মে মাসের মধ্যে কলিকাতায় তিন হাজার হোমগার্ড বাহিনীর ট্রেনিং শেষ হইবে। বর্তমানে ২০০ শত জনকে ট্রেনিং দেওয়া হইতেছে। তাহার মধ্যে প্রায় ৬০ জন মহিলা আছেন। মহিলাদের মধ্যে কলিকাতা হাইকোর্টের দুইজন অ্যাডভোকেটও আছেন বলিয়া জানা গিয়াছে।

শুক্রবার, ১৯ পৌষ, ১৩৬৯ (১৪ পৌষ, ১৮৮৪ শকাব্দ) 4 January, 1963
• কলিকাতায় মত্স্য মূল্য ঊর্ধ্বগামী: গত দুই দিন যাবত্ কলিকাতার বাজারে অকস্মাত্ মাছের দর বেশ কিছুটা চড়িয়াছে। প্রকাশ যে, পূর্ব পাকিস্তান হইতে মাছ আমদিনী না হইবার ফলে মাছের দর বৃদ্ধি পাইয়াছে। পূর্ব পাকিস্তান হইতে ট্রেনে দৈনিক প্রায় ৩ হাজার মণ করিয়া মাছ কলিকাতায় আমদিনী করা হয়। আরও জানা যায় যে শনিবারের পূর্বে বাজারের অবস্থার উন্নতি ঘটার আশা কম। কলিকাতায় মাছ আমদিনী সম্পর্কে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যে চুক্তি ছিল উহা ৩১শে ডিসেম্বর শেষ হইয়াছে। অবশ্য বুধবার ঐ চুক্তি নূতন করিয়া সম্পাদিত হয়। মাছের সরবরাহ শনিবার হইতে নিয়মিত হইবে বলিয়া আশা করা যায়। শিয়ালদহ মত্স আড়ত্দার সমিতির জনৈক মুখোপাত্র জানান যে, পূর্ব পাকিস্তান হইতে বৃহস্পতিবার প্ররিত মাছ শুক্রবার রাত্রে কলিকাতায় পৌঁছিবে। শনিবার সকালে উহা বাজারে ছাড়া হইবে।
রবিবার,২১ পৌষ, ১৩৬৯ ( Sunday, January 6, 1968 )
• শুরুতেই শেষ: শুরুতেই সারা। এ বত্সর কলিকাতায় প্রারম্ভিক এফ-আর-সি-এস পরীক্ষা গৃহীত হইলেও ভবিষ্যতে ভারতের কোথাও আর হইবে না। এই প্রথম এবং এই শেষ। ইংলন্ডের রয়াল কলেজ অব সার্জারীর অনুরোধে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই পরীক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা হয়। ভারতে—এরূপ ব্যবস্থা এই প্রথম। কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য দপ্তর হইতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে জানাইয়া দেওয়া হইয়াছে যে, ভবিষ্যতে ভারতে উক্ত পরীক্ষা আর গ্রহণ করা যাইবে না। সম্ভবত বিদেশী মুদ্রার ঘাটতির কথা বিবেচনা করিয়াই এরূপ সিদ্ধান্ত করা হইয়াছে। কলিকাতায় প্রারম্ভিক পরীক্ষার পর ফাইন্যাল এফ-আর-সি-এসয়ের জন্য পরীক্ষার্থীদের ইংলন্ডে যাওয়ার ব্যবস্থা হয়। এখানে প্রারম্ভিক পরীক্ষায় বসিবার অনুমতির জন্য পরীক্ষার্থীদের ইংলন্ডে উক্ত কলেজে ষাট পাউন্ড ফি পাঠাইতে হইয়াছে।

