তৃণমূলের সমাবেশ আজ
তরজা অব্যাহতই, তবু
আলোচনা চায় হাইকম্যান্ড
খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘দরজা খোলা আছে’ বলে হুমকি দিলেও ‘সংযমের’ পথেই চলতে চাইছেন কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব। শনিবার মুখ্যমন্ত্রীর ওই প্রকাশ্য হুঁশিয়ারির ২৪ ঘণ্টা পরেও পাল্টা কোনও কড়া মন্তব্য করেননি কংগ্রেসের কোনও শীর্ষ নেতা। উল্টে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সলমন খুরশিদ বলেছেন, “দু’দলের যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তা আলোচনার মাধ্যমে কমানো সম্ভব।” যা দেখে সংশ্লিষ্ট মহলের মত, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড।
প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা রবিবার মমতার মন্তব্যের জবাব দিয়েছেন। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “কংগ্রেসের নেতারা কারও খাস তালুকের প্রজা নয়, যে কারও কথাতেই সরকার থেকে বেরিয়ে যাবে! কারও মনোবাসনা পূর্ণ করতে সরকার ছেড়ে আসব না!” রায়গঞ্জের সাংসদ দীপা দাশমুন্সির কটাক্ষ, “মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, দরজা খোলা আছে। আমরা সিংহ দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাব। কিন্তু উনি খিড়কি দরজা দিয়ে কাকে আনবেন? সাম্প্রদায়িক বিজেপি-কে নয়তো? ভয়টা সেখানেই!” তুলনায় খানিকটা সংযম দেখিয়ে সেচমন্ত্রী তথা প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি মানস ভুঁইয়া বলেন, “কেউ যদি আমাদের ছেড়ে চলেও যায়, আমরা কাউকে ছাড়তে যাচ্ছি না। কটাক্ষ করে, অবজ্ঞা করে কংগ্রেসকে খতম করা যাবে না!”
গোসানিমারির জনসভায় দীপা দাশমুন্সি। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব
‘রণং দেহি’ মেজাজে ছিল তৃণমূল শিবিরও। পূর্ব মেদিনীপুরের ঘাটালে দলীয় সমাবেশে তৃণমূল যুব কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি ও সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “পুরভোটে জোট চেয়েছিলাম। কংগ্রেস করেনি। ঘাটালে আমাদের ৬ জন কাউন্সিলর থাকা সত্ত্বেও আমরা চেয়ারম্যানের পদ কংগ্রেসকে ছেড়ে দিয়েছি। আমাদের লক্ষ্য ছিল সিপিএম-কে বাংলা থেকে হটানো। কিন্তু ওঁরা এখন সিপিএমের সুরে কথা বলছেন! বাংলার মানুষ ওঁদের ক্ষমা করবেন না!”
রায়গঞ্জের কলেজে গোলমালের পিছনে কংগ্রেস এবং সিপিএমের ‘ষড়যন্ত্র’ রয়েছে ফের এই অভিযোগ করে ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র এ দিন রায়গঞ্জে হুমকি দিয়েছেন, “ক্ষমতা থাকলে জেলা কংগ্রেসের সাংসদ ও বিধায়কেরা পদত্যাগ করুন! মানুষের সমর্থন নিয়ে আমরা জিতে দেখিয়ে দেব!” যার পাল্টা হিসেবে দীপা আবার বলেছেন, “আমরা মানুষের ভোটে জিতে এসেছি। সুতরাং তৃণমূলের কারও কথায় পদত্যাগের প্রশ্নই নেই।”
রাজ্যে শরিকি সম্পর্কে এই উত্তাপ সত্ত্বেও দিল্লির কংগ্রেস নেতাদের ‘সংযম’ সম্পর্কে দলীয় শিবিরের ব্যাখ্যা এটাই যে, কৌশলগত কারণে এখন তৃণমূলকে চটাতে চাইছে না হাইকম্যান্ড। কারণ, সামনেই সংসদের বাজেট অধিবেশন। তার পর রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। কংগ্রেস শীর্ষ নেতাদের মতে উত্তরপ্রদেশের ভোট পেরিয়ে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ স্পষ্ট না-হওয়া পর্যন্ত মমতাকে ‘হাতছাড়া’ করাটা রাজনৈতিক ভাবে উচিত কাজ হবে না।
সেই কারণেই প্রদীপবাবু দিল্লি গিয়ে বর্ষীয়ান নেতা প্রণব মুখোপাধ্যায়কে গত ক’দিনের ঘটনাক্রম সবিস্তার জানালেও প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করেননি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। আর খুরশিদ বলেছেন, “এত দিন পরে রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পরে স্বভাবতই পশ্চিমবঙ্গের মানুষের প্রত্যাশা রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। তেমনই জাতীয় দল হিসেবে আমাদেরও কিছু প্রত্যাশা রয়েছে। কখনও-কখনও দু’পক্ষের প্রত্যাশার মধ্যে পার্থক্য তৈরি হয়। তবে আমার মনে হয় না, সেই মতপার্থক্যকে খুব বড় করে দেখা উচিত। দু’পক্ষের দূরত্ব মুছতে আরও বেশি করে আলোচনায় বসা দরকার।”
কার্যক্ষেত্রে অবশ্য আলোচনার বদলে প্রকাশ্য চাপানউতোরই বজায় থাকছে। ধর্মতলায় কংগ্রেসের মঞ্চ থেকে চার দিন আগে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোপ দাগা হয়েছিল। আজ সোমবার ময়দানে গাঁধী মূর্তির পাদদেশে দলের যুব শাখার সমাবেশ থেকে তার ‘প্রত্যুত্তর’ দিতে চান তৃণমূল নেতৃত্ব। শুক্রবার ধর্মতলায় কংগ্রেসের সভা চলাকালীনই এই সমাবেশের কথা ঘোষণা করেছিলেন তাঁরা। বলা হয়েছিল, তৃণমূল নেত্রী ও তাঁদের সরকারের বিরুদ্ধে কংগ্রেস নেতারা যে ‘কুৎসা’ করেছেন, তার জবাব এই সমাবেশ থেকে দেওয়া হবে। মমতা ছাড়া দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে অনেকেই এই সভায় থাকবেন বলে শুভেন্দু এ দিন জানিয়েছেন। তৃণমূলের সভা নিয়ে কংগ্রেস আগাম মন্তব্য করতে চাননি। তবে মমতার দল যা-ই বলুক, চাষিদের ফসলের উপযুক্ত দাম পাওয়ার লড়াই থেকে যে তাঁরা সরে আসবেন না, সে কথা জানিয়েছেন প্রদীপবাবু। ইন্দিরা ভবন বিতর্ক থেকে ধান চাষিদের ন্যায্য দাম পাওয়ার প্রশ্নে কংগ্রেসের আন্দোলন যে জনতার কাছে গ্রাহ্য হচ্ছে, সেই বিষয়টিও প্রদেশ কংগ্রেসের তরফে হাইকম্যান্ডকে জানানো হচ্ছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.