নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
সৌদি আরবের রিয়াধে ৫০ জন তরুণীকে আটকে রেখে যৌন নির্যাতন চালানো হচ্ছে বলে জানতে পেরেছে দার্জিলিং জেলা পুলিশ। রবিবার শিলিগুড়িতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের অফিসে সাংবাদিক বৈঠক করে ওই কথা জানান জেলা পুলিশ সুপার আনন্দ কুমার। তিনি জানান, সম্প্রতি রিয়াধ থেকে দার্জিলিংয়ের মেরিবঙ চা বাগানের এক তরুণীকে উদ্ধার করা হয়। তার কাছ থেকেই ওই তথ্য পেয়েছে পুলিশ। পাচার চক্রের সঙ্গে যুক্ত ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ সুপার বলেন, “রিয়াধ থেকে এক তরুণীকে উদ্ধার করার পরই আমরা বেশ কিছু তথ্য পাই। ৫০ জন তরুণীকে সেখানে বাড়িতে কাজ করানোর নাম করে আটকে রেখে যৌন নির্যাতন চালানো হচ্ছে। মারধরও করা হচ্ছে। এদের মধ্যে কতজন দার্জিলিং ও ডুয়ার্সের তা জানা যায়নি। বিষয়টি সিআইডিকে জানানো হবে, যাতে তাঁদের উদ্ধারের ব্যপারে ব্যবস্থা নেওয়া যায়।” পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নারী পাচারের একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে দার্জিলিং ও ডুয়ার্সে সক্রিয় রয়েছে। গরিব ঘরের মেয়েদের টাকার লোভ দেখিয়ে সৌদি আরব সহ বিভিন্ন ভিনদেশে পাচার করা হচ্ছে তরুণীদের। গত অগষ্ট মাসে মিরিকের ফুকুরি চা বাগানের চাঁদ রাই ও মিতা রাই দার্জিলিংয়ের মেরিবঙ চা বাগানের এক তরুণীকে ২০ হাজার ডলারের বিনিময়ে সৌদি আরবের রিয়াধে পাচার করে দেয়। নেপাল থেকে পাসপোর্ট তৈরি করে ওই তরুণীকে দিল্লি হয়ে নেপালে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই তরুণী জানান, সাড়ে ৬ হাজার টাকায় কাজ দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়ে তাঁকে রিয়াধে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে একটি বাড়িতে কাজের জন্য রাখা হয় তাঁকে। দু’দিন পর থেকে অত্যাচার শুরু হয়। ঠিকমতো কাজ না করার অভিযোগ তুলে তাঁকে মারধর করা। তাঁকে যৌন নির্যাতন করা হয়। একদিন তাঁকে ধর্ষণ করার চেষ্টা করার চেষ্টা হয়। সুযোগ বুঝে তিনি সেখান থেকে পালিয়ে একটি স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িতে যান। সেখান থেকে নেপাল দূতাবাসে তাঁকে পাঠানো হয়। তাঁকে কোনও টাকা দেওয়া হয়নি। পুলিশ সুপার জানান, গত ১৯ নভেম্বর ওই তরুণীর পরিবারের পক্ষ থেকে জোড়বাংলো থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। বিষয়টি সিআইডিকে জানায় দার্জিলিং পুলিশ। সিআইডি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই তরুণীকে উদ্ধারের চেষ্টা শুরু করে। নেপাল দূতাবাসের মাধ্যমে তরুণীর কথা জানতে পেরে তাঁকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হয়। নেপালের হতে তাঁকে দার্জিলিংয়ে ফিরিয়ে আনা হয়। ওই তরুণী বলেন, “আমার সঙ্গে মিরিকের আরও ২ জন তরুণীকে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁদের উপরেও একই রকম অত্যাচার চলছে। এ ছাড়াও প্রায় ৫০ জন তরুণীকে আটকে রাখা হয়েছে। তাঁদের উপর যৌন নির্যাতন করা হচ্ছে।” ওই তরুণীর অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ চাঁদ ও মিতাকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ সুপার বলেন, “ওই চক্রের আরও কারা জড়িত আছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” |