মঙ্গলবার, ২৩ পৌষ, ১৩৬৯ (১৮ পৌষ, ১৮৮৪ শকাব্দ) 8 January, 1963
• বৃহত্তর কলিকাতার উন্নয়ন পরিকল্পনা: ২৫ বছর পরে কলিকাতায় লোকসংখ্যা হইবে ১ কোটি ১২ লক্ষ। চারিশত বর্গমাইল জুড়িয়া কলিকাতা মেট্রোপলিটান জেলায় আগামী ২৫ বত্সরের মাথায় ১৯৮৬ সালে লোকসংখ্যা বাড়িয়া ১ কোটি ১২ লক্ষে দাঁড়াইবে বলিয়া অনুমান করা হইতেছে। কর্মপ্রার্থী ও কর্মক্ষম লোকের সংখ্যা ঐ সময় ৫১ লক্ষ ৩৭ হাজারে দাঁড়াইবে। সুতরাং অতিরিক্ত ২৩ লক্ষ ৯৭ হাজার লোকের জন্য কর্মের সুযোগ সৃষ্টি করিতে হইবে। কলিকাতা মেট্রোপলিটান সংস্থার পক্ষ হইতে আর্থিক কাঠামোর ভবিষ্যত্ সম্পর্কে যে বিস্তারিত সমীক্ষা চালানো হইয়াছে ঐ সমীক্ষার ফলাফল হইতে উপরোক্ত তথ্যাদি পাওয়া যায়। কলিকাতা মেট্রোপলিটান জেলা কলিকাতা, হাওড়া, হুগলী, ২৪-পরগণা ও নদীয়া জেলার পূর্ণ অথবা অংশবিশেষ লইয়া গঠিত। ২টি কর্পোরেশন, ৩৩টি মিউনিসিপ্যালিটি ও ৩৭টি শহর ইউনিট এই ৪ শত বর্গমাইল এলাকার আওতায় পড়ে। হুগলী নদীর উভয় পার্শ্ব বরাবর পশ্চিম পারে বাঁশবেড়িয়া হইতে উলুবেড়িয়া এবং পূর্ব পারে কল্যানী হইতে বজবজ পর্যন্ত ভূখণ্ড ইহার অন্তর্গত। সোমবার বিধানসভার প্রশ্নোত্তরকালে কলিকাতা মেট্রোপলিটান সংস্থার কাজকর্মের অগ্রগতি সম্পর্কে বিরোধী পক্ষের এক প্রশ্নের উত্তরে উন্নয়ন দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মুখ্যমন্ত্রী শ্রীপ্রফুল্লচন্দ্র সেন তাঁহার লিখিত জবাবে উপরোক্ত তথ্যাদি পরিবেশন করেন।এইদিন রাজ্য বিধানসভার জিলা পরিষদ বিলটি সিলেক্ট কমিটিতে প্রেরিত হয়। সভা ও শোভাযাত্রা নিয়ন্ত্রণ বিল এবং নাট্যানুষ্ঠান বিল দুইটি এই অধিবেশনে উথ্থাপন না করিবার সিদ্ধান্ত হয়। আজ মঙ্গলবার বেলা বারোটায় পুনরায় সভার অধিবেশন সুরু হইলে পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষত্ বিলটির আলোচনা আরম্ভ হইবার কথা আছে।


হ্যালো পুলিশ, দেখুন সাড়ে পাঁচটা বাজার
আগেই উনি অফিস থেকে পালিয়েছেন।

ছেলেদের স্কুল খুলে গেছে, এবার বিধানসভা খুললেই
দুপুর বেলা একটু বিশ্রাম করতে পারবো ভাই।
বুধবার, ২৪ পৌষ, ১৩৬৯ (১৯ পৌষ, ১৮৮৪ শকাব্দ) 9 January, 1963
• অদূর ভবিষ্যতে কলিকাতায় বসন্ত মহামারীর আশঙ্কা: ইতিমধ্যে ২৩টি ওয়ার্ড আক্রান্ত
অদূর ভবিষ্যতে কলিকাতা মহানগরীতে বসন্ত রোগ আবার মহামারী রূপে দেখা দিবার আশঙ্কা আছে। ইতিমধ্যেই শহরের ৮০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৩টি ওয়ার্ডে ঐ রোগ ছড়াইয়া পড়িয়াছে। পর পর দুইটি বিগত সপ্তাহে বসন্ত রোগে মৃত্যুর সংখ্যা অস্বাভাবিকভবে বৃদ্ধি পাওয়ায় ঐ আশঙ্কার সৃষ্টি হইয়াছে। গত ৫ই জানুয়ারী তারিখে যে সপ্তাহ শেষ হইয়াছে সেই সপ্তাহে ঐ রোগে ৫২ জনের মৃত্যু হওয়ায় কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হইয়া পড়িয়াছেন। ইহার পূর্বে (২৯শে ডিসেম্বর তারিখে) যে সপ্তাহ শেষ হইয়াছে উহাতে বসন্ত রোগে ২৮ জন মারা যায়।

