|
|
|
|
সম্মেলনের প্রতিবেদন |
নীতি ছাড়াই জমি নিতে গিয়ে বিপর্যয়, বলল জেলা সিপিএম
আনন্দ মণ্ডল • তমলুক |
বিধানসভা নির্বাচনে পরাজয়ের কারণ হিসেবে সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামে শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া ঘিরে ‘রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যর্থতা’কেই দায়ী করল পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সিপিএম।
নন্দীগ্রামের জেলার সিপিএমের বক্তব্য, রাজ্যে শিল্পনীতি গ্রহণের ১২ বছর পরেও জমি অধিগ্রহণ নীতি গ্রহণ করতে পারেনি বামফ্রন্ট সরকার। জমি-নীতি তৈরি না-করেই বিগত বামফ্রন্ট সরকার জমি অধিগ্রহণ করতে গিয়েছিল। যা নির্বাচনী বিপর্যয়ের হয়েছে বলে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্মেলনে গৃহীত ‘রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক প্রতিবেদনে’ উল্লেখ করা হয়েছে। তিন দিনের জেলা সম্মেলন শেষ হয়েছে রবিবারই।
সিপিএমের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কমিটির মতে, ১৯৯৪-এ শিল্পনীতি গ্রহণের পরে শিল্পায়নের পরিবেশ তৈরি করতে জমির মালিক, বর্গাদার ও কৃষকদের জন্য ‘গ্রহণযোগ্য’ প্যাকেজ বা সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার সুস্পষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারেনি। জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে গড়ে তুলতে পারেনি ‘জমি-ব্যাঙ্ক’। ফলে, জমি নিয়ে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। আর এই সুযোগে বিরোধী তৃণমূল জোট মানুষের ‘মনকে বিষিয়ে’ পরিবর্তনের স্লোগান তোলে। এর পাল্টা ‘যুক্তিসঙ্গত বক্তব্য’ দলের ছিল না। ফলে, ‘পরিবর্তনের স্লোগানের স্রোতে’ বামফ্রন্টের নির্বাচনী পরাজয় হয়েছে বলে মত জেলা কমিটির।
নন্দীগ্রামে জমি অধিগ্রহণের নোটিস ঘিরে বিতর্কের জন্য সিপিএমের অন্দরেও যাঁকে দায়ী করা হয়, সেই লক্ষ্মণ শেঠ অবশ্য নবগঠিত জেলা কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। লক্ষ্মণবাবুর সঙ্গেই জেলার যে আরও দুই উল্লেখযোগ্য নেতা ‘আত্মগোপন’ করে থাকায় জেলা সম্মেলনে যোগ দেননি, সেই অশোক গুড়িয়া এবং অমিয় সাহুও রয়েছেন ৭০ জনের জেলা কমিটিতে। ফের জেলা সম্পাদক হয়েছেন কানু সাহুই।
প্রতিবেদনে নির্বাচনী বিপর্যয়ের রাজনৈতিক কারণ উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামের ঘটনাবলি, জমি অধিগ্রহণের বিষয়টিকে মানুষের অস্তিত্বের বিপদ হিসেবে সামনে নিয়ে আসা হয়। সিপিএম ও বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে প্রচারের মূল হাতিয়ার হিসেবে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট প্রচার করে যে, বামফ্রন্ট সরকার শিল্পের জন্য কৃষকদের সব জমি কেড়ে নেবে,
মন্দির-মসজিদ ভেঙে দেবে। এই ইস্যুকে সামনে রেখে মানুষের মনকে বিষিয়ে দেওয়া সহজ হয়। এর সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার মত যুক্তিসঙ্গত বক্তব্য আমাদের ছিল না। ফলে পরিবর্তনের স্লোগানে সব ভেসে গিয়েছে’!
সেই সঙ্গে প্রশাসনিক কারণ উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘সপ্তম বামফ্রন্ট সরকার শেষের দিকে প্রশাসন চালাতে পারছিল না। ২০০৭-এর ৩ জানুয়ারি থেকেই নন্দীগ্রাম তৃণমূলের দখলে। প্রশাসন ব্যর্থ। আমাদের জেলায় তৃণমূল-কংগ্রেসই প্রশাসন চালিয়েছে। বারবার বলেও কিছু করা যায়নি। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামে প্রশাসনিক ব্যর্থতা শত্রুদের উৎসাহিত করেছে। ধীরে ধীরে প্রশাসনিক ব্যর্থতা সমগ্র রাজ্যকে গ্রাস করে’।” জমি অধিগ্রহণে ‘ব্যর্থতা’র প্রসঙ্গ এনে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘জমি অধিগ্রহণ নিয়ে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। শত্রুরা তা ব্যবহার করেছে’। অসংগঠিত শ্রমিকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প রূপায়ণে দেরির ফলে শ্রমিক শ্রেণির মধ্যেও অসন্তোষ ধূমায়িত হয়েছিল।
নির্বাচনে জেলায় ১৬টি বিধানসভা কেন্দ্রেই বামফ্রন্ট প্রার্থীর পরাজয়ের ক্ষেত্রে দলের সাংগঠনিক দুর্বলতাকেও দায়ী করেছে জেলা সিপিএম। প্রতিবেদনের ভাষায়, ‘নির্বাচনী পরাজয়ের একটি দুর্বলতার দিক হল, পার্টি কমরেডদের ক্রমবর্ধমান নিষ্ক্রিয়তা। বিধানসভা নির্বাচনে এক জন জেলা কমিটির সদস্য, ১২ জন জোনাল কমিটির সদস্য, ৬৩ জন লোকাল কমিটির সদস্য ও ১৪১৫ জন পার্টি সদস্য নিষ্ক্রিয় থেকেছেন। দেখা যাচ্ছে, গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী সংগ্রামেও ২৫-৩০ ভাগ সদস্য নিষ্ক্রিয় থেকে গিয়েছেন’। নির্বাচনে পরাজয়ের পাশাপাশি জেলায় দলের সদস্যসংখ্যাও কমেছে। জেলা সিপিএমের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত সম্মেলনের সময় (২০০৭ ডিসেম্বর) জেলায় মোট দলীয় সদস্য ছিল ২৩,৪৮৪। এখন তা কমে হয়েছে ২০,৯৮৭। দলের ‘শুদ্ধকরণ’ অভিযানে কাজকর্মের মূল্যায়নের ভিত্তিতে গত তিন বছরে জেলায় ৬,০৬০ জনের সদস্যপদ খারিজ হয়েছে। দলবিরোধী কাজের অভিযোগে বহিষ্কৃতদের মধ্যে এক জন জেলা কমিটির সদস্যও আছেন। |
|
|
|
|
|