বিকল্প ব্যবস্থা না করেই চিকিৎসকদের বদলি
উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে পরিষেবায় সমস্যা
বিকল্প (রিলিভার) হিসাবে সুপার পদে স্থায়ী ভাবে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। বদলি করে দেওয়া হয়েছে দু’জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে। প্যাথলজি বিভাগের চিকিৎসকের পদটিও দীর্ঘদিন খালি। বদলি হয়ে গিয়েছেন দুই টেকনিশিয়ানও। এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে।
হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ২১০। কিন্তু প্রতিদিনই রোগী ভর্তি হতে আসেন অনেক বেশি। কাছেই রয়েছে মুম্বই রোড এবং দক্ষিণ-পূর্ব রেলপথ। রেল বা সড়ক দুর্ঘটনা ঘটলে আহতদের নিয়ে আসা হয় এই হাসপাতালেই। গুরুত্বপূর্ণ এই হাসপাতালের এ ভাবে চিকিৎসক কমে যাওয়া এবং বিকল্প ব্যবস্থা না হওয়ায় প্রশ্ন তুলেছেন রোগীদের আত্মীয়স্বজনেরা। সরব রাজনৈতিক মহলও।
গত ৩ জানুয়ারি বদলি করা হয় হাসপাতালের সুপার, নাক-কান-গলা (ইএনটি) বিশেষজ্ঞ এবং অ্যানাস্থেটিস্টকে। সুপারের দায়িত্ব অবশ্য দেওয়া হয়েছে বাউড়িয়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে সুপারকে। কিন্তু দু’টি হাসপাতালে দায়িত্বভার ঘাড়ে এসে পড়ায় তিনি মহকুমা হাসপাতালে আসার সময়ই পাচ্ছেন না। গত ৩ জানুয়ারি দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার পর থেকে মাত্র একদিন এক ঘণ্টার জন্য জরুরি কিছু বিল সই করার জন্য বাউড়িয়া থেকে মহকুমা হাসপাতালে এসেছিলেন তিনি। গত শুক্রবার সকালে বহির্বিভাগ চালানোর ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়। ওই দিন বেলা ১১টা পর্যন্ত বহির্বিভাগে কোনও চিকিৎসক বসেননি। ফলে, রোগীরা ওয়ার্ড-মাস্টারকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান। শেষ পর্যন্ত হাসপাতালের চিকিৎসকেরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সমস্যা মেটান। পরে চালু হয় বহির্বিভাগ। চিকিৎসকদের একাংশের মত, সুপারই চিকিৎসকদের বহির্বিভাগের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন। কিন্তু স্থায়ী সুপার না-থাকায় সেই কাজে অসুবিধা হচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, এখানে একজনই ইএনটি বিশেষজ্ঞ ছিলেন। তাঁকে বদলি করে দেওয়ায় এই বিভাগে বর্তমানে আর কেউ নেই। হাসপাতালে প্রতি বুধ এবং শুক্রবার ইএনটি বিশেষজ্ঞ বহির্বিভাগে বসতেন। রোগী হত দিনে গড়ে দেড়শো জন করে। ‘পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য প্রতিবন্ধী সম্মিলনী’-র হাওড়া জেলা শাখার সম্পাদক অজয় দাস বলেন, “শ্রবণ প্রতিবন্ধীদেরও নিয়মিত চিকিৎসা হত ওই হাসপাতালে। বিকল্প চিকিৎসক না এলে তাঁদের বেশ অসুবিধা হবে।”
এক জন বদলি হয়ে যাওয়ায় এখন হাসপাতালে অ্যানাস্থেটিস্ট রইলেন দু’জন। তাঁদের মধ্যে কেউ ছুটি নিলে অস্ত্রোপচারের কাজ বিঘ্নিত হবে বলে মন্তব্য করেছেন হাসপাতালের শল্য চিকিৎসকেরাই। এ ছাড়া, সমস্যা রয়েছে প্যাথলজি বিভাগেও। ওই বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক অবসর নিয়েছেন পাঁচ মাস আগে। সেই থেকে পূরণ করা হয়নি পদটি। একজন মাত্র টেকনিসিয়ান এই দায়িত্ব সামলাতেন। ৩ জানুয়ারি বদলি করে দেওয়া হয়েছে তাঁকেও। ফলে এই বিভাগটির কাজ চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের অনেক চিকিৎসকই। এখানেও কোনও বিকল্প দেওয়া হয়নি। ওই দিনই একজন এক্স-রে টেকনিসিয়ানকেও বদলি করা হয়েছে।
এই পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খুলেছে রাজনৈতিক মহল। স্থানীয় তৃণমূল নেতা প্রবীর রায়ের অভিযোগ, “মুখ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্য বিভাগের হাল ফেরানোর জন্য যে সদিচ্ছা দেখাচ্ছেন, তা বানচাল করতে নেমেছেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের একাংশ। সেই কারণে কোনও বিকল্প ব্যবস্থা না করে সুপার-সহ তিন চিকিৎসককে বদলি করে দেওয়া হল।”
অন্য দিকে, হাসপাতাল পরিচালনার ক্ষেত্রে কার্যত নৈরাজ্য চলছে বলে মন্তব্য করেছেন কংগ্রেস নেতা তথা উলুবেড়িয়া পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান। উলুবেড়িয়া দক্ষিণ কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক পুলক রায় বলেন, “সমস্যাটি নিয়ে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে কথা বলব।”
সমস্যার কথা মেনে নিয়ে হাওড়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) স্বাতী দত্ত বলেন, “ওই হাসপাতালের ইএনটি বিশেষজ্ঞ নিয়োগের জন্য স্বাস্থ্য ভবনে ইতিমধ্যেই চিঠি দেওয়া হয়েছে। স্থায়ী ভাবে সুপার পদে নিয়োগের জন্য স্বাস্থ্য সচিব এবং স্বাস্থ্য অধিকর্তাকে চিঠি দিয়েছি। শীঘ্রই জেলা স্বাস্থ্য দফতর থেকে অ্যানাস্থেটিস্ট পাঠানো হবে। টেকনিশিয়ান নিয়োগের প্রক্রিয়াও চলছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.