বৃহস্পতিবার, ২৫ পৌষ, ১৩৬৯ (২০ পৌষ, ১৮৮৪ শকাব্দ) 10 January, 1963
• নিমতলা মহাশ্মশানে শ্রীমতী নির্ঝরিনী সরকারের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন: বুধবার দুপুরে নিমতলা মহাশ্মশানে শ্রীমতী নির্ঝরিনী সরকারের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়। তাঁহার একমাত্র পুত্র ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’ ও সাপ্তাহিক “দেশ”-এর সম্পাদক এবং ‘হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ড’-এর ডিরেক্টর শ্রীঅশোককুমার সরকারের শেষকৃত্যাদি সম্পন্ন করেন। ভোর হইতে না হইতেই শ্রীমতী সরকারের গুনমুগ্ধ বান্ধব, আত্মীয়স্বজন ও অনুরাগিবৃন্দের ভিড়ে তাঁহার মদনমোহনতলার বাড়ীটি পূর্ণ হইয়া উঠে। তাঁহারা সকলে স্বর্গতা সরকারের উদ্দেশ্যে শেষ শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করিয়া যান। বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ হইতে শবাধারে পুষ্পস্তবক ও মাল্যদান করা হয়। সকাল দশটা নাগাদ শোকযাত্রা বাহির হয়। মদনমোহনতলা—সি আই টি রোডের বাসভবনে অথবা নিমতলা মহাশ্মশানে গিয়া যাঁহারা স্বর্গতা সরকারের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তাঁহাদের মধ্যে নিম্নলিখিত বিশিষ্ট ব্যক্তিগণও ছিলেন,— রাজ্য আবগারী ও প্রচার দপ্তরের মন্ত্রী শ্রীজগন্নাথ কোলে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পূর্ত বিভাগের রাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রীবীজেশ সেন, রাজ্য কৃষি বিভাগের রাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রীসমরজীত্ ব্যানার্জি, কলিকাতা কর্পোরেশনের কাউন্সিলারদের মধ্যে শ্রীরণজীত্ মিত্র, শ্রীমিহিরলাল গাঙ্গুলী এবং শ্রীদুলাল মুখার্জি।


স্বর্গতা নির্ঝরিনী সরকারের মরদেহ বুধবার পূর্বাহ্নে শোকযাত্রা সহকারে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য
মদনমোহনতলা সি আই টি রোডের বাসভবন হইতে শ্মশান ঘাটে নীত হইয়াছে।
শ্রীহেমন্তকুমার বসু এম এল এ, শ্রীগুরুপদ খাঁ এম এল এ, পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির অন্যতম সম্পাদক শ্রীনির্মলেন্দু দে, শ্রীচপলাকান্ত ভট্টাচার্য এম পি, ‘যুগান্তর’ পত্রিকার অস্থায়ী সম্পাদক শ্রীসুকমলকান্তি ঘোষ, সর্বশ্রী মনোজ বসু, দক্ষিণারঞ্জন বসু, প্রাণতোষ ঘটক, সুপ্রিয় সরকার, মনোরঞ্জন গুহ, জ্ঞানশঙ্কর সেনগুপ্ত, পান্নালাল মিত্র, রাম মুখার্জি(প্রেস এ্যান্ড পাবলিসিটি), সন্তোষ মুখার্জি(বিড়লা ব্রাদার্স), স্বামী ত্রিপুরানন্দ, বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য, শশী পাল, জিতেন পাল, রমনীমোহন কর, গোপাল মুখার্জি, এ কে মুখার্জি, শৈলেন দাশগুপ্ত, ডঃ ক্ষিরোদ চৌধুরী, অধ্যাপক নির্মল বসু, যুগল শ্রীমল, সত্যেন রায়, যাদুগোপাল বসু, ইউ এন আই-এর পুলিন দত্ত, পি টি আই-এর ম্যানেজার নৃপেন ঘোষ, জে সি সেনগুপ্ত, শচীন বসু, সুধীর চ্যাটার্জি, প্রফুল্ল কান্তি ঘোষ, শোভেন বসুমল্লিক, শ্রীমতি বিজয়বালা বসু, সতীশ পাত্র, এ সি দাশ(ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক) ডঃ এইচ এন রায়, কবিরাজ বিষ্ণু মুখার্জি, প্রব্রাজিকা শ্রদ্ধাপ্রাণা। ইহা ছাড়া আনন্দবাজার পত্রিকা, দেস ও হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ডের সহিত সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক এবং অন্যান্য কর্মীগণও বাসভবনে অথবা শ্মশানে উপস্থিত হইয়া তাঁহার স্মৃতির প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

