আমরি-কাণ্ড থেকেও প্রশাসন যে কোনও শিক্ষা নেয়নি, তারই ঝলক এ বার শহরতলির এক হাসপাতালে। প্রায় ‘জতুগৃহে’র পরিবেশ, অথচ অগ্নি-নির্বাপণের ব্যবস্থা নামমাত্র। এমনকী, নেই ফায়ার লাইসেন্সও। কোনও বেসরকারি চিকিৎসা-কেন্দ্র নয়, বিরাটি স্টেশন রোড সংলগ্ন উত্তর দমদম পুরসভা পরিচালিত এই হাসপাতালে কোনও অনুমোদন ছাড়াই একটি আইসিইউ-ও খোলা হয়েছে দেড় বছর আগে।
হাসপাতালে ঢুকতেই চোখে পড়ে একাধিক কেরোসিনের জেরিক্যান। তারই পাশে বিপজ্জনক ভাবে রয়েছে বিদ্যুতের মিটার, পাইপলাইনের মাধ্যমে আইসিইউ-এ অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা এবং জেনারেটর। বিভিন্ন রোগীর পরিবারের অভিযোগ, সদ্যোজাতদের ঘরের ঠিক পাশেই মাঝেমধ্যে ডাঁই করা থাকে অক্সিজেন সিলিন্ডার। স্টোরে মজুত দ্রব্যের মধ্যে আছে অতি দাহ্য স্পিরিটও। রোগীদের আশঙ্কা, এর থেকে যে কোন দিন বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। গোটা হাসপাতালে অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা বলতে অপারেশন থিয়েটারে ঢোকার মুখে রাখা দু’টি ‘ফায়ার এক্সটিংগুইশার’। যা কী ভাবে ব্যবহার করতে হয়, সেটাও অধিকাংশ কর্মীর জানা নেই। |
হাসপাতালের স্টোর রুমের বাইরে এ ভাবেই মজুত রয়েছে গ্যাস সিলিন্ডার। নিজস্ব চিত্র |
এ ভাবে যে একটি হাসপাতাল চলছে সে সম্পর্কে কোনও তথ্যই তাঁর কাছে নেই বলে জানিয়েছেন দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান। তিনি বলেন, “অবিলম্বে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।”
দেড় বছর ধরে হাসপাতালেরই একটি ঘরে ছয় শয্যার আইসিইউ চলছে। অথচ অভিযোগ, তার জন্যও কোনও অনুমোদন নেওয়া হয়নি স্বাস্থ্য দফতরের কাছ থেকে। একটি শয্যার সঙ্গে অন্য শয্যার যতটুকু ব্যবধান থাকা উচিত, মানা হয়নি সেই নিয়মটুকুও। অথচ শয্যা পিছু দৈনিক ৮০০ টাকা করে নিয়ে দিব্যি চলছে আইসিইউ। গত এক বছরে সেখানে রোগী ভর্তির সংখ্যা প্রায় ৩৫০।
এই হাসপাতালের ফায়ার লাইসেন্স না থাকার বিষয়টি মেনে নিয়েছেন পুর-প্রধান সুনীল চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, “মানছি অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থায় ত্রুটি আছে। চেষ্টা করছি ইলেকট্রিক মিটার ও জেনারেটর ওখান থেকে সরিয়ে নিতে। আর কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, তা জানতে চেয়ে দমকলকে চিঠি দিয়েছি। বাড়িটি পুরনো হওয়ায় এর কয়েকটি বিভাগও সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে অন্য একটি ভবনে।”
আইসিইউ-এর লাইসেন্সের বিষয়টি সম্পর্কে অবশ্য কেউই স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। সুনীলবাবু বলেন, “সেই সময়ে হাসপাতালের ইনচার্জ যিনি ছিলেন, তিনি বলতে পারবেন।” আইসিইউ শুরুর সময়ে হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ইনচার্জ ছিলেন শ্যামল ভট্টাচার্য। তাঁর দাবি, “লাইসেন্স করানোর বিষয়টি প্রশাসনের দায়িত্ব। চিকিৎসকের নয়। তখন তাড়াহুড়োর মধ্যে প্রক্রিয়াটা শুরু করা হয়েছিল। তার পরে কী হয়েছে, ঠিক মনে নেই।”
স্বাস্থ্য দফতরের প্রশাসনিক বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর হিমাদ্রি সান্যালের কথায়, “সরকারি হাসপাতাল মেডিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট অ্যাক্টের আওতায় পড়ে না। তৈরি হাসপাতালে নতুন কিছু করতে শুধুমাত্র স্বাস্থ্য দফতরকে জানালেই হয়। পুরসভা পরিচালিত হাসপাতালগুলিকেও এত দিন এই নিয়মেই ধরা হত। কিন্তু এরা যে হেতু টাকার বিনিময়ে পরিষেবা দেয়, তাই এদেরও মেডিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট অ্যাক্টের আওতায় আনার কথা ভাবা হচ্ছে।” |