রবিবার, ২৮ পৌষ, ১৩৬৯ SUNDAY, JAN. 13, 1963
• বীর সন্ন্যাসী বিবেকানন্দ: বিবেকানন্দ কলেজে জন্মশতবার্ষিকী উত্সব: শনিবার বেহালায় ঠাকুরপুকুরে বিবেকানন্দ কলেজে স্বামী বিবেকানন্দের জন্মশতবার্ষিকী উত্সব পালন করা হয়। কলেজের প্রশস্ত হলে বীর সন্ন্যাসী বিবেকানন্দের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করিয়া অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বক্তা ভাষণ দেন। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করিয়া রাজ্যের স্বায়ত্তশাসন মন্ত্রী শ্রীশৈলকুমার মুখার্জি বলেন, স্কুল, কলেজ তথা সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে স্বামীজীরি রচনাবলীর ব্যাপক প্রচার সুরু করার প্রয়োজনীয়তা আছে। কলেজ কর্তৃপক্ষের উদ্দেশে তিনি বলেন, আরও বেশী করিয়া স্বামীজীর গ্রন্থাবলী ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিতরণ করুন। শতবার্ষিকী উপলক্ষে স্বামীজীর রচনাবলী সাতটি ভারতীয় ভাষায় প্রকাশ করার ব্যবস্থা হইতেছে বলিয়া শ্রী মুখার্জি জানান। শ্রীঅচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত বলেন, স্বামীজীর কন্ঠে মুক্তির বাণী ধ্বনিত হইয়াছে। অভাব, অনশন, অজ্ঞতা, নীচতা ও ক্ষুদ্রতা হইতে মুক্তি। এই মুক্তির বাণী লইয়া তিনি ভারতের এক প্রান্ত হইতে অপর প্রান্ত পর্যন্ত পদব্রজে পরিভ্রমণ করিয়াছেন। সভাপতি শ্রীবিধুভূষণ সেনগুপ্ত ঘোষণা করেন যে প্রস্তাবিত বিবেকানন্দ বিশ্ববিদ্যালয় গঠিত হইলে ঐ কলেজটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ করা হইবে। ঐ দিন বড়িষা মহিলা কলেজেও শতবার্ষিকী উত্সব পালন করা হয়।

মঙ্গলবার, ১ মাঘ, ১৩৬৯ (২৫ পৌষ. ১৮৮৪ শক) TUESDAY, JANUARY 15, 1963
• ১০ই জানুয়ারী পর্যন্ত মজুত গহনা ও সোনার পরিমাণ অবিলম্বে ঘোষণা করিতে হইবে, কলিকাতার সোনা ও গহনা ব্যবসায়ীদের প্রতি স্বর্ণ নিয়ণ্ত্রণ বোর্ডের নির্দেশ: আগেকার আদেশ সংশোধন করিয়া স্বর্ণ নিয়ণ্ত্রণ বোর্ড কলিকাতার সোনা ও গহনা ব্যবসায়ীদের ‘‘অবিলম্বে’’ ১০ই জানুয়ারী পর্যন্ত মজুত ঘোষণা করিতে বলিয়াছেন। সোমবার স্বর্ণ নিয়ণ্ত্রণ অফিসের জনৈক মুখপাত্র জানান, ব্যবসায়ীদের দ্বারা কোন ‘‘কারচুপির’’ চেষ্টার প্রতিরোধ করাই এই নির্দেশের উদ্দেশ্য। স্বর্ণকাররা বিনা ঘোষণায় ১৪ ক্যারাটের বেশী পুরানো মজুত গহনা বিক্রয় করিতে পারিবেন না, এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, পারা যাইবে। তবে ইহা যে পুরানো মজুত, তাহা ব্যবসায়ীদের প্রমাণ করিতে হইবে। এইদিন হেয়ার স্ট্রীটস্থ স্বর্ণনিয়ণ্ত্রণ অফিসটি স্বর্ণ ব্যবসায় সংশ্লিষ্ট লোকের আনাগোনায় পূর্ণ থাকে। অনেকে এই সংক্রান্ত ঘোষণাপত্র লইয়া যান। প্রকাশ, সোমবার মজুতের ঘোষণা সহ লাইসেন্সের জন্য একশতাধিক আবেদনপত্র স্বর্ণ-নিয়ণ্ত্রণ অফিসে পৌঁছায়। তার মধ্যে অনেক আবেদনপত্র ছিল গহনা ব্যবসায়ীদের তরফ হইতে। এখনও পর্যন্ত কাহাকেও লাইসেন্স দেওয়া হয় নাই। সোমবারও সোনাপট্টিতে কোন লেনদেন হয় নাই। গহনার দোকানগুলি খোলা ছিল বটে, তবে খরিদ্দারের সংখ্যা ছিল কম। বিবাহের মরসুমে যাঁহারা গহনা কিনিতে বাধ্য হন, তাঁহাদের গিনি সোনার জন্য (২২ ক্যারাট) তোলা প্রতি ১২৫ টাকা দিতে হয়। প্রকাশ, কেহ কেহ পছন্দ মাফিক তৈয়ারী গহনার জন্য তোলা প্রতি ১৪০ টাকাও দেন। ইতিমধ্যে কলিকাতা স্বর্ণ ও রৌপ্য মণিকার সমিতি বোম্বাইস্থিত স্বর্ণ-ণিয়ণ্ত্রণ বোর্ডের নিকট মজুত ঘোষণার জন্য ১৫ দিনের সময় চাহিয়াছেন। সমিতির একজন মুখপাত্র বলেন, তাঁহারা স্বর্ণ-ণিয়ণ্ত্রণ অফিসের স্থানীয় অফিসারদের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করিতেছেন। সমিতির সদর কার্যালয়ে তাঁহাদের একটি অফিস খুলিতে দেওয়া হইয়াছে।


যৌতুকরূপে যদি সোনা
চান তো পুলিশ ডাকবো

তখনই বলেছিলাম, ছেলের বিয়েতে
বেশী সোনার গহনা আদায় কোরনা।

সোনার গহনাই, তবে
ওপরে তামার গিল্টি করা
বুধবার, ২ মাঘ, ১৩৬৯ WEDNESDAY, JAN. 16, 1963
• বেলগাছিয়ার কেন্দ্রীয় দুগ্ধ কেন্দ্রের আবরণ উন্মোচন: মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী শ্রীপ্রফুল্লচন্দ্র সেন বেলগাছিয়ার কেন্দ্রীয় দুগ্ধ কেন্দ্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন এজেন্সীর একটি স্মারক ফলকের আবরণ উন্মোচন করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার এই দুগ্ধ কেন্দ্রটির আধুনিক সরঞ্জাম কিনিবার অর্থ দিয়াছেন। মোট অর্থের পরিমাণ ২০ লক্ষ ৭২ হাজার ১৯৬ টাকা। অনাড়ম্বর এক অনুষ্ঠানের শেষে মুখ্যমন্ত্রী শ্রী সেন ভেলভেটের একটি সুদৃশ্য পরদা টানিয়া ফলকটি উন্মোচন করেন। ফলকটির উপরে ভারত-মার্কিন মৈত্রীর প্রতীক একটি করমর্দনের ছবি আঁকা রহিয়াছে। তলায় লেখা আছে— ‘এই গৃহের সমস্ত যন্ত্রপাতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার কর্তৃক প্রদত্ত হইয়াছে।’ ফলকটি উদ্বোধনের আগে মুখ্যমন্ত্রী তাঁহার ভাষণে বেলগাছিয়ার কেন্দ্রীয় দুগ্ধ কেন্দ্রটিকে ‘মৈত্রীর প্রতীক’ বলিয়া অভিহিত করেন। শ্রী সেন জানান, ১৯৫৫ সালে আন্তর্জাতিক খাদ্য ও কৃষিসংস্থার মাধ্যমে ভারত সরকার দুগ্ধ সম্পদে সমৃদ্ধ দেশগুলির নিকট বৃহত্তর কলিকাতার দুগ্ধ সরবরাহ পরিকল্পনাকে সাহায্য করিবার আবেদন জানান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও হল্যান্ড এই আবেদনে সাড়া দেন। ভারত সরকারের সহিত এক চুক্তি বলে কলন্বো পরিকল্পনায় কানাডা সরকার এই দুগ্ধ কেন্দ্রের বয়লার ও মিল্ক রিশেপশন ইউনিট কিনিবার জন্য ৪ লক্ষ ৭৭ হাজার ৮৬৩ টাকা দিয়াছেন।

বৃহস্পতিবার, ৩ মাঘ, ১৩৬৯ THURSDAY, JAN. 17, 1963
• স্বর্ণ নিয়ন্ত্রণ অফিসের সম্মুখে ঠিকা কারিগরদের বিক্ষোভ: কেন্দ্রীয় সরকারের একজন অফিসার কলিকাতার সোনার বাজারের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করিতেছেন। আবগারী ও শুল্ক দপ্তরের দিল্লির ইনস্পেকশন ডাইরেক্টরেটের এই অফিসার বুধবার সোনাপট্টি ও বহুবাজারে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মিলিত হন। এদিকে কর্মহীন ঠিকা কারিগররা ঐ দিন হেয়ার স্ট্রিটের স্বর্ণ নিয়ন্ত্রণ অফইসের সামনে বিক্ষোভ দেখায়। তাহাদের অন্যতম দাবিঃ আমাদের একটা ব্যবস্থা করুন। বুধবার কলিকাতার প্রায় সমস্ত লগ্নী কারবারের দোকান বন্ধ থাকে। লগ্নী ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক বলেন, তাঁহাদের মধ্যে অনেকে শুধু অলঙ্কার বন্ধকীর কারবার করেন। স্বর্ণ নিয়ন্ত্রণ বিধি অনুযায়ী সকলকেই লাইসেন্স করিতে হইবে কি না, এই প্রশ্নে তাঁহারা বিভ্রান্তির মধ্যে পড়িয়াছেন। ঐ দিন কলিকাতা মণিকার ও স্বর্ণ-রৌপ্যকার সমিতির প্রতিনিধি দল বহুবাজারে কেন্দ্রীয় শুল্ক দপ্তরের ইনস্পেকটিং অফিসারের সহিত সাক্ষাত্ করেন। কলিকাতা মণিকার ও স্বর্ণ-রৌপ্যকার সমিতির পক্ষ হইতে লাইসেন্স ফী ১০০ টাকা হইতে কমাইয়া ২৫ টাকা করার দাবি জানান হয়। কারিগরদের এক প্রতিনিধি দল হেয়ার স্ট্রীটে স্বর্ণ নিয়ন্ত্রণ অফিসে এই দিন শুল্ক বিভাগের অফিসারদের সহিত সাক্ষাত্ করিয়া জানান যে, প্রায় পঞ্চাশ হাজার কারিগরকর্মহীন হইয়া পড়িয়াছেন।

শনিবার, ৫ মাঘ, ১৩৬৯ (২৯ পৌষ, ১৮৮৪ শক) SATURDAY, JAN, 19, 2963
• কলিকাতায় বোমাবর্ষণের সম্ভাবনা উড়াইয়া দেওয়া যায় না, প্রধানমন্ত্রী শ্রীনেহরুর হুঁসিয়ারী: প্রধানমন্ত্রী শ্রীনেহরু আজ ভারতের কোন শহরে বিশেষ করিয়া কলিকাতায় বোমাবর্ষণের সম্ভাবনা একেবারে বাতিল করিয়া দেন নাই। ইহাদের রক্ষা করার জন্য যথোপযুক্ত ব্যবস্থা অবলম্বনের প্রয়োজনীয়তার উপর তিনি জোর দেন। এখানে আজ জাতীয় উন্নয়ন পরিষদের স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আজকে ভারত ও চীনের পরিস্থিতি যা তাহাতে যে কোন শহরে বোমাবর্ষণ হইতে পারে। বিশেষ করিয়া কলিকাতা, দিল্লি বা অন্য কোন শহরে বোমা পড়িবার সম্ভাবনা আছে। ইহাদের রক্ষার জন্য আমাদের ব্যবস্থা করিতে হইবে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন. এই উদ্দেশ্যে প্রত্যেককে সকল শহর ও গ্রামে পরিখা খনন ও নিষ্প্রদীপের জন্য সাধারণভাবে নির্দেশ দেওয়া হাস্যকর ও অর্থহীন। ইহা অর্থ ও সময়ের অপচয়। বরঞ্চ নিরাশ্রয় ব্যক্তিদের আশ্রয় দিবার জন্য আমরা আমাদের শক্তিকে নিয়োগ করিব। প্রত্যেক শহরে অসংখ্য নিরাশ্রয় ব্যক্তি আছে। শ্রী নেহরু বলেন, নিরাপত্তার শ্রেষ্ঠ উপায় হইল একটি শক্তিশালী বিমানবাহিনী গঠন করা। সুদূর ভবিষ্যতে বা অদূর ভবিষ্যতে ঘটিবার সম্ভাবনা আছে, এই ধরণের বিষয় হইতে নিজেকে রক্ষার জন্য সমস্ত সময় ও শক্তি নিয়োজিত করা অপেক্ষা কিছু নষ্ট হইবার ঝুঁকি লওয়া ভাল।

রবিবার, ৬ মাঘ, ১৩৬৯ SUNDAY, JAN. 20, 1963
• একই জমি একাধিক সংস্থাকে বরাদ্দের ব্যবস্থা, কর্পোরেশনের হরিজনদের গৃহনির্মাণ পরিকল্পনা বানচাল হইবার মুখে: কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের নিকট হইতে পঞ্চাশ লক্ষ টাকার অধিক আর্থিক সাহায্য পাওয়া সত্ত্বেও কলিকাতা কর্পোরেশনের কুড়ি হাজার হরিজন কর্মচারীর বাসগৃহ নির্মাণের পরিকল্পনাটি বানচাল হইতে বসিয়াছে বলিয়া বিশ্বস্তসূত্রে জানা গিয়াছেঃ এই পরিকল্পনায় মোট ব্য হইবে ৮৭ লক্ষ টাকার মত। বিগত ১৯৫৯ সালে মহানগরীর যে সকল অঞ্চলে ঐ গৃহনির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হইয়াছিল, তন্মধ্যে একাধিক প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে গৃহ নির্মাণের জন্য বরাদ্দ করা হইয়াছে। কর্পোরেশনের সভায় অনুমোদিত প্রস্তাব অনুসারে উভয় সংস্থা বা ব্যক্তি সমান দাবিদার। যে জমিতে হরিজন কর্মচারীদের গৃহনির্মাণের জন্য কর্পোরেশন প্রস্তাব গ্রহণ করিয়াছেন, আবার সেই জমিই অন্য একটি সংস্থাকে ইজারা দিবার জন্য কর্পোরেশনের সভায় পাল্টা প্রস্তাব গৃহীত হইয়াছে। যদিও মূল ঐ গৃহীত প্রস্তাবটিকে বাতিল করা হয় নাই। সম্প্রতি ঐ একই জমি অপর একটি কাজে ব্যবহারের জন্য কর্পোরেশনের সভায় আরও একটি প্রস্তাব গৃহীত হইয়াছে। মোট তিনটি প্রস্তাব গৃহীত হইয়াছে।

আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত এই সকল সংবাদের বানান ও ভাষা অপরিবর্তিত।
 
 


 

Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player

 
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.